জুমার নামাজের নিয়ত আরবি এবং বাংলা অর্থসহ

জুমার নামাজের নিয়ত আরবি এবং বাংলা অর্থসহ | জুমার নামাজের নিয়ত ও রাকাত | Jumar Namazer Niyot Arabic


জুমার নামাজের নিয়ত আরবি এবং বাংলা অর্থসহ | জুমার নামাজের নিয়ত ও রাকাত | Jumar Namazer Niyot Arabic

আজকের পোস্টে আমরা জানব জুমার নামাজের নিয়ত এবং মাসয়ালাসহ অনেক খুটিনাটি বিষয় । তো চলুন পোস্ট শুরু করা যাক ।

জুমার নামাজ এর গুরুত্ব

জুম’আর সালাত ফরজ-তবে ঐ সব পুরুষদের জন্য, যাদের উপর জামা’আতে সালাত আদায় করা ওয়াজিব।


আল্লাহ তায়ালা বলেন-

আরবি-উচ্চারন

يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِذا نودِىَ لِلصَّلوٰةِ مِن يَومِ الجُمُعَةِ فَاسعَوا إِلىٰ ذِكرِ اللَّهِ وَذَرُوا البَيعَ ۚ ذٰلِكُم خَيرٌ لَكُم إِن كُنتُم تَعلَمونَ


বাংলা অর্থ

“হে মু’মিনগণ!জুম’আর দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরনে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় ত্যাগ কর,এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর।”(সূরা জুম’আঃ৯)

উল্লেখ্য যে, فَاسعَوا ‘ফাস’আউ’ শব্দের অর্থ এখানে দৌড়ানো উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ আযান হওয়া মাত্র সকল কাজ বাদ দিয়ে সালাত আদায়কে সবকিছুর উপর গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিতে হবে। এখানে এই অর্থই বোঝানো হয়েছে। সালাতে দৌড়ে আসতে হবে- এটা বুঝান হয়নি। কারণ দৌড়ে এসে সালাতে শরীক হওয়ার ব্যপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা আছে। সালাতে আসতে হয় খুশু-খুযু, ভয়-ভীতি ও বিনয়ের সঙ্গে।

জুম’আর/ জুমার নামকরণঃ

মুসলিমদের জমায়েত হওয়ার কারণে এ দিনের নাম জুম’আর দিন অর্থাৎ জমা হওয়ার দিন। ‘জুম’আ’অর্থ সমাবেশ বা সম্মেলন।

সর্বপ্রথম জুম’আ/জুমা

প্রথম হিজরীতে হিজরতের পরপর নবী করিম (সাঃ)এর মদীনা আগমনের সাথে সাথে জুম’আ ফরয হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সর্বপ্রথম জুম’আ পড়েছিলেন মদীনার কুবা মসজিদে ও মসজিদে নববীর মধ্যবর্তী ‘বনু সালেম ইবনে আউস’ গোত্রে (ইবনু শাইবা, তারীখুল মদীনাঃ ১/৬৮)। বর্তমানে এ জায়গায় নির্মিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদে জুম’আ’। এরপর তিনি (সাঃ) মসজিদে নববীতে জুম’আ আদায় শুরু করেন। বর্তমান সৌদি আরবের পূর্ব এলাকা বাহরাইনের একটি গ্রামের নাম ‘জুওয়াসা’ (বুখারীঃ ৮৯২, ইফা ৮৪৮, আধুনিক ৮৪১)। এ এলাকায় আবদে কাইস গোত্রের বসতি ছিল। অতঃপর এখানে জুম’আ পড়া শুরু হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, এই বাহরাইন বর্তমান রাষ্ট্র বাহরাইন নয়।


জুম’আর/জুমার নামাজ এর নিয়ম

জুম’আর নামাজে দুই রাকা'ত ফরজ,যা ইমামের সাথে আদায় করতে হয়।

অধিকাংশ আলেমদের মতে, জুম'আর ফরজের পূর্বে চার রাকা'ত কাবলাল জুম'আ এবং ফরজের পরে চার রাকা'ত বা'দাল জুম'আর সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়। এছাড়া মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকা'ত দুখলুল মসজিদ ও দুই রাকা'ত তাহিয়াতুল ওযুর মোস্তাহাব নামাজও উৎসাহিত করা হয়।


জুম'আর/জুমার নামাজের বিবরণী

১.মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়াতুল ওযু ও দুই রাকা'ত দুখলুল মসজিদের মোস্তাহাব নামাজ আদায় করবে (ঐচ্ছিক)।

২.চার রাকা'ত কাবলাল জুম'আর সুন্নত নামাজ একাকী আদায় করবে।

৩.ইমামের খুৎবা পাঠ মনোযোগ দিয়ে শুনবে।

৪.ইমামের সাথে দুই রাকা'ত জুম'আর ফরজ নামাজ আদায় করবে।

৫.ফরজ নামাজের পর তাৎক্ষণিক ভাবে মসজিদ ত্যাগ করবে না,বরং চার রাকাত বা'দাল জুম'আর সুন্নত নামাজ একাকী আদায় করবে।

জুম’আর/জুমার নামাজ এর নিয়ত

আমরা জানি জুমার নামাজ ২০ রাকাত ।

● জুম’আর নামাজ ২০ রাকাত এর তালিকা প্রদত্ত হল ।

জুম’আর নামাজ ২০ রাকাত এর তালিকা প্রদত্ত হল

  • ১.দুই-রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু।

    ২.দুই-রাকাত দুখুলুল মাসজিদ।

    ৩.চার-রাকাত কাবলাল জুমআহ।

    ৪.দুই-রাকাত ফরজ জুম'আ।

    ৫.চার -রাকাত বা'দাল জুম'আ।

    ৬.চার-রাকাত আখেরে জোহর।

    ৭.দুই-রাকাত ওয়াত্তে সুন্নত।



দুই-রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু নিয়ত সমূহঃ

● আরবি-উচ্চারন

نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ التَّحِيَّةُ الْوُضُوْءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ


● বাংলা-উচ্চারন

নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা রাকাআতাই ছালাতিল তাহিয়্যাতুল অজু সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।


● বাংলা অর্থ

দুই-রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।

দুই-রাকাত দুখুলুল মাসজিদ

নিয়ত সমূহঃ

● আরবি-উচ্চারন

نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الدُّخُوْلِ الْمَسْجِدِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

● বাংলা-উচ্চারন

নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা রাকাআতাই ছালাতিল দূখূলিল মাসজিদি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

● বাংলা অর্থ

দুই-রাকাত দুখুলুল মাসজিদ নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম,আল্লাহু আকবার।


চার-রাকাত কাবলাল জুমআহ নিয়ত সমূহঃ

● আরবি-উচ্চারন

نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ قَبْلَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

● বাংলা-উচ্চারন

নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা আরবা-আ রাকাআতাই ছালাতিল কাবলাল জুমুআতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

● বাংলা অর্থ

চার-রাকাত কাবলাল জুমআহ নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম,আল্লাহু আকবার।


দুই-রাকাত ফরজ জুম'আ নিয়ত সমূহঃ

● আরবি-উচ্চারন

نَوَايْتُ اَنْ اُسْقِطََ عَنْ ذِمَّتِىْ فَرْضُ الظُّهْرِ بِاَدَاءِ رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الْجُمُعَةِِ فَرْضُ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

● বাংলা-উচ্চারন

নাওয়াইতু আন উসকিত্বা আ'ন জিম্মাতী ফারদা-জোহরি বি'আদা-য়ি রাকাআতাই ছালা-তিল জুমু'আতি ফারদুল্লা-হি তা’য়ালা ইত্তাদাইতু বিহাযাল ইমাম মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

● বাংলা অর্থ

দুই-রাকাত ফরজ জুমআহ নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম,আল্লাহু আকবার।


চার -রাকাত বা'দাল জুম'আ নিয়ত সমূহঃ

● আরবি-উচ্চারন

نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ بَعْدَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

● বাংলা-উচ্চারন

নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা আরবা-আ রাকাআতাই ছালাতিল বা'দাল জুমুআতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

● বাংলা অর্থ

চার -রাকাত বা'দাল জুমআহ নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম,আল্লাহু আকবার।


চার-রাকাত আখেরে জোহর নিয়ত সমূহঃ

● আরবি-উচ্চারন

نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلَوةِ اَخِرِالظُّهْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ


● বাংলা-উচ্চারন

নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা আরবা-আ রাকাআতাই ছালাতিল আখিরিজ জোহরি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

● বাংলা অর্থ

চার-রাকাত আখেরি যোহরের সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম,আল্লাহু আকবার।


দুই-রাকাত ওয়াত্তে সুন্নত নিয়ত সমূহঃ

● আরবি-উচ্চারন

نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ الْوَقْتِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

● বাংলা-উচ্চারন

নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা আরবা-আ রাকাআতাই ছালাতিল ওয়াত্তে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

● বাংলা অর্থ

দুই-রাকাত ওয়াত্তে সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম,আল্লাহু আকবার।

জুম’আ/জুমা ও যোহরের মধ্যে পার্থক্য

জুম’আ ও যোহরের মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য আছে-যেমন


(১)যোহর সকল বিবেক সম্পন্ন মুমিন নর-নারীর উপর ফরজ, আর জুম’আ সকলের উপর ফরজ নয়।

(২)যোহর হল মূল সালাত, আর জুম’আ হল যোহরের পরিবর্তে।

(৩)জুম’আর কিরা’আত প্রকাশ্যে আর যোহরের কিরা’আত চুপে চুপে।

(৪)জুম’আর ফরজ দুই রাকা’আত, আর যোহরের ফরজ চার রাকা’আত।

(৫)জুম’আয় খুৎবা আছে কিন্তু যোহরে কোন খুৎবা নেই।


জুম’আর সালাতের ওয়াক্ত

জুম’আর সালাতের ওয়াক্তঃ

অধিকাংশ আলেমের মতে, জুম’আ ও যোহরের সময় একই। যখন যোহরের শুরু হয় জুম’আও তখনই শুরু হয়। অর্থাৎ ঠিক দুপুরে সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে কিছুটা ঢলে পড়লে জুম’আর সময় শুরু হয় (বুখারীঃ ৪১৬৮)।

জুম’আর সালাতে মুসুল্লীর সংখ্যাঃ

কমপক্ষে কতজন মুসুল্লী হলে জুম’আর সালাত আদায় করা যায় এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখপূর্বক কোন হাদীস পাওয়া যায় না। তবে বিজ্ঞ আলেমদের মতে,ইমাম ব্যতীত কমপক্ষে ৩ জন হলেই যথেষ্ট। একজন খুৎবা দেবে,বাকী তিনজন শুনবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রাঃ)এ অভিমতটি গ্রহন করেছেন। আর এটাই সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য মত।

জুম’আ আদায়ের নুন্যতম এলাকাঃ

যত ছোট গ্রামই হোক সেখানে জুম’আ পড়া জায়েয আছে। খলীফা উমর (রাঃ) বাহরাইনের অধিবাসীদের লিখেছেন, তোমরা যেখানেই থাক জুম’আ পড় (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; বুখারী ৮৯৩, ইঃফাঃ ৮৯৩, আধুনিক ৮৪২)।

ইবনে উমর (রাঃ) মক্কা মুকাররামা ও মদীনা মুনাওারার মধ্যবর্তী পথে ছোট ছোট জনপদগুলোতে মানুষকে জুম’আ পড়তে দেখেছেন। তিনি তাতে কোন আপত্তি করতেন না (মুসান্নাফে আঃ রাজ্জাক)।

অপরদিকে পাড়াগ্রামে জুম’আ হবে না মর্মে খলীফা আলী (রাঃ) এর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি হাদিস বর্ণনার প্রচলন এ দেশে আছে। আসলে এটি সহীহ হাদীস নয় (মাজাল্লাতুল বুহসিল ইসলামিয়া ১৬/৩৫২-৩৫৪, ২২/৭৫)।

উল্লেখ্য যে, কোন অমুসলিম দেশে পড়াশোনা বা চাকরীরত অবস্থায় সেখানে মসজিদ না থাকলে কোন একটি রুমে ৩ জন মিলে জুম’আ পড়লেও তা আদায় হয়ে যাবে (মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিকঃ ১৫/৮৫)।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad