হযরত আজরাইল আঃ দেখতে কেমন? হযরত আজরাইল আঃ এর কাজ কী?

হযরত আজরাইল আঃ দেখতে কেমন? হযরত আজরাইল আঃ এর কাজ কী? What does Hazrat Azrael look like?


হযরত আজরাইল আঃ দেখতে কেমন? হযরত আজরাইল আঃ এর কাজ কী?


সকল ফিরিশতা নূরের তৈরী। তাঁরা আল্লাহ্ তা‘আলার দেয়া ক্ষমতা বলে স্থান-পাত্র, কালভেদে নানা আকৃতি ধারণ করতে পারেন। তারা পুরুষও নন, মহিলাও নন। তাঁরা আল্লাহ্র নির্দেশ পরিপন্থী কোন কাজ করতে পারেন না। আল্লাহ্ তাঁদের মারফত বহু কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। যেমন আল্লাহর নিকট থেকে নবী-রাসূলগণের নিকট অহি (প্রত্যাদেশ) পৌঁছানোর দায়িত্বে হযরত জিবরাঈল আলায়হিস্ সালাম, বৃষ্টি-বাদলের দায়িত্বে হযরত মিকাঈল আলায়হিস্ সালাম, ক্বিয়ামত কায়েমের লক্ষ্যে সিঙ্গায় ফুৎকারের কাজে হযরত ইসরাফিল আলায়হিস্ সালাম এবং জীবের জান কবজের কাজে নিয়োজিত হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম।


মালাকুল মাউত হযরত আজরাইল (আ.)’র পরিচয়


উমাইয়া খলিফা হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি স্বীয় বন্ধুদের প্রতি হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম সম্পর্কে অসিয়ত নামায় নিম্নরুপ বর্ণনা উপস্থাপন করেন- তিনি উল্লেখ করেন, আমার কাছে এমর্মে হাদীস পৌঁছেছে যে, (আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ ও সর্বকৌশলী) মালাকুল মাউত তথা হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম’র মাথা হলো আকাশে, তাঁর দু’পা ঠেকেছে জমিনে। সমগ্র পৃথিবী আযরাঈলের কাছে এত ছোট যেন কোন লোক একটি বাসন নিয়ে খানা খাচ্ছে। তিনি বলেন, আমার কাছে আরও বর্ণনা পৌঁছেছে যে, আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম প্রতিটি লোকের প্রতিটি গৃহের প্রতি ছয়শতবার দৃষ্টিপাত করে। 

আমার কাছে আরও বর্ণনা পৌঁছেছে, হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম দুনিয়ার মধ্যখানে দাঁড়ানো আছেন। তিনি এক নজরে দুনিয়ার জল, স্থল, পাহাড়, পর্বত সবকিছু একসাথে দেখেন। তিনি বলেন, আমার নিকট আরও বহু বর্ণনা পৌঁছেছে যে, হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম-এর অনেক সাহায্যকারী ফিরিশতা আছেন, যাঁদের সংখ্যা আল্লাহ্ তা‘আলা ভালো জানেন। তাঁদের এক একজনের এমন হজমশক্তি আছে, যদি তাঁদের হুকুম করা হয় যে, আসমান-জমিন এক লোকমায় খেয়ে ফেলো, তাহলে একাই এক লোকমায় আসমান-জমিন হজম করে ফেলতে পারবে। আমার কাছে আরও রেওয়ায়েত এসেছে যে, অন্যান্য ফিরিশতা হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালামকে এমনভাবে ভয় পায়- যেমন ভয় পায় তোমাদের কেউ বনের হিংস্র পশু দেখে। 

মালাকুল মাউত হযরত আজরাইল (আ.)’র পরিচয়
মালাকুল মাউত হযরত আজরাইল (আ.)’র পরিচয়


হযরত আজরাইল আঃ দেখতে কেমন?

আমার কাছে আরো বর্ণনা পৌঁছেছে যে, হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম যদি আরশ বহনকারী কোন ফিরিশতার কাছাকাছি যান, তাহলে তাঁরা তাঁর ভয়ে লবনের মত গলে চুলের মত সূক্ষè হয়ে যাবে। আমার কাছে আরো বর্ণনা এসেছে যে, হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম বনী আদমের রূহ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, নখ, চুল, রগ থেকে বের করে নিয়ে আসবে। রূহ এক গ্রন্থি থেকে অন্য গ্রন্থিতে পৌঁছলে মৃত্যুযাত্রীর কাছে তা একহাজার তলোয়ারের আঘাতের চেয়েও কঠিন মনে হবে। মৃত্যুযাত্রীর একটি চুলের ব্যথা যদি আসমান জমিনে রাখা হয়, তাহলে আসমান-জমিন গলে যাবে। রূহ যখন কন্ঠদেশে পৌঁছে, তখন হযরত আযরাঈল আলায়হিস সালাম রূহকে ধরে ফেলে।

ঈমানদারের রূহ কব্জ করার পর সাদা রেশমী রুমালে তা রাখা হয়। যার সুগন্ধি অত্যন্ত চমৎকার ও ব্যাপকতর। পক্ষান্তরে কাফিরদের রূহ কবজের পর তা কালো খসখসে মোটা পশমী কাপড়ে রাখা হয়, মনে হয় যেন রৌদ্রে শুকিয়ে ঠনঠনে করে রাখা হয়েছে। ঐ রূহ থেকে মৃত জন্তুর (অসহ্যকর) দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। 

[ইমাম নববী (রাহ.) রচিত তায্কিরাহ্: পৃষ্ঠা ২৬]

ঈমানদারের রূহ কব্জ করার পর সাদা রেশমী রুমালে তা রাখা হয়
ঈমানদারের রূহ কব্জ করার পর সাদা রেশমী রুমালে তা রাখা হয়


হযরত আজরাইল (আ.) কারো প্রতি জুলুম করেন না


হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মালাকুল মাউত মুমিনের রূহ কব্জ করেন, তখন তিনি দরজার চৌকাঠে দাঁড়ান। মৃত্যুর কারণে ঘরের লোকদের মধ্যে তখন কান্নার রোল পড়ে যায়। কেউ কপাল চাপড়ায়, কেউ চুল ছিঁড়ে, কেউ বিলাপ করে। হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম তখন তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন- কি ব্যাপার এত অস্থিরতা কেন? আল্লাহর শপথ- আমিতো তোমাদের কারো হায়াত কমাইনি, তোমাদের কারো রিযিকও কেড়ে নেইনি, কারো উপর বিন্দুমাত্র যুলুমও করিনি। 

যদি আমার উপর তোমাদের কারো রাগ থাকে, কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তাহলে আমি বলবো- আমি তো আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক নির্দেশিত। আর যদি মৃত ব্যক্তির উপর তোমাদের ঐ ধরনের আচরণ হয়- তাহলে বলবো- সে এ ব্যাপারে তোমাদের আক্রোশের পাত্র। আর যদি তোমাদের রাগ ও অভিযোগ আল্লাহর বিরুদ্ধে হয়- তাহলে জেনে রাখ এটা তাঁর সাথে কুফরির সমতুল্য। আর আমি বারবার আসতে থাকব।’’


‘‘হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন- ঘরের লোকেরা যদি মালাকুল মাউতের বাস্তব আকৃতি দেখতো, অথবা তার কথা শুনতো তাহলে তারা মৃত ব্যক্তির কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের ব্যাপারে বেশি কান্নাকাটি করতো।’’

[আবু মুতি মাকহুল ইবনে ফজর নসফি তাঁর ‘লু লুইয়াত’ গ্রন্থে এ হাদীস খানা সংকলন করেছেন]

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন

হযরত আজরাইল আঃ দেখতে কেমন?

হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মালাকুল মাউত সম্পর্কে বর্ণনা করেন- প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ‘‘এমন কোন ঘর নেই, যে ঘরের দরজায় মালাকুল মাউত দিনে পাঁচবার না দাঁড়ায়। যখন সে দেখে যে, কোন মানুষের রিযিক শেষ হয়ে গিয়েছে এবং নির্ধারিত সময় ফুরিয়ে এসেছে, তখন তার উপর মৃত্যুর যন্ত্রণা বর্তিয়ে দেয়। তখন মৃত ব্যক্তিকে তার মৃত্যু যন্ত্রণা ও বেদনা ঢেকে ফেলে। 

ঘরের স্ত্রী তখন চুল ছিড়ে, কপাল চাপড়ায়, শোকে কান্নাকাটি করে এবং চিৎকার করে বিলাপ করে। তখন মালাকুল মাউত বলতে থাকে- তোমাদের সর্বনাশ হোক- কেন এত ভয়-ভীতি, কেন এত আহাজারি! আমিতো কারো রিযিক কেড়ে নিইনি, কারো মৃত্যুকালও এগিয়ে আনিনি, আল্লাহর আদেশ ছাড়াও আসিনি এবং নির্দেশ ছাড়া তার রূহ কব্জ করিনি। আমি তোমাদের সবার কাছে বারবার ফিরে আসবো। এমনকি তোমাদের একজনকেও ছাড়বো না।’’

[হাদীসে মাশহুর এবং অর্থগত মারফু, (আরবাঈন)]


হযরত আযরাঈল আলায়হিস সালামকে রূহ কবজ করার জন্য নিযুক্ত করার কারণ নিম্নরুপ ‘‘আত্ তায্কিরাহ্’’ গ্রন্থের ৭৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে- আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বপ্রথম জমিন থেকে কিছু খামিরা আল্লাহর কাছে আনার জন্য হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালামকে প্রেরণ করলেন। হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম পৃথিবীতে এসে যেই মাত্র খামিরা নিতে যান- অমনিই পৃথিবী আল্লাহর দোহাই দিয়ে বসলো। তাই হযরত জিব্রাইল আলায়হিস্ খামিরা না নিয়ে ফিরে যান। অতঃপর হযরত মিকাইল আলায়হিস্ সালামকে পাঠালেন। 

খামিরা তার থেকেও আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করলো, তাই হযরত মিকাঈল আলায়হিস্ সালামও তা ছেড়ে দিলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালামকে পাঠালেন। খামিরা মালাকুল মাউত থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাইল। কিন্তু হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম দোহাই না শুনে খামিরা নিয়ে আল্লাহর দরবারে পৌঁছলেন। আল্লাহ্ আযরাঈলকে জিজ্ঞেস করলেন, জমিন কি খামিরা নেয়ার সময় তোমার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমার দোহাই দেয়নি? হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। 

হযরত আজরাইল আঃ দেখতে কেমন?

আল্লাহ্ বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তাকে দয়া করলে না কেন? যেমন দয়া করেছে তোমার দু’বন্ধু জিব্রাঈল ও মিকাঈল?’’ হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম তখন উত্তরে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ্! তোমার আদেশ পালন করাতো আমার উপর ফরজ ছিল, তার প্রতি কিভাবে দয়া করব?’’ তখন আল্লাহ্ বলেন, যাও, তোমাকেই মালাকুল মাউত নির্ধারিত করলাম এবং তাদের রূহ কবজ করার অধিকার দিলাম।’’ তা শুনে হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম কেঁদে ফেললেন। আল্লাহ্ কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে, উত্তরে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ্ তুমি তো এখান থেকে আম্বিয়া, রাসূল ও সুফীগণকে সৃষ্টি করবে। আর তুমি তাঁদের কাছে মৃত্যুর চেয়ে অন্য বস্তু এত অপ্রিয় করনি। 

যখন তারা আমাকে চিনে ফেলবেন। আর তখন আমাকে গালি দেবে। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমি মৃত্যুর পূর্বে নানা অসুখ এবং দুর্ঘটনা জনিত কারণ সৃষ্টি করে দেবো। তখন তারা তোমাকে দায়ী না করে ওই অসুখ ও দুর্ঘটনাকে দায়ী করবে।’’ ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, তাই আল্লাহ্ মৃত্যুর পূর্বে নানা রোগ শোক ও দুর্ঘটনা সৃষ্টি করেছেন।’’[আত্তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা- ৭৯] 

পরকালীন স্থায়ী শান্তি লাভের মানসে সকলকে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য ভাল কাজ কারা একান্ত অপরিহার্য।

লিখেছেন : অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবু তৈয়ব চৌধুরী




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad