শয়তানের কুমন্ত্রণা ও বাঁচার উপায়
ঈমান নষ্ট করার জন্য শয়তান কিভাবে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) দেয়? এবং এতে সে কখন সফল হয় ও কখন ব্যর্থ? শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার উপায় কি?
》অভিশপ্ত শয়তান মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সদা-সর্বদা টিম ওয়ার্ক করে চলেছে। কেননা সে বনী আদমকে পথভ্রষ্ট করার অঙ্গীকার নিয়ে দুনিয়ার বুকে এসেছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
*قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لأغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ إِلا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ*
“সে (শয়তান) বলল, ‘আপনার ইজ্জতের কসম! আমি তাদের সবাইকে অবশ্যই পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্য থেকে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে ছাড়া।"
[সোয়াদ: ৮২-৮৩]
তাই তো শয়তান তার চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। যেমন:
▪︎ সে মানুষের হৃদয়ে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দেয়। অর্থাৎ তার অন্তরে খারাপ, অন্যায় ও অশ্লীল কাজের চেতনা বোধ ও চিন্তা জাগ্রত করে। যেমন, আল্লাহ তা'আলা বলেন:
*الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ*
“যে জিন ও মানুষের মধ্যে থেকে মানুষের অন্তরসমূহে কুমন্ত্রণা দেয়।”
[সূরা নাস: ৫-৬]
▪︎সে অতি সূক্ষ্মভাবে মানুষকে ছোট ছোট অন্যায় কাজ করানোর পর ক্রমান্বয়ে বড় পাপাচার ও অন্যায় কর্মের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
▪︎কখনো ভয় দেখায়
▪︎কখনো প্রতারিত করে
▪︎কখনো অন্যায় কে সুশোভিত করে তুলে ধরে। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
*وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الإنْسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا*
“এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়।”
[সূরা আল-আনআম: ১১২]
কখনও মনের মধ্যে সন্দেহের বীজ বপন করে দেয়। কখনো সালাতে, কখনো ওযুতে, কখনো পাক-পবিত্রতায়, আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে, ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে ইত্যাদি। এভাবে সে ধীরে ধীরে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে তার পথে নিয়ে যায়।
আর তাইতো আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে আদেশ করেছেন যে, আমরা যেন কখনো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করি। কারণ সে আমাদের স্পষ্ট দুশমন। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
*يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ*
“আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, নিশ্চয় সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু।"
[বাকারা, ২/২০৮]
শয়তান কখন তার চক্রান্ত বাস্তবায়নে সফল হয়?
》শয়তান তখনই তার চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয় যখন মানুষ আল্লাহর কথা ভুলে গিয়ে তার অনুসরণ করা শুরু করে, এবাদত-বন্দেগি ছেড়ে দেয়, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, দ্বীনের জ্ঞানার্জন থেকে দূরে থাকে, পাপাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং দুনইয়ার সুখ-সম্ভোগে মত্ত হয়ে মৃত্যু, কবর ও আখিরাতের কথা ভুলে যায়।
কিভাবে শয়তানের চক্রান্ত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?
》আল্লাহ তা'আলা বলেন:
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।”
[সূরা আরাফ: ২০০]
আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন:
*رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ*
“হে আমার রব! শয়তানের প্ররোচনা হতে আমি আপনার কাছে পানাহ চাই। আর হে আমার রব! আমি আপনার কাছে পানাহ চাই, ওদের (শয়তানদের) উপস্থিতি হতে।"
[সূরা মু‘মিনুন: ৯৭-৯৮]
সুতরাং যখনই মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় অর্থাৎ “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতান রাজীম” (আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করে, মহান আল্লাহর দরবারের নিজের ভুল-ত্রুটি ও গুনাহের কথা তুলে ধরে খাঁটি অন্তরে তওবা করে, আল্লাহর ইবাদতের পথে ফিরে আসে, ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে, কুরআন ও হাদিস পাঠ করে এবং জিকির-আজকারে পূর্ণ মনোযোগী হয় তখন শয়তানের সব কলাকৌশল ব্যর্থ হয় এবং সে লাঞ্ছিত অবস্থায় পলায়ন করে।
আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করুন।
- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল