বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করা যাবে
ইসলামে অবৈধ প্রেম-ভালবাসার বিধান
ইসলামে গাইরে-মোহরেম নারী-পুরুষের মাঝে প্রেম-ভালবাসা নিষিদ্ধ, এটি চরম গুনার কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَانكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَلا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ ) النساء 25
“অতএব, তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপপত্নি গ্রহণকারিণী হবে না।”[সূরা নিসা, আয়াত: ২৫]
এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা সূয়ূতী বলেন: مسافحات মানে প্রকাশ্যে ব্যভিচারকারিনী। আর متخذات أخدان মানে- গোপনে যাদের সাথে ব্যভিচার করা হয়।[তাফসীরে জালালাইন, পৃষ্ঠা-১৭৯]
রাসূল (ﷺ) প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাঝে যেসব দেখা সাক্ষাত, ঘুরাফিরা সংঘটিত হয়ে থাকে সেগুলোকেও যিনা-ব্যভিচার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সহিহ মুসলিমে এসেছে- “দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।”[সহিহ মুসলিম(২৬৫৭)]
বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করা যাবে? ইসলাম কী বলে ?
যা কিছু মানুষকে ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায় কুরআনে কারীমে সে সব কর্ম থেকে দূরে থাকার আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
( وَلا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلاً ) الاسراء/32
“আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।”(সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৩২)
এ আয়াতে আল্লাহ এ কথা বলেননি যে, ব্যভিচার করো না; বরং বলেছেন: ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। অর্থাৎ যেসব কর্ম ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায় সেগুলোতেও লিপ্ত হয়ো না।
বেগানা নারী-পুরুষের মাঝে নির্জনবাসকে ইসলাম হারাম করেছে। হাদিসে এসেছে-
“কোন পুরুষ যদি কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হয় সেখানে শয়তান থাকে তৃতীয় ব্যক্তি”।
[সুনানে তিরমিজি (২১৬৫); আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
সুতরাং প্রেম-ভালবাসার নামে যুবক-যুবতীদের মাঝে যা কিছু ঘটছে শরিয়তের ভাষায় সেগুলোও ব্যভিচারের পর্যায়ভুক্ত; জঘন্য গুনাহর কাজ।
দুনিয়া ও আখেরাতে ব্যভিচারের শাস্তি
প্রেম-ভালবাসা ব্যক্তিকে যেনা-ব্যভিচারে পতিত করে, এর ফলে অবৈধভাবে দুই যৌনাঙ্গ মিলিত হয়। যেনা করা কবিরা গুনাহ; মহাপাপ ও জঘন্য অপরাধ। এ কারণে আল্লাহ তাআলা আখেরাতের আগে দুনিয়াতেই এ অপরাধের শাস্তি ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
( الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِنْ كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ ) النور/2
“ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ;তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক এবং মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।[সূরা নূর ২]
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“তোমরা যেনার নিকটবর্তীও হয়োনা, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।” ( সুরা -বানী -ইসরাঈল- ৩২)
অন্যত্র বলেছেনঃ
“ব্যভিচারিনী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ তাদের প্রত্যেককে একশত করে বেত্রাঘাত কর । আল্লাহর আইন কার্যকর করার ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়ামায়া তোমাদেরকে যেন প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাত দিনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। একদল মু’মিন যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (সুরা – নুর -২)
রাসূল (ﷺ) বলেন: “অবিবাহিত নারী ও অবিবাহিত পুরুষ ব্যভিচার করলে শাস্তি: একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরেরর জন্য নির্বাসন। বিবাহিত নারী বিবাহিত পুরুষের সাথে ব্যভিচার করলে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা।”[সহিহ মুসলিম (৩১৯৯)]
আল্লাহ তাআলা বলেন: “এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যা হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[সূরা ফুরকান (৬৭-৭০)]
ব্যভিচারের অপরাধের জঘন্যতার কারণে বলা হয়েছে ব্যভিচারকালে ব্যক্তির ঈমান থাকে না। রাসুল (ﷺ) বলেন, “কোন ব্যভিচারী ব্যভিচারের সময়ে মুমিন অবস্থায় থাকে না। কোন চোর চুরির সময় মুমিন অবস্থায় থাকে না। কোন মদখোর মদ খাওয়ার সময় মুমিন অবস্থায় থাকে না… [বুখারি, (২৪৭৫) মুসলিম (৫৭)]
রাসুল (ﷺ) আরো বলেন, “কোন ব্যক্তি যখন ব্যভিচার করে তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায়, এরপর তা তার মাথার উপর ছায়ার মত অবস্থান করতে থাকে। এরপর সে যখন তা থেকে তওবা করে তখন তার ঈমান পুনরায় তার কাছে ফিরে আসে”। [আবু দাউদ (৪৬৯০), সুনানে তিরমিজি (২৬২৫)]
আখেরাতে ব্যভিচারী নারী-পুরুষের শাস্তি সম্পর্কে রাসুল (ﷺ) বলেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক কঠোর শাস্তি নির্ধারিত থাকবে। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী গরীব।”[মুসলিম ও নাসায়ী]
তাদের শাস্তি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন:
“যিনারাকীরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সাথে এই আচারণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে।”[বুখারী (৭০৪৭)]
পরকিয়া প্রেম বা অন্যের বিবাহ বন্ধনে থাকা স্ত্রীর সাথে প্রেম-প্রণয়ের মাধ্যমে ব্যভিচারের লিপ্ত হওয়া আরও জঘন্য অপরাধ ও মহাপাপ। ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি?” তিনি বললেন: “কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করা।” আমি বললাম: “এটা নিশ্চয়ই জঘন্যতম গুনাহ। তারপর কোনটি?” তিনি বললেন: “তোমার সন্তান তোমার সাথে আহারে বিহারে অংশ নিবে এ আশংকায় সন্তানকে হত্যা করা।” আমি বললাম: “এরপর কোনটি?” তিনি বললেন: “তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।”[বুখারি (৪২০৭) ও মুসলিম (৮৬)]
YouTube এ সকল অ্যাসাইনমেন্টের সমধান পেতে আমাদের অফিসিয়াল YouTube চ্যানেলটিতে এখনি সাবস্ক্রাইব করো।
আমাদের চ্যানেলঃ 10 Minute Madrasah
প্রশ্ন প্রকাশ হলে সবগুলো বিষয়ের উত্তর দেওয়া হবে। তাই তোমরা পেজটি সেভ বা বুকমার্ক করে রাখো।
আপডেট পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক পেইজে যুক্ত থাকো
This post was last modified on December 13, 2020 12:00 pm
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কি বার ছিল? আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ তারিখ - দিবস সমূহ ২১ ফেব্রুয়ারি… Read More
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার নাম কি? | সাধারণ জ্ঞান বিষয় - যে দেশে সূচনা/উদ্ভব 🔹️… Read More
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে মূলত বাংলার মানুষকে স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান… Read More
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি… Read More
পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর দেশবাসীকে একটি সর্বজনগ্রাহ্য শাসনতন্ত্র উপহার দিতে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগের… Read More
১৯৭১ সালের ১২ই জানুয়ারি ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ… Read More