কুরআন হাদিসের আলোকে বান্দার হককের গুরুত্ব
হক (অধিকার) সাধারণত দুই ধরনের।
এক. হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক।
দুই. হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক।
আল্লাহর হক বলতে আমরা ইমান, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত ইত্যাদি ইবাদতকে বুঝি। বান্দার হক বলতে বান্দার সঙ্গে সম্পৃক্ত হকগুলোকে বুঝি। এ রকম বহু হক রয়েছে। যেমন পারস্পরিক টাকা-পয়সার লেনদেন, টাকা-পয়সার আমানত, কথার আমানত, পারস্পরিক ইজ্জত-সম্মান রক্ষাসহ আরও অনেক কিছু। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বান্দার হক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন।
এ সম্পর্কে ইসলামী শরিয়তের বিধান হলো- যে পর্যন্ত এক বান্দা অন্য বান্দার হক (যার হক সে নষ্ট করেছে) যথাযথভাবে আদায় না করবে বা বান্দার থেকে ক্ষমা চেয়ে না নেবে সে পর্যন্ত আল্লাহও তাকে ক্ষমা করবেন না। একজন মানুষের কাছে অন্য মানুষের টাকা-পয়সা থেকে নিয়ে তার ইজ্জত-আব্রুসহ সবকিছুই আমনত। তা রক্ষা করা প্রত্যেক মানুষ বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। কারও নামে মিথ্যা রটানো, কিংবা কারও ইজ্জত-আব্রু নষ্ট করে তাকে কষ্ট দেওয়ার দ্বারা মূলত তার হক নষ্ট করা হয়।
আল্লাহর হক বা অধিকারকে হাক্কুল্লাহ্ বলা হয়। এ হক বা অধিকার মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত। তিনি বান্দার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে ক্ষমা করে দিতে পারেন আবার শাস্তিও দিতে পারেন, এটা সম্পূর্ণ মহান আল্লাহ্ তা'আলার এখতিয়ার বা ইচ্ছাধীন। আর বান্দার সাথে সম্পর্কিত হক সমূহকে হাক্কুল ইবাদ বলা হয়। যা বান্দার প্রাপ্য তা বান্দা মাফ না করলে মহান আল্লাহ্ তা'আলাও মাফ করবেন না। তাই বান্দার হক বা অধিকারের প্রতি আমাদেরকে বেশী বেশী যত্নশীল ও সচেতন হওয়া
আবশ্যক ও উচিত। অপরের হক নষ্ট ও গ্রাস না করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআন মজীদে ইরশাদ করেছেন-
وَ لا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالبَاطِل وَ تُدْلُّوا بِهَا إِلَى الْحُكَامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالَ النَّاس بالاثم وَ أَنْتُمْ تَعْلَمُونَ (۱۸۸
অর্থাৎ তোমরা নিজেদের মধ্যে একে-অপরের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করোনা এবং মানুষের ধন- সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করোনা।
[সূরা বাক্বারা, আয়াত-১৮৮]
অপর আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الامنتِ إِلَى أَهْلِهَا
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের (বান্দাদের) কে নির্দেশ করেছেন যে, তোমরা আমানতকে তার মালিকের কাছে ঠিকভাবে আদায় করো বা পৌঁছিয়ে দাও।
[সূরা নিসা, আয়াত-৫৮]
এসব আয়াত থেকে প্রতীয়মান যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর বান্দাকে অন্য বান্দার অধিকার বা হক রক্ষা করা সম্পর্কে জোর তাগিদ দিয়েছেন। পবিত্র হাদীসে পাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম অন্যের হক নষ্টকারীর প্রতি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। যেমন সহীহ্ বুখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে-
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَخَذَ شَيْئًا مِنَ الارض بِغَيْرِ حَقِهِ خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ ارْضِينَ [صحيح البخاري]
অর্থাৎ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) অন্যায়ভাবে কারো ভূমির সামান্যতম অংশও আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত (৭) তবক জমীনের নিচে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে।
[সহীহ্ বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৩১৯৬।
অর্থাৎ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) অন্যায়ভাবে কারো ভূমির সামান্যতম অংশও আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত (৭) তবক জমীনের নিচে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে।
[ সহীহ্ বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৩১৯৬]
কুরআন হাদিসের আলোকে বান্দার হককের গুরুত্ব
অপর হাদীসে প্রিয়নবী ইরশাদ করেছেন-
مَنْ ظلم قيد شِبْرٍ طوقهُ مِنْ سَبْعِ أَرْضِيْنَ [بخاری]
অর্থাৎ যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ অন্যের জমি অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করবে কিয়ামতের দিন সাত তবক জমীন তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে।
[সহীহ্ বুখারী শরীফ, ৩১৯৫ নং হাদীস, সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়]
অপর হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِتُؤَدَّنَّ الْحُقُوقُ إِلَى أَهْلِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُقَادُ لِلشَّاةِ الجَلْحَاءِ مِنَ الشَّاةِ الْقَرْنَاء
- অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক হকদারের হক অবশ্যই আদায় করা হবে। এমনকি শিংবিহীন ছাগলকে শিংযুক্ত ছাগলের নিকট হতে বদলা দেওয়া হবে।
[সহীহ্ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-২৫৮২, জামে তিরমিযী, হাদিস নং-২৪২০]
এভাবে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যার কাছে তার ভাইয়ের হক রয়েছে, তা মান-সম্মানের হোক বা অন্য কিছুর হোক, দুনিয়ায় কারো সঙ্গে মন্দ আচরণ করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে, কাউকে আঘাত করেছে, সে যেন আজই ক্ষমা চেয়ে নেয় (মিটমাট করে নেয়) কেননা সেদিন (কিয়ামতের দিন) নেকিগুলো দিয়ে হকদারের হক পরিশোধ করা হবে। যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তাহলে একই হকদারের গুনাহ্ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতএব, অন্যের হক/অধিকার নষ্ট হতে পারে এরূপ অতীব ক্ষুদ্র কাজ হতেও বিরত থাকা উচিত এবং প্রত্যেক মুমিনের অবশ্যই কর্তব্য। কোনো ছোট- খাটো অধিকার/হককে নষ্ট করার মত যুলুমকে ছোট মনে করা উচিত নয়।
প্রতিটি মুমিনকে বান্দার হকের প্রতি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কারণ বলা যায় না, নামাজ, রোযা, হজ্ব, যাকাত আদায় করেও নিজেদের পরকালীন জীবনটা বরবাদ হয়ে জাহান্নাম শেষ ঠিকানা হবে। আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করুক। আ-মী-ন।
আরও পড়ুন...............
নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।