পৃথিবীর সবথেকে রহস্যময় স্থান
আমাদের রহস্যময় পৃথিবীতে (প্রাকৃতিক বা অ-প্রাকৃতিক) রহস্যের সীমা নেই। এর মধ্যে আবার কিছু স্থান বা বিষয় রয়েছে যা অতি-প্রাকৃতিক। আর এ কারনেই এগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষের কাছে হাজারো রহস্যে ঘেরা। আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষতাও এ রহস্যের কোনো কারণ বর্ননা করতে পারেনি। তাই বিজ্ঞানীরা এগুলোকে অতি-প্রাকৃতিক স্থান বলে অভিহিত করেছেন।
১। রক্তের জলপ্রপাত , এন্টার্টিকা।
অনেক লোক বা বিজ্ঞানী ই এটি চোখে দেখেন নি। বা এর কোন ছবিও না, তবে এটি বর্তমান । একদল গবেষক এ্যান্টার্টিকা মহাদেশে গিয়ে এটি দেখতে পান, এবং ছবি টি তোলেন। তাদের ধারনা ছিলো কোন অনুজীব এর ফলে এমন টা ঘটে, যদিও শূণ্যের অনেক নিচে হিম শীতল আবহাওয়াতে টিকে থাকা অনেক টা অসম্ভব একটা ব্যাপার । বর্তমান ধারনা সেখান কার মাটিতে থাকা অনেক পরিমান আয়রণ ও সালফার এর কারনে পানির রঙ লাল। এটা কিন্তু সুধুই ধারনা, সেই পানি কেন জমে লাল রঙের আইস ক্রিমের মত হলো না সেটার ও কোন উত্তর নাই। Blood Falls Wiki
২। ম্যাগনেট পাহাড়, নিউ ব্রান্সউইক
পাহাড় এর মত উচু থেকে একটা বল বা গাড়ি যাই ছেরে দেয়া হোক, তা নিচের দিকেই নেমে যাবার কথা । উলটো টা হলে মাথায় চিন্তা হওয়া টা স্বাভাবিক। প্রথম যে কথা টা মাথায় আসবে তা হলো পাহাড়ে মনে হয় চুম্বক আছে, কি বলেন ? ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এর আকর্ষন বেশ জোরালো ছিলো, রহস্যময় কারনে তা কমে যায়। প্রচলিত আছে ঘোড়ার গাড়িও টেনে নিতো উপর দিকে এই পাহাড়। এটি অবশ্য একটা পপুলার টুরিস্ট স্পট এখন। Magnetic Hill
৩। Surtsey , আইসল্যান্ড
কেউ যদি আপনাকে জিগেস করেন নতুন কি আছে যা আগে ছিলো না, নিশ্চিন্তে এটিকে দেখিয়ে দেন, কেননা এটি আসলেই নতুন। ১৯৬৩ সালের আগে এখানে কিছুই ছিলো না, এমন কি পানির নিচে ডুবো পাহাড় ও না। এর পর একটি ভুমিকম্পের পর রহস্যজনক ভাবেই মাথা তুলে দারায় এটি। হতেই পারে কি বলেন ? সমস্যা হলো মাঝখানের লেক টির পানি মিষ্টি বা পান করা যায় এমন, লবনাক্ত না। ব্যাপার টা আবিষ্কার করা হয় এ অঞ্চলে কোন বৃষ্টিপাত হবার আগেই। বুঝুন ঠেলা। Surtsey , আইসল্যান্ড
৪। Relampago del Catatumbo, Ologa, Venezuela
বছরের বাইরে 140 থেকে 160 রাতের জন্য, একবারে 10 ঘন্টার জন্য, নদীর উপরের আকাশটি প্রায় অবিরাম বজ্রপাত দ্বারা বিদ্ধ হয়, প্রতি ঘন্টায় 280 টির মতো স্ট্রাইক তৈরি করে। "Relámpago del Catatumbo" নামে পরিচিত (স্প্যানিশ ভাষায় relámpago মানে বজ্রপাত) এই বজ্রপাতের ঝড় যতদিন মানুষ মনে রাখতে পারে ততদিন ধরে চলছে। এই অঞ্চলটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বৈদ্যুতিক স্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এটি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও জায়গা করে নিয়েছে।
৫। মাউন্ট রোরাইমা (Mount Roraima, Brazil):
মাউন্ট রোরাইমা একটি সমতল-শীর্ষ পর্বত যা স্থানীয়ভাবে টিপুই নামে পরিচিত। অত্যন্ত দুর্গম এবং মেঘে আবৃত, রহস্যময় টিপুই শুষ্ক মৌসুমেও মেঘের মধ্যে আবৃত থাকে। এই পর্বতমালা প্রথম উল্লেখ করা হয়েছিল ১৫৯৬ সালে। ৩১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এবং ৪০০-মিটার-উচ্চ পর্বত দ্বারা বেষ্টিত, পর্বতটি তিনটি দেশের সীমান্তে অবস্থিত: ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিল এবং গায়ানা। কিন্তু এই দুর্গম পাহাড়ে কেবল ভেনিজুয়েলা সীমান্ত দিয়েই যাওয়া যায়। এই সুন্দর জায়গাটি বছরের বেশির ভাগ সময়ই মেঘে ঢাকা থাকে, স্বর্গের মতো!
মাউন্ট রোরাইমা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৮১০ মিটার (৯২২০ ফুট) উপরে। এর চূড়া ৩১ বর্গ কিমি। (১২ বর্গ মাইল) এলাকা এবং চূড়াটি একটি ৪০০ মিটার উঁচু পাথুরে পর্বত প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। মাউন্ট রোরাইমা এবং অন্যান্য টেপুই প্রায় ২ বিলিয়ন বছর পুরানো এবং বালি দিয়ে তৈরি। এগুলি প্রিক্যামব্রিয়ান যুগে গঠিত হয়েছিল, যখন তারা একসাথে ছিল, মহাদেশগুলি একে অপরের থেকে দূরে সরে যাওয়ায় টেপুইসরা আলাদা হয়ে যায়। সমস্ত টেপুই তাদের নিজস্ব উপায়ে অনন্য। আমরা সবাই দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের সাথে পরিচিত, সেই ম্যাগাজিন যেখানে স্যার আর্থার কোনান ডয়েল মাউন্ট রোরাইমা দেখে তার ক্লাসিক উপন্যাস লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
৬। ম্যাকমার্ডো ড্রাই ভ্যালী (McMurdo Dry Valleys, Antarctica):
অনেকের মতে, 'ম্যাকমুর্ডো ড্রাই ভ্যালি' পৃথিবীর সবচেয়ে লুকানো রত্ন। এই জনবসতিহীন উপত্যকাটি বিশ্বের অন্যতম শুষ্ক মরুভূমি এবং সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্কতম স্থান। যদিও অ্যান্টার্কটিকা বরফ এবং তুষার দ্বারা বেষ্টিত, এখানে বছরে মাত্র ৪ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়। জায়গাটি মেরু বরফে ঢাকা থাকার কথা কিন্তু এটি সম্পূর্ণ বরফমুক্ত এবং খালি। কিছু শেওলা আছে কিন্তু গাছপালা নেই। বিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে পৃথিবীর উপগ্রহের এই অংশের অদ্ভুত মিল রয়েছে।
৭। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (The Bermuda Triangle, Atlantic Ocean):
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভূজ নামেও পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল, যেখান বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয়। অনেকে মনে করেন ঐ সকল অন্তর্ধানের কারণ নিছক দূর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রকৃতিক কোন শক্তি।বিভিন্ন লেখকের বর্ণনায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের বিস্তৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। এই ত্রিভূজের উপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে। এই তীব্র গতির স্রোতই মূলত অধিকাংশ অন্তর্ধানের কারণ। এখানকার আবহাওয়া এমন যে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে আবার থেমে যায়, গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। বিংশ শতাব্দীতে টেলিযোগাযোগ, রাডার ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি পৌঁছানোর আগে এমন অঞ্চলে জাহাজডুবি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই অঞ্চল বিশ্বের ভারী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথগুলোর অন্যতম। জাহাজগুলো আমেরিকা, ইউরোপ ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করে।
এছাড়া এটি হল প্রচুর প্রমোদতরীর বিচরণ ক্ষেত্র। এ অঞ্চলের আকাশপথে বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করে। ত্রিভূজের বিস্তৃতির বর্ণনায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ মনে করেন এর আকার ট্রাপিজয়েডের মত, যা ছড়িয়ে আছে ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ইশোর পূর্বদিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে, আবার কেউ কেউ এগুলোর সাথে মেক্সিকো উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, পুয়ের্তো রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দূর্ঘটনা।
৮। মগুইচেং (Moguicheng, China):
৯। আওকিঘারা (Aokighara, Japan):
আওকিগাহারা, "দ্য সুইসাইড ফরেস্ট" নামে পরিচিত, টোকিও থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে জাপানের মাউন্ট ফুজির পাদদেশে অবস্থিত। সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর স্থান জুড়ে অবস্থিত এই জঙ্গলটি কোঁকড়ানো ও মোচড়ানো গাছ পালায় পূর্ণ। গোটা এলাকাটি ভূতপ্রেতের অবাধ বিচরণ ভূমি বলে স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্থানটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আত্মহত্যার স্থান হিসেবে পরিচিত। পঞ্চাশের দশক থেকে এ পর্যন্ত ৫ শতাধিক লোক এখানে আত্মহত্যা করেছে।প্রতি বছরই এখান থেকে বেশ কিছু লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই বন বিশ্বের অন্যতম সুইসাইড স্পট হিসেবে কুখ্যাত। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘জুকাই’ নামে পরিচিত। জুকাই শব্দের অর্থ স্থানীয় ভাষায় "গাছের সমুদ্র"। এই বনে গাছের উচ্চতা ও ঘনত্ব অনেক বেশি। এটি মাউন্ট ফুজির দুটি গুহার কাছে অবস্থিত যা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় "আইস কেভ এবং উইন্ড কেভ"। আওকিগাহারাকে বলা হয় জাপানের সবচেয়ে ভুতুড়ে জায়গা। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, এই বনে প্রতি বছর গড়ে ৩০ জন আত্মহত্যা করেছিল। কিন্তু ২০০৪ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে ১০৮ হয়েছে। ২০১০ সালে ২৪৭ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল, ৫৭ জন মারা গিয়েছিল। আওকিঘরা বন নিয়ে হলিউডে চলচ্চিত্রও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই বনে শুটিং করতে দেওয়া হয়নি। কারণ ১৬ বর্গমাইল দীর্ঘ এই জঙ্গলে বাস কিছু ভৌতিক বা জ্বিন যাদের বলা হয় অশরীরী। ইউরেই নামের সেই অশরীরীদের আওয়াজ বন থেকে শোনা যায়।
আত্মহত্যা নিরুতশাহিত করবার জন্য এই অরণ্যর প্রবেশমুখেই লেখা আছে – ““Your life is a precious gift from your parents,” and “Please consult the police before you decide to die!” আত্মহত্যা করবার জন্য এইটি পৃথিবীর দ্বিতীয় জনপ্রিয় স্থান।