সিনহা রাশেদ হত্যা: ওসি প্রদীপ, লিয়াকতসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা
প্রকাশ: ৫ আগস্ট, ২০২০ ১১:২৫ : অপরাহ্ণ
কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনায় টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি আদালতের আদেশ মতে টেকনাফ মডেল থানায় নিয়মিত একটি হত্যা মামলা হিসাবে রুজু করা হয়েছে।
বুধবার ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মামলাটি রুজু করা হয়। মামলা নম্বর সিআর : ৯৪/২০২০ ইংরেজি (টেকনাফ)।
দন্ডবিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি রুজু করার সাথে মামলার এজাহারভুক্ত সকল আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া আসামিরা হলেন-টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (৪৮), বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহারকৃত পরিদর্শক লিয়াকত আলী (৩১), এসআই নন্দলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এসআই টুটুল, কনস্টেবল মোঃ মোস্তফা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ৯ আসামী আগের কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার হয়ে এখন পুলিশ লাইনে রয়েছে।
তার আগে, টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ্ এর দেওয়া আদেশের কপি, সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টস সহ টেকনাফ মডেল থানায় প্রেরণ করা হয়। মোহাম্মদ ফারুক নামক আদালতের একজন বাহক দিয়ে রাত পৌনে ৯ টার দিকে আদালতের আদেশ সহ অন্যান্য কাগজপত্র টেকনাফ মডেল থানায় পৌঁছানো হয় বলে কক্সবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক ইলাহী শাহজাহান নূরী নিশ্চিত করেছেন।
টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক তামান্না ফারাহ্ এর দেওয়া আদেশ অনুযায়ী নিয়মিত মামলা হিসাবে রুজু করায় মামলাটি এখন তদন্তের জন্য টেকনাফ মডেল থানা থেকে র্যাব-১৫ এর কাছে পাঠাতে হবে। র্যাব-১৫ মামলাটি তদন্ত করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
৩১ আগস্ট খুন হওয়া মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের বড়বোন ও মোঃ শামসুজ্জামানের সহধর্মিণী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস (৪২) বাদী হয়ে ৫ আগস্ট সকালে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের সঙ্গী ও ৩১ জুলাই এর ঘটনায় টেকনাফ পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামি সাহেদুল ইসলাম সিফাত সহ ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
সেই ওসি প্রদীপ প্রত্যাহার
টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার (০৫ আগস্ট) রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে, টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা করেন তার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।
গত ৩১ জুলাই ঈদের আগের রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)। তার গাড়িতে থাকা তার সঙ্গী সিফাতের ভাষ্যমতে, সিনহাকে কোনোরুপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই চেকপোষ্টে গাড়ি থেকে নামতে বলে চার রাউন্ড গুলি ছুড়ে হত্যা করেন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিয়াকত আলী।
৩ মাসের মধ্যে সিনহার খুনিদের ফাঁসি নাহলে আন্দোলন: রাওয়া
আগামী তিন মাসের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনায় দোষীদের ফাঁসি না দিলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া)
বুধবার (৫ আগস্ট) বিকেলে রাওয়া হেলমেট হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের দাবি তুলে ধরেন রাওয়া’র প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসার।
সংগঠনটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুর বিচারকাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি, তিন মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার মৃত্যুতে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। দাবি আদায় না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে মেজর সিনহা হত্যা মামলার সব আসামিকে মামলার স্বার্থে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার সাহাকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করে অন্তরীণ রাখার দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে মামলার সাক্ষী যারা আছে, তাদের পরিবারের নিরপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
রাওয়া’র প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসার বলেন, আমরা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার চাই। তা না হলে আমরা আন্দোলনে যাব। আমাদের এরকম আন্দোলনের কোনো নজির নেই। কিন্তু সহকর্মীকে হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। তবে আমাদের আন্দোলনও হবে সুশৃঙ্খল।
এ ঘটনার তদন্তে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নকে (র্যাব) নিয়োজিত করার দাবি জানিয়েছে রাওয়া। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার নুরুল অফসার বলেন, পুলিশ ও সিআইডি যেভাবে তদন্ত করে, সেটা তো করবেন। আমরা চাই, র্যাবও এর তদন্ত করুক। সবগুলো তদন্ত মিলিয়ে নিরপেক্ষ ও প্রকৃত প্রতিবেদন বেরিয়ে আসুক।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন রাওয়া প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) খন্দকার নুরুল আফসার। দাবিগুলো হলো— ১. আগামী তিন মাসের মধ্যে দ্রুত আদালতের মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন এবং দোষী ব্যক্তিদের ফাঁসি কার্যকর করা; ২. অনতিবিলম্বে সব আসামিকে (ভবিষ্যৎ তদন্তের মাধ্যমে যাদের নাম আসবে তারাসহ) গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো; ৩. কক্সবাজারের এসপিকে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার, এই মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, তথ্য গোপন করে মিডিয়াতে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া ও একমাত্র চাক্ষুস সাক্ষী সিফাতের বিরুদ্ধে দুইটি কাল্পনিক ও বানোয়াট মামলা রুজু করার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া; ওসি প্রদীপকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো; ৫. সিফাত, ট্রাকচালকসহ সব স্বাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ৬. বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো একটি ভিন্ন মন্ত্রণালয় (ভ্যাটারান মন্ত্রণালয়) গঠন করে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের নিরাপদ ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জীবনযাপনে সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা; ৭. সময় নষ্ট না করে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিল করা; ৮. বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীকে সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জবাবদিহিমূলক আইন প্রণয়ন করে সেই অনুযায়ী বাহিনীকে পুনর্গঠিত করা; ৯. কোনোভাবেই যেন এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়িত না হয়, সেদিকে সদয় দৃষ্টি কামনা; এবং ১০. রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রাওয়া’র জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া।
YouTube এ সকল অ্যাসাইনমেন্টের সমধান পেতে আমাদের অফিসিয়াল YouTube চ্যানেলটিতে এখনি সাবস্ক্রাইব করো।
আমাদের চ্যানেলঃ 10 Minute Madrasah
প্রশ্ন প্রকাশ হলে সবগুলো বিষয়ের উত্তর দেওয়া হবে। তাই তোমরা পেজটি সেভ বা বুকমার্ক করে রাখো।
আপডেট পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক পেইজে যুক্ত থাকো