মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের পূর্বে আরবের তথা পুরো বিশ্বের অবস্থা কেমন ছিল?
হুযুর (আলাইহিস সালাম) এর জন্মের আগে পৃথিবীর অবস্থা
আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যখন দুনিয়াতে তশরীফ আনেন, তখন দুনিয়ার নৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ওই সময় রাজনৈতিক দিক দিয়ে ইরান ও রোমকে খুবই শক্তিশালী ও উন্নত সাম্রাজ্য মনে করা হতো। ইরান সাম্রাজ্য ইরাক থেকে শুরু করে হিন্দুস্থানের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং ওখানকার লোকেরা মজুসী, অর্থাৎ পারসীক ধর্মাবলম্বী ছিল। রোম সাম্রাজ্য ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা পরিবেষ্টিত ছিল এবং তথাকার লোকেরা ঈসায়ী অর্থাৎ খৃষ্টান ধর্মের অনুসারী ছিল।
ইরানঃ
ওই সময় ইরানের লোকেরা তাঁরকারাজির পূজা করতো ৷ এছাড়া বাদশাহ ও উজীরদেরও পূজা করতো। লোকেরা নিজেরাই বিভিন্ন আকারের মূর্তি তৈরী করে ওগুলোকে সিজদা করতো। মোট কথা ওরা খোদা ব্যতীত দুনিয়ার প্রত্যেক শক্তির কাছে মাথানত করতো।
রোমঃ
রোমেও একই অবস্থা ছিল। তারকা রাজি ও দেবতা সমূহের পূজা করতো। লোকদের মযহাব যদিওবা খৃষ্টবাদ ছিল, কিন্তু ওদের মধ্যে অনেক ফেরকা বিদ্যমান ছিল এবং ওদের মধ্যে সবসময় মারাত্মক যুদ্ধ-বিগ্রহ, লেগেই থাকতো। প্রত্যেক ফেরকার পোপ নিজেকে খোদা মনে করতো এবং ওর অনূসারীরা ওকে সিজদা করতো। ওদের মধ্যে ধর্মীয় উচ্চ মর্যাদার মাপকাটি ছিল সংসার ত্যাগ ৷
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশঃ
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অবস্থাও একই ছিল। এখানে তেত্রিশ কােটিরও অধিক দেবদেবী ছিল। শক্তি অনুসারে বর্ণ-বৈষম্য বিরাজমান ছিল। মদের ব্যাপক প্রচলন ছিল, শিরক, কুসংস্কার ও নৈতিক অধঃপতন চরম পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল। জুয়া ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ছিল। লোকেরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে রাজি রেখে জুয়া খেলতো। এক মহিলা কয়েকজন স্বামী গ্রহণ করতো। যুদ্ধে হারিয়ে যাবার ভয়ে মেয়ে লোকদেরকে স্বয়ং বাপ, ভাই বা স্বামী নিজ হাতে কতল করে ফেলতো। উলঙ্গ নারী পুরুষের পূজা করা হতো এবং এ সব কিছু ইবাদত ও নেকী মনে করা হতো।
আরবঃ
ওই সময় সারা দুনিয়াতে গোমরাহী ও শিরকের জয় জয়কার অবস্থা ছিল। কিন্তু আরবের অবস্থা অন্যান্য সাম্রাজ্য সমূহ থেকে অধিক খারাপ ছিল। এখানকার অধিবাসীরা মূর্তি, পাথর, বৃক্ষ, নক্ষত্র, ফিরিশতা ও জীনদের পূজা করতো, ওগুলোর নামে বলিদান করতো এবং ওগুলো থেকে নিজেদের বাসনা কামনা করতো। এরা ফিরিশতাগণকে খোদার মেয়ে এবং জীনদেরকে খোদার প্রিয় পাত্র ও আপনজন মনে করতো। এ খেয়ালে ওদের মূর্তি তৈরী করে পূজা করতো। মূর্তি পূজার প্রচলন এত ব্যাপক ছিল যে যদি ওরা রাস্তায় কােন সুন্দর পাথর কুঁড়িয়ে পেত, তখন তারা সেটার পূজা আরম্ভ করে দিত। সফরে যাত্রা করার সময় সাতু, আটা ইত্যাদির মূর্তি তৈরী করে সাথে রাখতাে। ওগুলোর পূজাও করতো এবং ক্ষুধা লাগলে খেয়েও পেলতো। এ ছাড়া চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজির পুজাও করা হতো।
বর্বরতার এমন অবস্থা ছিল যে, নগন্য বিষয় নিয়ে মারাত্মক গৃহযুদ্ধ লেগে যেত এবং এ গৃহযুদ্ধ বংশ পরম্পরায় চলতেই থাকতো। আরবে জুয়া খেলা ও মদপান দুনিয়ার অন্যান্য এলাকা থেকে অধিক ছিল। সুদ, লূটপাট, যেনা ও অন্যান্য মন্দ কাজেরও কোন কমতি ছিল না। এ সব লোকেরা নিজেদের মেয়েদেরকে জীবিত কবর দিত। নির্লজ্জ ও বেহায়াপনা এমন স্তরে পৌছে গিয়েছিল যে, নারী পুরুষেরা ঊলঙ্গ হয়ে খানায়ে কাবার তােয়াফ করতো এবং এ গর্হিত কাজকে রেহায়াপনার পরিবর্তে নেক কাজ মনে করতো। মূর্তিদের উদ্দেশ্যে মানুষ বলি দিত। সৎমাকে বিবাহ করতো। একজন লোক যত ইচ্ছে তত বিবাহ করতে পারতো।
পরিশেষে এ সম্প্রদায়ের কাছে আল্লাহ তাআলা ২০শে এপ্রিল ৫৭০ খৃষ্টাব্দে আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে প্রেরণ করেন যেন তিনি (সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আরব এবং দুনিয়ার অন্যান্য জায়গা সমূহ থেকে মন্দকাজ সমূহকে নির্মূল করেন এবং সকল মানুষকে নেকী ও সৎপথ প্রদর্শন করেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্ম ও বংশ পরিচয়
আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর বংশের সিলসিলা প্রায় ষাটতম স্তরে গিয়ে হযরত ইসমাইল (আলাইহিস সালাম) এর সাথে মিলে। হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সম্মানিত পিতার নাম ছিল 'আবদুল্লাহ' , যিনি জনাব আবদুল মুতালিবের পুত্র ছিলেন। তাঁর বংশের নাম ছিল কুরাইশ, যেটা আরবের সমস্ত বংশসমূহের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাবান ছিল। এ বংশের অনেকেই স্বীয় নেকী ও আল্লাহর বন্দেগীর কারণে বড় সম্মানের পাত্র ছিলেন। যেমন নযর, ফিহর ও কুশাই বিন কিলাব প্রমুখ ৷
কুশাই আমাদের প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর ষষ্ঠ পর দাদা ছিলেন। ইনি কাবা শরীফের মুতাওয়াল্লী থাকাকালীন অনেক কল্যাণমূলক কাজ করে গেছেন, যার মধ্যে হাজীদের পানি পান করানো, মেজবানের ব্যবস্থা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া তিনি স্বীয় পুরা বংশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং এর নাম রেখেছিলেন কুরাইশ৷ হুযুর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর চতুর্থ পরদাদা ছিলেন আবদুল মুনাফ। তাঁর দুই জমজ সন্তান যুক্তভাবে জন্ম হয়েছিল, যাদেরকে তলোয়ার দ্বারা কেটে পৃথক করা হয়েছিল। তাদের একজনের নাম হাশেম এবং অন্য জনের নাম ‘উমাইয়া’ রাখা হয়েছিল। হুয়ূর (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হাশেমের পৌপুত্রছিলেন।
হাশেমের পর জনাব আবদুল মুতালিব কাবা শরীফের মুতাওয়াল্লী হয়ে ছিলেন। তিনিও কাবা শরীফের থেদমত করে বড় সুনাম অর্জন করেছিলেন।
জনাব আবদুল মুতালিবকে আল্লাহ তাআলা দশটি পুত্র সন্তান দান করেছিলেন। যখন সবাই যুবক হয়ে গিয়েছিলেন, তখন ওদের নামে লটারী দিয়েছিলেন যাতে এক সন্তানকে আল্লাহর নামে কূরবানী করেন। লটারীতে হযরত আবদুল্লাহর নাম উঠেছিল। তাই জনাব আবদুল মুতালিব তাঁকে শোয়ালেন এবং ছুরি চালনার জন্য প্রস্তুতি নিলেন কিন্তু বংশের সমস্ত লোক দৌড়ে এসে বাঁধা দিলেন। শেষ পর্যন্ত হযরত আবদুল্লাহের পরিবর্তে আল্লাহর রাস্তায় একশটি উট কূরবানী করেন ৷
হযরত আবদুল্লাহ খুবই সুন্দর ছিলেন। সতের বছর বয়সে ওহাব বিন আবদুল মুনাফের মেয়ে হযরত আমেনার সাথে তাঁর বিবাহ হয়। হযরত আমেনা খুবই নেককার ও শান্তশিষ্টা মহিলা ছিলেন ৷
হযরত আবদুল্লাহ বিবাহের কয়েক মাস পর শামদেশে সফর উদ্দেশ্যে যাবার পথে মদীনার সন্নিকটে ইন্তেকাল করেন এবং সেই জায়গায় তাঁকে দাফন করা হয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ দঃ এর জীবনাদর্শ আমাদের জীবনে অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন আমিন।
পূর্ববর্তী পর্ব সমূহ পড়ূন-
১। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - ১
২। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - ২
৩। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - ৩
৪। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - ৪
৫। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনী- পর্ব - ৫
নতুন নতুন ইসলামিক কন্টেন্ট পড়তে আমাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
- 10 Minute Madrasah ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- 10 Minute Madrasah ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- 10 Minute Madrasah ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে 10 Minute Madrasah সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- 10 Minute Madrasah সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.10minutesmadrasah.com সাইট।
- 10 Minute Madrasah ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- 10 Minute Madrasah ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- 10 Minute Madrasah ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে 10 Minute Madrasah সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- 10 Minute Madrasah সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.10minutesmadrasah.com সাইট।