এক নজরে জেনে নিই - আল কোরআনের পরিচয় | 10 Minute Madrasah
এক নজরে জেনে নিই – আল কোরআনের পরিচয়
“নিশ্চয় এ কুরআন বিশ্ব জাহানের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে” [সূরা আশ-শু’আরা- ১৯২]
মানুষের সার্বজনীন কল্যান, দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি হচ্ছে সমগ্র কুরআনের আলোচ্য বিষয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এরশাদ করেন, “কুরআন শিক্ষা সহজ আর আমি তো কুরআন শেখার জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?”
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের সুবিধার্থে পারা, রুকু ও মানজিলে সুবিন্যস্তভাবে সাজানো রয়েছে।
উম্মুহাতুল মুমিনিন হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রাঃ) এর মতে, পবিত্র কুরআনে মোট ৬৬৬৬টি আয়াত রয়েছে।
বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে কুরআনের আয়াত সংখ্যাঃ
ওয়াদার আয়াত – ১০০০
ভীতি প্রদর্শণ মূলক আয়াত – ১০০০
আদেশসূচক আয়াত – ১০০০
নিষেধসূচক আয়াত – ১০০০
উদাহরণ সম্বলিত আয়াত – ১০০০
ঘটনাবলী সম্বলিত আয়াত – ১০০০
হালাল সম্পর্কিত আয়াত – ২৫০
হারাম সম্পর্কিত আয়াত – ২৫০
তাসবীহ সম্বলিত আয়াত – ১০০
বিবিধ আয়াত – ৬৬
পবিত্র কুরআনে মোট ১১৪ টি সূরা রয়েছেঃ
মাক্কী সূরাঃ পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে ৮৬ টি সূরা।
মাদানী সূরাঃ পবিত্র মাদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে ২৮টি সূরা।
পবিত্র কুরআনে মোট ৩০ টি পারা রয়েছেঃ
কুরআন শরীফ সমান ত্রিশ অংশে বিভক্ত করা হয়েছে, এ অংশগুলোকে পারা বলে।
পবিত্র কুরআনে মোট ৫৪০টি রুকু রয়েছেঃ
তারাবিহ নামাজের প্রতি রাকাতে যদি এক রুকু করে তেলাওয়াত করা হয়, তবে সাতাশ তারিখে রাতে (২০* ২৭=৫৪০ রুকু) কুরআন খতম হয়ে যায়। তারাবীহ আদায়ের সুবিধার্থে পবিত্র কুরআনকে রুকুতে ভাগ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে মোট ৭টি মনজিল রয়েছেঃ
আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, একদিন বনী সাকীফের প্রতিনিধিদল হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হলে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট আসতে কিছুটা দেরি হলো। এর কারণ উল্লেখ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমি কুরআনুল কারীম তেলাওয়াতে রত ছিলাম, আজকের দিনের নির্ধারিত অংশ পূরণ করতে কিছু দেরী হয়ে গেছে। আওস সাকাফী এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের প্রাত্যহিক তেলাওয়াতের পরিমাণ জেনে নেন এবং সে হিসেবে পবিত্র কুরআনকে ৭ মনজিলে ভাগ করা হয়েছে।
প্রথম মনজিলঃ সূরা ফাতেহা থেকে সূরায়ে মায়েদার আগ পর্যন্ত।
দ্বিতীয় মনজিলঃ সূরা মায়েদা থেকে সূরায়ে ইউনুসের আগ পর্যন্ত।
তৃতীয় মনজিলঃ সূরা ইউনুস থেকে সূরায়ে মারইয়ামের আগ পর্যন্ত।
চতুর্থ মনজিলঃ সূরা মারইয়াম থেকে সূরায়ে শুআরার আগ পর্যন্ত।
পঞ্চম মনজিলঃ সূরা শুআরা থেকে সূরায়ে সাফফাতের আগ পর্যন্ত।
ষষ্ঠ মনজিলঃ সূরা সাফফাত থেকে সূরায়ে কাফ এর আগ পর্যন্ত।
সপ্তম মনজিলঃ সূরা কাফ থেকে সূরায়ে নাস এর শেষ পর্যন্ত।
বিশুদ্ধভাবে আল-কুরআন পাঠের ফযিলতঃ
অন্তরে প্রশান্তি লাভঃ সত্যিকার মুমিন বান্দার অন্তর আল্লাহর জিকির তথা কুরআনুল কারীম তিলাওয়াতের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন- “যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহ্ জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়। [সূরা আর-রা’দঃ ২৮]
অপরিসীম নেকী লাভঃ আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন মাজীদ) এর একটি বর্ণ পাঠ করবে, তার একটি নেকী হবে। আর একটি নেকি দশটি নেকীর সমান হয়। আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ, মীম একটি বর্ণ। (অর্থাৎ তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত ‘আলিফ-লাম-মীম’ যার নেকীর সংখ্যা হবে তিরিশ) [তিরমিযীঃ ২৯১০, হাসান]
আল্লাহর দরবারে শ্রেষ্ঠত্ব লাভঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বশেষ্ঠ, যে আল-কুরআন নিজে শেখে ও অন্যকে শেখায়’ [বোখারী]
আল্লাহর দয়া লাভঃ হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ানো এবং তেলাওয়াতের কারণে আমার কাছে কিছু চাইতে পারল না, আমি তাকে প্রার্থনাকারীর চেয়েও বেশি দান করি। সুবহানাল্লাহ!
কুরআন বান্দার পক্ষে সুপারিশ করবেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তোমরা কুরআন পাঠ কর। কেননা কিয়ামত দিবসে কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে। [মুসলিম]
জান্নাতে উচ্চ মাকাম লাভঃ কিয়ামত দিবসে কুরআন অধ্যায়নকারীকে বলা হবে, কুরআন পড় এবং উপরে উঠো। যেভাবে দুনিয়াতে তারতীলের সাথে কুরআন পড়তে সেভাবে পড়। যেখানে তোমার আয়াত পাঠ করা শেষ হবে, জান্নাতের সেই সুউচ্চ স্থানে হবে তোমার বাসস্থান। [তিরমিজি]
তেলাওয়াতকারীর মা-বাবাকে মার্যদা দানঃ নবী করীম (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে, শিক্ষা করবে ও তদানুযায়ী আমল করবে, তার পিতা-মাতাকে দুটি পোশাক পরিধান করান হবে, যা দুনিয়ার সকল বস্তুর চেয়ে অধিক মূল্যবান। তারা বলবে, কোন আমলের কারণে আমাদেরকে এত মূল্যবান পোশাক পরানো হয়েছে? উত্তর হবে তোমাদের সন্তানের কুরআন গ্রহণ করার কারণে। [হাকেম]
এত অপরিসীম ফযিলত কুরআন তেলাওয়াতে। তবে শর্ত হচ্ছে সে তেলাওয়াত অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে অন্যথায় তা খুবই দুঃখজনক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “অনেক কুরআন পাঠকারী এমন রয়েছে, কুরআন যাদেরকে অভিসম্পাত করে”। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রিয় হওয়ার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। কেননা কুরআন শিক্ষা করা, মুখস্থ করা ও তাতে দক্ষতা লাভ করার ফযিলত সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে এবং তা মুখস্থ করবে এবং (বিধি-বিধানের) প্রতি যত্নবান হবে, সে সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কুরআন পাঠ করবে এবং তার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে সে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে। [বুখারী, মুসলিম]
বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে হলে যা করতে হবেঃ
বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে হলে যা কিছু জানতে হবেঃ
পবিত্র কুরআনুল কারিমকে শুদ্ধ করে তেলাওয়াত করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই যে বিষয়গুলো জানতে হবে তা হলোঃ
১. মাখরাজঃ মাখরাজ শব্দের অর্থ বের হওয়ার স্থান। যে স্থান থেকে আরবী হরফসমূহ বের হয় তাকে মাখরাজ বলে। গলা, মুখ, ঠোট এ তিনটি স্থানের ১৭টি পয়েন্ট থেকে আরবী হরফসমূহ উচ্চারন হয়। এ বইয়ে আমরা সেই ১৭টি পয়েন্ট চিত্রসহ আলোচনা করেছি। মাখরাজ মুখস্থ করতে হবে না বরং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা আরবী হরফসমূহকে তার নির্দিষ্ট স্থান থেকে উচ্চারণ করা শিখে যাব ইনশা-আল্লাহ্॥
২. মাদ্দঃ কোন হরফকে দীর্ঘ করে উচ্চারণ করাকে মাদ্দ বলে। কুরআনুল কারিম বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াতের জন্য কোথায় মাদ্দ করতে হবে সেটা জানা অপরিহার্য। মাদ্দের চারটি নিয়ম ও তিনটি চিহ্ণ জানতে হবে।
৩. গুন্নাহ্ঃ কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ن ও مِ এবং দুই যবর/দুই যের/ দুই পেশ যুক্ত হরফকে সেই হরফের মাখরাজ থেকে নয় বরং নাক থেকে গুনগুন করে পড়াকে গুন্নাহ্ বলে। এ গুন্নাহ করাটা কখনো কখনো ওয়াজিব। আলহামদুলিল্লাহ্! মাত্র পাঁচটি নিয়ম জানলে পুরো কুরআনুল কারীম নির্ভূলভাবে গুন্নাহ্ আদায় করা যায়।
নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে যদি শুধুমাত্র (মাখরাজ, মাদ্দ ও গুন্নাহ) এ তিনটি বিষয়কে আয়ত্ত করতে পারি তবে আমাদের অজানা আর তেমন কিছু থাকবে না। গুন্নাহ্র ৫টি নিয়ম,মাদ্দের ৪টি নিয়ম ও ৩ টি সংকেত। সুতরাং গুন্নাহ্ ও মাদ্দের মাত্র ৯ টি নিয়ম। এ ৯ টি নিয়ম মুখস্থ করতে হবে, মাখরাজ মুখস্থ করা নয় বরং নিয়মিতভাবে অনুশীলন করতে হবে।
কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের আদবঃ
YouTube এ সকল অ্যাসাইনমেন্টের সমধান পেতে আমাদের অফিসিয়াল YouTube চ্যানেলটিতে এখনি সাবস্ক্রাইব করো।
আমাদের চ্যানেলঃ 10 Minute Madrasah
প্রশ্ন প্রকাশ হলে সবগুলো বিষয়ের উত্তর দেওয়া হবে। তাই তোমরা পেজটি সেভ বা বুকমার্ক করে রাখো।
আপডেট পাওয়ার জন্য আমাদের ফেসবুক পেইজে যুক্ত থাকো
This post was last modified on November 22, 2020 7:48 pm
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার প্রায় ২১… Read More
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস… Read More
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শেখ রাসেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট… Read More
১৯৭৫ সালের ১৪ই জুন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এটি… Read More
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। কমনওয়েলথের ভ্রাতৃবৃন্দের… Read More
১৯৭৪ সালের ১১ই মার্চ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ… Read More
View Comments
মাশাআল্লাহ অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে