তরল পদার্থের পাক নাপাকের মাসায়েল
তরল পদার্থের পাক নাপাকের মাসায়েল
অবশ্য ইন্দিরা, কূপ, বরফ বা বৃষ্টির পানির তিন অবস্থার যে কোন একটি অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও নাপাক হয় না; তা দ্বারা ওযু করা চলে ৷
২। পানির সাথে অন্য বস্তু মিশে তার স্বাদ, রং এবং ঘ্রাণ এ তিনটি অবস্থার যে কোন একটি পরিবর্তন হলে তা দ্বারা ওযু গোসল জায়েয হবে না । ঐ পানি কোন মাটিতে মিশলে । সেই মাটির দ্বারা তায়াম্মুমও বৈধ হবে না ।
৩। কোন পবিত্র বস্তু ধোয়া পানি দিয়ে ওযু গোসল করা বৈধ ।
৪। মৃত ব্যক্তির ওযু গোসলে ব্যবহৃত পানি অপবিত্র হয়ে যায় । অতএব তা দিয়ে ওযু গোসল করা বৈধ নয় ।
৫। ওযু গোসলে ব্যবহৃত পানি দ্বারা পুনরায় ওযু গোসল করলে মাকরূহের সাথে জায়েয হবে । এরূপ পানি পান করাও মাকরূহ ।
৬। অল্প পানিতে নাজাসাতে গলীজা পতিত হলে ঐ পানি নাজাসাতে গলীজায় পরিণত হয় ৷
৭। পাক পানি দিয়ে এন্তেঞ্জা করার পরে উদ্ধৃত্ত পানি দিয়ে ওযু গোসল করার কোন দোষ নেই ।
৮। পাক পানি দিয়ে কোন অপবিত্র বস্তু ধুলে সেই মুস্তামাল (ব্যবহৃত) পানিও অপবিত্র হয়ে যায় । এরকম পানি কোন দ্রব্যে লাগলে যদি ঐ পানি প্রথমবার ধোয়ার পানি হয়, তবে ঐ দ্ৰব্যও অপবিত্র হয়ে যায় ।
৯। কোন জলাশয় বা কূপ দশ হাত দৈর্ঘ্য ও দশ হাত প্রস্থ আয়তন অপেক্ষা বৃহদায়তন বিশিষ্ট হলে তার পানিতে নাজাসাতে গলীজা ও নাজাসাতে খফীফা যা ই পডুক না কেন ঐ পানি অপবিত্র হবে না ।
১০। পানিতে কোন নাজাসাত পতিত হয়ে পানি ছিটে শরীর কাপড়ে লাগলে যদি তাতে নাজাসাতের কোন চিহ্ন না পাওয়া যায়, তবে তাতে শরীর বা কাপড় অপবিত্র হবে না ।
১১। বৃষ্টির পানি, বরফের পানি, শিলাগলা পানি ইত্যাদি যাবতীয় পানির হুকুম নদী এবং পুকুরের পানিরই অনুরূপ ।
১২। কোন ইন্দিরা, কুয়ায় মানুষের পায়খানা, গোবরাদি পড়লে তার পানি অপবিত্র হয়ে যায় । বকরীর দু’চারটি লাদ পড়লে সাথে সাথে উঠিয়ে ফেললে পানি অপবিত্র হয় না ।
১৩। ইন্দিরা বা কূয়ায় কোন জীব-জন্তু পড়ে মরে থাকলে তার পানি অপবিত্র হয়ে যায় । ঐ পানি পবিত্র করতে হলে পতিত জন্তুর আকার, সংখ্যা এবং প্ৰকারভেদে মাসয়ালা অনুযায়ী বিশ, চল্লিশ, ষাট, আশি, একশ বালতি কিংবা সম্পূর্ণ পানি তুলে ফেলে তা পবিত্র করতে হয় ।
১৪। পানির ন্যায় খেজুরের রস, ডাবের পানি কলাপাছের পানি, গোলাপ জল, ইক্ষুর রস প্রভৃতিও পবিত্র বস্তু বটে তা দ্বারা অপবিত্র বস্তু ধুলে পাক হয়ে যায় ৷
১৫। দুধ, ঘি ও তেল তরল পদার্থ হলেও তৈশাক্ততার কারণে এগুলো দ্বারা ধূয়ে কোন অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র করা চলে না ৷
১৬। জমজমের পানি দ্বারা নাপাক বস্তু ধোয়া মাকরূহ ৷ সুতরাং ঐ পানি দিয়ে কোন মুহদেছ (যাহার ওযু ভঙ্গ হয়েছে) এবং জুনুব (যার ওপর গোসল ফরয হয়েছে) ব্যক্তির ওযু-গােসল করা উচিত নয় ৷ অবশ্য ঐ পানি ব্যতীত অন্য পানি না পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করা যাবে ।
১৭। মধু, ঘি, তেল, সিরাপ ইত্যাদিতে নাজাসাত মিশে অপবিত্র হয়ে গেলে নাজাসাত মিশ্রিত বস্তুকে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে জ্বলে দেবে, যখন তা অর্ধেক পরিমাণ হয়ে যাবে । তখন পুনরায় পূর্বোক্ত নিয়মে জ্বলে দিয়ে ঐ পরিমাণ করলে । এভাবে তিনবার করলে ঐ বস্তু পবিত্র হয়ে যাবে ।
অপবিত্র হওয়ার কারণসমূহ, বহিরাগত অপবিত্র দূরীকরণের নিয়ম, মাসায়েল
পায়খানা-প্রস্রাবের বর্ণনা
পায়খানা-প্ৰস্রাব করতে গিয়ে মানুষের সভ্য রীতিনীতি অবলম্বন করা অপরিহার্য কর্তব্য । অন্যান্য জীব-জন্তুর ন্যায় উন্মুক্তভাবে তার পায়খানা-প্ৰস্রাব করা চলে না । অতএব পায়খানা-প্ৰস্রাবের জন্য চার দেয়াল এবং ছাদ বিশিষ্ট একটি প্রকােষ্ঠ তৈরি করা আবশ্যক।
পায়খানা-প্ৰস্রাবের নিয়ম-কানুনঃ
পায়খানা-প্ৰস্রাবের হাজত হলে নির্দিষ্ট স্থানে গমন করে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করে প্রথম বাম পা বাড়িয়ে উক্ত প্ৰকােষ্ঠে ঢুকবে ৷ দোয়া না জানলে বা পড়তে ভুল হলে মনে মনে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করবে ৷ ভেতরে ঢুকে দাড়ানাে অবস্থায় কাপড় উন্মোচন না করে বসার সময় উন্মোচিত করবে । ঢিলা-কুলুখ সাথে নিয়ে যাবে । কেবলার দিকে মুখ দিয়ে বা পিছন ফিরিয়ে বসবে না।
পায়খানা-প্ৰস্রাব অবস্থায় বিড়ি সিগারেট সেবন করবে না, সেটা এমনিই মাকরূহ তাহরীমী৷ পায়খানা-প্ৰস্রাব অবস্থায় সেবন করা আরো বেশি অন্যায় ৷
পায়খানা-প্ৰস্রাব অবস্থায় কোন কিছু পানাহার করা, কথা-বার্তা বলা, কাউকে সালাম দেয়া না কারো সালামের জবাব দেয়া, মনে মনে কুরআন পাঠ করা প্রভৃতি মাকরূহ ৷
বসা অবস্থায় চারদিকে বা আকশের দিকে তাকাবে না, লজ্জা স্থানের দিকেও তাকিয়ে থাকা ঠিক নয় । মনে মনে কোন চিন্তা-ভাবনা করবে না ৷ সাথে কুরআন-হাদীসের কোন আয়াত, কালাম বা আল্লাহ রাসুলের নাম লিখিত কাগজাদি নিয়ে ঢুকবে না ।
পায়খানায় গিয়ে হাজত শেষ হয়ে গেলে অযথা দেরি না করে প্রথমে কুলুখ ব্যবহার করে পানি দ্বারা শৌচ করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবে ৷ পায়খানায় অধিক সময় বসে থাকলে অর্শ রােগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে । পায়খানা-প্ৰস্রাব করার জন্য ঢুকা ও বেরিয়ে আসার সময় নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে।
পায়খানায় প্রবেশের দোয়া:
بِسْمِ اللهِ اَللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবছি ওয়াল খাবাইছ।
অর্থঃ আল্লাহর নামে হে আল্লাহ্! আমি কদাচারী ও নাপাক শয়তান হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।
পায়খানা হতে বের হওয়ার দোয়া:
غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ.
উচ্চারণঃ গুফরানাকা আল হামদু লিল্লাহিল্লাযি আযহাবা আননিল আযা ওয়া আফানী।
অর্থঃ হে আল্লাহ্ ! আমি আপনার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী । সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমার মধ্য হতে অশুভ এবং নাপাক বস্তু দূরীতূত করে আমাকে স্বাচ্ছন্দ্য দান করেছেন ।