তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা | বাংলা ২য় পত্র | সকল শ্রেণির জন্য

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা | বাংলা ২য় পত্র | সকল শ্রেণির জন্য - Essay on Information and Technology For All Classes


 তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি রচনা


প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আশা করি তোমরা ভাল আছো । তো আজকে তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর রচনা । এই রচনা তোমরা যারা এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাদের অনেক কাজে লাগবে । তো তোমাদের ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে Facebook messenger, Whatsapp,Telegram,Instagram এবং IMO তে শেয়ার করতে পারো ।


ভূমিকা: 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন শিল্প বিপ্লবের পর বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে সমগ্র বিশ্ব আজ একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। যে দেশগুলো তথ্য প্রযুক্তিতে বেশি পারদর্শী তারাও সার্বিকভাবে ভালো। বিশ্বের একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী ও উজ্জ্বল করতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকল্প নেই। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ খাতে উল্লেখযোগ্যভাবে বিকাশ লাভ করেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে তথ্য যোগাযোগের সুপার হাইওয়েতে অবস্থান করছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি: 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Information and Communication Technology (ICT)। প্রযুক্তি ব্যবহার কেন্দ্রিক তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগ আইসিটির মূলকথা। এর মধ্যে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণ বা আদান-প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাকে এক কথায় বলা হয় Information Technology (IT)। অন্যদিকে এসব প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ রক্ষার প্রক্রিয়াকে নিয়ে গড়ে উঠেছে Communication Technology বা যোগাযোগ প্রযুক্তির ধারণা। টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ফ্যাক্স, ইলেক্ট্রনিক মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রধান প্রধান যোগাযোগ প্রযুক্তির উপাদান।


তথ্য প্রযুক্তির কয়েকটি বিশেষ দিক: 

ডেটাবেস ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজি, নেটওয়ার্ক, প্রিন্টিং এবং রিপ্রোগ্রামিং টেকনোলজি, ডাটাবেজ টেকনোলজি, বিনোদন প্রযুক্তি, শিক্ষা, ট্রেনিং সিস্টেম ইত্যাদি সবই তথ্য প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য দিক।

বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ: 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে যেকোন কিছু খুঁজে পাওয়া সহজ এবং খুব দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী কম্পিউটিং-এর অভূতপূর্ব বিস্তারের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। তথ্য প্রযুক্তির এই আশ্চর্যজনক অগ্রগতি কম্পিউটার, ডিজিটাল টেলিফোন এবং সাবমেরিন তারের সাথে এসেছে। ইন্টারনেট ও ই-মেইলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সুশীল সমাজ একে অপরের কাছাকাছি এসেছে। ইন্টারনেটের আওতাধীন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেকোনো বিষয়ে বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং টিভি চ্যানেল থেকে যেকোনো তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমৃদ্ধ গবেষণাগার, সংবাদ সংস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয়েছে এবং এই গণযোগাযোগের বিকাশ করেছে।



উন্নয়ন সম্পর্কে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ভবিষ্যতের জাতীয় উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিপ্লব ঘটাবে। ইন্টারনেট পরিষেবা বা ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মতো ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অনেক দেশের অর্থনীতিতে চালিকা শক্তি হয়ে উঠছে।

তথ্য যোগাযোগের মহাসড়কে বাংলাদেশ: 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ সময় ও দূরত্বকে জয় করেছে। বিশ্বকে এনেছে হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশও তথ্য যোগাযোগের মহাসড়কের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা গ্রহণ করতে চাচ্ছে। খুব অল্প সময়েই এ দেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। যেমন-


শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার : 

বর্তমানে শিক্ষা ও প্রযুক্তি একে অপরের পরিপূরক হয়ে গেছে। শুধু প্রযুক্তিগত শিক্ষা নয় শিক্ষাদানেও প্রযুক্তির ব্যবহার আজকাল বেশ জনপ্রিয়। অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাদান, পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিনামূল্যে কম্পিউটার-ল্যাপটপ প্রদান, কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন ইত্যাদি শিক্ষাখাতে আইসিটির ব্যাপক অন্তর্ভূক্তির উদাহরণ।


স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার : 

সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। আর এ জন্য প্রত্যেক নাগরিকের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে মোবাইল ফোন স্বাস্থ্যসেবা, এসএমএস ভিত্তিক পরামর্শ দান, হাসপাতালগুলোতে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানসহ টেলিমেডিসিন সুবিধা স্থাপন স্বাস্থ্যখাতে আইসিটির অভিযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ দিক।


নারী উন্নয়ন কার্যক্রম: 

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক নারী। তারাও এ উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সমান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর এ জন্য বেকার মহিলাদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে জেলাভিত্তিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চালু, ইউনিয়নে তথ্য কেন্দ্র চালু হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন জরুরি।


যুব উন্নয়ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার: 

বাংলাদেশের মোট জনংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুব সমাজ। এ বিশাল যুব সম্প্রদায়কে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই দেশের ৬৪টি জেলায় ৭০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকার যুবকদের ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্কিং, কম্পিউটার বেসিক কোর্স, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন সহ ইত্যাদি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।


ইন্টারনেট সার্ভিস: 

ইন্টারনেট সেবা আরো সহজ করে দিতে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে থ্রিজি সেবা। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রি ওয়াইফাই জোন তৈরি করা হয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সরকার ৭০০ কোটি টাকার একটি বিশাল প্রকল্প হাতে নিয়েছে।




তথ্য ব্যবস্থাপনা ও ডাটা এন্ট্রি: 

তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণে বিপ্লব এনেছে তথ্য প্রযুক্তি। যেকোনো তথ্য যেমন- আদমশুমারির তথ্য, ভোটার তালিকা ইত্যাদি যথাযথভাবে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু করা হয়েছে ই-ইউনিয়ন সেবা।


ই-বিজনেস: 

ইন্টারনেট নির্ভর বাণিজ্য ই-কমার্স অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামো বদলে দিয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা চলছে। ক্রেতার সাথে বিক্রিতার সরাসরি সংযোগ ঘটছে। বিক্রেতারা তাদের পণ্য বিক্রির জন্য ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।


ই-ব্যাংকিং: 

ব্যাংকিং খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবস্থা। সব ব্যাংকেই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়েছে। গ্রাহকেরা সহজেই ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার যেকোনো সময়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারছেন এবং চাহিদা মতো খরচ করতে পারছেন।


টেলিযোগাযোগ: 

আইসিটি মহাসড়কের অন্যতম প্রধান দিক টেলিযোগাযোগ। দেশে বর্তমান ৬টি মোবাইলফোন কোম্পানি সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৩ এর মতে দেশে বর্তমানে ৯ কোটি ফোন গ্রাহক রয়েছে। বর্তমানে মোবাইল খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখাত থেকে বিপুল পরিমাণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর, ভ্যাট ইত্যাদি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।


অন্যান্য দিক: 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিস্তারে সরকার হাইটেক পার্ক নির্মাণ, আইসিটি ইনকিউরেটর স্থাপন, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া সাবমেরিন বিকল্প ব্যবস্থায় সংযুক্তি, আইসিটি বিজনেস প্রমোশন সেন্টার স্থাপন এবং দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় রয়েছে।


উপসংহার: 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত প্রসারমান ও মূল্যবান শিল্প। তাই একবিংশ শতাব্দীর জটিল ও কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রতিযোগিতামূলক এ বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অচিরেই বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমন্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় ও উজ্জ্বল করতে সক্ষম হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad