দাঁতের পরিচর্যায় মিসওয়াকের উপকারিতা

 

দাঁতের পরিচর্যায় মিসওয়াকের উপকারিতা 

দাঁতের পরিচর্যায় মিসওয়াকের উপকারিতা



মিসওয়াক কি?

মিসওয়াক হলো গাছের ডাল বা শিকড়। যা দিয়ে দাঁত মাজা ও পরিষ্কার করা হয়। দাঁত মাজাকেও মিসওয়াক বলা হয়।

মিসওয়াকের গুরুত্ব:

মেসওয়াকের মাধ্যমে দাঁত পরিস্কার করা আল্লাহ তাআলার নিকট অত্যান্ত পছন্দনীয় কাজ। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিশেষ যত্নবান ছিলেন এবং উম্মতকে অনেক তাকিদ দিয়েছেন। এ প্রসংগে হযরত আবু উমামা (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য, 

তিনি বলেনঃ

عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ما جاءني جبريل قط إلا أمرني بالسواك حتى لقد خشيت أن أحفي مقدم فمي»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এমনটি কখনো হয়নি যে, জিবরাইল (আ) আমার নিকট এসেছেন আর আমাকে মেসওয়াকের আদেশ দেননি। এতে আমার আশংকা হচ্ছিল যে, (মেসওয়াকের কারণে) আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি।
(আল মুযামুল কাবীর লিত তবারানী, হাদীস নং৭৮৪৭, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২২২৬৯)

অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

لولا أن أشق على أمتي أو على الناس لأمرتهم بالسواك مع كل صلاة»

আমি যদি উম্মতের উপর (কষ্ট হবার) আশংকা না করতাম তাহলে প্রত্যেক নামাজেই মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম। 

(বুখারী শরীফ, হাদীস নং৮৮৭, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং২৫২)

কুরআন হাদিসের আলোকে বান্দার হককের গুরুত্ব

মিসওয়াকের উপকারিতা 

ফরজ ওয়াজিব ইবাদত পালনের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে সুন্নাত পালনের ব্যাপারে ইসলাম ও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদ্বুব্ধ এবং গুরুত্বারোপ করেছেন। আর মিসওয়াক করা প্রিয়নবীর রেখে যাওয়া অতি বরকতময় একটি সুন্নাত ।

হাদীসে পাকে মিসওয়াক করার ফযিলত ও উপকারিতা সম্পর্কে প্রায় ৪০টি হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে দু' একটি বরকত ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত হলঃ


عَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السَّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْقَمَ مَرَ ضَاةٌ لِلرَّبِّ [رَوَاهُ مِشْكواة]

অর্থাৎ, 

উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, মিসওয়াক হলো মুখ পবিত্র রাখার মাধ্যম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় । 

[ মিশকাত শরীফ, পৃ. ৪৪ ]

অপর একটি হাদীসে মিসওয়াক করার ফজিলত প্রসঙ্গে প্রিয়নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

 عَنْ عَائِشَة قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَفْضَلُ الصَّلوة الَّتِى يستاك لها على الصلوة التي لا يستاك لها سبعين ضعفا [ رواه البيهقى - مشكوة صفحه 145 

অর্থাৎ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নামাযের জন্য (ওযূর সময়) মিসওয়াক করে আদায়কৃত নামায ওই নামায অপেক্ষা ৭০ (সত্তর) গুণ বেশী সাওয়াবের অধিকারী, যে নামাযে মিসওয়াক করা হয় নাই ।

[বায়হাকী ও মিশকাত শরীফ, পৃ. ৪৫]

তাছাড়া প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো

এরশাদ করেছেন,

لوْلا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لا مرتُهُمْ بِالسَّوَاكِ عِنْدَ كُلَّ

صلوةٍ وَلَاخَرْتُ صَلوة الْعِشَاءِ إِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ الخ .. رواه الترمذى وابوداؤد - مشكوة - صفحه 145

অর্থাৎ যদি আমি আমার উম্মতের উপর কঠিন মনে না করতাম, তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের (অযূর) সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম এবং এশার নামাযকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করে আদায় করার আদেশ করতাম ।

[তিরমিযি ও আবু দাউদ ও মিশকাত শরীফ, পৃ. ৪৫]

এ ছাড়া হাদীসে পাকে প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করা অধিকাংশ নবীদের তরিকা ও ফিতরত বা স্বভাবজাত অভ্যাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই এর মধ্যে ইহ ও পরকালীন ফায়দা বিদ্যমান। 



যেমন (ক.) ইহকালীন ফায়দাসমূহঃ 

১. মস্তিষ্ক সজীব হয়, 

২. দাঁত জীবানুমুক্ত হয়, 

৩. দাঁতের ক্যালসিয়াম পূরণ হয়, 

৪. দারিদ্রতা দূর হয় এবং সচ্ছলতা আসে, 

৫. স্মৃতি শক্তি। বৃদ্ধি পায়, 

৬. মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, 

৭. দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়, 

৮. পাকস্থলী রোগমুক্ত হয়, 

৯. চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয় ও 

১০. হৃদয় পরিচ্ছন্ন হয় ইত্যাদি ।



(খ) পরকালীন ফায়দা বা উপকারঃ 

১. ইবাদতে বিশেষতঃ নামাযে ৭০ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি হয়, 

২. মৃত্যুর সময় কালমা নসীব হয়, 

৩. গুনাহ্ হতে মুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণের সুযোগ হয়, 

৪. মিসওয়াক কারীর জন্য জান্নাতের দরজা খোলে দেওয়া হয়, 

৫. জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় 

৬. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও সুন্নাত পালনের সওয়াব অর্জিত হয়, 

৭. মিসওয়াককারীর সাথে ফেরেশতারা ইস্তেগফার ও মুসাফাহা করেন, 

৮. ইবাদতে আনন্দ সৃষ্টি হয় এবং ৯. আমলনামা ডান হাতে লাভ করবে ইত্যাদি ।

মিরকাত শরহে মিশকাত গ্রন্থের ২য় খন্ডের ৩য় পৃষ্ঠায় হযরত শেখ মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহ. উল্লেখ করেন, মিসওয়াকের ৭০টি উপকার রয়েছে, তন্মধ্যে সর্বনিম্নটি হলো মৃত্যুকালে কালমা নসিব হবে।

 [মেরকাত শরহে মিশকাত, কৃত মোল্লা আলী কারী হানাফী রহ. ও মেরাত শরহে মেশকাত, কৃত, মুফতি আহমদ ইয়ারখান নঈমী রহ. মিসওয়াক অধ্যায়]


মিসওয়াক করার পদ্ধতি:

রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাইতুন ও খেজুর গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করেছেন। তাই এই দুটো হলে উত্তম।  এছাড়া তিক্তস্বাধ যুক্ত গাছের ডাল হলেও ভাল। মেসওয়াক কাচা ও নরম গাছের ডাল হওয়া উচিত, এতে মেসওয়াকে বাড়তি ফায়দা হাসিল হয়।

মেসওয়াক নিজ হাতের আঙ্গুলের মত মোটা ও এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। এতে মেসওয়াক করতে যেমন সুবিধা হবে তেমনি বেশী ফায়দাও পাওয়া যাবে।

অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে উযুতে হাত ধোয়ার পর কুলি করার পূর্বে মেসওয়াক করা উত্তম। তবে কোন কোন আলিম উযুর পূর্বে মেসওয়াক করার কথাও বলেছে। উযুর সময় ছাড়াও যে কোন সময় মেসওয়াক করা যাবে।

মেসওয়াক ধরার পদ্ধতি হল, ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি মেসওয়াকের নিচে থাকবে। মধ্যমা ও তর্জনী উপরে ও বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচে রেখে মেসওয়াক ধরা। এতে করে মুখের ভিতর ভালভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেসওয়াক করা যায়। এপদ্ধতিটি হযরত ইবনে মাসউদ রাযি থেকে বর্ণিত আছে।

মেসওয়াক করার মাসনূন পদ্ধতি হল, মুখের ডান দিক থেকে শুরু করা এবং উপর থেকে নিচে মেসওয়াক করা। আড়াআড়ি ভাবে না করা। মেসওয়াক করার সময় দাঁতের ভিতর বাহির সহ মেসওয়াক করা এবং জিহবাও গোড়া পর্যন্ত মেসওয়াক করা।

মেসওয়াসের মাঝে দুটি বিষয় সুন্নত, এক. মুখ পরিষ্কার করা। দুই. গাছের ডাল হওয়া। তাই গাছের ডাল ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে দাঁত মাজলে একটি সুন্নত আদায় হবে। অপরটি হবেনা। সুতরাং মেসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল ও শুকনো কাপড় দ্বারাও মেসওয়াক করা যেতে পারে। ব্রাশের মাধ্যমেও দাঁত মাজা যেতে পারে।

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর ও ঘুমানোর পূর্বে, নামাজের আগে, মজলিসে উপস্থিত হবার পূর্বে, কুরআন ও হাদীস পাঠের পূর্বে, খাওয়ার পর মেসওয়াক করা মুস্তাহাব

আল্লাহ আমাদের মেসওয়াকের গুরুত্ব অনুধাবন করে এর উপর আমল গড়ার তাউফিক দান করুন। আমীন


আরও পড়ুন............... 


  • আকীকা কি? আকীকা করা কি সুন্নাত? 

প্রশ্নোত্তরস্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর স্বামীর ঘরে থাকা যাবে কিনা?
প্রশ্নোত্তরমৃত ব্যক্তির কবরে কলেমা বা দো যা বরকতের আহাদনামা দেয়া যাবে কিনা?
প্রশ্নোত্তরইল্লাল্লাহ্ জিকির করা যাবে কিনা?
প্রশ্নোত্তরমোবাইলে পবিত্র ক্বোরআন শরীফহাদীস শরীফ থাকলে সাথে নিয়ে পায়খানা - প্রস্রাবখানায় যাওয়া যাবে কিনা?
প্রশ্নোত্তরএকই ব্যক্তির একাধিকবার জানাযার নামায পড়া।
ফরজ নামায জমাতসহকারে আদায হওয়ার পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে সাথে নিয়ে মুনাজাত করা জায়েয কিনা?
জামাতের সময় মুসল্লিগণ কখন দাঁড়াবেন?
ব্যাংকে ‘এফ.ডি.আর’ করেছে মসজিদ কমিটি।এফ.ডি.আর.’ হতে প্রতি মাসে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দিয়ে ইমামমুয়াজ্জিন  মসজিদের খাদেমদের মাসিক সম্মানি এবং মসজিদের অন্যান্য কাজ সম্পাদন করা জায়েয হবে কিনা?
মহান আল্লাহ তা' আলার পরিচয় ( ইসলামী জীবন )
প্রশ্ন: রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার সাহাবী হযরত আমিরে মু’আবিয়াহ্ কি কাফের ছিলেন?

নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট  পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। 


  • 10 Minute Madrasah ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন
  • 10 Minute Madrasah ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন
  • 10 Minute Madrasah ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন
  • গুগল নিউজে 10 Minute Madrasah সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
  • 10 Minute Madrasah সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে
  • প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.10minutesmadrasah.com সাইট।
  • একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Be alert before spamming comments.

    নবীনতর পূর্বতন

    Sponsored

    Responsive Ad