নারীর প্রতি সহিংসতামূলক আচরণের কারণগুলাে পরিবার ও এলাকার দৃষ্টিভঙ্গি
৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীবন্ধুদের জন্য আজ নবম শ্রেণির ৬ষ্ঠ এ্যাসাইনমেন্ট এর বিজ্ঞান বিভাগের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের নারীর প্রতি সহিংসতামূলক আচরণের কারণগুলাে পরিবার ও এলাকার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করবো; আজকের আলোচনায় তোমরা নারীর প্রতি সহিংসতামূলক আচরণের কারণগুলাে পরিবার ও এলাকার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট এর করতে সহজ হবে।
আজকের আলোচনা শেষে তোমরা বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের ষােড়শ অধ্যায়: বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা ও এর প্রতিকার থেকে পাঠ-১: সামাজিক নৈরাজ্য ও মূল্যবােধের অবক্ষয়; পাঠ-২: নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে এ্যাসাইনমেন্ট এর নিন্মের প্রশ্নগুলোর সমাধান করতে পারবে-
এ্যাসাইনমেন্ট/নির্ধারিত কাজ:
আপনার জন্য বাছাইকৃত
▶ সপ্তম শ্রেণির গণিত ৬ষ্ঠ এ্যাসাইনমেন্ট এর সমাধান সহায়িকা
▶ ৮ম শ্রেণির ৬ষ্ঠ এ্যাসাইনমেন্ট গণিত সমাধান সহায়িকা
▶ ষষ্ঠ শ্রেণি ৬ষ্ঠ এ্যাসাইনমেন্ট গণিত সমাধান সহায়িকা
নারীর প্রতি সহিংসতামূলক আচরণের কারণগুলাে বর্ণনা কর।
এই ধরনের সহিংসতা রােধে তােমার নিজের পরিবার ও এলাকার দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়?
যে কোনাে একটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন কর।
এখন আমরা নারীর প্রতি সহিংসতামূলক আচরণের কারণগুলাে পরিবার ও এলাকার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মূল আলোচনায় ফিরে যাই; নিজ ঘরেই নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। ইউএনওডিসির গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিশ্বে মোট ৮৭ হাজার নারীকে হত্যা করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৫৮ শতাংশ খুন হয়েছেন একান্ত সঙ্গী অথবা পরিবারের সদস্যদের হাতে। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও জেএনএনপিএফের গবেষণার তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার দুই-তৃতীয়াংশই হয় পারিবারিক পরিমণ্ডলে।
নারী সহিংসতা রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে প্রথমে পরিবারিক সচেতনতা আর পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে নিচের এই বিষয় সবাইকে নজর রাখতে হবে সে যেই ধরনের পরিবারই হোক না কেন? তা না হলে নারীদের সহিংসতা কখনোই বন্ধ হবে না । আজ নাই কোন আইন নাই কোন শাষন চারিদিকে শোষন আর শোষন তাই আমার আপনার সচেতনতাই গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখবে ।
পৃথিবীতে নারীদের নারীদের প্রতি অসম্মান এবং সহিংসতা অনেক আগে থেকেই । এই নারীদেরকে সম্মানের উচ্চ আসনে যিনি বসিয়েছেন তিনি হলেন সবশ্রেষ্ট নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তবে বর্তমানে অনেকে এই বিষয়টাকে উপেক্ষা করে থাকে । অনেকে না বুঝে বলে থাকে ইসলাম নারীকে মর্যাদা দেয় নি। যিনি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম বলেছেন “ মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত”
ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটির ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘নিসা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এ ছাড়া কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।
ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।
একইভাবে আধ্যাত্মিক মহিমা অর্জনের ক্ষেত্রেও নারীর কর্তব্য রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এ কথা সুনিশ্চিত, যে পুরুষ ও নারী মুসলিম মুমিন, হুকুমের অনুগত, সত্যবাদী, সবরকারী, আল্লাহর সামনে বিনত, সাদকা দানকারী, রোজা পালনকারী, নিজেদের সম্ভ্রমের হেফাজতকারী এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণকারী, আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।’ (সূরা-২২ আহজাব, আয়াত: ৩৫)।
নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। মহানবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোষণা করেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)।’ (উম্মুস সহিহাঈন-ইবনে মাজাহ শরিফ)। তাই হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০, যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এবার আসি সহিংসতার বিষয় নিয়ে । সহিংসতার প্রায় ৯৭ শতাংশ ভুক্তভোগীর অভিযোগ আদালতে শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়। নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হন এবং তাঁরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন স্বামী দ্বারা । নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হন এবং তাঁরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন স্বামী দ্বারা ।
নারীর প্রতি সহিংসতামূলক আচরণের কারণগুলাে-
সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা বহুকারন রয়েছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন কাজে নারী সর্বদা অপারদর্শী অদক্ষ হিসেবে পরিগণিত হয়।
বাইরের বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত রাখা, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ক্রমাগত কন্যাসন্তানের জন্ম ও এর ফলে পুত্র সন্তানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা প্রভৃতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে।
অর্থনৈতিক দুরবস্থা আমাদের দেশের যৌতুক প্রথা কে প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করেছে। ক্রমে যৌতুকপ্রথা পরিণত হয়ে উঠেছে সহিংসতাযর হাতিয়ার রূপে। তাছাড়া নারীকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখ, বিভিন্ন সামাজিক কুপ্রথা প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
পুরুষতান্ত্রিক অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গি যেমন-পুরুষ নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, নারীরা স্বামীর সেবাদাসী প্রভৃতি মনোভাব থেকেই নারীর প্রতি সহিংসতার সৃষ্টি হয়। আবার শৈশবের নিজ পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বঞ্চনার অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে একজন পুরুষকে সহিংস করে তুলতে পারে।
কন্যা সন্তানকে শিক্ষাদানের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া, কন্যা সন্তানের প্রতি মা-বাবার উদাসীনতা, পুত্রসন্তানকে প্রাধান্য দেয়া, বিবাহের কন্যার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করার মনোভাব প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতাকে আরো একধাপ বাড়িয়ে দেয়।
নারীর প্রতি সহিংসতা গুরুত্বপূর্ণ কারণ দারিদ্র্য ঘোচে কাজের খোঁজে এসে অনেক নারী সহিংসতার শিকার হয়। এই ধরনের সহিংসতা রােধে তােমার নিজের পরিবার ও এলাকার দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়?
এ ধরনের সহিংসতা রোধে আমার নিজের পরিবার ও এলাকার দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নের যে যে পদক্ষেপ নেয়া যায় তার তালিকা-
১. নারী শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ, বিধবা ভাতা প্রদান এবং নারীর জন্য ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি।
২. নির্যাতন, সহিংসতার ধরন ও প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইন প্রণয়ন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ।
৩. পরিবারের ছেলে মেয়ে উভয়েই পারিবারিক জীবনে নৈতিক মূল্যবোধ গঠন সম্পর্কিত শিক্ষা প্রদান।
৪. নারী অধিকার এবং অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি।
৫. নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের কর্মতৎপরতার সম্প্রসারণ।
৬. নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা।
৭. নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রবর্তিত আইন, যেমন- এসিড অপরাধ দমন আইন, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, যৌতুক প্রতিরোধ আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, বাল্যবিবাহ অধ্যাদেশ, সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ ইত্যাদির যথাযথ প্রয়োগ।
৮. সামাজিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা।
৯. নারীর বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনার প্রভাব ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
১০. নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইন এর বিষয়বস্তু সহজভাবে জনসম্মুখে উপস্থাপন ও প্রচার এবং যথাযথ বাস্তবায়ন করা ।
যে কোনাে একটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন কর:নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আরো অনেক গুলো বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে । এক্ষেত্রে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়রোধ, অপসংস্কৃতিরোধ, নারী ও পুরুষের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, সুস্থ পরিবার গঠন,শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আদর্শ অনুশীলন করা, নারীর ভুমিকা ও মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য।
এছাড়াও সামাজিক চাপ প্রয়োগ করা প্রতিষ্ঠানঃ-
গ্রাম আদালত, ইউনিয়ন পরিষদ প্রভৃতিকে অধিক সক্রিয় করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অপরাধী কিংবা অপরাধীর পরিবারের তরফ থেকে ক্ষতিপূরন আদায়,অপরাধী কে সামাজিকভাবে বয়কট করে এক ঘরে করে রাখা প্রভৃতি চাপসংক্রান্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে সহিংস ঘটনা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অপরাধীকে খূঁজে বের করার ক্ষেত্রেও অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক চাপ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
YouTube এ সকল অ্যাসাইনমেন্টের সমধান পেতে আমাদের অফিসিয়াল YouTube চ্যানেলটিতে এখনি সাবস্ক্রাইব করো।
আমাদের চ্যানেলঃ 10 Minute Madrasah
প্রশ্ন প্রকাশ হলে সবগুলো বিষয়ের উত্তর দেওয়া হবে। তাই তোমরা পেজটি সেভ বা বুকমার্ক করে রাখো।
আপডেট পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক পেইজে যুক্ত থাকো
আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।
Join Our Facebook Group
Hi, I am Jabed Hossain from 10 Minute Madrasah. I am an online graver, working as freelancer. This site is only for gathering knowledge process.