রমজান মাসের ফজিলত হাদিস-কোরানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাণী

 রমজান মাসের ফজিলত
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

রমজান মাসের ফজিলত হাদিস-কোরানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাণী - ramjan maser fajilot


সকল মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস হলো পবিত্র রমযান মাস। এ মাস হলো রহমতের মাস,এ মাস মাগফিরাতের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির পাবার মাস। এ মাস বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী পবিত্র কুরআন অবতীর্ণের মাস। এ মাস তাক্বওয়া অর্জনের মাস।এ মাসের অসংখ্য ফযিলত ও বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে ।


রমজান মাসের কিছু গুরূত্বপূর্ণ ফজিলত

১.এই মাসের নাম পবিত্র কুরআন-নুল কারীমে উল্লেখিত হয়েছে।

আল্লাহ্ তা-য়ালা বলেন-

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ

অর্থঃ-এই সেই রমযান মাস,যাতে বিশ্বমানবের হেদায়েতের জন্য কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।


২.এই মাসের সিয়ামকে আল্লাহ তায়ালা ফরয করেছেন।

আল্লাহ্ তা-য়ালা বলেন-

فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

অর্থঃ-সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে সে যেন সিয়াম পালন করে।

তালহা বিন উবাইদুল্লাহ বলেন, এক ব্যক্তি নবী কে জিজ্ঞাসা করল; হে আল্লাহর রাসূল! আমার উপর আল্লাহ কি কি রোযা ফরয করেছেন তা আমাকে বলে দিন” উত্তরে তিনি বললেন,“রমযান মাসের রোযা” লোকটি বলল,এ ছাড়া অন্য কিছু কি আমার কর্তব্য আছে?তিনি বললেন,না,তবে যদি তুমি নফল রোযা রাখ,তাহলে ভিন্ন কথা।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

فرض الله عز وجل عليكم صيامه

অর্থঃ-আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এ মাসের সিয়াম পালন ফরজ করেছেন।

ফলে ফরয সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা আরও অনেকগুণে বেড়ে গেছে।


আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

অর্থঃ-হে মোমিনগণ!তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে,যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর—যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।

৩.এই মাস আগমন হলে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতিশয় আনন্দিত হয়ে সাহাবাগণকে সুসংবাদ দিতেন,তিনি বলতেন।

أتاكم رمضان شهر مبارك

অর্থঃ-তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে।

৪.এই মাস হল বরকতের মাস।

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يبشر أصحابه: قد جاءكم شهر مبارك, شهر رمضان

অর্থঃ-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গী –সাথীদের এ মর্মে সুসংবাদ শোনাতেন ” তোমাদের সমীপে রমজান মাস এসেছে। এটি এক বরকতময় মাস।

৫.এই মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ—

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ : البقرة

অর্থঃ-এই সেই রমজান মাস,যাতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন,যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। ।


৬.এই মাসের সিয়াম পালন জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল,সালাত কায়েম করল,যাকাত আদায় করল,রমযান মাসে সিয়াম পালন করল,তাঁর জন্য আল্লাহর উপর সে বান্দার অধিকার হোল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া।

৭.এই মাসের আগমন হলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন -

إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وأغلقت أبواب النار، رواه مسلم

অর্থঃ-যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়,জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়।

৮.এই মাসে রহমতের সকল দরজা খুলে দেয়া হয়।

৯.এই মাসে আসমানের দরজ সমূহ উম্মুক্ত করা হয়।

১০.এই মাসের আগমন হলে শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন -

وصفدت الشياطين وفي لفظ وسلسلت الشياطين رواه مسلم

অর্থঃ-এবং শয়তানদেরকে শিকলে বন্দি করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে—‘শয়তানদেরকে শিকল আবদ্ধ করা হয়।

১১.এই মাসে এমন একটি রজণী রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম অর্থাৎ লাইলাতুল কদর।

আল্লাহ তাআলা বলেন:—

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍسَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ

অর্থঃ-লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি,সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি এই রাতের মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হয়,সে আসলে সকল মঙ্গল থেকে বঞ্চিত। আর একান্ত বঞ্চিত ব্যক্তি ছাড়া সে মঙ্গল থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না।

১২.এই মাসে দোয়া কবুল হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ-

لكل مسلم دعوة مستجابة، يدعو بـها في رمضان. رواه أحمد

অর্থঃ-রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়।

১৩.এই মাসের প্রতি রাতে ও দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ-

إن لله تبارك وتعالى عتقاء في كل يوم وليلة، يعني في رمضان

অর্থঃ-আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

১৪.এই মাস পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ-

رغم أنف رجل، دخل عليه رمضان، ثم انسلخ قبل أن يغفر له رواه الترمذي

অর্থঃ-ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি।

সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল।

১৫.এ মাসের প্রত্যেক রাত্রে মহান আল্লাহ অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে থাকেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ-

ولله عتقاء من النار، وذلك في كل ليلة رواه الترمذي

অর্থঃ-এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

১৬.এ মাসের প্রত্যেক রাত্রে একজন আহ্বানকারী (ফেরেশতা)আহ্বান করার জন্য নিযুক্ত থাকেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ-

وينادي مناد كل ليلة : يا باغي الخير أقبل! ويا باغي الشر أقصر!

অর্থঃ-প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে,হে কল্যাণকামী!তুমি অগ্রসর হও। আর হে মন্দকামী!তুমি থেমে যাও।

১৭.এ মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।

যেমন হাদিসে এসেছে যে,রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়,বরং,রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।

১৮.এ মাস ধৈর্য ও সবরের মাস।

এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া,বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন:—

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ الزمر

অর্থঃ-ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে।

১৯.এ মাসে একটি ওমরা করলে একটি হজ্জ আদায়ের সওয়াব হয়, এমনকি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হজ্জ আদায়ের মর্যাদা রাখে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:—

فإن عمرة في رمضان تقضي حجة أو حجة معي

অর্থঃ-রমজান মাসে ওমরাহ আদায় করা আমার সাথে হজ আদায়ের সমতুল্য।

উম্মে মাকাল রাযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -

عمرة في رمضان تعدل حجة

অর্থঃ-রমজান মাসে ওমরাহ করা একটি হজ্জের সমান।

২০.এ মাসে ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রী জাগরণ করলে অতীতের গুনাহসমূহ মাফ হয়।

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশা রেখে রমজান মাসের রাত্রে কিয়াম তথা (তারাবীর সলাত)আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের সকল গুণাহ খাতা মাফ করে দেবেন।

২১.এ মাস জিহাদের মাস।

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ এ মাসেই সংঘটিত হয়েছিল। ২য় হিজরির ১৭ই রমযানে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে সাহায্য করেন এবং শত্রুর উপর বিজয় দান করেন।

অন্যদিকে আবার অষ্টম হিজরির ২০ই রমযান মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করেন, যার পর ইসলাম সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad