জমি ভুলে অন্যের নামে রেকর্ড হলে কি করব?

 

জমি ভুলে অন্যের নামে রেকর্ড হলে কি করব?

আপনার জমি কি ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কারো নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে? আপনার জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে কী করবেন এবং নিজের নামে কীভাবে রেজিস্ট্রি করবেন তা জানুন।

এই ধরনের ঘটনা আজকাল সাধারণ। জমিটি মালিকের নামে রেজিস্ট্রি না করে অন্য কারো নামে রেজিস্ট্রি করা হয় এবং তা সংশোধনের জন্য বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়।

জমির রেকর্ড অন্য কারো নামে থাকলে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে তা ঠিক করা যেতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা আপনার জমি অন্য কারো নামে নিবন্ধিত হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে কিছু বিবরণ জানব।

জমির রেকর্ড কি

সাধারণত, যখন কোনো ব্যক্তির জমি সরকারিভাবে রেকর্ড করা হয় বা ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি করা হয়, তখন তা ভূমি রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। জমির রেকর্ড সাধারণত সম্পত্তির অবস্থান, সীমানা, আকার, আইনি বিবরণ, মালিকানার ইতিহাস, দায়বদ্ধতা এবং জমি সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলি রেকর্ড করে।

বাংলাদেশে জমির রেকর্ড সম্পর্কিত সকল তথ্য ভূমি মন্ত্রণালয় দ্বারা রক্ষনাবেক্ষন করা হয়ে থাকে। জমির রেকর্ড সমূহ রক্ষনাবেক্ষনের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির সম্পত্তির বা জমির অধিকার এবং সকল তথ্য সুস্পষ্ট প্রমানসহ সংরক্ষণ করা।

ভুলবশত বা প্রতারণামূলক ভাবে নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে তা সংশোধন করে নিজের নামে করার ক্ষেত্রে জমির রেকর্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে করনীয় 

কোনো অনাকাংখিত ঘটনা বা কোনো ভুলের কারনে অনেক সময় নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে জমির নামজারী বা জমির রেকর্ড সংশোধন করে নিজের নামে রেকর্ড করার জন্য কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। 

আপনার জমি অন্য কারো নামে রেজিস্ট্রি করা থাকলে কিভাবে তা সংশোধন করে নিজের নামে রেজিস্ট্রি করবেন তা ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয়েছে।–

১. ডকুমেন্টস সংগ্রহ করা

জমির রেকর্ড বা নামজারি ঠিক করার জন্য প্রথমেই আপনাকে জমির মালিকানা সংক্রান্ত সকল ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এই ধরনের ডকুমেন্টসের মধ্যে জমির দলিল, ক্রয়ের চুক্তিপত্র, ট্যাক্স রসিদ, জমির জরিপ, মানচিত্র, মালিকানার প্রমানপত্র ইত্যাদি থাকতে পারে।

২. জমির রেকর্ড যাচাইকরণ

জমির নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে সব রেকর্ড যাচাই করা খুবই জরুরি। বাংলাদেশের সকল ভূমি রেকর্ড সাধারণত ভূমি মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় ভূমি অফিস দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। আপনি যেকোনো সময় অনলাইনে জমির রেকর্ড চেক করতে পারেন। ভূমি অফিসের সরকারি কর্মকর্তাদের সহায়তায় সব ধরনের দলিল-দস্তাবেজ যাচাই-বাছাই করে জমির মালিকানার তথ্য নিশ্চিত করতে হয়। ভূমি সংক্রান্ত তথ্যের জন্য আপনার ভিজিট করতে পারেন - ভূমি পেডিয়ায়

২. মামলা বা অভিযোগ করা

আপনি বাংলাদেশের একজন ভূমি ও সম্পত্তি বিশেষজ্ঞ বা আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে সুনির্দিষ্ট এবং উপযুক্ত প্রমাণ সহ একটি মামলা বা অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, জমির শিরোনাম ঠিক করার জন্য স্থানীয় ভূমি অফিস বা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যেতে পারে।

৩. প্রমান প্রদান করা

আপনার নামে আপনার জমির মালিকানা নিবন্ধন করার জন্য আপনাকে জমি সম্পর্কিত সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। যদি আপনার জমি অন্য কারো নামে অবৈধভাবে হয় বা ভুলবশত অন্য কারো নামে রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই একটি সার্টিফিকেট দিয়ে জমির মালিকানা প্রমাণ করতে হবে। আপনার সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ সহ একটি শক্তিশালী মামলা করা অপরিহার্য।

৪. আইনি পদক্ষেপ অনুসরণ করা

পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, জমির শিরোনাম সংশোধন সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নাম সংশোধন বা সংশোধন করতে কিছু আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আপনি নিয়মিত আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি পদক্ষেপ অনুসরণ করে খুব দ্রুত আপনার জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নিতে পারেন।

জমির রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া 

বাংলাদেশে নিজের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে তা জমি রেকর্ড সংশোধন করার মাধ্যমে সঠিক মালিকের নামে রেকর্ড করতে হয়। জমি রেকর্ড সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে, এগুলো হলো:

• ত্রুটি শনাক্তকরণ বা জমির মালিকানা যেই নামে রেকর্ড করতে হবে তা নিশ্চিত করা;
• নাম বা রেকর্ড সংক্রান্ত সকল প্রয়োজনীয় তথ্য এবং কাগজপত্র সংগ্রহ করা;
• জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য একটি আবেদন বা দরখাস্ত প্রস্তুত করা এবং তা সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে জমা দেয়া;
• জমির রেকর্ড সহ সকল কাগজপত্র যাচাই ও তদন্ত করার মাধ্যমে সমাধান পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা;

উপযুক্ত প্রমান ও সাক্ষ্যের মাধ্যমে আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার পর এবং সংশোধন অনুমোদিত হওয়ার পর ভূমি রেকর্ডে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা।

উপরের সকল পদক্ষেপ গুলো গ্রহন করে উপযুক্ত প্রমান সহ আপনি খুব সহজে আপনার জমির মালিকানা অন্যের নামে হলে তা নিজের নামে রেকর্ড করে নিতে পারবেন।

জমি সংক্রান্ত প্রশ্নউত্তর বা FAQ’s

নামজারি বাতিলের জন্য করণীয় কি?

নামজারী বাতিলের জন্য উক্ত নামজারীর আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে কাগজপত্রসহ উপযুক্ত কারণ বর্ণনা করে উপজেলা ভূমি অফিসে মিস কেস দায়ের করার মাধ্যমে নামজারী বাতিল করা যায়। ৩০দিনের বেশী বিলম্বের ক্ষেত্রে উক্ত বিলম্বের উপযুক্ত কারণ বর্ণনা করতে হবে। এক্ষত্রে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৫০ ধারার বিধান মতে আবেদন নিষ্পত্তি করবেন।

আমার জমি অন্যের নামে রেকর্ড হলে তা সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগবে?

জমির রেকর্ড বা নামজারি সংশোধনের জন্য বিভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ দিন সময় লাগতে পারে।

জমির নাম রেকর্ড সংশোধনের জন্য কত টাকা লাগে?

সরকারিভাবে জমির মালিকানা নিজের নামে রেকর্ড করার জন্য আবেদনের ১১৫০ টাকার সাথে ২০ টাকা কোর্ট ফি যুক্ত হতে পারে।

জমির রেকর্ড সংশোধন এর আপিল করার জন্য আবেদনপত্র কোথায় জমা দিতে হবে?

আপনার স্থানীয় বা জমির এরিয়া সংশ্লিষ্ট ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন বা দরখাস্ত জমা দিতে হবে।