ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাথা মােবারকের সাথে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ

ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাথা মােবারকের সাথে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ Beyadabi with the head of Imam Hussain Radiyallahu Anhu

 

হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাথা মােবারকের সাথে ইয়াযিদের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ


এরপর ইবন যিয়াদ যাহর ইবন কায়সকে ডেকে পাঠাল। হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সঙ্গীদের মাথাসহ তাকে ইয়াযিদের কাছে পাঠাল। এদিকে ইয়াযিদের কাছ থেকেও দূত আসল। ইয়াযিদ বলে পাঠিয়েছে, তার কাছে যেন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর অস্ত্রশস্ত্র এবং পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যদের পাঠিয়ে দেয়া হয়। জামিল ইবন মুররা বর্ণনা করেছেন, আবুল ওয়াসানি বলেন, যে উটের পিঠে হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীদের মাথা মুবারক নিয়ে আসা হয়েছিল, সে উটটিকে আমরা জবাই করেছিলাম। কিন্তু সে গােশত কেউ খেতে পারেনি, সেটা ঘৃতকুমারীর চেয়েও তেতাে হয়ে গিয়েছিল।'


ইয়াযিদের কাছে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাথা মুবারক পৌঁছানাের পর সে আসন নিয়ে বসল। সিরিয়ার গণ্যমান্য লােকদের ডেকে এনে তার চারপাশে বসাল। এরপর তার সামনে হযরত ইমামে হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাথা মুবারক রাখা হলাে। সে একটি ছড়ি দিয়ে তার মুখে খোচা মারছিল। সে আবৃত্তি করছিল,

نفلقن هاما من رجال أعزة + علينا وهم كانوا أعق وأظلما

‘[তরবারি] এমন লােকদের দ্বিখণ্ডিত করে, যারা আমাদের কাছে সম্মানের পাত্র যদিও তারা আরও বেশি অবাধ্য, আরও বেশি জালিম।'


আমাকে বলেছেন মুহাম্মদ ইবন নাসির, জাফর ইবন আহমদ ইবন সাররাজ, তিনি আবু তাহির মুহাম্মদ ইবন আলি ইবনুল আল্লাফ, তিনি আবুল হুসাইন ইবন আখি মিমি, তিনি হুসাইন ইবন সাফওয়ান, তিনি আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ ইবন আবিদ দুনয়া আল কুরাশি, তিনি মুহাম্মদ ইবন সালিহ, তিনি আলি ইবন মুহাম্মদ, তিনি খালিদ ইবন ইয়াযিদ ইবন বিশর আস সাকসাকি, তিনি তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, কাবিসা ইবন যুয়ায়ব আল খুযাঈ বলেন, হযরত ইমাম হুসাইনের রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মাথা মুবারক এসে পৌঁছানাের পর ইয়াযিদের সামনে এনে রাখা হলাে। তখন সে হাতের একটি ছড়ি দিয়ে তাতে আঘাত করল। বলল,

نفلقن هاما من رجال أعزة علينا وهم كانوا أعق وأظلما

[তরবারি] এমন লােকদের দ্বিখণ্ডিত করে, যারা আমাদের কাছে সম্মানের কাজ যদিও তারা আরও বেশি অবাধ্য, আরও বেশি জালিম।

ইবন আবিদ দুনয়া বর্ণনা করেছেন, যায়দ ইবন আরকাম নিজেই বলেছেন, “আমি ইয়াযিদ ইবন মুয়াবিয়ার কাছে ছিলাম। তখন হযরত হুসাইন ইবনে আলির রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাথা মুবারক নিয়ে আসা হলাে। সে তখন ছড়ি দিয়ে তার দুঠোটের উপর খোচা দিতে লাগল। সে তখন আবৃত্তি করছিল, ‘[তিরবারি] এমন লােকদের দ্বিখণ্ডিত করে, যারা আমাদের কাছে সম্মানের পাত্র, যদিও তারা আরও বেশি অবাধ্য, আরও বেশি জালিম। আমি বললাম, তােমার লাঠি উঠাও। 

সে বলল, তুমি আমাকে নিষেধ করছ? আমি বললাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, তিনি ডান উরুর উপর হাসানকে এবং বাম উরুর উপর হুসাইনকে রেখেছেন। এরপর হাসানের মাথায় ডান হাত এবং হুসাইনের মাথায় বাম হাত রেখেছেন। তিনি বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমি তাদেরকে আপনার কাছে ও নেককার মুমিনদের কাছে সােপর্দ করছি। 

ওহে ইয়াযিদ! আল্লাহর রসুলের আমানত তুমি কীভাবে সংরক্ষণ করলে? ইবন আবিদ দুনয়া বলেন, আমাকে বলেছেন আবুল ওয়ালিদ, তিনি খালিদ ইবন ইয়াযিদ ইবন আসাদ, তিনি আম্মার আদ দুহনি থেকে বর্ণনা করেন, আবু জাফর বলেছেন, হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাথা ইয়াযিদের সামনে রাখা হয়েছিল। সেখানে আবু বারযা রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন। ইয়াযিদ তার ছড়ি দিয়ে তাঁর মুখে আঘাত করতে লাগল। সে আবৃত্তি করছিল, ‘[তরবারি] এমন লােকদের দ্বিখণ্ডিত করে, যারা আমাদের কাছে সম্মানের পাত্র, যদিও তারা আরও বেশি অবাধ্য, আরও বেশি জালিম।

{ইয়াযিদের এ ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ উল্লেখ করে ইমাম ইয়াফেঈ বলেছেন, “ইয়াযিদের এ কাজে

তার চরম ধর্মদ্রোহিতা ও পাপিষ্ঠতা স্পষ্ট বােঝা যায়।' (আবু মােহাম্মদ আল ইয়াফেঈ, প্রাগুক্ত, খ.১, পৃ.১০৮)}


তখন আবু বার বললেন, তােমার ছড়ি উঠাও। আল্লাহর কসম! আমি বারবার রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের মুখকে দেখেছি ঐ মুখকে চুমু খেতে। ইবন আবিদ দুনয়া বলেন, সালামা ইবন শুবায়ব, তিনি হুমায়দি, তিনি সুফয়ান, তিনি সালিম ইবন আবু হাফসা থেকে বর্ণনা করেন, হাসান বলেছেন, “রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে মুখ রাখতেন, সেই জায়গাটিকে ইয়াযিদ ছড়ি দিয়ে খোঁচা দিয়েছে এবং অপমানিত করেছে। সুফইয়ান বলেন, আমি শুনেছি, এ ঘটনার পর থেকে হাসিন আবৃত্তি করতেন,

سمية أضحى نسلها عدد الحصى + وليس لآل المصطفى اليوم من نسل

'সুমাইয়ার বংশধর বেড়েছে কঙ্করের সংখ্যায়

অথচ নবি পরিবারের আজ কোনাে বংশধর নেই।'

মজাহিদ বলেন, হুসাইন ইবন আলির মাথা মুবারক এনে ইয়াযিদ ইবন মুয়াবিয়ার সামনে রাখা হয়েছিল। এ অবস্থার সাথে তুলনা দিয়ে সে নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করল,

ليت أشياخي ببدر شهدوا + جزع الخزرج في وقع الأسل

فأهلوا واستهلوا فرحا + ثم قالوا لي هنيا لا تشل

বদরে নিহত হওয়া আমাদের পূর্বপুরুষেরা যদি দেখত

বর্শা পড়ার সময় খাযরাজদের আতঙ্ক। তাহলে তারা হর্ষধ্বনি করত, খুশিতে উজ্জ্বল হতাে মুখ এরপর আমাকে বলত, ‘খােশ আমদেদ! তুমি কর্মময় থাকো।

মুজাহিদ বলেন, ইয়াযিদ এখানে মুনাফেকি করেছে। আল্লাহর কসম! আবারও আল্লাহর কসম করে বলছি, তার বাহিনীর প্রত্যেকেই তাকে পরিত্যাগ করেছিল। অর্থাৎ তাকে ভৎসনা করেছিল, সমালােচনা করেছিল। আমি বলছি, এ লাইনগুলাে ইবনুয যাবারির লেখা :

ليت أشياخي ببدر شهدوا + جزع الخزرج في وقع الأسل

حين حگت بقباء بركها + واستحر القتل في عبد الأشل وقتلنا الضعف من أشرافكم + وعدلنا ميل بذر فاعتدل


'বদরে নিহত হওয়া আমাদের পূর্বপুরুষেরা যদি দেখত

বর্শাবৃষ্টির সময় খাযরাজদের আতঙ্ক। যখন কোবাতে তাদের উট যমিনে বুক লাগিয়ে বসেছিল আর

আবদুল আশহালে চলছিল হত্যাযজ্ঞ।

আমরা তােমাদের দ্বিগুণ সম্রান্তকে হত্যা করেছি। আর বদরের ঝোকানাে পাল্লাকে সমান সমান করে দিয়েছি.'


এ কবিতার প্রেক্ষাপট হলাে, মুসলিমরা বদরের দিন কাফিরদের অনেককে হত্যা করেছিলেন। আবার কাফিররা উহুদের যুদ্ধে অনেক মুসলমানকে হত্যা করেছিল। তাই ইয়াযিদ এই কবিতাকে প্রমাণস্বরূপ উদ্ধৃতি দিয়েছিল। সে কবিতার কিছু শব্দ পরিবর্তন করেছিল। এই উদ্ধৃতি দেয়া তার লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবার জন্য যথেষ্ট।

(এ কবিতাটি ইবন আসাকিরসহ অনেকেই উল্লেখ করেছেন। ইবন কাসির বলেছেন, ইয়াযিদ ইবন মুয়াবিয়া যদি এ কথা বলেই থাকে, তবে তার উপর আল্লাহর লানত এবং সমস্ত লানতদাতার লানত। আর যদি সে এটা না বলে থাকে, তবে যে একথা বানিয়েছে তার উপরই আল্লাহর লানত। }












একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad