প্রশ্নঃ আজানের সময় কুকুর ডাকে কেন ?
উত্তরঃ আজানের সময় দেখা যায় আকাশের দিকে মুখ উঁচু করে কুকুরগুলো ডেকে ওঠে। অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে আজানের সময় কুকুরগুলো কেন ডাকে.?
এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে প্রিয় নবী (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র হাদিসে শরীফে।
''আজান দিলেই কুকুরগুলো ডেকে উঠে এর কারণ আজানের শব্দ শুনে শয়তান বায়ু ত্যাগ করতে করতে পালায়ন করে।
''-বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৫।
মোরগ ফেরেস্তা দেখলে ডাকে।
-সহীহ মুসলিম।
গাধা শয়তান দেখলে চিৎকার করে।
-সহীহ মুসলিম।
কুকুর ও গাধা অনিষ্ট সৃষ্টিকারীদের (তথা জিন-শয়তান) দেখে চিৎকার করে।
-আবু দাউদ মিশকাত।
আজানের শব্দ শুনে শয়তানকে বায়ু ত্যাগ করতে করতে পলায়নরত অবস্থায় দেখে কুকুরগুলো ডাকতে থাকে।
প্রিয় নবী (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র সাহাবী হযরত জাবির (রদ্বিঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি , তিনি বলেন,
"যখন তোমরা রাত্রে কুকুরের চিৎকার এবং গাধার ডাক শুনতে পাবে তখন আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইবে।
কেননা,ওরা এমন কিছু দেখতে পায় যা তোমরা দেখতে পাওনা। "
-(মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৩৭৩)।
দরসে হাদিসঃ অনর্থক কথা বলা, অন্যকে ছোট করা ও নিজের পান্ডিত্য জাহির করার শাস্তিঃ
⭕ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, যাদের কে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি এবং যারা কিয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে অবস্থান করবে তারা হল সেইসব লোক,
→ যারা অনর্থক কথা বলে,
→ যারা অন্যকে ছোট করে এবং
→ যারা কথা বলার সময় নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহির করে। (সহিহ জামে তিরমিযি)
আমাদের সমাজে এমন লোকের অভাব নেই যারা হাসি ঠাট্টার ছলে মানুষকে কিংবা নিজের বন্ধু-বান্ধবকে ছোট করে Oversmartness দেখাতে চায়। অথচ কেউ তাতে কষ্ট পেল কিনা তাতে কিছু যায় আসে না। তাদের নাম ব্যঙ্গ করে ডাকে। যেমনঃ আল্লাহর অনেক নাম আছে কাদির, বাছির, আওয়াল। এসব নাম ব্যঙ্গ করে ডাকে, নামের পূর্বে আব্দুল ব্যবহার তো করেই না। তার মানে তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পবিত্র নামকে ব্যঙ্গ করল।
এতে যেন তারা খুব আনন্দ পায়। (নাউযুবিল্লাহ)
এছাড়াও নিজেদের জ্ঞানী হিসেবে প্রকাশ করার নিয়্যতে নানান তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। তারা সবাই এই হাদিসের হুকুমের আওতাভুক্ত হবে।
আল্লাহ আমাদের এসব পাপ থেকে হেফাযত করুন। (আমিন)
প্রকৃত অভাবী কে?
আখেরাতে যে লোক শূন্য-রিক্ত হস্তে হাজির হবে.....
জলিলুল ক্বদর সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আঁক্বা ও মাওলা নবীয়ে বে-মেছাল মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আ-লিহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করেন-
أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ ». قَالُوا الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ. فَقَالَ « إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِى يَأْتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ وَيَأْتِى قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِى النَّارِ -
তোমরা কি জান মুফলেস (অভাবী) কে?
সাহাবারা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা আজমাঈন বললেন, আমাদের দৃষ্টিতে মুফলেস বা অভাবী হল সেই লোক যার টাকা-পয়সা বা খাওয়ার ব্যবস্থা নাই।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আ-লিহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান-
প্রকৃতপক্ষে মুফলেস বা রিক্তহস্ত অভাবী হবে সেই লোক যে কেয়ামতের দিন তার সালাত, সিয়াম, যাকাত ইত্যাদি আমল নিয়ে হাজির হবে,
✔️ কিন্তু সে অমুককে গালি দিয়েছে,
✔️ কিংবা অপবাদ দিয়েছে,
✔️ কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করেছে,
✔️ কারো রক্ত প্রবাহিত করেছে
✔️ অথবা কাউকে আঘাত করেছে....
সেদিন তার কৃত পূণ্যসমূহ তার আমলনামা থেকে যাদেরকে সে এসব করেছে তাদের আমলনামায় দিয়ে দেয়া হবে। দিতে দিতে যখন তার নেকআমলগুলোও শেষ হয়ে যাবে তখন যাদেরকে সে আঘাত করেছে তাদের আমলনামা থেকে গুনাহসমূহ এর আমলনামায় দেয়া হবে, অত:পর এগুলো সহ (দুনিয়াতে নেক আমলকারী) ঐ লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
[সহিহ মুসলিম]
আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত গ্রহণ করার তওফীক দান করুন। আমীন।