সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত | sura bakara ses 2 ayat
আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ , প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা আশা আপনার ভাল আছেন । আপনারা অনেকে আমাদের মেসেজ করেছেন সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত একটি পোস্ট করার জন্য । আমাদের আজকের পোস্ট আপনাদের চাহিদাকে ঘিরেই । আলহামদুলিল্লাহ আজকের পোস্টটি সুরা বাকার শেষ দুই আয়াতের ফজিলতের উপর বর্ণিত ।
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত সম্পর্কে অনেক অনেক ফযীলত পূর্ণ বয়ান রয়েছে । আমরা এটা নিশ্চিত যে আজকের আলোচনা আপনাদের অনেক ভাল লাগবে । আজকের পোস্টে ছবি, এবং ভিডিও দেওয়া থাকবে ।
সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত (২৮৫-২৮৬, আমানার রাসূলু…থেকে শেষ পর্যন্ত) তেলাওয়াত করার অনেক উপকারের কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। শেষ আয়াতে অত্যন্ত জরুরি কয়েকটি দুয়া রয়েছে। এসব দুয়া কবুল হওয়ার ওয়াদাও করা হয়েছে।
আল্লাহর নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন বললেন, “এই মাত্র আকাশের একটি দরজা খোলা হয়েছে। এর আগে কখনও এ দরজাটি খোলা হয়নি, এ দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করছেন। এর আগে তিনি কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। এ ফেরেশতা রাসুলুল্লাহ ((সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)) কে সালাম করে বলেন, সুসংবাদ গ্রহণ করুন আপাদমস্তক দুটি নূরের, যা আপনার আগে কোন নবীকে দেয়া হয়নি ।
১. ফাতেহাতুন কিতাব অর্থাৎ সুরা ফাতেহা এবং
২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত।
উভয় আয়াতে দোয়া আছে। আল্লাহর উসিলা করে,আপনি এসব দোয়ার যে অংশই পাঠ করবেন আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই রহমত দান করবেন, (অর্থাত কবুল করা হবে)।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত
সহীহ মুসলিম।
- রাতের বেলা ঘুমানোর পূর্বে সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করলে তাহাজ্জুদ নামাযের সমান সওয়াব পাওয়ার আশা করা যেতে পারে।
- রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পড়বে সেটা তার জন্য যথেষ্ঠ হবে। ” ( বুখারি ৫০১০, মুসলিম ৮০৭।)
- হজরত আবু মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করবে, তার জন্য এ দুটি আয়াত যথেষ্ট হবে; অর্থাৎ সারারাত সে জিন ও মানুষের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে এবং প্রতিটি অপ্রিয় বিষয় থেকে তাকে হেফাজত করা হবে। (সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম।)
Watch Video
আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
اٰمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِه وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ(285 ) لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى
الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ(286)
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের উচ্চারণঃ
২৮৫. আমানুর-রাসুলু বিমা উংজিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি, লা নুফার-রিকু বাইনা আহা’দিম-মির রুসুলিহি। ওয়া ক্বালু সামি’না, ওয়া আত্বা’না, গুফরা নাকা, রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।
২৮৬. লা ইউ কাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস-আ’হা। লাহা মা কাসাবাত ওয়া আ’লাইহা মাক তাসাবাত। রব্বানা লা-তু আখজিনা-ইন্না সিনা- আও আখত্বা’না। রাব্বানা ওয়ালা তাহ’মিল আ’লাইনা ইসরান কামা হা’মালতাহু আ’লাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিনা। রব্বানা ওয়ালা তুহা’ম্মিলনা মা-লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়াআ’ফু আ’ন্না, ওয়াগ ফিরলানা, ওয়ার হা’মনা। আংতা মাওলানা, ফানছুরনা আ’লাল ক্বাওমিল কাফিরিন। (আমিন)।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের অর্থঃ
২৮৫. রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
২৮৬. আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত
সূরা বাকারার ফজিলত:
১. হযরত উকবা ইবনে আমর বলেন, আমি আবু মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম বাইতুল্লাহর কাছে। অতঃপর বললাম, আপনার পক্ষ থেকে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত সম্পর্কে একটি হাদিস আমার নিকটে পৌঁছে, (এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?) অতঃপর তিনি বললেন, হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত যে ব্যক্তি রাতে পড়বে সে দুটি আয়াত তার জন্য যথেষ্ট হবে।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৮০৭
হাদীসটির ব্যাখ্যা মুহাদ্দীগণ বিভিন্ন রকম করেছেন। তবে সবগুলোই উদ্দেশ্য হতে পারে।
(ক) রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য যথেষ্ট করবে।
(খ) শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ট করবে।
(গ) বিপদ-মছিবত থেকে যথেষ্ট করবে।
(ঘ) রাতে কুরআন তিলাওয়াত করা থেকে যথেষ্ট করবে।
২. জুবাইর ইবনে নুফাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সুরা বাকারাকে আল্লাহ তাআলা এমন দুটি আয়াত দ্বারা শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে। অতএব, তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে। তোমাদের স্ত্রীদেরকেও শেখাবে। কারণ, এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের উপায় ও (দীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণলাভের দোয়া। মিশকাতুল মাসাবিহ: ২১৭৩
৩. হযরত নুমান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আকাশ ও যমীন সৃষ্টির ২০০বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন। সে কিতাব থেকে দুটি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। যার দ্বারা সূরা বাকারা শেষ করা হয়েছে, সেই দুটি আয়াত যে কোন ঘরে তিন রাত পাঠ করলে সেই ঘরে সেই ঘরের ধারে কাছেও শয়তান আসতে পারবে না। জামে তিরমিজী, হাদীস নং-৩১২৬
৪. হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদেরকে অন্য লোকদের ওপর তিনটি বিষয় দ্বারা মর্যাদা দান করা হয়েছে।
(১) পুরা জমিনকে সিজদার স্থান বানানো হয়েছে। পুরা জমিনের মাটি কে আমাদের জন্য পবিত্রতার বস্তু হিসেবে বানানো হয়েছে।
(২) আমাদের নামাজের কাতার কে ফেরেশতাদের কাতারের সাথে সমতুল্য করা হয়েছে।
(৩) সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো আরশের ভাণ্ডার থেকে আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। যা আমাদের পূর্বে কাউকে দেওয়া হয় নাই এবং পরবর্তীতে কাউকে দেওয়া হবে না। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৯৩
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবাইকে পবিত্র কোরআন শরিফের এ বরকতময় সম্মানিত আয়াত পাঠ এবং আমল করার তাওফিক দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের সব মুসিবত, বিপদ-আপদ, রোগ-শোক অতিক্রম করে শান্তিময় ও সুখের জীবনলাভে ধন্য করুন। আমিন!