নবীজি (দঃ) এর আহলে বায়তের মহব্বত বা ভালবাসার প্রয়োজনীয়তা
আহলে বায়ত কারা?
আহলে বায়ত হলেন বস্তুত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটতম অতীব প্রিয় ও স্নেহের পাত্র এবং প্রিয়নবীর পরিবারভুক্ত সদস্যগণ। পবিত্র কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেছেন-
يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ
وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
[(سوره احزاب - ایت (33]
অর্থাৎ,
হে আহলে বায়ত! নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক চান, তোমাদের থেকে যাবতীয় অপবিত্র দূর করতে এবং আরো চান তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পুত: পবিত্র করতে।
[সূরা আহযাব: আয়াত-৩৩]
হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম রাব্বুল আলামীনের দরবারে এভাবে ফরিয়াদ জানালেন-
اللَّهُمَّ هؤلاءِ أَهْلِ بَيْتِي وَخَاصَّتِي فَاذْهَبْ عَنْهُمُ الرِّجْسَ وَطَهِّرَهُمْ تَطْهِيرًا
অর্থাৎ,
হে আল্লাহ্! এরাই আমার আহলে বায়ত এবং বংশীয় ও ঘনিষ্ট আপনজন, আপনি এদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করুন আর এদেরকে পরিপূর্ণভাবে পবিত্র করুন।
[মুসলিম শরীফ বরাতে মেশকাত শরীফ, পৃ. ৫৬৮]
মুহাক্বক্বিক্ব ওলামায়ে কেরামের অনেকেই বলেছেন-
আহলে বায়তে রসূল হলেন শেরে খোদা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, হযরত মা ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা, হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা এবং তাদের আওলাদগণ আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার বিবিগণ তথা মুসলিম জাহানের মাতাগণকে আহলে বায়তে রসূলের মধ্যে গণ্য করেছেন। তাই এদের ফজিলত ও মান মর্যাদা অপরিসীম। আহলে বায়তগণ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার প্রিয়ভাজন ও স্নেহের পাত্র। তাই তাঁদের প্রতি মুহাব্বত রাখা ও তাঁদেরকে ভালোবাসার জন্য সরাসরি মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ রয়েছে। সেদিকে নির্দেশ করেই আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনুল করীমে এরশাদ করেন-
قُلْ لا أَسْئَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبى
অর্থাৎ,
(হে হাবীব) আপনি বলেদিন যে, আমি (রাসূল) তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান (বিনিময়) চাইনা, আমার বংশধরগণ ও নিকটাত্মীয়দের (প্রতি তোমাদের) ভালোবাসা ব্যতীত।
[সূরা শূরা, আয়াত-২৩]
এই আয়াতে কারীমা নাজিল হলে সাহাবায়ে কেরাম নবীজী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার নিকট বিনয়ের সাথে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনার নিকটাত্মীয় কারা? তখন হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম উপরে বর্ণিত হাদীসটি এরশাদ করেন। আহলে বায়তদেরকে ভালোবাসার ব্যাপারে তবরানী শরীফে বর্ণিত রয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম
এরশাদ করেন-
لا يُؤْمِنُ عَبْدِ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ نَفْسِهِ وَتَكُونُ عِتْرَتِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ عَثْرَتِهِ وَأَهْلِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَهْلِهِ وَذَاتِي
الْحَدِيث
অর্থাৎ,
কোন বান্দা ততক্ষণ মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমাকে তার নিজের সত্ত্বা থেকে বেশি ভালবাসবে না, আর আমার বংশধরকে তার বংশধর থেকে বেশি ভালবাসবে না, আমার পরিবার-পরিজনকে তার পরিবার-পরিজন থেকে বেশি ভালোবাসবে না।
আল-হাদিস
ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন তথা নবী বংশধরকে ভালোবাসা তাঁদের মত ও পথকে আঁকড়িয়ে ধরা মুসলমানের ওপর ঈমানী দায়িত্ব।
আহলে বায়তের মর্যাদা ও সম্মানের ব্যাপারে খলিফাতুল মুসলেমীন হযরত আবু বকর সিদ্দীকু রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, (যার হাতে আমার প্রাণ ও সত্তা, তাঁর শপথ) আমার নিকট আমার আত্মীয়গণ অপেক্ষা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আত্মীয় ও বংশধরেরা ভালোবাসার দিক দিয়ে অধিক প্রিয়।
[সহীহ বুখারী শরীফ ও আশশরফুল মুয়াববাদ, পৃ. ৮৭]
ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলায়হি বলেন,
আমি আহলে বায়তে রসূলকে এত বেশি ভালোবাসতাম যে, তা দেখে লোকেরা আমাকে রাফেজী বলা শুরু করল, আমি তাদেরকে জবাবে বললাম, আলে রাসূলের প্রতি ভালোবাসার নাম যদি রাফেযী হয়, তাহলে হে জিন জাতি ও মানব জাতি এবং বিশ্ববাসী সাক্ষী হয়ে যাও, আমি রাফেজী অর্থাৎ আহলে বায়তে রসূলের প্রতি অধিক ভালবাসার নাম রাফেজী নয় বরং তাদের প্রতি অধিক ভালবাসার নামে সাহাবায়ে রাসূলের প্রতি বেয়াদবী ও কটুক্তি করাই শিয়া-রাফেজীদের অন্যতম নিদর্শন। এরপর আহলে বায়তের প্রতি মহব্বতে তিনি আরো বলেন,
হে নবীজির বংশধরগণ, আপনাদেরকে মহব্বত করা বা ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয। আর এ হুকুম মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআনে নাযিল করেছেন। তদ্রুপ তাঁদের সাথে যারা শত্রুতা পোষণ করবে তারা মূলত আল্লাহ্ ও রসূলের সাথে শত্রুতা পোষণ করে।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনে-
اشتد غَضَبُ الله عَلَى مَنْ آذَانِي فِي عَشِيرَتِي - الحديث
অর্থাৎ আল্লাহর ক্রোধ অতীব কঠোর ও কঠিন হবে যারা আমার বংশধরকে কষ্ট দিয়েছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, যে আমার বংশধরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে আমার সাথেই বিদ্বেষ পোষণ করল, কারণ নবী পাক সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
حُسَيْنٌ مِنِّي وَأَنَا مِنْ حُسَيْنِ أَحَبَّ اللَّهُ مَنْ أَحَبَّ حُسَيْنًا
অর্থাৎ,
হোসাইন আমার থেকে আমি হোসাইন থেকে, যে হোসাইনকে ভালোবাসে মহান আল্লাহ্ তা'আলা তাকে ভালোবাসে। সুতরাং আহলে বায়তে রসূলকে ভালোবাসাই আল্লাহর পক্ষ হতে ফরয করা হয়েছে এবং রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশও রয়েছে।
[আশিশরফুল মুয়াববদ, কৃত, আল্লামা ইউসুফ নাবহানী রহ. ও খোতবাতে মহররম কৃত, মুফতি জালাল উদ্দিন আমজাদী রহ, ইত্যাদি]
আরও পড়ুন...............
নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।