ইসলামী প্রশ্ন ও প্রশ্নের শরয়ী উত্তর
প্রশ্নোত্তর: নাভীর নিচের লোম কাটার বা মুন্ডানোর সীমা কতটুকু ও মেয়াদ কতদিন ?
প্রশ্ন: নাভীর নিচের লোম কাটার বা মুন্ডানোর সীমা কতটুকু ও মেয়াদ কতদিন। ভুলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়াদ অতিবাহিত হলে করণীয় কি? ক্বোরআন-হাদীসের আলোকে জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর: নারী-পুরুষের নাভীর নিচে বগলের লোম উপড়িয়ে/ মুন্ডিয়ে পরিষ্কার করা সুন্নাতে আম্বিয়া। মুস্তাহাব হল প্রতি সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করা। না পারলে ১৫ দিনে একবার পরিষ্কার করা। তবে চল্লিশ দিনের বেশি যেন না হয়। এ প্রসঙ্গে হাদীসে পাকের বর্ণনা নিম্নরূপ-
عن انس بن مالك قال وقت لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم حَلْقَ العَانَةِ وتقلِيمَ الاظفار وقَصَّ الشارب ونتف الاِبطِ أربعين يومًا مرّةً- (رواه مسلم-২৫৮)
অর্থাৎ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য ৪০ দিনে কমপক্ষে একবার নাভীর নিচের লোম/চুল পরিষ্কার করার, নখ কাটার, গোঁফ ছাঁটার এবং বগলের নিচের পশম মুন্ডানোর সময়-সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। [সহীহ মুসলিম শরীফ: হাদীস নম্বর ২৫৮]
তাছাড়া এসব নবীদের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই ৪০ দিনের বেশি পরিষ্কার না করে এভাবে রেখে দেয়া সুন্নাতের পরিপন্থী এবং মাকরূহ। [সহীহ মুসলিম শরীফ: হাদীস নম্বর ২৫৮]
প্রশ্নোত্তর: জানাযা পড়ার জন্য লাশ নেয়ার সময় যে দরূদ শরীফ পাঠ করিতা কেউ সম্পূর্ণ পাঠ করি না।এ পদ্ধতি ঠিক আছে কি না?
প্রশ্ন: বর্তমানে আমরা জানাযা পড়ার জন্য লাশ নেয়ার সময় যে দরূদ শরীফ পাঠ করি তা কেউ সম্পূর্ণ পাঠ করি না।এ পদ্ধতি ঠিক আছে কি না? না থাকলে সঠিক নিয়ম জানিয়ে ধন্য করবেন।
উত্তর: জানাযার নামাযের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় দরূদ শরীফ, কলমায়ে তৈয়্যবা শরীফ ইত্যাদি পাঠ করা সাওয়াব ও মৃতের জন্য উপকারী। তাই যে কোন দরূদ শরীফ পাঠ করা যাবে এবং পরিপূর্ণ পাঠ করা উচিত। অনেক জায়গায় লাশ বহনের সময় ‘‘আল্লাহু রাব্বী
- মুহাম্মদ নবী’’ উচ্চারণ বা পাঠ করা হয় এক্ষেত্রে মুহাম্মদ নবী কয়েক বার বলার পর মুহাম্মদ নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলা উচিত। কলমার ক্ষেত্রে ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ পাঠ করা উচিত। দাফনের জন্য বা নামাযে জানাযা আদায়ের জন্য মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় মুসল্লি ও আত্মীয়-স্বজনরা লাশের পেছনে পেছনে যাবে এবং দুনিয়াবী বাজে ও বেহুদা কথা-বার্তা না বলে জিকির-আজকার ও দো’আ-দরূদ পড়বে, কলমায়ে তৈয়্যবা ও কলমায়ে শাহাদাতও পড়তে পারবে। আল্লাহু রাব্বী মুহাম্মদুন্ নবীয়্যী অর্থাৎ আল্লাহ্ আমার প্রভু, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমার নবী পড়ার প্রচলন যেখানে আছে তা পড়বে এটা মুস্তাহাব ও ফজিলতময় সাথে সাথে দাফনের পর কবরের প্রশ্নের জওয়াবও হয়ে যায়।
প্রশ্নোত্তর: শয়তানের ফিতনা/বিভ্রান্ত হতে বাঁচার দো’আ
প্রশ্নোত্তর: কবরের পাশে ক্বোরআন তেলাওয়াত ও জিয়ারতের হুকুম কি? জনৈক মওলভী বলেন- এটা নাজায়েয। এ ব্যাপারে ফায়সালা জানতে চাই।
প্রশ্ন: কবরের পাশে ক্বোরআন তেলাওয়াত ও জিয়ারতের হুকুম কি? জনৈক মওলভী বলেন- এটা না-জায়েয। এ ব্যাপারে ফায়সালা জানতে চাই।
উত্তর: মুসলিম জীবনে কবর জিয়ারত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় আমল। প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অসংখ্য বার জান্নাতুল বাকী শরীফ এবং বিভিন্ন কবর জিয়ারত করেছেন এবং উম্মতকে জিয়ারত করার হুকুম দিয়েছেন। সুতরাং জিয়ারত সম্পূর্ণ ক্বোরআন-হাদীস এবং শরীয়ত সম্মত একটি নেক আমল। قال النؤوى وأجمعوا عَلَى أنَّ زيارتها سنة لهم- অর্থাৎ- ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন- উম্মতের ইজমা হয়েছে যে, কবর জিয়ারত করা সুন্নাত।
[মিরকাত শরহ মিশকাত: ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ১২৫৫]
হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে-
عن ابن مسعود ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال كُنتُ نهبيتكُمْ عن زيارة القبور فزوروها فانها تزهدُ فى الدنيا وتذكر الاخرة- (رواه ابن ماجه)
অর্থাৎ- প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইতিপূর্বে আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত (বিভিন্ন কারণে) নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর। কেননা এটা দুনিয়ার প্রতি বিমুখ করে ও আখেরাতের কথা স্মরণ করে দেয়।
[সুনানে ইবনে মাজাহ: হাদীস নম্বর ১৫৭১, সুনানে দারে কতুনী: হাদীস নম্বর- ৪৬৭৯, মুস্তাদরাকে হাকেম: হাদীস নম্বর – ৭১৯৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ্: হাদীস নম্বর- ১১, ৮০৯]
উপরোক্ত হাদীস পাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর নূরানী ইরশাদ فَزُورُوْاها অর্থাৎ- তোমরা কবর জিয়ারত কর। প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর এরূপ বলা দ্বারা স্পষ্টভাবে কবর জিয়ারত করা সুন্নাত প্রমাণিত হয়ে যায়। কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ক্বোরআন তেলাওয়াত, দোআ-দরূদ পাঠ করা এবং কবরবাসীর জন্য দোআ করাও হাদীসে পাক হতে প্রমাণিত। যেমন-
عن ابى هريرة رضى الله عنه انّ رسول الله صلى الله عليه وسلم خرج الى المقابر فقال السلام عليكم دار قوم مؤمنين وانّا أن شاء الله بكم لاحقون- (مسند احمد)
অর্থাৎ- প্রখ্যাত সাহাবী ও সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত ‘নিশ্চয় (একদা) আল্লাহর নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানের উদ্দেশ্যে বের হলেন এবং কবরবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, হে মু’মীন সম্প্রদায়! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। অতি শীঘ্রই আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হব।
[মুসনাদে আহমদ: হাদীস নম্বর ৮৮৭৮]
তাছাড়া ফিক্হের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ র্দুরুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার কিতাবদ্বয়ে কবর জিয়ারতকে মুস্তাহাব উল্লেখ করেছেন। প্রতি সপ্তাহে একদিন মুরব্বী ও আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করা অতি উত্তম ও ফজিলতময়। তবে জুমাবার, বৃহস্পতিবার, রবিবার অথবা সোমবার জিয়ারত কবুলের জন্য বেশী উপযোগী, উত্তম হল শুক্রবার সকাল বেলা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরস্থানে গিয়ে সূরা ফাতেহা শরীফ, যদি সম্ভব হয়, সূরা বাকারার ১ম অংশ ‘আলিফ লা-ম’ থেকে ‘মুফলিহুন’ পর্যন্ত, আয়াতুল কুরসি, ‘আ-মার্নারসূলু’ শেষ পর্যন্ত, সূরা ইয়াছিন, সূরা মূলক বা তাবারাকাল্লাজী, সূরা তাকাসূর, সূরা ইখলাস- ৩/৭/১১ বার এবং দরূদ শরীফ পাঠ করা অতি উত্তম।
এসব তেলাওয়াত করে কবরবাসীদের জন্য সওয়াব বখশিশ করা নেহায়ত উত্তম তরিকা। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, ‘‘কবর জিয়ারতকালে যে এগার বার সূরা ইখলাস তেলাওয়াত করে সওয়াব মৃত ব্যক্তিদের রূহে বা কবরে পৌঁছাবে উক্ত কবরস্থানে যত কবরবাসী আছে তাদের সমান সওয়াব জিয়ারতকারী পাবে। কবর জিয়ারতকালে উল্লেখিত সূরাগুলো তেলাওয়াত করা জায়েয ও উত্তম হলে গোটা ক্বোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা কেন নাজায়েয হবে? বরং সম্পূর্ণ ক্বোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব তো আরো বেশী। সুতরাং কবর জিয়ারত এবং জিয়ারতকালে ক্বোরআন শরীফ হতে তেলাওয়াত এবং বিভিন্ন দোআ-দরূদ তেলাওয়াত করা অতি বরকতময় ইবাদত। এটাকে নাজায়েয বা বিদআত ইত্যাদি বলা মূর্খতা, হঠকারিতা এবং দ্বীন-শরীয়ত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করার নামান্তর। বরং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরামকে সাথে করে জান্নাতুল বাকি ও শোহাদায়ে উহুদের জিয়ারত করেছেন এবং দোআ করেছেন মর্মে হাদীসে বর্ণিত আছে।
[মুসান্নাফে আবি শায়বাহ্, মেরকাত শরহে মিশকাত, শরহে সূদূর ইত্যাদি]
আরও পড়ুন...............
নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।