জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় - Jāhānnām thēkē muktir path

জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়

 

জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়

জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় ইসলাম গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ঈমান তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে একনিষ্ঠ করা এবং নেক আমল করা। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক সব ফরজ বিধান পালন করা। সব পাপাচার বর্জন করা। তাক্বওয়া অর্জন তথা আল্লাহ তাআলাকে সব কাজে ভয় করা এবং আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া করা। এসবই মহান আল্লাহ তাআলা শিক্ষা দিয়েছেন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনায় তা ওঠে এসেছে এভাবে-


১. رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখেরাতি হাসাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবন নার।’


অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোযখ-যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২০১)

২. رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا - إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا

উচ্চারণ: ‘রাব্বানাসরিফ আন্না আজাবা ঝাহান্নামা ইন্না আজাবাহা কানা গারামা; ইন্নাহা সাআত মুসতাকাররা ওয়অ মুক্বামা।’

অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি নিবৃত্ত কর; জাহান্নামের শাস্তি তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংসাত্মক; নিশ্চয় তা আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে অতি নিকৃষ্ট!’ (সুরা ফুরক্বান: আয়াত ৬৫-৬৬)

এ ছাড়াও বহু হাদিসে জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় বলা হয়েছে; যার কিছু তুলে ধরা হলো-


১. এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দুরে রাখবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত দেবে এবং রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

Padma Bridge Paragraph For All Classes 2023

২. হাদিসে পাকে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসুল; আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (মুসলিম)

জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়

৩. ‘আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বলবে- لَا اِلَهَ اِلَّا الله 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। (বুখারি ও মুসলিম)


৪. হাদিসে পাকে আরও এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে (অর্থাৎ ফজর ও আসরের নামাজ আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম)


৫. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জোহরের ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সুন্নত যত্নসহকারে পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, তিরিমিজি)

জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন

৬. রোজা রাখা। রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকবচ। হাদিসে পাকে এসেছে, ‘রোজা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য) ঢালস্বরূপ।’ (বুখারি, মুসলিম)

৭. হাদিসে পাকে আরও এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জেহাদকালীন বা প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনকল্পে) একদিন রোজো রাখবে, আল্লাহ ঐ একদিনের রোজার বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)


৮. হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, ‘সেই ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে; যতক্ষণ না দুধ স্তনে ফিরে না গেছে। (দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব) আর একই বান্দার উপর আল্লাহর পথের ধূলা ও জাহান্নামের পঁয়া একত্র জমা হবে। না।’ (তিরমিজি)


৯. হাদিসে পাকে এসেছে, ‘দুই ধরনের চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। আর যে চোখ আল্লাহর পথে প্রহরায় রত থাকে।’ (তিরমিজি)


১০, তিরমিজির আরও এক বর্ণনায় এসেছে, ‘জাহান্নামের (আগুন) প্রত্যেক ওই ব্যক্তির জন্য হারাম হবে, যে মানুষের কাছাকাছি, নম্র, সহজ ও সরল।’ (তিরমিজি)

১১. বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়। আর যে ব্যক্তি এরও সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভালো কথা বলে বাঁচে। যাকে এই কন্যা সন্তান দিয়ে কোনো পরীক্ষায় ফেলা হয়, তারপর যদি সে তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে, তাহলে এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে অন্তরাল হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)

১২. হাদিসে পাকে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করবে, কেয়ামতের দিনে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের আগুন থেকে তার চেহারাকে রক্ষা করবেন।’ (তিরমিজি)

১৩. হাদিস গ্রন্থ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, ‘যে পছন্দ করে যে, তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মরণ যেন এমন অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি ঈমান রাখে এবং অন্যের প্রতি এমন ব্যবহার দেখায়, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়গুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad