মহানবী (ﷺ) এর হাদিস শরীফ পর্ব - ২
১ম পর্বের পর থেকে
প্রিয় পাঠক বন্ধু ও প্রিয় ইসলামী ভাই ও বোনেরা , আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, শুরু করছি মহানবী (ﷺ) এর হাদিস শরীফ শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনা "মহানবী (ﷺ) এর হাদিস শরীফ"। তো চলুন শুরু করা যাক -
_______________________________________________________
হাদিস নম্বরঃ ৪ | 4 | ٤
৪। যায়িদ বিন ইউসাই হযরত আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মক্কাবাসীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করলেন। সেই সাথে তাকে এ ঘোষণা দিতেও আদেশ দেন যে, এ বছরের (৯ম হিজরীর অর্থাৎ বিদায় হজ্জের পূর্ববর্তী বছরের) পর আর কোন মুশরিক হজ্জ করতে পারবে না। আর কোন নগ্ন ব্যক্তি পবিত্র কাবা ঘরের তাওয়াফ করতে পারবে না
। মুসলিম ব্যক্তি ব্যতীত কেউ জান্নাতে যাবে না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যার কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত নিরাপত্তার চুক্তি হয়েছে, তার চুক্তি সেই মেয়াদ পর্যন্ত বহাল থাকবে। অতঃপর আল্লাহ ও তার রাসূলের মুশরিকদের সাথে কোন সম্পর্ক থাকবে না।
এই ঘোষণা দেয়ার জন্য হযরত আবু বকরের রওনা হয়ে যাওয়ার পর তিন দিন অতিবাহিত হলো। অতঃপর তিনি আলী (রাঃ) কে বললেন, তুমি গিয়ে আবু বাকরের সাথে মিলিত হও। তাকে আমার কাছে ফেরত পাঠাও এবং এ ঘোষণাগুলো তুমি নিজে দাও।
আলী (রাঃ) তাই করলেন। অতঃপর আবু বাকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে এসেই কাঁদতে লাগলেন এবং বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দ্বারা কি কিছু ঘটেছে? (অর্থাৎ কোন অন্যায় কাজ হয়েছে?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার দ্বারা ভালো কাজ ছাড়া কিছুই সংঘটিত হয়নি। তবে আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, এই কথাগুলো যেন আমি স্বয়ং অথবা আমার কোন লোক ব্যতীত আর কেউ ঘোষণা না করে।[১]
[১]. হাদীসটির সনদ দুর্বল। ইমাম আহমাদ বলেছেনঃ এটি একটি দুর্বল হাদীস। ইমাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর গ্রন্থ মিনহাজের ৫ম খণ্ডের ৬৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ “আমার পক্ষ থেকে আলী ব্যতীত আর কেউ এ দায়িত্ব পালন করবে না” এ উক্তি মিথ্যা।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার / গ্রন্থঃ মুসনাদে আহমাদ / অধ্যায়ঃ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) [আবু বকরের বর্ণিত হাদীস] (مسند أبي بكر)
হাদিস নম্বরঃ ৫ | 5 | ۵
৫। একবার আবু বাকর (রাঃ) তাঁর ভাষণে বলেন: গত বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এই জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়িয়েছিলেন। এ কথা বলে আবু বাকর (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। তারপর বললেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট সুস্থতা কামনা কর।
কেননা ইয়াকীনের (দৃঢ় বিশ্বাস বা মজবুত ঈমান) পর কেউ সুস্থতার চেয়ে উত্তম কোন জিনিস প্রাপ্ত হয়নি। (অর্থাৎ ঈমানের পর সুস্থতা আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত।) তোমরা সত্যবাদিতাকে আঁকড়ে ধর। কেননা তা পুণ্যের সাথে যুক্ত। এই দুটোই জান্নাতে যাওয়ার উপকরণ।
তোমরা মিথ্যাচার থেকে সাবধান থাক। কেননা মিথ্যাচার পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত। এই দুটোই জাহান্নামে যাওয়ার উপকরণ। তোমরা পরস্পরে হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না। একে অন্যের পেছনে লেগো না। বরঞ্চ আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক ভাই ভাই হয়ে থাক।[১]
[১]. ইবনু হিব্বান (৯৫২), ও আল হাকেম (১/৫২৯) কর্তৃক সহীহ বলে অভিহিত। আলবানী বলেছেনঃ সহীহ। (ইবনু মাজাহ-৩৮৪৯) অত্র হাদীস গ্রন্থে ১৭, ৩৪ ও ৪৪ নং হাদীস দ্রষ্টব্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার / গ্রন্থঃ মুসনাদে আহমাদ / অধ্যায়ঃ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) [আবু বকরের বর্ণিত হাদীস] (مسند أبي بكر)
সূরা নাস বাংলা অর্থ,উচ্চারণ,শানে নুযুল সহ পড়ুন
হাদিস নম্বরঃ ৬ | 6 | ٦
৬। আবু বাকর (রাঃ) একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা উচ্চারণের সাথে সাথে আবু বাকর কেঁদে ফেললেন, অতঃপর শান্ত হলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গত বছর ঠিক এই গ্রীষ্মে বলতে শুনেছিঃ “তোমরা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা, সুস্থতা ও মজবুত ঈমান কামনা কর।”[১]
[১]. তিরমিযী বলেছেনঃ এটি একটি ভালো ও বিরল হাদীস। (তিরমিযী-৩৫৫৮) (অত্র গ্রন্থের ৫ নং হাদীস দ্রষ্টব্য।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার / গ্রন্থঃ মুসনাদে আহমাদ / অধ্যায়ঃ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) [আবু বকরের বর্ণিত হাদীস] (مسند أبي بكر)
হাদিস নম্বরঃ ৭ | 7 | ۷
৭। আবু বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাঁত মাজা মুখ পবিত্র করে ও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার / গ্রন্থঃ মুসনাদে আহমাদ / অধ্যায়ঃ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) [আবু বকরের বর্ণিত হাদীস] (مسند أبي بكر)
হাদিস নম্বরঃ ৮ | 8 | ۸
৮। আবু বাকর আস সিদ্দিক (রাঃ) বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন আমাকে এমন একটি দু’আ শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা আমি নামাযের মধ্যে দু’আ করতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই দু’আটি পড়ঃ
اللهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি নিজের ওপর অনেক অত্যাচার করেছি। তুমি তোমার পক্ষ হতে আমার গুনাহ মাফ করে দাও এবং আমার প্রতি করুণা কর। নিশ্চয়ই তুমিই ক্ষমাশীল ও দয়াশীল”। (হাদীস নং ২৮ দ্রষ্টব্য) অন্য বর্ণনায় “অনেক অত্যাচার” এর পরিবর্তে “বিরাট অত্যাচার” বলা হয়েছে। [১]
[১]. [ইমাম বুখারী (৮৩৪) ইমাম মুসলিম (২৭০৫) ইবনু খুযাইমা (৮৪৫) ও ইবনু হিব্বান (১৯৭৬) এ হাদীসকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন]
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার / গ্রন্থঃ মুসনাদে আহমাদ / অধ্যায়ঃ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) [আবু বকরের বর্ণিত হাদীস] (مسند أبي بكر)
হাদিস নম্বরঃ ৯ | 9 | ۹
৯। ফাতিমা (রাঃ) ও আব্বাস (রাঃ) আবু বাকরের কাছে এলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিত্যক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার চাইলেন। তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাদাকের জমি ও খাইবারের জমির অংশ চাইছিলেন। আবু বকর (রাঃ) তাঁদেরকে বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আমাদের সম্পত্তির কোন উত্তরাধিকারী হয় না। আমরা (নবীরা) যা রেখে যাই, তা সাদাকা। মুহাম্মাদের বংশধরগণ, স্বগোত্রীয়রা, আত্মীয়স্বজন ও সঙ্গী সাথীরা সবাই এ সম্পত্তি ভোগ করবে। আল্লাহর কসম! আমি প্রতিটি ব্যাপারেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা করতে দেখেছি, তা ছাড়া অন্য কিছু করবো না।[১]
[১]. বুখারী (৪০৩৫), মুসলিম (১৭৫৯), ও ইবনু হিব্বান (৪৮২৩) কর্তৃক সহীহ আখ্যায়িত) অত্র গ্রন্থের হাদীস নং ২৫, ৫৫ ও ৫৮ দ্রষ্টব্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
পাবলিশারঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার / গ্রন্থঃ মুসনাদে আহমাদ / অধ্যায়ঃ মুসনাদে আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) [আবু বকরের বর্ণিত হাদীস] (مسند أبي بكر)