আমাদের মধ্যে বিলাসিতা বাড়িয়াছে বলিয়া সারাংশ

আমাদের মধ্যে বিলাসিতা বাড়িয়াছে বলিয়া সারাংশ

 

আমাদের মধ্যে বিলাসিতা বাড়িয়াছে বলিয়া অনেকে কল্পনা করেন যে, ইহা আমাদের ধন-বৃদ্ধির লক্ষণ।


আমাদের মধ্যে বিলাসিতা বাড়িয়াছে বলিয়া অনেকে কল্পনা করেন যে, ইহা আমাদের ধন-বৃদ্ধির লক্ষণ। কিন্তু এ কথা বিচার করিয়া দেখিতে হইবে যে, পূর্বে যে অর্থ সাধারণের কাজে ব্যয়িত হইত, এখন তা ব্যক্তিগত ভোগে ব্যায়িত হইতেছে। ইহাতে ফল হইতেছে, দেশের ভোগ-বিলাসের স্থানগুলি ফাঁপিয়া উঠিতেছে কিন্তু পল্লীগুলিতে দারিদ্র্যের অবধি নাই। দেশের অধিকাংশ অর্থ শহরে আকৃষ্ট হইয়া কোঠাবাড়ি, গাড়ি-ঘোড়া, সাজ-সরঞ্জাম, আহার-বিহারেই উড়িয়া যাইতেছে। অথচ যাঁহারা এরূপ ভোগ-বিলাস ও আড়ম্বরে আত্মসমর্পণ করিয়াছেন, তাঁহাদের প্রায় কেহই সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে নাই, তাঁহাদের অনেকেরই টানাটানি, অনেকেরই ঋণ, অনেকেরই পৈতৃক সম্পত্তি মহাজনের দায়মুক্ত করিবার জন্য চিরজীবনই নষ্ট। কন্যার বিবাহ দেওয়া, পুত্রকে মানুষ করিয়া তোলা, পৈতৃক কীর্তি রক্ষা করিয়া চলা, অনেকেরই পক্ষে বিশেষ কষ্টসাধ্য হইয়াছে। যে ধন সমস্ত দেশের বিচিত্র অভাব মোচনের জন্য চারিদিকে ব্যাপ্ত হইত, সেই ধন সঙ্কীর্ণ স্থানে আবদ্ধ হইয়া যে ঐশ্বর্যের মায়া সৃজন করিতেছে তাহা বর্ণনাযোগ্য নহে। সমস্ত শরীরকে প্রতারণা করিয়া কেবল মুখেই যদি রক্ত সঞ্চার হয়, তবে তাহাকে স্বাস্থ্য বলা যায় না। দেশের ধর্মস্থানকে, বন্ধুস্থানকে, জন্মস্থানকে কৃষ করিয়া কেবল ভোগস্থানকে স্ফীত করিয়া তুলিলে বাহির হইতে মনে হয় যেন দেশের শ্রীবৃদ্ধি হইতে চলিল। সেই জন্যই এ ছদ্মবেশী সর্বনাশ আমাদের পক্ষে অতিশয় ভয়াবহ। মঙ্গল করিবার শক্তিই ধন, বিলাম ধন নহে।


সারাংশ: ধন সম্পদ জড়ো করে আমরা ভোগ বিলাসের শহর গড়ছি ঠিকই, কিন্তু গ্রামগুলোকে বানাচ্ছি দরিদ্র পল্লী। আড়ম্বরের কাছে আত্মসমর্পিত মানুষগুলোও তাই ঠিক সুখের ঠিকানা খুঁজে পায় না। কেননা অন্যের মঙ্গল সাধনের আনন্দ ভোগ বিলাসের মাঝে নেই। সুখের ঐশ্বর্য্য ছড়িয়ে আছে সকল মানবের মাঝে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad