মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী পর্ব - ০২


মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী পর্ব - ০২ 

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী

প্রিয় পাঠক বন্ধু ও প্রিয় ইসলামী ভাই  বোনেরা , আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, শুরু করছি পবিত্র মাহে রবিউল আওয়াল উপলক্ষে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনা "মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর জীবনী" আজকে ২য়  পর্বে আপনারা জানতে পারবেন হুযুরে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযুর (আলাইহিস সালাস) এর আবির্ভাব, বাল্য জীবন ও কাবা শরীফের সংস্কার তো চলুন শুরু করা যাক -

হুযুর (আলাইহিস সালাসএর আবির্ভাব

 আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া আলিইি ওয়া সাল্লাম) ১২ই রবিউল আউয়াল ৫৭০ খৃষ্টাব্দে সোমবার সুবহে সাদেকের সময় সম্মানিত শহর মক্কা শরীফে জন্য গ্রহণ করেন।হযরত আমেনা ফরমান, যখন হুয়ূর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) জন্ম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর দু’হাত সামনের দিকে এমনভাবে পাতা ছিল যেন দুঅা প্রার্থনা করছেন এবং তাঁর চক্ষুদ্বয় আসমানের দিকে উঠানাে ছিল। 

 

তাঁর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লামপবিত্র বংশ তালিকা হচ্ছে 

নিন্মরূপঃ 

মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুতালিব বিন হাশেম বিন আবদুল মুনাফ বিন কুশাই বিন কিলাব বিন মুররা বিন কা’ব বিন লুই বিন গালিব বিন ফিহর বিন মালেক বিন নযর বিন কিনানা বিন খুযাইম বিন মদরাকা বিন ইলিয়াস বিন মযর বিন নযার বিন মাদ বিন আদনান।আদনানের বংশাবলী  উর্ধ্ব দিকে গিয়ে হযরত ইসমাইল (আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত পৌঁছে।  

হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর জন্মের আগে হযরত আমেনা স্বপ্ন দেখলেন যে তাঁর শরীর থেকে একটি নূর বের হয়েছে, যার ফলে শাম দেশের প্রাসাদ সমুহ উজ্জ্বল হয়ে গেল।

হযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়াসাল্লাম) যখন জন্ম গ্রহণ করেন, তখন তাঁর আম্মাজান তাঁর দাদা জনাব আবদুল মুতালিবের কাছে সংবাদ পাঠান।তিনি এসে তাঁর ইয়াততীম নাতীকে কোলে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আদর করলেন এবং 'মুহম্মদ' (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) নাম রাখলেন, যার অর্থ সীমাহীন প্ৰসংশিত।  

 হযরত আমিনা ও মক্কা শরীফের অন্যান্য মহিলাগণ বর্ণনা করেন যে, হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) খুবই সুন্দর ছিলেন।  জন্মের পর যে কেউ তাঁকে দেখেছেন, এটাই বলেছেন, 'এ শিশুর স্বাস্থ্য খুবই ভাল।'


হুযুর (আলাইহিস সালামএর বাল্য জীবন

হযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে সর্ব প্রথম তাঁর আম্মাজান দুধ পান করান।কিন্তু সেই সময় আরবের নিয়ম ছিল যে, লোকেরা তাদের নবজাত শিশুকে দুগ্ধপান করানোর জন্য নিকটতর গ্রামের ভদ্র মহিলাদের সোপর্দ করতো, যাতে খোলা মেলা পরিবেশ  ও নির্মল আবহাওয়ায় লালিত হয়ে সুস্বাস্থের অধিকারী হয় এবং   সুন্দর ও স্পষ্ট আরবী বলাটা যেন শিখতে পারে।  ওই সময় শহর থেকে গ্রামের ভাষাকেই অধিক নিখুঁত মনে করা হতো। 

 সাদ গৌত্রে হালিমা নামে একজন স্নেহ পরায়ন ভদ্র মহিলা ছিলেন।গ্রামের অন্যান্য মহিলাদের সাথে তিনি মক্কা শরীফে আসলেন যেন দুধ পান করানোর জন্য তিনিও একটি শিশু লাভ করেন।দুধ পান করানোর বিনিময়ে ওসব গ্রামের মহিলাদেরকে যুক্তিসঙ্গত পারিশ্রমিক দেয়া হতো।তাই ওরা বড় বড় সরদারদের শিশুদেরকে দুধপান করানোর জন্য নিয়ে নিল, কিন্তু হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ইয়াতীম ছিলেন বিধায় ওনাকে কোন মহিলা নিলনা।এ অবস্থা দেখে হুযুরের আম্মাজান কাঁদতে লাগলেন এবং তাঁর মৃত স্বামীর কথা স্মৃতি পটে জেগে উঠলো।শেষ পর্যন্ত হযরত হালিম দয়া পরবশ হয়ে সেই ইয়াতীম শিশুকে দূধপান করানোর জন্য গ্রহণ করলেন এবং ওনাকে নিয়ে নিজগ্রামে ফিরে আসলেন।হযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হযরত হালিমার ঘরে লালিত পালিত হতে লাগলেন।যখন চার বছর বয়স হলো , তখন থেকে হযরত হালিমার ছেলেদের সাথে ছাগল চড়ানোর জন্য জংগলে যেতে লাগলেন।  

এক দিন হযরত হালিমা (রাদ্বি আল্লাহ তাআলা আনহা) আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে নিয়ে মক্কা শরীফে আসলেন এবং হযরত আমেনা (রাদ্বি আল্লাহ তাআলা আনহা) কে বললেন, '' আপনার ছেলের উপর তূতের আসর হয়েছে।সে (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলে যে পাহাড়ের পাথর নাকি ওকে সালাম করে, একদিন নাকি দু’জন লোক ওর পেট কেটে দিয়েছিল, পরে নাকি আবার ঠিক হয়ে গেছে।”

হযরত আমেনা হযরত হালিমাকে বললেন, ''বােন, এ ছেলের আসর হয়নি।  বরং ওর জন্ম থেকেই এ রকম ঘটছে ৷” এরপর হযরত আমেনা হযরত হালিমাকে হুযুর (সাল্লাল্লাহহু তাআলা আলাইহে   ওয়া সাল্লাম) এর জন্মকালীন সময়ের অদ্ভুত ও অনন্য ঘটনাসমূহ শুনালেন। তবুও সে পুনরায় নিয়ে যেতে রাজি হলেন না।   অগত্যা হযরত আমিনা নিজের ছেলেকে হযরত হালিমা থেকে নিয়ে নিলেন এবং ' এরপর থেকে হুযুর স্বীয় আম্মাজানের সাথে মক্কা শরীফে থাকতে লাগলেন।  

এখানেও তাঁর অদ্ভুত ও দুর্লভ আচরণ পরিলক্ষিত হতে লাগলো।  কিছু দিন পর হযরত আমেনা তাঁর স্বামীর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা শরীফ যাবার জন্য প্রস্তুতি নিলেন।  তাঁর পাঁচ বছরের ইয়াতীম সন্তানকে সাথে নিয়ে মদীনা শরীফ গেলেন এবং ওখানে স্বামীর মাযার যিয়ারত করলেন ৷ হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) মাযারের পাশে অবস্থান কালে তাঁর আম্মাজানের কাছে তাঁর আব্বাজান সম্পর্কে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করেন।  

মদীনা শরীফ থেকে ফিরে আসার পথে হযরত আমেনা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আবওয়া নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। ওই জায়গায় তাঁকে দাফন করা হয়৷হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য মহিলাদের সাথে মক্কা শরীফ ফিরে আসেন।  মক্কা শরীফ পৌছার পর হযরত আবদুল মুতালিব হুযুরকে কোলে নিয়ে নিলেন এবং অনেক কান্নাকাটি করলেন।  অতঃপর বললেন, ''আফসোস! তোমার মা-বাপ উভয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেল ৷ তবে দাদু, চিন্তা করো না।  যতদিন পর্যন্ত আমি জীবিত আছি, তোমার কোন কষ্ট হবেনা।"

এক বছর পর হযরত আবদুল মুতাবিলও রোগাক্রান্ত হলেন।  তিনি তাঁর সকল ছেলেদেরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন-আমার এ ইয়াতীম নাতীর দেখা-শুনান দায়িত্বভার কে গ্রহণ করবে ? সবাই তাঁর দায়িত্বভার নিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন কিন্ত হযরত আবদুল মুতালিব হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে আবু তালেবের হাতে সােপর্দ করলেন।  তাই দাদার ইন্তেকালের পর তিনি (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) চাচা আবু তালেবের অধীনে লালিত পালিত হতে লাগলেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল আট বছর।  

জনাব আবু তালেব হুযুরকে তাঁর ছেলেদের থেকেও অধিক ভালবাসতেন এবং তাঁর সব ব্যাপারে খেয়াল রাখতেন। শুইলে হুযুরকে নিয়ে শুইতেন এবং বাইরে গেলে হুযুরকেও সাথে নিয়ে যেতেন।  

জনাব আবু তালেব ব্যবসা করতেন এবং কােরাইশদের রীতি অনুসারে তিনি বছরে একবার সিরিয়ায় যাতায়াত করতেন ৷   হযুর (সাল্লাল্লাহু তাঅালা আলইহে ওয়া সাল্লাম) এর বার বছর বয়সের সময় একবার জনাব আবু তালেব সিরিয়া সফরের মনস্থ করেন৷ সফরের কষ্টের কথা চিন্তা করে হুযুরকে সাথে নিতে চাইলেন না৷কিন্তু হযুর নাছোড়বান্দা, সফরে রওয়ানা হবার সময় জনাব আবু তালেবকে জড়িয়ে ধরলেন এবং সাথে যাবার জন্য অগ্রহ করলেন ৷ শেষ পর্যন্ত জনাব আবু তালেব তাকে না নিয়ে যেতে পারলেন না৷ স্বীয় চাচার সাথে রয়ে অতি অল্পদিনের মধ্যে হুযুর (সল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ব্যবসায়িক পেশায় দক্ষ হয়ে যান।তিনি (সাল্লাল্লাহু তআেলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) একান্ত সত্যবাদী ও আমানতদার ছিলেন ৷ মক্কা শরীফের লোকেরা তাঁকে ‘আমীন’ এবং 'ছাদেক’ বলে ডাকতেন।  অনেকে তাঁকে ব্যবসায় শরীক করে নিতেন।

কাবা শরীফের সংস্কার

ওই সময় কাবা শরীফের ইমারত বেশী উঁচু ছিলনা।  বেশী হলে ছয়ফুট উঁচু ছিল এবং এর উপর ছাদও ছিলনা।তদুপরি নিম্নস্থানে অবস্থিত হওয়ার কারণে বৃষ্টির দিনে সারা শহরের পানি ওখানে এসে জমা হতো।ফলে ইমারতের বার বার ক্ষতি হতো।শেষ পর্যন্ত সেই পুরাতন ইমারত ভেঙ্গে ফেলে সেই জায়গায় নতুন ও মজবূত ইমারত তৈরী করার জন্য কােরাইশগণ সিদ্ধান্ত নিলেন। 

ঘটনাক্রমে ওই সময় জিদ্দা বন্দরে একটি বাণিজ্যিক জাহাজ কিনারায় ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল।কুরাইশগণ এ খবর শুনে জাহাজের ক।টগুলো ক্রয় করে নিল।এরপর সমস্ত কুরাইশ  মিলে কাবা শরীফের নির্মাণ কাজ শুরু করে দিল ৷   বিভিন্ন গোত্র ইমারতের বিভিন্ন অংশ নির্মাণের দায়িত্বভার পরস্পরের মধ্যে ভাগ করে নিল যেন নির্মাণের সুভাগ্য থেকে কেউ বঞ্চিত না থাকে।কিন্তু যখন হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের সময় আসলাে, তখন ভীষণ ঝগড়া সৃষ্টি হলো।প্রত্যেক গোত্রের ইচ্ছা যে এ সম্মান যেন ওরাই অর্জন করে।  এ ঝগড়া প্রায় মারামারি কাটাকাটির পর্যায়ে এসে গিয়েছিল।  

চারদিন ব্যাপী এ ঝগড়া বলবৎ ছিল।পঞ্চম দিন কুরাইশদের মধ্যে সবচে বৃদ্ধ ব্যক্তি আবু উমাইয়া বিন মগিরা পরামর্শ দিল যে কাল ভোরে যে সবার আগে হেরম শরীফে প্রবেশ করবে, ওর দ্বারা যেন এ ঝগড়ার মিমাংশা করানো হয় এবং সে যে রায় দিবে, সবাই যেন তা মেনে নেয়।এ প্রস্তাব সবাই গ্রহণ করলো।  

খোদার কুদরতা ভোরে সবার আগে হেরম শরীফে হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা অালাইহে ওয়া সাল্লাম) প্রবেশ করেন৷ সবাই একবাক্যে বললো, এ সত্যবাদী ও আমানতদার, আমাদের কাছে ওর রায় নতস্বীকার্য’। 

হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন, যে সব গোত্র হাজার আসওয়াদকে হস্তান্তরের দাবীদার, ওরা সবাই যেন নিজেদের এক একজন সরদার মনোনীত করে।যখন সরদার মনোনীত হয়ে গেল, তখন হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) একটি চাদর বিছায়ে 'হাজরে অাসওয়াদ’কে ওটার উপর রাখলেন এবং সরদারদেরকে বললেন, তারা যেন চাদরের চার কােনায় ধরে এবং যেন উপরে    উঠায়।যখন চাদর ওই স্থান পর্যন্ত আনলো, যেখানে 'হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপন করার ছিল, তখন হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা অালাইহে ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে ওটা উঠায়ে যথাস্থানে বাখলেন।এভাবে এক মারাত্মক হাঙ্গামা তাঁরই উত্তম ব্যবস্থাপনায় দমে গেল।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ দঃ এর জীবনাদর্শ আমাদের জীবনে অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন আমিন। 


পূর্ববর্তী পর্ব সমূহ পড়ূন-

১।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - 


২।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - 


৩।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - 


৪।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - ৪


৫।  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - 


নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট  পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad