Table of Contents (সূচিপত্র)
সাদাকাতুল ফিতর কী এবং সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ : কিছু কথা
সাদাকাতুল ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর পনির ও কিসমিস দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক ‘সা’ দিতে হবে। কেজির হিসাবে যা তিন কেজি ১৮৩ গ্রাম।
আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। কেজির হিসাবে ১ কেজি ৫৯১.৫ গ্রাম হয়। এটা হল ওজনের দিক দিয়ে তফাত। আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছেই। এ সব পণ্যের বাজার দার থেকে যা সকলেরই জানা।
আরো পড়ুন
ইতিকাফের বিভিন্ন মাসয়ালা মাসায়েল জেনে নিন ( ভিডিও সহ )
রূহের অবস্থান- কিতাবুর রূহ্ এর বর্ণনা
রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল জেনে নিন
চল্লিশ হাদিস মুখস্ত করার ফযিলত পর্ব-২
রমজানুল মোবারক এর ফযিলত ও বৈশিষ্ট্য
সাদাকাতুল ফিতর নিয়ে হাদীসে যা এসেছে
হাদীসে এ পাঁচটি দ্রব্যের যে কোনটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেন মুসলামনগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যে কোন ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এখন লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সকল শ্রেণীর লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্যমানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদীসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসাবে ফিতরা আদায়ের উপর আমল করবে কে?
আসলে এ ক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন যে, যে ব্যক্তি উচ্চ মূল্যের পণ্য দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য আরো কম সে তাই দিবে। এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা আরো কম দামের পণ্যের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। এটিই উত্তম নিয়ম।
এ নিয়মই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম, সাহাবা-তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের স্বর্ণযুগে। এ পর্যন্ত কোথাও দূর্বল সূত্রেও একটি প্রমাণ মেলেনি যে স্বর্ণযুগের কোন সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্ব নিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন।
এ পর্যন্ত কোথাও দূর্বল সূত্রেও একটি প্রমাণ মেলেনি যে স্বর্ণযুগের কোন সময়ে সব শ্রেণীর সম্পদশালী সর্ব নিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন।
এখানে এ সংক্রান্ত কিছু বরাত পেশ করা হচ্ছে।
•সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ এর উপর হাদীস
নবী কারীম সা.কে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি। -সহীহ বুখারী ৩/১৮৮
• সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ এর উপর সাহাবায়ে কেরামের আমল
(ক) হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, আমরা সদকা ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ খাদ্য দ্বারা অথবা এক ‘সা’ যব অথবা এক ‘সা’ খেজুর, কিংবা এক ‘সা’ পনির বা এক ‘সা’ কিসমিস দ্বারা। আর এক ‘সা’ এর ওজন ছিল নবী করীম সা. এর ‘সা’ অনুযায়ী। -মুআত্তা মালেক পৃষ্ঠা ১২৪
(খ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. সারা জীবন খেজুর দ্বারাই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করেছেন। তিনি মাত্র একবার যব দ্বারা আদায় করেছেন। -আল ইসতিযকার হাদীস নং ৫৯০
ইবনে কুদামা রহ. আবু মিজলাযের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশই যেহেতু খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন তাই ইবনে উমর রা. সাহাবাদের তরীকা অবলম্বন করতঃ সারা জীবন খেজুর দ্বারাই আদায় করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনে উমরের ভাষ্য হল, সাহাবীগণ যে পথে চলেছেন আমিও সে পথেই চলতে আগ্রহী।
সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধা সা গমের মূল্য এক সা খেজুর সমপরিমাণ ছিল। নবী কারীম সা. এর যুগে মদীনাতে গমের ফলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল খুব বেশি। সাদাকাতুল ফিতরের জন্য নির্ধারিত খাদ্যসমূহের মধ্যে গমের মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে, সেকালে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল।
হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা সা গমকে সাদাকাতুল ফিতরের অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যের এক ‘সা’র মত গণ্য করা হত। -আল ইস্তিযকার ৯/৩৫৫
তাহলে বুঝা গেল যে, হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গম দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হল, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য।
এ সময় হযরত ইবনে উমর রা. সাহাবীদের অনুকরণে খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করতেন। তখন তাঁকে আবু মিজলায রহ. বললেন, আল্লাহ তায়ালা তো এখন সামর্থ্য দিয়েছেন। আর গম খেজুরের চেয়ে অধিক উত্তম।
অর্থাৎ আপনার সামর্থ্য রয়েছে বেশি মূল্যের বস্তু সদকা করার। তবুও কেন খেজুর দ্বারা তা আদায় করছেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি সাহাবীদের অনুকরণে এমন করছি।
যাক আমাদের কথা ছিল, সাহাবায়ে কেরাম গম দ্বারা এজন্যই সদকা ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। হাদীসে পাঁচ প্রকারের খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম।তাহলে এ যুগে সর্ব শ্রেণীর জন্য এমনটি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা কী করে সমীচীন হতে পারে?
সাদাকাতুল ফিতর নিয়ে বর্তমান অবস্থা
বড়ই আশ্চর্য! পুরো দেশের সব শ্রেণীর লোক বছর বছর ধরে সর্বনিম্ন মূল্যের হিসাবে ফিতরা আদায় করে আসছে। মধ্য বিত্ত ও উচ্চবিত্ত সকলেই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে জনপ্রতি ৪০/৪৫ টাকা করে। মনে হয় সকলে ভুলেই গেছে যে, গম হচ্ছে ফিতরার ৫টি দ্রব্যের সবচেয়ে নিম্ন মূল্যের।
সুতরাং আমরা এ দেশের ফিতরা আদায়কারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে তারা যেন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হাদীসে বর্ণিত দ্রব্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের দ্রব্যটির হিসাবে ফিতরা আদায় করেন। পনির, কিসমিস, খেজুর কোনটির হিসাব যেন বাদ না পড়ে।
ধণী শ্রেণীর মুসলিম ভাইদের জন্য পনির বা কিসমিসের হিসাবে ফিতরা আদায় করা কোনো সমস্যাই নয়। যেখানে রমযানে ইফতার পার্টির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়, ঈদ শপিং করা হয অঢেল টাকার, সেখানে কয়েক হাজার টাকার ফিতরা তো কোন হিসাবেই পড়ে না।
যদি এমনটি করা হয় তবে যেমনিভাবে পুরো হাদীসের উপর মুসলমানদের আমল প্রতিষ্ঠিত হবে এবং একটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নত যিন্দা করা হবে, তেমনি এ পদ্ধতি দারিদ্রবিমোচনে অনেক অবদান রাখবে। গরীব-দুঃখীগণের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে পবিত্র ঈদের দিনে।
আরো পড়ুন
পাগড়ী পরিধান করা শুধু ফরয নামাযের জন্য নির্দিষ্ট নাকি সুন্নাত-নফল নামাযও পাগড়ী পরিধান করা যাবে?
ওইসব লোকের পথে নয়, যাদের উপর ক্রোধ আপতিত
রমজানুল মোবারক এর ফযিলত ও বৈশিষ্ট্য
YouTube এ সকল অ্যাসাইনমেন্টের সমধান পেতে আমাদের অফিসিয়াল YouTube চ্যানেলটিতে এখনি সাবস্ক্রাইব করো।
আমাদের চ্যানেলঃ 10 Minute Madrasah
প্রশ্ন প্রকাশ হলে সবগুলো বিষয়ের উত্তর দেওয়া হবে। তাই তোমরা পেজটি সেভ বা বুকমার্ক করে রাখো।
আপডেট পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক পেইজে যুক্ত থাকো
আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।
Join Our Facebook Group
Hi, I am Jabed Hossain from 10 Minute Madrasah. I am an online graver, working as freelancer. This site is only for gathering knowledge process.
Comments 32