হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব ও ফযীলত
হজ্ব যেহেতু একবারই ফরয তাই যার উপর হজ্ব ফরয হয়েছে সে যদি মৃত্যুর আগে যে কোনো বছরহজ্ব আদায় করে, তবে তার ফরযআদায় হয়ে যাবে।কিন্তু হজ্ব বিধানের মৌলিক তাৎপর্য,তার যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা।বিনা ওজরে বিলম্ব না করা।কারণ বিনা ওজরে বিলম্ব করাও গুনাহ।
আল্লাহ্ তা'আলা ও তার রাসূল ফরয হজ্ব আদায়ের প্রতি এমনভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন যে, কেউ যদি এই হজ্বকে অস্বীকার করেবা এ বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত ও হতভাগ্যরূপে বিবেচিত হবে।
আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেছেন---
ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فان الله غنى عن العلمين.
(তরজমা) মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্ব করা ফরয। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)
তাছাড়া যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়াতো অস্বাভাবিক নয়।তাই হজ্ব ফরয হওয়ার পর বিলম্বকরলে পরে সামর্থ্য হারিয়ে ফেললে বা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তাআলার নিকট অপরাধী হিসেবেই তাকে হাজির হতে হবে।এজন্যই হাদীস শরীফে হজ্ব ফরয হওয়ামাত্র আদায় করার তাগিদ ও হুকুম দেওয়া হয়েছে।
ইবনে আববাস (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) ইরশাদ করেছেন---
من أراد الحج فليتعجل، فإنه قد يمرض المريض وتضل الضالة وتعرض الحاجة.
যে ব্যক্তি হজ্ব করার ইচ্ছে করে, সে যেন তাড়াতাড়ি তা আদায় করে নেয়।কারণ যে কোনো সময় সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা বাহনের ব্যবস্থাও না থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭৩২; সুনানে দারিমী, হাদীস : ১৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৮৭; তবারানী, হাদীস : ৭৩৮)
হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব ও ফযীলত:
ইবনে আব্বাস(রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বলেন, রাছুলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) ইরশাদ করেছেন---
تعجلوا إلى الحج، يعني الفريضة، فإن أحدكم لا يدري ما يعرض له.
ফরয হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্বকরো না।কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৪/৩৪০)
উপরন্তু একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ্ তা'আলা যে স্বচ্ছল সামর্থ্যবান ব্যক্তি সত্ত্বর হজ্ব আদায় করে না তাকে হতভাগা ও বঞ্চিত আখ্যায়িত করেছেন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) হতে বর্ণিত, রাছুলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) ইরশাদ করেছেন---
يقول الله عز وجل : إن عبدا صححت له جسمه، ووسعت عليه في المعيشة تمضي عليه خمسة أعوام لا يفد إلى لمحروم.
আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিযিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম।পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজ্বের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত। (সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৫; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ১০৩১; তবারানী, হাদীস : ৪৯০; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৫/২৬২; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৫৯)
শুধু তাই নয়, একসময় বায়তুল্লাহ উঠিয়ে নেয়া হলে মানুষ হজ্ব করতে পারবে না এই আশঙ্কার কারণেও আল্লাহর রাসূল উম্মতকে তাড়াতাড়ি হজ্ব করার হুকুম করেছন।
হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব ও ফযীলত:
রাছুলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) বলেছেন--
استمتعوا بهذا البيت فقد هدم مرتين ويرفع في الثالثة.
তোমরা হজ্ব ও উমরার মাধ্যমে এই (বায়তুল্লাহ)গৃহের উপকার গ্রহণ কর।কেননা তা ইতিপূর্বে দু’বার ধ্বংস হয়েছে। তৃতীয়বারের পর উঠিয়ে নেওয়া হবে। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৬৭১৮; মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১০৭২; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৬৫২)
হজ্ব করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থবিত্ত থাকার পরও যে ব্যক্তি হজ্ব করে না তার সম্পর্কে হাদীস শরীফে কঠোর হুমকি প্রদান করা হয়েছে।
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বলেন---
من أطاق الحج فلم يحج فسواء عليه مات يهوديا أو نصرانيا.
যে ব্যক্তি হজ্ব করার সামর্থ্য রাখে,তবুও হজ্ব করে না সে ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খৃস্টান হয়ে তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮)
তিনি আরো বলেন, আমার ইচ্ছে হয় কিছু লোককে বিভিন্ন শহরাঞ্চল ও লোকালয়ে পাঠিয়ে দিই, তারা সেখানে দেখবে, কারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করছে না। তারা তাদের উপর কর আরোপ করবে।তারা মুসলমান নয়, তারা মুসলমান নয়। (প্রাগুক্ত)
যারা হজ্ব-উমরা না করে সন্ন্যাসী হওয়ার চেষ্টা করে ইসলাম তা কখনো অনুমোদন করে না।ইবনে আববাস (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) হতে বর্ণিত, নবী কারীম (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) ইরশাদ করেছেন----
لا صرورة في الإسلام.
ইসলামে বৈরাগ্য নেই।অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হজ্বের ক্ষেত্রে কোনো বৈরাগ্য নেই। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৩১১৩, ৩১১৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৭২৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৬৮৬; তবারানী, হাদীস : ১১৫৯৫; শরহু মুশকিলুল আছার, হাদীস : ১২৮২)
ইকরামা রাহ.কে জিজ্ঞাসা করা হলো সারুরা কী? তিনি বলেন , যে ব্যক্তি হজ্ব-উমরাহ কিছুই করে না অথবা যে ব্যক্তি কুরবানী করে না। (শরহু মুশকিলুল আছার ২/২১৫-১৬)
সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহ. বলেন, জাহেলী যুগে যখন কোনো ব্যক্তি হজ্ব করত না তখন তারা বলত, সে সারুরা (বৈরাগী)।তখন আল্লাহর নবী (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) বলেন, ইসলামে বৈরাগ্য নেই।
হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব, ফযীলত ও মাসায়েল:
যারা হজ্বের সফরের সৌভাগ্য লাভ করেন তারা যেন আল্লাহর মেহমান।তাই প্রত্যেকের উচিত সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য ও তার ইশক-মুহববতের অনুভূতি নিয়ে সেখানে অবস্থান করা।বায়তুল্লাহ্ ও আল্লাহর অন্যান্য শে'আর ও নিদর্শনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা।দ্বন্দ-কলহ,ঝগড়া বিবাদ এবং অন্যায় অশ্লীলতা থেকে সর্বাত্মকভাবে দূরে থাকা।কুরআন হাদীসে এ সম্পর্কে বিশেষ হুকুমনাযিল হয়েছে।
আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেন--
الحج اشهر معلومات فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال في الحج، وما تفعلوا من خير يعلمه الله.
(তরজমা) হজ্বের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে।যে ব্যক্তি সেসব মাসে (ইহরাম বেঁধে) নিজের উপর হজ্ব অবধারিত করে নেয় সে হজ্বের সময় কোনো অশ্লীল কথা বলবে না, কোনো গোনাহ করবে না এবং ঝগড়া করবে না। তোমরা যা কিছু সৎকর্ম করবে আল্লাহ্ তা জানেন। (সূরা বাকারা : ১৯৭)
উক্ত আয়াতে তিনটি বিষয় থেকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এক. ইহরাম অবস্থায় অশ্লীল কথা বলা।এমনকি স্ত্রীর সাথে যৌন উত্তেজনা মূলক কথা বলাও নিষিদ্ধ। দুই. কোনো ধরনের গুনাহয় লিপ্ত হওয়া।ইহরাম অবস্থার বিশেষ গুনাহ যেমন শরীরের কোনো স্থানের চুল, পশম বা নখ কাটা, আতর বা সুগন্ধি লাগানো, পশু শিকার করা,শরীরে উকুন মারা থেকে যেরূপ বিরত থাকবে তেমনি সাধারণ অবস্থার গুনাহ যেমন অন্যকে কষ্ট দেওয়া, কু-দৃষ্টি ও গীবত শেকায়েত থেকেও বিরত থাকবে। তিন. ঝগড়া- বিবাদে লিপ্ত হওয়া।
এ ধরনের পাপ- পঙ্কিলতা ও ঝগড়া-বিবাদমুক্ত হজ্বকেই হাদীস শরীফে হজ্বে মাবরূর বা মকবুল হজ্ব বলা হয়েছে এবং এর বিশেষ বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা উল্লেখিত হয়েছে।এখানে কিছু ফযীলত বর্ণনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্!!
হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব, ফযীলত ও মাসায়েল:
১) হজ্ব পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মুছে দেয়:
আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বর্ণনা করেন, রাছুলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) ইরশাদ করেছেন---
من حج فلم يرفث ولم يفسق غفر له ما تقدم من ذنبه.
যে ব্যক্তি হজ্ব করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮১১)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে---
من حج لله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه.
আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বলেন,আমি নবী করীম (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) কে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৩৮১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮১; সুনানে নাসায়ী ৫/১১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৪)
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে---
من حج البيت فقضى مناسكه وسلم المسلمون من لسانه ويده غفر له ما تقدم من ذنبه.
আতা ইবনে ইয়াসার (রাহ:) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হজ্ব করে,হজ্বের বিধানগুলো যথাযথভাবে আদায় করে, মুসলমানরা তার মুখ ও হাত থেকে নিরাপদ থাকে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৮৮১৭; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৩৫৮)
আমর ইবনুল আস (রাদিআল্লাহু তা'আলা বর্ণনা করেন(দীর্ঘ এক হাদীসে) রাছুলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) বললেন---
أما علمت يا عمرو! أن الإسلام يهدم ما كان قبله، وأن الهجرة تهدم ما كان قبلها، وأن الحج يهدم ما كان قبله.
হে আমর! তুমি কি জান না যে, ইসলাম (গ্রহণ)পূর্বেকার যাবতীয় পাপকে মুছে ফেলে। হিজরত তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহকে মিটিয়ে দেয় এবং হজ্ব অতীতের পাপসমূহ মুছে দেয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৫; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৭৭৭; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস : ৫০৭)
হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব, ফযীলত ও মাসায়েল:
২) হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান হলো জান্নাত:
আবু হুরায়র(রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু)হতে বর্ণিত, রাছুলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) ইরশাদ করেছেন---
العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة.
এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৩৫৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৫; সুনানে তিরমিযী,হাদীস : ৯৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২৮৮৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৭৮২)
'আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাছুলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) ইরশাদ করেছেন----
تابعوا بين الحج والعمرة، فإنهما ينفيان الفقر والذنوب كما ينفي الكير خيث الحديد، والذهب والفضة، وليس للحجة المبرورة ثواب إلا الجنة.
তোমরা হজ্ব ও উমরা পরপর একত্রে পালন করো। কেননা এ দুটি(হজ্ব ও উমরাহ) দারিদ্র ও গুনাহসমূহ এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে দেয়। আর হজ্বে মাবরূরের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮১০; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৩৬৬৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১২৭৮০; সুনানে কুবরা, নাসায়ী, হাদীস : ৩৬১০; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫১২; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস : ৪৯৭৬; তবারানী, হাদীস : ১০৪৬০)
হযরত জাবির (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) ইরশাদ করেছেন---
الحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة، قيل : وما بره؟ قال : إطعام الطعام وطيب الكلام.
হজ্বে মাবরূরের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। জিজ্ঞাসা করা হল,হজ্বের সদাচার কী?তিনি বললেন,খানা খাওয়ানো এবং উওম কথা বলা (অর্থাৎ অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তা পরিত্যাগ করা)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,খানা খাওয়ানো ও বেশি বেশি সালাম করা (সালামের বিস্তার ঘটানো)। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ৩০৭২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৪১১৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৪৪৮২; তবারানী আওসাত ১/১১৩; মুসনাদে আবু দাউদ, ত্বয়ালিসী, হাদীস : ১৭১৮; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১৮১২; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৮৮১৭)
হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব, ফযীলত ও মাসায়েল:
৩) সর্বোত্তম আমল হজ্বে মাবরূর:
হযরত আবু হুরায়রা (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন---
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم أي العمل أفضل؟ قال : إيمان بالله ورسوله، قيل : ثم ماذا؟ قال : الجهاد في سبيل الله، قيل : ثم ما ذا؟ قال : حج مبرور.
নবী করীম (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি?তিনি বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা।জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা।জিজ্ঞাসা করা হল,তারপর কোনটি?তিনি বললেন,হজ্বে মাবরূর বা কবুল হজ্ব। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৫৯০; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ১৬৫৮; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১৫৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ২০২৯৬; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৪২১১)
হযরত মায়িয (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন---
سئل : أي الأعمال أفضل؟ قال : إيمان بالله وحده، ثم الجهاد، ثم حجة برة تفضل سائر الأعمال كما بين مطلع الشمس إلى مغربها.
নবী করীম (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করা হল,কোন আমল সর্বোত্তাম? তিনি বললেন, এক আল্লাহ্ তা'আলার প্রতি ঈমান আনা। তারপর জিহাদ করা।অতপর কবুল হজ্ব অন্যান্য আমল হতে এত উৎকৃষ্ট ও মর্যাদাপূর্ণযেরূপ সূর্যের উদয়াচল হতে অস্তাচলের ব্যবধান। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯০১০; তবারানী ২০/৮০৯; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৬৩)
এ সম্পর্কিত অন্য একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,আমর ইবনে আবাসা (রাদিআল্লাহু তা'আলা 'আনহু) বর্ণনা করেন, রাছুলুল্লাহ্ (ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াছল্লাম) ইরশাদ করেছেন---
... ثم عملان هما أفضل الأعمال إلا من عمل بمثلهما : حجة مبرور أو عمرة.
অতপর এমন দুটি আমল,যা অন্যসকল আমল হতে শ্রেষ্ঠ।তবে যে ব্যক্তি তার অনুরূপ আমল করে তা ব্যতীত : মকবুল হজ্ব অথবা মকবুল উমরা। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭০৭; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ২০১০৭; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৬১)