বাংলা রচনা : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার

বাংলা রচনা :  

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার 

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আশা করি তোমরা ভাল আছো । তো আজকে তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকারের উপর রচনা । এই রচনা তোমরা যারা এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাদের অনেক কাজে লাগবে । তো তোমাদের ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে Facebook messenger, Whatsapp,Telegram,Instagram এবং IMO তে শেয়ার করতে পারো ।

বাংলা রচনা :  বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার প্রতিকার | সকল শ্রেণির জন্য


ভূমিকা:

হাজার হাজার বছর ধরে, এই সুন্দর প্রকৃতি মানুষ সহ সমস্ত প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করেছে। সভ্যতা গড়ার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতিকে ব্যবহার করে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে । প্রাণবন্ত মানুষ প্রকৃতির উপর তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। এই পৃথিবীর প্রকৃতি, প্রাণীদের বাসস্থান খুবই রহস্যময়। প্রাণীজগতের টিকে থাকার সকল উপকরণ প্রকৃতিতে বিদ্যমান। আবার এই স্বভাব নিজেই হয়ে ওঠে প্রতিকূল, অহংকারী, অহংকারী। আকস্মিক দুর্যোগে প্রকৃতি তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের পরিবার, স্থাপনা, স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস করে দেয়। 

যদিও আধুনিক বিশ্ব সভ্যতার শিখরে পৌঁছেছে, প্রকৃতি এখনও মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগেও মানুষ কখনো কখনো প্রকৃতির কাছে সম্পূর্ণ অসহায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই কমবেশি আঘাত হানে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ:

পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এখানে নিয়মিত। এদেশের মানুষ তাই অনেকটা অভ্যস্ত এবং পরিচিত এসব দুর্যোগের সাথে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো-

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা | বাংলা ২য় পত্র | সকল শ্রেণির জন্য 



বাংলাদেশের বন্যা:

বন্যা বর্ষার বিপজ্জনক রূপ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বন্যাকে চিহ্নিত করা হয়। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারী বর্ষণে দেশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কখনো কখনো বন্যা প্রবল হয়ে ওঠে এবং দেশের প্রধান শহরগুলোকে প্লাবিত করে। গত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশে বন্যা একটি বার্ষিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৫৪,১৯৫৫ এবং ১৯৬৪ সালের বন্যা এখনও এদেশের মানুষের মনে তাড়া দেয়।

১৯৭০ সালের বন্যা দেশের ব্যাপক অংশ প্লাবিত করে। ১৯৮৮ সালে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৩টি জেলাই বন্যা কবলিত হয়। এই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ ছিল সীমাহীন। ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল ফসলের ক্ষতি, জীবনহানি, সম্পত্তির ক্ষতি এবং স্থায়িত্বের দিক থেকে শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই বন্যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, কৃষি, শিল্পসহ অন্যান্য খাতের ক্ষতির পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা। ২০০৪ সালের বন্যায় ২২০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই বন্যায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।



ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস:

ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা বাংলাদেশের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ঘূর্ণিঝড় হল এক ধরনের উষ্ণ কেন্দ্রীয় নিম্নচাপ, যার চারপাশে উষ্ণ এবং আর্দ্র বায়ু ভয়ানকভাবে সঞ্চালিত হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হওয়ার সময় অতিক্রান্ত এলাকায় তিন ধরণের প্রভাব বিস্তার করে। ক) প্রবল বাতাস, খ) বন্যা ও গ) জলোচ্ছ্বাস। 

ঘূর্ণিঝড়ের সময়, সমুদ্রের পানি ফুলে যায় এবং ঘূর্ণিঝড়ের সাথে সাথে উপকূলের কাছে উচ্চ ঢেউ সৃষ্টি করে, যাকে জলোচ্ছ্বাস বলে। ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় উচ্চ জোয়ারের কারণে উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ৫ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। 

১৯৯১ সালে একই প্রাকৃতিক দুর্যোগে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে দেড় লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে, গৃহহীন হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ। জলোচ্ছ্বাসের সময় খাদ্য, আসবাবপত্র ও অন্যান্য দ্রব্যাদি বানের জলে ভেসে যায়। গাছ-পালা উৎপাটিত হয়, জমির ফসল বিনষ্ট হয়, পশুপাখি প্রাণ হারায়, জলাশয় ও নলকূপের পানি দুষিত হয়ে জনজীবনের বিপর্যয় ডেকে আনে। ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূণিঝড় সিডর বাংলাদেশে মারাত্মক দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এতে প্রায় এক হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। ছয় লক্ষ টনেরও বেশি ধান নষ্ট হয়, ছিয়ানব্বই হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং একুশ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। এছাড়া সুন্দরবনের অনেক প্রাণী মারা যায়। 



এছাড়া ২০০৯ সালের মে মাসে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেয়া ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় দুই লক্ষ একর জমি লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। খুলনা, সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাণ হারায় প্রায় দুইশত মানুষ। ৮০টি পরিবারের প্রায় ৫০০ মানুষ হয় গৃহহীন।

নদী ভাঙ্গন:

নদী-মাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য ছোট-বড় নদী জালের মতো বিস্তৃত হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে প্রতিটি নদীই খরস্রোতা ও বেগবান হয়। নদীর চিরন্তন ধর্মই হলো একূল ভেঙে ওকূল গড়া। এ দেশের বড় বড় নদীসমূহ যেমন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র বর্ষা মৌসুমে ভয়ঙ্কর সর্বনাশা রূপ ধারণ করে। প্রতি বছরই নদীর ভাঙনে প্রচুর সম্পদ, স্থলভূমি ও জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী-ভাঙন এক সর্বনাশা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ দুর্যোগে প্রতি বছরই বহুলোক ঘরবাড়ি, বসত-ভিটা, জমি-জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছে।

বাংলাদেশের ভূমিকম্প: 

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বড় ধরণের কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তবে বহুবার হালকা কম্পন অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এ কম্পন বিপদসীমা না পেরোলেও গবেষকগণ এ দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন। এখানে হালকা ভূমিকম্প এতো নিয়মিত হচ্ছে যে, যেকোনো সময় বড় ধরণের ভূমিকম্প হতেও পারে। এ সময়ে মানুষ তাই সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত সম্ভাব্য ভূমিকম্পের জন্য। কারণ এদেশের নগর পরিকল্পনা ও ভূমি মোটেও ভূমিকম্প প্রতিরোধসম্পন্ন নয়। একটু জোরে কম্পন হলেই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা চরমে পৌঁছে যাবে।

বাংলাদেশের খরা:

দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, নদীবহুল হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের বিশাল এলাকা প্রতিবছর খরায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। এর প্রভাবে প্রায় পুরো উত্তরাঞ্চলে সেচের অভাব পড়েছে। মাটিতে পানির পরিমাণ কমে যাওয়াতে সেখানে মরুভূমির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট হচ্ছে খরায়। এতে খাবারের প্রকট সংকট দেখা দিচ্ছে, মঙ্গায় মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ।



দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপারে আমরা অনেকটা অসহায়। যেমন- ভূমিকম্প বা জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি, উদ্ধার তৎপরতা ও দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে আনা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা কমানো ও ক্ষয়-ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য কিছু প্রস্তাবিত পদক্ষেপ হলো-

  1. - অগভীর নদী ড্রেজিং করতে হবে।
  2. - ঝুঁকিপূর্ণ নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
  3. - সম্ভাব্য দুর্যোগের ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।
  4. - যথাযথভাবে দুর্যোগ মোকাবেলার পরিকল্পনা করতে হবে।
  5. - রাস্তাঘাট মজবুত করে বানাতে হবে।
  6. - জনগণকে দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতন করে তুলতে হবে।
  7. - দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ দ্রুত ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
  8. - প্রয়োজনীয় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে।


উপরের ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা হলে দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমবে বলে আশা করা যায়। এসবের জন্য অবশ্যই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলার পরিকল্পনা থাকতে হবে। সেই সাথে লাগবে আগাম প্রস্তুতি।

বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যাবস্থা:

প্রতি বছর ছোট-বড় দুর্যোগের সাথে লড়তে হয় বাংলাদেশকে। তাই এদেশে যথাযথ দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো হলো:-

  1. - ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্ম পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে।
  2. - নদী শাসনের মাধ্যমে বন্যা প্রতিরোধের জন্য Flood Action Plan প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
  3. - উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় পুনর্বাসন প্রকল্পে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
  4. - বহু সংখ্যক উপকূলীয় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।
  5. - উপকূলীয় বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
  6. - দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাজ সমন্বয় করার জন্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
  7. - দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্যে ব্যাপক প্রচার করা হচ্ছে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টির জন্যে।

উপসংহার:

ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি এড়াবার পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুর্যোগ মোকাবেলার দিকটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ পুরোপুরি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলেও এগুলো মোকাবেলার উপায় জানা থাকলেও জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।











 

বাংলা ২য় পত্রের সারাংশ এবং সারমর্ম :


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad