আশুরা কি ? এই দিবসে নফল আমল সমূহ কি কি?

আশুরা কি ? এই দিবসে নফল আমল সমূহ কি কি? What is Ashura ?

 

আশুরা কি ? এই দিবসে নফল আমল সমূহ কি কি? What is Ashura ?


আশুরা কী ?

আশুরা মানে মহররমের ১০ তারিখ। ইসলামী পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। সৃষ্টির শুরু থেকেই ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আশুরার তাৎপর্য স্বীকৃত। হিজরি বর্ষপঞ্জি গ্রহণ মহররম মাসকে আরও স্মরণীয় করে তুলেছে। এই দিনে সংঘঠিত ২০টি ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হল ইমামে আলী মক্বাম হযরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহুর শাহাদাতের ঘটনা । আজকের পোস্টে আমরা আশুরা সম্পর্কে জানব । এই দিনের আমল সম্পের্ক জানব ।


আশুরা দিবসে নফল নামাজ অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও ফজিলতপূর্ণ

আশুরা দিবসে নফল নামাজ অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও ফজিলতপূর্ণ:

(ক) যে ব্যক্তি এই দিবসের রাত্রিবেলায় চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে (দুই দুই রাকাত করে) প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে ৫০ বার সূরা এখলাছ অর্থাৎ "কুলহুয়াল্লাহু আহাদ" সূরাটি পড়বে, আল্লাহ তা‘আলা তার বিগত জীবনের ৫০ বছর ও সামনের জীবনের ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতে এক হাজার মহল তৈরি করেন।



(খ) যে ব্যক্তি অন্ধকার কবর আলোকিত হবার উদ্দেশ্যে এই রাত্রিতে দুই রাকাত নফল এই নিয়মে পড়বে, প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সূরা এখলাছ তিন তিনবার করে। মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর কবর কেয়ামত পর্যন্ত আলোকিত রাখবেন ইনশাআল্লাহ।

(গ) যে ব্যক্তি আশুরার দিবসে দিনে চার রাকাত নামাজ এই নিয়মে আদায় করবে, সূরা ফাতিহার পর সূরা এখলাছ ১১ বার। আল্লাহ তাআলা তাঁর জীবনের ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাঁর জন্য একটি নুরের মিম্বর তৈরি করবেন।



এই দিবসের নফল রোজা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ

এই দিবসের নফল রোজা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ:

প্রিয় নবীজি (ﷺ) এরশাদ করেছেন, রমজান মাসের ৩০ রোজার পর মুহররম মাসের রোজা সবচেয়ে উত্তম। আর পাঞ্জেগানা ফরজ নামাজের পর তাহাজ্জুদের নামাজ সবচেয়ে উত্তম।

এই দিবসের নফল রোজা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ


অপর হাদিসে বর্ণিত প্রিয় নবীজি (ﷺ) ইরশাদ করেছেন আমি আল্লাহ তাআলার উপর আশা রাখি, তিনি আশুরা দিবসের রোজা পালনকারীর পূর্বের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (তবে আমাদেরকে আশুরার রোজা দুটি রাখতে হবে ৯ ও ১০ তারিখ। আর ৯ তারিখ সমস্যা হলে ১০ ও ১১ তারিখ)

এই দিনে পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করা:

পবিত্র হাদীস শরীফে এসেছে, প্রিয় নবীজি (ﷺ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আশুরা দিবসে নিজ পরিবার-পরিজন এর জন্য উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করবে, মহান আল্লাহ তা‘আলা সারাটি বছর তার উপর রিজিক প্রশস্ত করে দিবেন। উল্লেখ্য যে, এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত জাবের(رضي الله عنه) সহ হযরত সুফিয়ান সাওরী(رحمة الله) ও হযরত ইবনে ওআয়ানা (رحمة الله) বলেছেন ইহা আমাদের পরীক্ষিত আমল।

এই দিবসে গরিব- মিসকীনদেরকে পানি অথবা দুধ পান করানো

এই দিবসে গরিব- মিসকীনদেরকে পানি অথবা দুধ পান করানো বড় সাওয়াবের কাজঃ

প্রিয় নবীজি (ﷺ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন গরিব- মিসকিন কে পানি পান করালো, সে যেন কিছুক্ষণের জন্য আল্লাহর নাফরমানি করলো না।

এই দিবসে বেশি বেশি দান-দক্ষিনা ও সদকা-খয়রাত করা অনেক সওয়াবের কাজ। ইহা দ্বারা বান্দার গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

এদিনের অন্যান্য আমল ও ফজিলত

এদিনের অন্যান্য আমল ও ফজিলতঃ

এই দিবসে রোগীদের খবরা-খবর নেওয়া অত্যন্ত পুণ্যের কাজঃ

পবিত্র হাদীস শরীফে এসেছে, প্রিয় নবীজি (ﷺ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিবসে কোন এক রোগীর খবরা-খবর নিল, সে যেন সমগ্র আদম সন্তানের সেবা করল।

এই দিবসে রোগীদের খবরা-খবর নেওয়া অত্যন্ত পুণ্যের কাজঃ


এই দিবসে এতিম সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়াঃ

পবিত্র হাদীস শরীফে এসেছে যে ব্যক্তি আশুরা দিবসে ইয়াতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে তার জন্য এতিমের মাথায় যত চুল রয়েছে বেহেশতে তত মর্যাদা বুলন্দ করা হবে। (সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি)


 আশুরা দিবসে গোসল করা:

হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি এই দিবসটিতে গোসল করবে সে ব্যক্তি মৃত্যুর রোগ ব্যতীত সকল প্রকারের রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে।

এ দিনটিতে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে বেশি করে তাওবা- ইস্তেগফার করাঃ

হযরত মুসা কলিম উল্লাহ (আ.)'র উপর মহান আল্লাহর পক্ষ হতে অহি নাজিল হয়েছিল, হে মূসা! উম্মতদেরকে বলুন মুহররমুল হারামের দশ তারিখে তারা যেন আমার নিকট তাওবা করে, আমি তাদের ক্ষমা করে দেব।

মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে বেশি করে তাওবা- ইস্তেগফার করা


এই দিবসে চোখে সুরমা দিলে চোখের যাবতীয় রোগ থেকে বেঁচে থাকবেঃ

এই সুরমা খারেজিদের মতো আনন্দ-উল্লাসের জন্য নয় বরং হাদিস শরীফের উপর আমল করার জন্য।

আশুরা দিবসের ঘটনা: (০১)

হযরত ইমাম নাসাফি (رحمة الله) বলেন, একজন মুসলিম ব্যক্তি কাফেরদের হাতে বন্দি ছিলেন। তিনি আশুরার দিবসে সুযোগ পেয়ে পালিয়ে যান, কাফেররা পেছন থেকে ধাওয়া করতে করতে তাঁকে পুনরায় পেয়ে গেল। মুসলিম ব্যক্তি মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন হে প্রভু; আশুরার দিবসের বরকতে আমাকে তাদের থেকে নাজাত দান করো। আল্লাহ তা‘আলা কাফেরদেরকে অন্ধ করে দিলেন, তারা তাঁকে আর দেখতে পেল না।

তিনি আশুরার রোজা রেখেছিলেন, ইফতারের সময় তিনি পানাহারের জন্য কিছুই পাননি। ক্ষুধার্ত অবস্থায় তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন, স্বপ্ন দেখলেন একজন ফেরেশতা তাঁর জন্য শরবত নিয়ে এলেন আর তিনি তা পান করে নিলেন। এরপর তিনি ১০ বছর বেঁচে ছিলেন, কিন্তু তাঁর পানাহারের আর প্রয়োজন হয়নি (সুবহানাল্লাহ)।

সূত্র: ‘নুজহাতুল মাজালিস’ - কৃত হযরত আব্দুর রহমান সফুরি শাফেয়ী (رحمة الله)

আশুরা দিবসের ঘটনা: (০২)

প্রতিবছর আশুরা দিবসে মিশরের মসজিদে আমর ইবনুল আ'স (رحمة الله) তে ফজরের নামাজে মহিলারাও উপস্থিত হতো। সেদিন ধনীরা গরিবদের দান- দক্ষিনা করতো। এক মহিলা এক ব্যক্তির কাছে আশুরা দিবসের উসিলা দিয়ে কিছু চাইলে লোকটি তাকে ঘরে নিয়ে যায় এবং তার গায়ের কাপড় খুলে দিয়ে দিলেন কারণ তার কাছে দেওয়ার মতো আর কিছুই ছিল না। 

কাপড়টি পেয়ে মহিলা মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করল, আল্লাহ আপনাকে বেহেশতী পোশাক দান করুন। লোকটি রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে দেখেন তার ঘরে খুব রূপসী একজন মহিলা হাতে একটি নাশপতি নিয়ে তাঁর ঘরে আসলেন। সম্পূর্ণ ঘর সুবাসিত হয়ে গেল, তিনি জিজ্ঞেস করলেন আপনার নাম কি? আপনার পরিচয় কি? মহিলা উত্তরে বললেন আমি বেহেশতের হুর, আমার নাম আশুরা, আর আমি বেহেশতে আপনার স্ত্রী হবো। একথা বলে হাতে থাকা ফলটি দ্বিখন্ডিত করলে একটি কাপড় বেরিয়ে আসে যাতে সুগন্ধি আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে।

লোকটির ঘুম ছুটে যায়, তাড়াতাড়ি উঠে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করলেন, হে আল্লাহ; এই মহিলা সত্যিই যদি জান্নাতে আমার সঙ্গিনী হয়ে থাকে তাহলে তুমি আমাকে তোমার নিকট নিয়ে যাও। লোকটির দোআ কবুল হলো।

সূত্র: ‘নুজহাতুল মাজালিস’ - কৃত হযরত আব্দুর রহমান সফুরি শাফেয়ী (رحمة الله)




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad