নামাজ আদায় করার সঠিক পদ্ধতি কী?
অযু করে কিবলামুখী হয়ে এভাবে দাঁড়ান যেন উভয় পায়ের পাঞ্জার মধ্যভাগে চার আঙ্গুল দূরত্ব থাকে। এখন উভয় হাতকে কান পর্যন্ত নিয়ে যান যেন বৃদ্ধাঙ্গুল কানের লতি স্পর্শ করে। এ অবস্থায় আঙ্গুলকে বেশি খোলাও রাখবেন না আবার বেশি মিলিয়েও ফেলবেন না বরং স্বাভাবিক অবস্থায় রাখবেন আর হাতের তালু কিবলার দিকে করে রাখবেন এবং দৃষ্টি সিজদার জায়গায় থাকবে।
এবার যে নামায আদায় করবেন সেটার নিয়্যত করুন। অর্থাৎ অন্তরে দৃঢ় ইচ্ছা করুন, সাথে সাথে মুখেও উচ্চারণ করুন, কেননা এটা উত্তম। (যেমন-আমি আজকের যোহরের চার রাকাত ফরয নামাযের নিয়্যত করলাম, যদি জামাত সহকারে আদায় করেন তবে এটাও বলুন, এই ইমামের পিছনে) এবার তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ “اَللهُ اَكْبَرُ”বলতে বলতে হাত নিচে নামিয়ে আনুন এরপর নাভীর নিচে উভয় হাত এভাবে বাঁধুন যেন ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর এবং ডান হাতের মাঝখানের তিন আঙ্গুল বাম হাতের কব্জির পিঠের উপর আর বৃদ্ধাঙ্গুল ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল কব্জির উভয় পার্শ্বে থাকে। এখন এভাবে সানা পড়ুন:
سُبْحٰنَكَ اللّٰہُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالٰى جَدُّكَ وَ لَاۤ اِلٰهَ غَيْرُكَ ط
অনুবাদ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র! আর আমি তোমার প্রশংসা করছি। তোমার নাম বরকতময়। তোমার মর্যাদা অতীব মহান। তুমি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই।
অতঃপর তাআউয পড়ুন:
اَعُوْذُ بِا للهِ مِنَ الشَّیْطٰنِ الرَّجِیْم
অনুবাদ: আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
অতঃপর তাসমিয়া পড়ুন:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْم
অনুবাদ: আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি পরম দয়ালু করুণাময়।
এরপর পরিপূর্ণ সূরা ফাতিহা পড়ুন:
اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ﴿۱﴾ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ۙ﴿۲﴾ مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ ؕ﴿۳﴾ اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ َسۡتَعِیۡنُ ؕ﴿۴﴾ اِہۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ۙ﴿۵﴾ صِرَاطَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡہِمۡ ۙ۬ غَیۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا الضَّآلِّیۡنَ ﴿۷﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: ১. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য, যিনি মালিক সমস্ত জগদ্ববাসীর, ২.পরম দয়ালু, করুণাময়; ৩. প্রতিদান দিবসের মালিক;, ৪. আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি; ৫. আমাদেরকে সোজাপথে পরিচালিত করো! ৬. তাদেরই পথে, যাঁদের উপর তুমি অনুগ্রহ করেছো, ৭. তাদের পথে নয়, যাদের উপর গযব নিপতিত হয়েছে এবং পথভ্রষ্টদের পথেও নয়।
সূরা ফাতিহা শেষ করে নিম্নস্বরে (আমীন) বলুন। অতঃপর ছোট তিন আয়াত কিংবা একটি বড় আয়াত যা ছোট তিন আয়াতের সমান কোন সূরা, যেমন ‘সূরা ইখলাস’পাঠ করুন।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْم. قُلۡ ہُوَ اللّٰہُ اَحَدٌ ۚ﴿۱﴾ اَللّٰہُ الصَّمَدُ ۚ﴿۲﴾ لَمۡ یَلِدۡ ۬ۙ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ ۙ﴿۳﴾ وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّہٗ کُفُوًا اَحَدٌ ﴿۴﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: ১.আপনি বলুন, “তিনি আল্লাহ, তিনি এক ২. আল্লাহ্ পর-মুখাপেক্ষি নন ৩. না তিনি কাউকে জন্ম দিয়েছেন এবং না তিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেছেন। এবং না আছে কেউ সমকক্ষ হবার।
এবার اَللهُ اَکْبَر বলে রুকূতে যাবেন আর হাত দ্বারা হাঁটুদ্বয়কে এভাবে ধরবেন যেন হাতের তালুদ্বয় উপরে থাকে, হাতের আঙ্গুলগুলো ভালভাবে ছড়িয়ে থাকে। পিঠকে সোজা করে বিছাবেন যেন জমিনের ন্যায় সমান্তরাল হয়। আর মাথা পিঠ বরাবর সোজা থাকবে, উঁচু বা নিচু হবে না। দৃষ্টি থাকবে পা দ্বয়ের উপর। কমপক্ষে তিনবার রুকূর তাসবীহ অর্থাৎ سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْعَظِيْم বলবেন: তারপর (তাসমী) অর্থাৎ سَمِـعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه বলে একেবারে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন। এভাবে দাঁড়ানোকে “কওমা” বলে।
আপনি যদি একাকি নামায আদায়কারী হয়ে থাকেন তবে এ সময় বলুন اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْد এরপরاَللهُ اَکْبَر বলে এভাবে সিজদাতে যাবেন যেন প্রথমে হাঁটু, এরপর উভয় হাতের তালু, মাথাকে উভয় হাতের মাঝখানে রাখবেন। এরপর নাক, অতঃপর কপাল মাটি স্পর্শ করে, আর এটার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন, যেন নাকের অগ্রভাগ নয় বরং নাকের হাড্ডি ও কপাল জমিনের উপর ভালভাবে লাগে।
সিজদারত অবস্থায় দৃষ্টি নাকের উপর থাকবে, বাহুদ্বয়কে পাজর থেকে, পেটকে উরু (রান) থেকে, উরু দুটি পায়ের গোড়ালী থেকে পৃথক রাখবেন। (হ্যাঁ, যদি কাতারে থাকেন তবে বাহুকে পাজরের সাথে লাগিয়ে রাখবেন) উভয় পায়ের ১০টি আঙ্গুলের মাথা এভাবে কিবলার দিকে রাখবেন যেন ১০টি আঙ্গুলের পেট অর্থাৎ আঙ্গুলসমূহের তলার উঁচু অংশ) জমিনের সাথে লেগে থাকে। হাতের তালুদ্বয় বিছানো অবস্থায় ও আঙ্গুল গুলো কিবলার দিকে থাকবে। কিন্তু উভয় কব্জিকে জমিনের সাথে লাগিয়ে রাখবেন না।
এবার কমপক্ষে তিনবার সিজদার তাসবীহ অর্থাৎ سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْاَعْلٰى পড়বেন। অতঃপর মাথাকে এভাবে উঠাবেন যেন প্রথমে কপাল, অতঃপর নাক, অতঃপর হাত উঠে। এরপর ডান পা খাড়া করে সেটার আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে নিবেন। আর বাম পা বিছিয়ে সেটার উপর সোজা হয়ে বসে যাবেন এবং হাতের তালুদ্বয়কে বিছিয়ে রানের উপর হাঁটুর নিকটে এভাবে রাখবেন, যেন হাত দুটোর আঙ্গুলগুলো কিবলার দিকে আর আঙ্গুলগুলোর মাথা হাঁটুদ্বয়ের বরাবর থাকে।
উভয় সিজদার মাঝখানে বসাকে “জলসা” বলে। অতঃপর سُبْحٰنَ الله বলার সমপরিমাণ অপেক্ষা করুন। (এ সময়ে اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِى অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো’ বলা মুস্তাহাব) অতঃপর اَللهُ اَکْبَر বলে প্রথম সিজদার মতো দ্বিতীয় সিজদা করবেন। এবার জমিন থেকে প্রথমে কপাল তারপর নাক উঠাবেন। অতঃপর হাত দুটোকে দুই হাঁটুর উপর রেখে পাঞ্জার উপর ভর করে দাঁড়িয়ে যাবেন। উঠার সময় একান্ত প্রয়োজন না হলে হাত দ্বারা জমিনে ঠেক লাগাবেন না। এভাবে আপনার এক রাকাত পূর্ণ হলো।
এখন দ্বিতীয় রাকাতেبِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْم পড়ে সূরা ফাতিহা ও এরপর আরেকটি সূরা পাঠ করবেন এবং আগের মত রুকূ ও সিজদা করবেন। দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠানোর পর ডান পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসে যাবেন। দুই রাকাতের দ্বিতীয় সিজদার পর বসাকে (কা’দা) বলা হয়, এখন কা’দার মধ্যে তাশাহুদ পড়ুন:
اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَ الصَّلَوَاتُ وَ الطَّيِّبٰتُ ط اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَ رَحْمَةُ اللهِ وَ بَرَكَاتُهٗ ط اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَ عَلٰى عِبَادِ اللهِ الصّٰلِحِيْنَ ط اَشْهَدُ اَنْ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَ رَسُوْلُهٗ ط
অনুবাদ: সকল মৌখিক, শারিরীক ও আর্থিক ইবাদত সমূহ আল্লাহ্রই জন্য। হে নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! আপনার উপর সালাম ও আল্লাহ্র রহমত ও বরকত। আমাদের প্রতিও আল্লাহ্র নেক বান্দাদের উপর সালাম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, (হযরত) মুহাম্মদ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁর বান্দা ও রাসূল। যখন তাশাহুদে لا এর কাছাকাছি পৌছাবেন তখন ডান হাতের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে বৃত্ত তৈরী করবেন আর কনিষ্ঠা ও তার পার্শ্ববর্তী আঙ্গুলকে তালুর সাথে মিলিয়ে ফেলবেন এবং (اَشْهَدُ اَ لْ এর পরপর) لا বলতেই শাহাদত আঙ্গুলকে উপরের দিকে উঠাবেন, তবে এদিক সেদিক নড়াচড়া করবেন না। আর اِلَّا শব্দটি বলতে বলতে নামিয়ে ফেলবেন এবং সাথে সাথে সমস্ত আঙ্গুল পুনরায় সোজা করে নিবেন।
যদি দুইয়ের চেয়ে বেশি রাকাত আদায় করতে হয় তাহলেاَللهُ اَکْبَر বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবেন। যদি চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায আদায় করে থাকেন তবে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতের কিয়ামে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْم পড়ার পর আলহামদু শরীফ অর্থাৎ সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবেন, এরপর অন্য সূরা মিলানোর প্রয়োজন নেই।বাকি অন্যান্য কার্যাবলী বর্ণিত নিয়মানুসারে সম্পন্ন করবেন। আর যদি ৪ রাকাত বিশিষ্ট সুন্নাত ও নফল নামায হয় তবে ৩য় ও ৪র্থ রাকাতেও সূরায়ে ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাবেন। (হ্যাঁ! যদি ইমামের পিছনে নামায আদায় করেন তবে কোন রাকাতের কিয়ামে কিরাত পড়বেন না, নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন) এভাবে চার রাকাত পূর্ণ করে কা’দায়ে আখিরা বা শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দরূদে ইবরাহীম عَلَیۡہِ الصَّلٰوۃُ وَ السَّلَام পড়বেন:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰۤى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰۤى اِبْرٰ هَيْمَ وَ عَلٰۤى اٰلِ اِبْرٰ هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌط
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّ عَلٰۤى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰۤى اِبْرٰ هِيْمَ وَ عَلٰۤى اٰلِ اِبْرٰ هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌط
অনুবাদ: হে আল্লাহ্! দরূদ প্রেরণ করো (আমাদের সরদার) মুহাম্মদ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর যেভাবে তুমি দরূদ প্রেরণ করেছো (সায়্যিদুনা) ইবরাহীম عَلَیۡہِ السَّلَام এর উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ্! বরকত অবর্তীণ করো। (আমাদের সরদার) মুহাম্মদصَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর যেভাবে তুমি বরকত অবতীর্ণ করেছ (সায়্যিদুনা) ইবরাহীম عَلَیۡہِ السَّلَام ও তাঁর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।
অতঃপর যেকোন দোয়ায়ে মাছুরা পড়ুন, যেমন-এ দোয়া পড়ুন:
اَللّٰهُمَّ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِـى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِـى الْاٰ خِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
অনুবাদ: হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান করো এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করো। আর আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করো।
অতঃপর নামায শেষ করার জন্য প্রথমে ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে কাঁধের উপর দৃষ্টি রেখে اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَ رَحْمَةُ اللهِ বলবেন: এরপর একইভাবে বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে অনুরূপ বলবেন, এখন নামায শেষ হয়ে গেলো। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ২৭৮ পৃষ্ঠা। গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৬১ পৃষ্ঠা)
ইসলামী বোনদের নামাযে কয়েকটি বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে
এতক্ষণ পর্যন্ত একাকী নামাযের যে পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো, তা শুধু ইমাম বা পুরুষদের জন্য। ইসলামী বোনেরা তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবেন তবে হাত চাদর ইত্যাদি থেকে বের করবেন না। (ফতহুল কদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠা) কিয়ামে বাম হাতের তালু বক্ষের (সীনা) উপর স্তনের নিচে রেখে এর উপর ডান হাতের তালু রাখুন। রুকূতে সামান্য ঝুকবেন অর্থাৎ এতটুকু হাঁটুতে হাত রাখবেন, ভর দিবেন না এবং হাঁটুকে আকড়েও ধরবেন না। আর আঙ্গুলগুলোকে মিলিয়ে রাখবেন এবং পা দুইটি ঝুকিয়ে রাখবেন।
পুরুষদের মতো একেবারে সোজা করে রাখবেন না। সিজদা গুটিয়ে করবেন অর্থাৎ উভয় বাহু পাজরের সাথে, পেট উভয় উরুর (রানের) সাথে, উরু পায়ের গোড়ালীর সাথে, পায়ের গোড়ালী জমিনের সাথে লাগিয়ে রাখবেন। সিজদা ও কা’দাতে উভয় পা-কে ডান দিকে বের করে দেবেন। আর বাম পাছার উপর বসবেন এবং ডান উরুর মধ্যভাগে ডান হাত ও বাম উরুর মধ্যভাগে বাম হাত রাখবেন। অবশিষ্ট সব কাজ পূর্বে বর্ণিত নিয়মানুসারে করবেন। (রদ্দুল মুখতার, ২য় খন্ড, ২৫৯ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা)
উভয়েই মনোযোগ দিন!
ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোনদের প্রদত্ত নামাযের নিয়মাবলীতে কিছু কাজ হচ্ছে ফরয, যেগুলো ব্যতীত নামাযই হবে না, কতিপয় বিষয় ওয়াজীব, যেগুলো ইচ্ছাকৃত ভাবে বর্জন করা গুনাহ্ এবং এর জন্য তাওবা করে নামাযকে পুনরায় আদায় করে দেয়া ওয়াজীব। আর ভূলবশতঃ ছুটে গেলে “সিজদায়ে সাহু” দেওয়া ওয়াজীব। আর কিছু রয়েছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সেগুলো ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস করলে গুনাহ্ হয়, আর কতিপয় মুস্তাহাব রয়েছে যেগুলো করলে সাওয়াব, না করলে গুনাহ্ নেই। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৬৬ পৃষ্ঠা)
নামাযের ৬টি শর্ত
(১) পবিত্রতা: নামায আদায়কারীর শরীর, পোষাক ও যে স্থানে নামায আদায় করবেন ঐ স্থান যে কোন ধরণের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়া আবশ্যক। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ২০৭ পৃষ্ঠা)
(২) সতর ঢাকা: (ক) পুরুষের জন্য নাভীর নিচ থেকে উভয় হাঁটু সহ ঢেকে রাখা আবশ্যক। আর মহিলাদের জন্য পাঁচটি অঙ্গ যথা সম্পূর্ণ চেহারা, উভয় হাতের তালু এবং উভয় পায়ের তালু ব্যতীত সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা আবশ্যক। অবশ্য যদি উভয় হাত (কবজি পর্যন্ত) ও উভয় পা (গোড়ালী পর্যন্ত) সম্পূর্ণ প্রকাশ পায় তাহলেও একটি গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী নামায শুদ্ধ হবে। (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৯৩ পৃষ্ঠা) (খ) যদি পরিহিত কাপড় এমন পাতলা হয়, যা দ্বারা শরীরের ঐ অঙ্গ যা নামাযে ঢেকে রাখা ফরয, দৃষ্টিগোচর হয় অথবা কাপড়ের বাহির থেকে চামড়ার রং প্রকাশ পায় তাহলে নামায হবে না। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা) (গ) বর্তমানে পাতলা কাপড়ের প্রচলন বেড়েই চলেছে। এমন পাতলা কাপড়ের পায়জামা পরিধান করা, যাতে উরু অথবা সতরের কোন অংশ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়, তবে নামায হবে না। এমন পোষাক পরিধান করা নামাযের বাইরেও হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৪২ পৃষ্ঠা) (ঘ) মোটা কাপড়, যা দ্বারা শরীরের রং প্রকাশ পায় না কিন্তু শরীরের সাথে এমনভাবে লেগে থাকে যে, দেখলে শরীরের অবকাঠামো স্পষ্টরূপে বুঝা যায়, এমন কাপড় পরিধান করে নামায আদায় করলে যদিও হয়ে যাবে। ঐ ধরণের পোষাক পরিহিত অবস্থায় প্রকাশ পাওয়া অঙ্গ সমূহের দিকে তাকানো অপরের জন্য জায়েয নেই। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা) এমন পোষাক মানুষের সামনে পরিধান করা নিষিদ্ধ। মহিলাদের জন্যতো একেবারেই নিষিদ্ধ। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৪২ পৃষ্ঠা) (ঙ) কোন কোন মহিলা নামাযে খুব পাতলা চাদর পরিধান করে, যাতে চুলের কালো রং প্রকাশ পেয়ে যায় অথবা এমন পোষাক পরিধান করে যাতে শরীরের রং বুঝা যায়, এমন পোষাকেও নামায হবে না।
(৩) কিবলামূখী হওয়া: অর্থাৎ নামাযের মধ্যে কিবলা অর্থাৎ কা’বা শরীফের দিকে মুখ করা। (১) নামাযী যদি শরয়ী অপারগতা ছাড়া ইচ্ছাকৃত ভাবে কিবলার দিক থেকে বুককে ফিরিয়ে নেয় যদিও তৎক্ষণাৎ কিবলার দিকে ফিরে যায় তবুও নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ফিরে যায় ও তিনবার سُبْحٰنَ الله বলার পরিমাণ সময়ের পূর্বেই কিবলার দিকে ফিরে আসে তবে তার নামায ভঙ্গ হবে না। (আল বাহরুর রাইক, ১ম খন্ড, ৪৯৭ পৃষ্ঠা) (২) যদি কিবলার দিক থেকে শুধু মুখ ফিরে যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে আনা ওয়াজীব, এতে নামায ভঙ্গ হবে না। কিন্তু বিনা কারণে এরূপ করা মাকরূহে তাহরীমী। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২২২ পৃষ্ঠা) (৩) যদি এমন কোন স্থানে পৌঁছে থাকেন যেখানে কিবলা কোন্ দিকে তা জানার কোন মাধ্যম না থাকে, অথবা এমন মুসলমানও পাওয়া যাচ্ছে না, যার নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়া যেতে পারে, তবে ‘তার্হারী’করুন অর্থাৎ চিন্তাভাবনা করে কিবলা ঠিক করুন, যেদিকে কিবলা হওয়ার প্রতি মনের ধারণা বদ্ধমূল হয়, সেদিকেই মুখ করে নামায আদায় করুন। আপনার জন্য ঐ দিকটাই কিবলা। (ফতহুল কদীর সম্বলিত হিদায়া, ১ম খন্ড, ২৩৬ পৃষ্ঠা) (৪) তাহাররী বা চিন্তাভাবনা করে নামায আদায় করার পর জানা গেলো যে, কিবলার দিকে নামায আদায় করা হয়নি। তারপরও নামায হয়ে যাবে পুনরায় আদায়ের প্রয়োজন নেই। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৪ পৃষ্ঠা)
(৫) এক ব্যক্তি তার্হারী বা চিন্তাভাবনা করে নামায পড়ছে, অন্য এক ব্যক্তিও তার দেখাদেখি ঐ দিকে মুখ করে নামায আদায় করলো। এমতাবস্থায় শেষোক্ত ব্যক্তির নামায হয়নি। কারণ ঐ দ্বিতীয় ব্যক্তির প্রতিও চিন্তাভাবনা করে দিক নির্ধারণ করার নির্দেশ রয়েছে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৪৩ পৃষ্ঠা)
(৪) সময়সীমা: অর্থাৎ যে ওয়াক্তের নামায আদায় করবেন সেটার সময় হওয়া আবশ্যক। যেমন-আজকের আসরের নামায আদায় করতে হলে আসরের সময় আরম্ভ হওয়া আবশ্যক। যদি আসরের সময় হওয়ার পূর্বেই নামায আদায় করে নেন তবে নামায হবে না। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২২৪ পৃষ্ঠা) (১) সাধারণতঃ বর্তমানে মসজিদ গুলোতে নামাযের সময়সীমা নির্ধারক ক্যালেন্ডার টাঙ্গানো হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে যেগুলো নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে আহলে সুন্নাতগণ কর্তৃক সত্যায়িত করা হয়েছে সেগুলো দ্বারা নামাযের সময়সীমা জেনে নেয়া অধিক সহজতর। (২) ইসলামী বোনদের জন্য ফযরের নামায সময়ের শুরুতে আদায় করা মুস্তাহাব। আর অন্যান্য নামাযগুলোতে উত্তম হচ্ছে যে, পুরুষদের জামাআতের জন্য অপেক্ষা করা। যখন তাদের জামাআত শেষ হয়ে যায় তখন আদায় করবেন। (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা)
মাকরূহ ওয়াক্ত ৩টি
(১) সূর্যোদয় থেকে শুরু করে ২০ মিনিট পর পর্যন্ত (২) সূর্যাস্তের ২০ মিনিট আগে থেকে অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত (৩) দিনের মধ্যভাগে অর্থাৎ “দাহওয়ায়ে কুবরা” (মধ্যাহ্ন) থেকে শুরু করে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। এ তিনটি সময়ে কোন নামায জায়েজ নেই। ফরয, ওয়াজীব, নফল, কাযা ইত্যাদি কোন নামাযই হোক না কেন? হ্যাঁ! যদি ঐ দিনের আসরের নামায আদায় না করে থাকেন আর ইতোমধ্যে মাকরূহ ওয়াক্ত আরম্ভ হয়ে যায় তাহলে তা আদায় করে নেবেন। তবে এতটুকু বিলম্ব করা হারাম। (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪০ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ২৩ পৃষ্ঠা)
নামায আদায় করার মাকরূহ ওয়াক্ত এসে যায় তখন?
সূর্যাস্তের কমপক্ষে ২০ মিনিট পূর্বে আসরের নামাযের সালাম ফিরিয়ে নেয়া উচিত। যেমন- আমার আক্বা, আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “আসরের নামায যতই দেরীতে পড়া হয় ততই উত্তম তবে মাকরূহ সময় আসার পূর্বেই যেন আদায় করে নেয়া হয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফ, নতুন ৫ম খন্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা) অতঃপর সে যদি সতর্কতা অবলম্বন করে এবং নামায দীর্ঘায়িত করে এবং নামায দীর্ঘায়িত করার ফলে নামাযের মধ্যভাগে মাকরূহ ওয়াক্ত এসে যায় তারপরেও কোন অসুবিধা নেই, নামায হয়ে যাবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফ, (নতুন) ৫ম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা)
(৫) নিয়্যত: নিয়্যত অন্তরের পাকাপোক্ত ইচ্ছাকে বলা হয়। (তাহতাবীর পাদটিকা, ২১৫ পৃষ্ঠা)
(ক) মুখে নিয়্যত করা আবশ্যক নয়। অবশ্য অন্তরে নিয়্যত রেখে মুখে বলে নেয়া উত্তম। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা) আরবীতে বলাও জরুরী নয়, বাংলা, উর্দূ ইত্যাদি যে কোন ভাষায় বলা যায়। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা)
(খ) মুখে নিয়্যত বলাটা বিবেচ্য নয়। অর্থাৎ যদি অন্তরে যোহরের নামাযের নিয়্যত থাকে আর মুখে আসর উচ্চারিত হয়ে যায় তবে এমতাবস্থায় যোহরের নামায হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ১১২ পৃষ্ঠা)
(গ) নিয়্যতের নিম্নতর স্তর হচ্ছে এটাই, যদি তখন কেউ জিজ্ঞাসা করে: “কোন নামায আদায় করেছেন?” তাহলে তৎক্ষণাৎ বলে দেওয়া। আর যদি অবস্থা এমনি হয় যে, চিন্তা ভাবনা করে বলে, তাহলে নামায হবে না। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)
(ঘ) ফরয নামাযের মধ্যে ফরযের নিয়্যত করা আবশ্যক। যেমন-অন্তরে এ নিয়্যত থাকবে যে, আজকের যোহরের ফরয নামায আদায় করছি। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১১৬ পৃষ্ঠা)
(চ) বিশুদ্ধ (অর্থাৎ সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ) মত হচ্ছে, নফল, সুন্নাত ও তারাবীতে শুধু নামাযের নিয়্যতই যথেষ্ট। তবে সাবধানতা হচ্ছে তারাবীতে তারাবীর অথবা ওয়াক্তের সুন্নাতের নিয়্যত করা। আর অন্যান্য সুন্নাতগুলোতে সুন্নাত বা তাজেদারে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর অনুসরণের নিয়্যত করবেন। এটা এজন্য যে, কোন কোন মাশাইখ رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی উল্লেখিত নামায সমূহের মধ্যে সাধারণ নামাযে নিয়্যতকে যথেষ্ট নয় বলে সাব্যস্ত করেছেন। (গুনিয়াতুল মুসতামলা সম্বলিত মুনিয়াতুল মুসাল্লা, ২৪৫ পৃষ্ঠা)
(ছ) নফল নামাযে শুধু নামাযের নিয়্যতই যথেষ্ট। যদিও নফল কথাটি নিয়্যতের মধ্যে না থাকে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৬৬)
(জ) নিয়্যতে এটা বলাও শর্ত নয় যে, আমার মুখ কিবলা শরীফের দিকে রয়েছে। (প্রাগুক্ত)
(ঝ) মুক্তাদীর জন্য ইকদিতা করার সময় এভাবে নিয়্যত করাও জায়েজ আছে যে, “যেই নামায ইমামের, সেই নামায আমারও।” (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা)
(ঞ) জানাযার নামাযের নিয়্যত হচ্ছে, “নামায আল্লাহ্ তাআলার জন্য আর দোয়া এই মৃত ব্যক্তির জন্য।” (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ১২৬ পৃষ্ঠা)
(ট) ওয়াজীব নামাযে ওয়াজিবের নিয়্যত করা আবশ্যক আর সেটাকে নির্দিষ্টও করবেন যেমন- ঈদুল ফিতর, ঈদুর আযহা, মান্নতের নামায, তাওয়াফের পর নামায (ওয়াজীব তাওয়াফ) , অথবা ঐ নফল নামায যেটাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ‘ফাসিদ’ (ভঙ্গ) করা হয়েছে, সেটার কাযা করাও ওয়াজীব হয়ে যায়। (তাহতাবীর পাদটিকা, ২২২ পৃষ্ঠা)
(ঠ) ‘সিজদায়ে শোকর’যদিও নফল তবে এর মধ্যেও নিয়্যত করা আবশ্যক যেমন- অন্তরে এই নিয়্যত থাকবে যে, আমি সিজদায়ে শোকর আদায় করছি। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ১২০ পৃষ্ঠা)
(ড) সিজদায়ে সাহুতেও “নাহরুল ফাইক্ব” প্রণেতার মতে, নিয়্যত আবশ্যক। (প্রাগুক্ত) অর্থাৎ এ সময় অন্তরে এই নিয়্যত থাকতে হবে যে, আমি সিজদায়ে সাহু আদায় করছি।
(৬) তাকবীরে তাহরীমা: অর্থাৎ নামাযকে اَللهُ اَكْبَرُ বলে শুরু করা আবশ্যক। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা)
নামাযের ৭টি ফরয
(১) তাকবীরে তাহরীমা, (২) কিয়াম করা, (৩) কিরাত পড়া, (৪) রুকূ করা (৫) সিজদা করা (৬) কা’দায়ে আখিরা বা শেষ বৈঠক, (৭) খুরুজে বিসুনইহি (সালামের মাধ্যমে নামায শেষ করা) । (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৩ থেকে ২৮৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত)
(১) তাকবীরে তাহরীমা: মূলতঃ তাকবীরে তাহরীমা (অর্থাৎ প্রথম তাকবীর) নামাযের শর্তসমূহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু নামাযের আভ্যন্তরিন কার্যাবলীর সাথে সম্পূর্ণরূপে সম্পৃক্ত, তাই সেটিকে নামাযের ফরয সমূহের মধ্যেও গণ্য করা হয়েছে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৩ পৃষ্ঠা) (১) মুক্তাদী “তাকবীরে তাহরীমা” এর শব্দ “اَللهُ” ইমামের সাথে বললো, কিন্তু “اَكْبَرُ” ইমামের পূর্বে শেষ করে নিলো তবে তার নামায হবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা) (২) ইমামকে রুকূতে পেল, আর সে তাকবীরে তাহরীমা বলতে বলতে রুকূতে গেলো অর্থাৎ তাকবীর এমন সময় শেষ হলো যে, হাত বাড়ালে হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, এমতাবস্থায় তার নামায হবে না। (খুলাসাতুল ফতোওয়া, ১ম খন্ড, ৮৩ পৃষ্ঠা) (অর্থাৎ এ সময় ইমামকে রুকূতে পাওয়া অবস্থায় নিয়মানুযায়ী প্রথমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে নিন এরপর اَللهُ اَكْبَرُ বলে রুকূ করুন। ইমামের সাথে যদি সামান্যতম মুহুর্তের জন্যও রুকূতে অংশগ্রহণ করতে পারেন তবে আপনার রাকাত মিলে গেলো আর যদি আপনি রুকূতে যাওয়ার পূর্বেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে যান তবে রাকাত পাওয়া হলো না। (৩) যে ব্যক্তি তাকবীর উচ্চারণে সক্ষম নয় যেমন-বোবা বা অন্য যে কোন কারণে যার বাকশক্তি বন্ধ হয়ে গেছে, তার জন্য মুখে তাকবীর উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়, তার অন্তরের ইচ্ছাই যথেষ্ট। (তাবঈনুল হাকাইক, ১ম খন্ড, ১০৯ পৃষ্ঠা) (৪) اَللهُ শব্দকে اٰللهُ অর্থাৎ আলিফকে টেনে বা اَكْبَرُ কে اٰكْبَرُ অর্থাৎ আলিফকে টেনে অথবা اَكْبَرُ কে اَكْبَارُ অর্থাৎ ب কে টেনে পড়লো তবে নামায হবে না বরং যদি এগুলোর ভুল অর্থ জেনে বুঝে বলে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা) নামাযীর সংখ্যা বেশি হওয়া অবস্থায় পিছনে আওয়াজ পৌঁছানোর জন্য যেসব মুকাব্বিরগণ তাকবীর বলে থাকেন, সেসব মুকাব্বিরদের অধিকাংশই জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আজকাল اَكْبَرُ কে اَكْبَارُ অর্থাৎ ب কে দীর্ঘ টান দিয়ে বলতে শুনা যায়। এর ফলে তাদের নিজের নামাযও ভঙ্গ হয়ে যায় এবং তার আওয়াজ সে সব লোক নামাযের রুকন আদায় করে (অর্থাৎ কিয়াম থেকে রুকূতে যায়, রুকূ থেকে সিজদাতে যায় ইত্যাদি) তাদের নামাযও ভঙ্গ হয়ে যায়। এ জন্য না শিখে কখনো মুকাব্বির হওয়া উচিত নয়। (৫) প্রথম রাকাতের রুকূ পাওয়া গেলো, তাহলে ‘তাকবীরে ঊলা’বা প্রথম তাকবীরের সাওয়াব পেয়ে গেলো। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
(২) কিয়াম করা বা দাঁড়ানো: (১) কিয়ামের নিম্নতম সীমা হচ্ছে যে, হাত বাড়ালে হাত যেন হাঁটু পর্যন্ত না পৌঁছে আর পূর্ণাঙ্গ কিয়াম হচ্ছে সোজা হয়ে দাঁড়ান। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা)
(২) ততটুকু সময় পর্যন্ত কিয়াম করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত কিরাত পাঠ করা হবে। যতটুকু পরিমাণ কিরাত পড়া ফরয ততটুকু পরিমাণ দাঁড়ানোও ফরয। যতটুকু পরিমাণ ওয়াজীব ততটুকু পরিমাণ কিরাত ওয়াজীব এবং যতটুকু পরিমাণ কিরাত সুন্নাত ততটুকু পরিমাণ দাঁড়ান সুন্নাত। (প্রাগুক্ত)
(৩) ফরয, বিতর, দুই ঈদ এবং ফযরের সুন্নাতে দাঁড়ানো ফরয। যদি সঠিক কারণ (ওজর) ব্যতীত কেউ এসব নামায বসে বসে আদায় করে, তবে তার নামায হবে না। (প্রাগুক্ত)
(৪) দাঁড়াতে শুধু একটু কষ্টবোধ হওয়া কোন ওযরের মধ্যে পড়ে না বরং কিয়াম ঐ সময় রহিত হবে যখন মোটেই দাঁড়াতে পারে না অথবা সিজদা করতে পারে না অথবা দাঁড়ানোর ফলে বা সিজদা করার কারণে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হয় অথবা দাঁড়ানোর ফলে প্রস্রাবের ফোটা চলে আসে অথবা এক চতুর্থাংশ সতর খুলে যায় কিংবা কিরাত পড়তে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে অক্ষম হয়। এমনি দাঁড়াতে পারে কিন্তু তাতে রোগ বৃদ্ধি পায় বা দেরীতে সুস্থ হয় বা অসহ্য কষ্ট অনুভব হয় তাহলে এ সকল অবস্থায় বসে পড়ার অনুমতি রয়েছে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
(৫) যদি লাঠি দ্বারা খাদিমের সাহায্যে বা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয় তবে এ অবস্থায়ও দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা ফরয। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৮ পৃষ্ঠা)
(৬) যদি শুধুমাত্র এতটুকু দাঁড়াতে পারে যে, কোন মতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলতে পারবে তবে তার জন্য ফরয হচ্ছে দাঁড়িয়ে اَللهُ اَكْبَرُ বলা। এরপর যদি দাঁড়ানো সম্ভব না হয় তাহলে বসে বসে নামায আদায় করা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৫৯ পৃষ্ঠা)
(৭) সাবধান! কিছু লোক সামান্য কষ্টের (আঘাতের) কারণে ফরয নামায বসে আদায় করে, তারা যেন শরীয়াতের এ আদেশের প্রতি মনোযোগ দেয় যে, দাঁড়িয়ে আদায় করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও যত ওয়াক্ত নামায বসে বসে আদায় করা হয়েছে সবগুলো পুনরায় আদায় করে দেওয়া ফরয। অনুরূপভাবে এমনি দাঁড়াতে পারে না, তবে লাঠি বা দেয়াল কিংবা মানুষের সাহায্যে দাঁড়ানো সম্ভব ছিলো কিন্তু বসে বসে পড়েছে তাহলে তাদের নামাযও হয়নি। তা পুনরায় পড়ে নেয়া ফরয। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ৬৪ পৃষ্ঠা) ইসলামী বোনদের জন্যও একই আদেশ। তারাও শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত বসে বসে নামায আদায় করতে পারবে না। অনেক মসজিদে বসে নামায আদায় করার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক বৃদ্ধলোক দেখা গেছে এতে বসে ফরয নামায আদায় করে থাকে, অথচ তারা পায়ে হেঁটে মসজিদে এসেছে, নামাযের পর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাবার্তাও বলে, এমন সব বৃদ্ধ লোক যদি শরীয়াতের অনুমতি ব্যতীত বসে নামায আদায় করে থাকে তবে তাদের নামায হবে না।
(৮) দাঁড়িয়ে নামায আদায় করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও নফল নামায বসে আদায় করতে পারবে, তবে দাঁড়িয়ে আদায় করা উত্তম। যেমনিভাবে- হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আমর رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “বসে নামায আদায়কারী দাঁড়িয়ে আদায়কারীর অর্ধেক (অর্থাৎ অর্ধেক সাওয়াব) (পাবে) । (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ২৫৩ পৃষ্ঠা) অবশ্য অসুবিধার (অক্ষমতার) কারণে বসে পড়লে সাওয়াবে কম হবে না। বর্তমানে সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে, নফল নামায বসে পড়ার প্রথা চালু হয়ে গেছে। বাহ্যিকভাবে এটা বুঝা যাচ্ছে যে, হয়ত বসে নামায আদায় করাকে উত্তম মনে করছে। এমন অনুমান করা একেবারে ভুল। বিতরের পর যে দুই রাকাত নফল পড়া হয় উহারও একই হুকুম যে, দাঁড়িয়ে পড়াটা উত্তম।
(বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ খন্ড, ১৭ পৃষ্ঠা)
(৩) কিরাত: (১) কিরাত হলোসমস্ত অক্ষরসমূহ তার মাখরাজ (উচ্চারণের স্থান থেকে) আদায় করার নাম, যেন প্রত্যেক অক্ষর অন্য অক্ষর থেকে পৃথকভাবে বুঝা যায় ও উচ্চারণও বিশুদ্ধ হয়। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
(২) নীরবে পড়ার ক্ষেত্রে এতটুকু আওয়াজে পড়া আবশ্যক যে, যেন নিজে শুনতে পায়। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৭১ পৃষ্ঠা)
(৩) আর যদি অক্ষরগুলো বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করেছে, কিন্তু এত নিম্নস্বরে পড়েছে যে, নিজের কানেও শুনেনি অথচ এ সময় কোন অন্তরায় যেমন- হৈ চৈও ছিলো না, আবার কান ভারী (অর্থাৎ বধির) ও নয় তবে তার নামায হলো না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
(৪) যদিও নিজে শুনাটা জরুরী তবে এটার প্রতিও এতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক যে, নীরবে কিরাত পড়ার নামাযগুলোতে যেন কিরাতের আওয়াজ অন্যজনের কানে না পৌঁছে, অনুরূপভাবে তাসবীহ সমূহ আদায় কালেও এ বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।
(৫) নামায ব্যতীত যেসব স্থানে কিছু বলা বা পড়াটা নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানেও এর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য যে, কমপক্ষে এমন আওয়াজ হয় যেন নিজে শুনতে পায়। যেমন-তালাক দেয়া, গোলাম আযাদ করা অথবা জন্তু যাবেহ করার জন্য আল্লাহ্ তাআলার নাম নেয়া। এসব ক্ষেত্রে এতটুকু আওয়াজ আবশ্যক যেন নিজের কানে শুনতে পায়। (প্রাগুক্ত) দরূদ শরীফ ইত্যাদি ওযীফা সমূহ পড়ার ক্ষেত্রে কমপক্ষে এতটুকু আওয়াজ হওয়া উচিত যেন নিজে শুনতে পায়, তবেই পাঠ করা হিসেবে গণ্য হবে।
(৬) শুধুমাত্র বড় এক আয়াত পাঠ করা ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাতে ফরয, আর বিতর, সুন্নাত ও নফলের প্রত্যেক রাকাতে ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারী সকলের উপর ফরয। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ২২৬ পৃষ্ঠা)
(৭) মুক্তাদির জন্য নামাযে কিরাত পড়া জায়েয নেই। না সূরায়ে ফাতিহা, না অন্য আয়াত, না নীরবে কিরাতের নামাযে, না উঁচু আওয়াজের কিরাতের নামাযে। ইমামের কিরাতই মুক্ততাদীর জন্য যথেষ্ট। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ২২৭ পৃষ্ঠা)
(৮) ফরয নামাযের কোন রাকাতে কিরাত পড়লো না বা শুধু এক রাকাতে পড়লো তবে নামায ভঙ্গ হয়ে গেলো। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৬৯ পৃষ্ঠা)
(৯) ফরয নামাযগুলোতে ধীরে ধীরে, তারাবীতে মধ্যম গতিতে ও রাতের নফল নামাযে তাড়াতাড়ি কিরাত পড়ার অনুমতি রয়েছে। তবে এমনভাবে পড়তে হবে যেন কিরাতের শব্দ সমূহ বুঝে আসে অর্থাৎ কমপক্ষে মদের (দীর্ঘ করে পড়ার) যতটুকু সীমা কারীগণ নির্ধারণ করেছেন ততটুকু যেন আদায় হয়, নতুবা হারাম হবে। কেননা তারতীল (অর্থাৎ থেমে থেমে) সহকারে কুরআন তিলাওয়াতের আদেশ রয়েছে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৩৬৩ পৃষ্ঠা) বর্তমানে অধিকাংশ হাফিয সাহেবগণ এভাবে পড়ে থাকেন যে, মদ সমূহের আদায়তো দূরের কথা আয়াতের শেষের দু’একটি শব্দ যেমন-يَعْلَمُوْن , تَعْلَمُوْن ছাড়া বাকী কোন শব্দই বুঝা যায় না। এক্ষেত্রে অক্ষরসমূহের উচ্চারণ শুদ্ধ হয় না বরং দ্রুত পড়ার কারণে অক্ষরগুলো একটি অপরটির সঙ্গে সংমিশ্রণ হয়ে যায় আর এভাবে দ্রুত পড়ার কারণে গর্ববোধ করা হয় যে, অমূখ হাফিয সাহেব খুব তাড়াতাড়ি পড়ে থাকেন! অথচ এভাবে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা হারাম ও শক্ত হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ৮৬, ৮৭ পৃষ্ঠা)
অক্ষর সমূহ বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করা আবশ্যক
অধিকাংশ লোক ط ت, س ص ث, ا ء ع, ه ح, د ض, ذ ظ এ সমস্ত অক্ষর সমূহ উচ্চারণের কোন পার্থক্য করে না। স্মরণ রাখবেন! অক্ষর সমূহের উচ্চারণ পরিবর্তন হওয়ার কারণে যদি অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়, তবে নামায হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ১০৮ পৃষ্ঠা) যেমন- যে ব্যক্তি سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْعَظِيْم এ عَظِيْم কে عَزِيْم (ظ এর স্থানে ز) পড়ে দিলো, তবে তার নামায ভঙ্গ হয়ে গেলো। তাই, যে ব্যক্তি سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْعَظِيْم শব্দটি শুদ্ধভাবে পড়তে পারে না সে যেন سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْكَرِيْم পড়ে নেয়। (কানূনে শরীয়াত, ১ম অংশ, ১১৯ পৃষ্ঠা)
সাবধান! সাবধান!! সাবধান!!!
যার বিশুদ্ধভাবে অক্ষরসমূহ উচ্চারিত হয় না, তার জন্য কিছুদিন অনুশীলন (বিশুদ্ধভাবে পাঠের প্রশিক্ষণ নেয়া) যথেষ্ট নয় বরং সেগুলো শিক্ষা করার জন্য যতদিন প্রয়োজন রাতদিন পূর্ণ প্রচেষ্টা চালানো আবশ্যক। যদি বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারে এমন লোকের পিছনে নামায আদায় করা সম্ভব হয় তাহলে তাঁর পিছনে নামায আদায় করা ফরয। অথবা সে যেন নামাযে ঐ আয়াতগুলো পড়ে, যেগুলোর অক্ষরসমূহ সে বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারে। আর এ দুটো নিয়মে নামায আদায় করা সম্ভব না হলে প্রচেষ্টাকালীন সময়ে নিজের নামায হয়ে যাবে। আজকাল বহুলোক এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে যে, না তারা বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে পারে, না শিখার জন্য চেষ্টা করছে। মনে রাখবেন, এভাবে তাদের নামায সমূহ বিনষ্ট হয়ে যায়। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ১১৬ পৃষ্ঠা) যে ব্যক্তি রাতদিন চেষ্টা করছে কিন্তু শিখতে পারছে না, যেমন-কিছু লোক এমনই রয়েছে, যাদের মুখ থেকে বিশুদ্ধভাবে অক্ষরসমূহ উচ্চারিত হয় না;তাদের জন্য রাতদিন শিখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা আবশ্যক। প্রচেষ্টকালীন সময়ে তিনি মাযূর (অপারগ) হিসাবে গণ্য হবেন, তার নামায হয়ে যাবে কিন্তু সে কখনো বিশুদ্ধ তিলাওয়াতকারীদের ইমাম হতে পারবে না। হ্যাঁ, যেসব অক্ষরের উচ্চারণ তার বিশুদ্ধ নয়, অনুরূপভাবে সেসব অক্ষরের উচ্চারণ অন্যান্যদেরও বিশুদ্ধ নয়, প্রশিক্ষণকালীন সময়ে সে ঐ সমস্ত লোকের ইমামতি করতে পারবে। আর যদি নিজে চেষ্টাই না করে তাহলে তার নিজের নামাযই তো হচ্ছে না, সুতরাং তার পিছনে অন্যান্যদের নামায কিভাবে শুদ্ধ হবে? (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৫৪ পৃষ্ঠা)
(৪) রুকূ: এতটুকু ঝুঁকা যাতে হাত বাড়ালে হাত উভয় হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এটা রুকূর নিম্নতম পর্যায়। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা) আর পূর্ণাঙ্গ রুকূ হচ্ছে পিঠকে সমান করে সোজাসুজি বিছিয়ে দেয়া। (তাহতাবীর পাদটিকা, ২২৯ পৃষ্ঠা)
মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “আল্লাহ্ তাআলা বান্দার ঐ নামাযের প্রতি দৃষ্টি দেন না, যাতে রুকূ ও সিজদা সমূহের মাঝখানে পিঠ সোজা করা হয় না।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ৩য় খন্ড, ৬১৭ পৃষ্ঠা, হাদীস-১০৮০৩)
(৫) সিজদা: (১) নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “আমাকে হুকুম করা হয়েছে সাতটি হাঁড় দ্বারা সিজদা করার জন্য। ঐ সাতটি হাড় হলো মুখ (কপাল) ও উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের পাঞ্জা আরও হুকুম হয়েছে যে, কাপড় ও চুল যেন সংকুচিত না করি।” (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ১৯৩ পৃষ্ঠা) (২) প্রত্যেক রাকাতে দুইবার সিজদা করা ফরয। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৬৭ পৃষ্ঠা) (৩) সিজদাতে কপাল জমিনের উপর ভালভাবে স্থাপন করা আবশ্যক। ভালভাবে স্থাপনের অর্থ হচ্ছে; জমিনের কাঠিন্যতা ভালভাবে অনুভূত হওয়া। যদি কেউ এভাবে সিজদা করে যে, কপাল ভালভাবে জমিনে স্থাপিত হয়নি তাহলে তার সিজদা হয়নি। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা) (৪) কেউ কোন নরম বস্তু যেমন ঘাস (বাগানের সতেজ ঘাস) , তুলা অথবা কার্পেট (CARPET) ইত্যাদির উপর সিজদা করলো, যদি এমতাবস্থায় কপাল ভালভাবে স্থাপিত হয় অর্থাৎ কপালকে এতটুকু চাপ দিলো যে, এরপর আর চাপা যায় না, তাহলে তার সিজদা হয়ে যাবে, অন্যথায় হবে না। (তাবঈনুল হাকাইক, ১ম খন্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা) (৫) বর্তমানে মসজিদ সমূহে কার্পেট (CARPET) বিছানোর প্রচলন হয়ে গেছে। (বরং কোন কোন জায়গায় কার্পেটের নিচে ফোমও বিছিয়ে দেয়া হয়) কার্পেটের উপর সিজদা করার সময় এ বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, কপাল যেন ভালভাবে স্থাপিত হয় নতুবা নামায হবে না। (নাকের ডগা নয় বরং) নাকের হাঁড় পর্যন্ত ভালভাবে চেপে না লাগালে নামায মাকরূহে তাহরীমী হবে, নামায পুনরায় আদায় করা ওয়াজীব হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, পৃষ্ঠা ৭১ হতে সংকলিত) (৬) স্প্রীং এর গদির উপর কপাল ভালভাবে বসে না। কাজেই এর উপর নামাযও হবে না। (প্রাগুক্ত)
কার্পেটের ক্ষতি সমূহ
কার্পেটে একেতো সিজদা করতে কষ্ট হয়, তদুপরি সঠিকভাবে এটাকে পরিস্কারও করা যায় না। তাই এতে ধূলাবালি ইত্যাদি জমে যায় এবং বিভিন্ন রোগ জীবাণু সৃষ্টি হয়। সিজদাতে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে রোগ জীবাণু ও কার্পেটের পশম নাকের ভিতরে প্রবেশ করে, কার্পেটের পশম ফুসফুসে গিয়ে একবার লেগে গেলে আল্লাহ্র পানাহ!ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক সময় বাচ্চারা কার্পেটে বমি বা প্রস্রাব করে দেয়, বিড়ালও ময়লাযুক্ত করে ফেলে, ইঁদুর আর টিকটিকি মল ত্যাগ করে। এসব কারণে কার্পেট অপবিত্র হয়ে গেলে সাধারণত দেখা যায় এটা পবিত্র করার কষ্টও কেউ করে না। আহ্! যদি কার্পেট বিছানোর প্রথাই বন্ধ হয়ে যেত।
নাপাক কার্পেট পাক করার পদ্ধতি
কার্পেটের নাপাক অংশটি একবার ধৌত করে ঝুলিয়ে দিন। এতটুকু সময় পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখুন, যেন পানির ফোটা পড়া বন্ধ হয়ে যায়। অতপর পুনরায় ধৌত করে ঝুলিয়ে রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত পানি ঝরা বন্ধ হয়ে না যায়। অতপর পুনরায় একইভাবে ধুয়ে ঝুলিয়ে রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত পানি ঝরা পূর্বের মত বন্ধ হয়ে না যায়। তবেই কার্পেট পাক হয়ে যাবে। চাটাই, চামড়ার জুতো এবং মাটির থালা ইত্যাদি যে গুলোতে পাতলা নাপাক পানি শোষণ হয়ে যায় সে গুলোও একই পদ্ধতিতে পাক করে নিন। (এমন হালকা পাতলা কাপড় যা নিংড়ানো হলে ফেটে যাওয়ার আশংখা রয়েছে, তাও এই নিয়মে পাক করে নিতে পারেন।) নাপাক কার্পেট বা কাপড় ইত্যাদি যদি প্রবাহিত পানিতে (যেমন, সাগর, নদী অথবা পাইপ বা বদনা ইত্যাদি জলপাত্রের নালীর প্রবাহিত পানির নিচে) এতটুকু সময় পর্যন্ত রেখে দেয় যে, মনে প্রবল ধারণা জন্মে যে, পানি নাপাকীকে বয়ে নিয়ে গেছে, তাহলেও পাক হয়ে যাবে। কার্পেটে বাচ্চা প্রস্রাব করে দিলে, ঐ জায়গায় শুধু পানির ছিটা দিলে তা পাক হবে না। স্মরণ রাখবেন! একদিনের ছেলে শিশু বা মেয়ে শিশুর প্রস্রাবও নাপাক। (বিস্তারিত জানার জন্য বাহারে শরীয়াত ২য় অংশ অধ্যয়ন করুন)
(৬) কা’দায়ে আখিরা (বা শেষ বৈঠক) : অর্থাৎ নামাযের রাকাত সমূহ পূর্ণ করার পর সম্পূর্ণ তাশাহহুদ অর্থাৎ (আততাহিয়াত) পর্যন্ত পড়তে যত সময় লাগে এতক্ষণ পর্যন্ত বসা ফরয। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা) চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে চতুর্থ রাকআতের পর কেউ ভুলে কা’দা করলো না, তাহলে পঞ্চম রাকাতের সিজদা না করা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে যখনই মনে পড়বে তৎক্ষণাৎ বসে যাবে আর যদি পঞ্চম রাকাতের সিজদা করে ফেলে অথবা ফজরের নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে বসলো না তৃতীয় রাকাতের সিজদা করে নিলো কিংবা মাগরিবে তৃতীয় রাকাতে না বসে চতুর্থ রাকাতের সিজদা করে নিলো, তবে এসব অবস্থায় ফরয বাতিল হয়ে যাবে। মাগরিব ব্যতীত অন্যান্য নামাযে আরো এক রাকাত মিলিয়ে নামায শেষ করবেন। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৮৪ পৃষ্ঠা)
(৭) খুরুজে বিসুনইহী: অর্থাৎ কা’দায়ে আখিরাহ এরপর সালাম বা কথাবার্তা ইত্যাদি এমন কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করা যা নামায ভঙ্গ করে দেয়। তবে সালাম ব্যতীত অন্য কোন কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করে নামায শেষ করলে ঐ নামায পুনরায় আদায় করে দেয়া ওয়াজীব। আর যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে এ ধরণের কোন কাজ করা হয় তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ২৮৬ পৃষ্ঠা)
নামাযের প্রায় ৩০টি ওয়াজীব
(১) তাকবীরে তাহরীমার মধ্যে ‘اَللهُ اَكْبَرُ’বলা,
(২) ফরয নামাযের ৩য় ও ৪র্থ রাকাত ব্যতীত অবশিষ্ট সকল নামাযের প্রত্যেক রাকাতে ‘আলহামদু’ শরীফ পাঠ করা ও সূরা মিলানো (অর্থাৎ কুরআনে পাকের একটি বড় আয়াত যা ছোট তিন আয়াতের সমান হয় কিংবা তিনটি ছোট আয়াত পাঠ করা।)
(৩) আলহামদু শরীফ সূরার পূর্বে পাঠ করা
(৪) আলহামদু শরীফ ও সূরার মাঝখানে ‘আমীন’ ও بِسْمِ الله ব্যতীত আর কিছু না পড়া,
(৫) কিরাতের পরপরই রুকূ করা,
(৬) এক সিজদার পর নিয়মানুযায়ী দ্বিতীয় সিজদা করা,
(৭) তা’দীলে আরকান অনুসরণ করা, (অর্থাৎ রুকূ, সিজদা, কওমা ও জালসাতে কমপক্ষে একবার‘سُبْحٰنَ الله’ বলার সময় পরিমাণ স্থির থাকা)
(৮) কওমা অর্থাৎ রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো। (অনেক লোক কোমর সোজা করে না, এভাবে তার একটি ওয়াজীব হাত ছাড়া হয়ে গেলো,
(৯) জালসা অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা (অনেকেই তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে সোজা হয়ে বসার পূর্বেই দ্বিতীয় সিজদার মধ্যে চলে যায়। এভাবে তার ওয়াজীব কাজগুলো ছুটে যায়। যত তাড়াতাড়িই হোক না কেন সোজা হয়ে বসা আবশ্যক নতুবা নামায মাকরূহে তাহরীমী হবে এবং পুনরায় আদায় করা ওয়াজীব হয়ে যাবে।
(১০) কা’দায়ে উলা ওয়াজীব যদিও নফল নামায হয়। (মূলতঃ নফল নামাযের প্রত্যেক দুই রাকাতের পরের কাদা, কাদায়ে আখিরাহ। আর তা করা ফরয) । যদি কেউ কা’দা করলো না এবং ভুল করে দাঁড়িয়ে গেলো তবে যতক্ষণ পর্যন্ত সিজদা না করে স্মরণ আসা মাত্র বসে যাবে এবং সিজদায়ে সাহু করে নেবে। (এতে তার নামায হয়ে যাবে।) (বাহারে শরীয়াত, ৪র্থ অংশ, ৫২ পৃষ্ঠা) যদি কেউ নফলের তৃতীয় রাকাতের সিজদা করে নেয় তবে চার রাকাত পূর্ণ করে সিজদায়ে সাহু করে নেবে। সিজদায়ে সাহু এখানে এজন্য ওয়াজীব যে, যদিও নফল নামায প্রত্যেক দু’রাকাতের পর কা’দা ফরয, কিন্তু তৃতীয় অথবা পঞ্চম (এ নিয়মে যত রাকাত হয়) রাকাতের সিজদা করার পর কা’দায়ে উলা ফরযের পরিবর্তে ওয়াজীব হয়ে গেছে। (তাহতাবী শরীফ, ৪৬৬ পৃষ্ঠা)
(১১) ফরয, বিতর ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার মধ্যে তাশাহহুদ (অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাত) এর পর কিছু না পড়া,
(১২) উভয় কা’দা বা বৈঠকে ‘তাশাহহুদ’পরিপূর্ণভাবে পাঠ করা, যদি একটি শব্দও ছুটে যায় তবে ওয়াজীব তরক হয়ে যাবে, সিজদায়ে সাহু ওয়াজীব হয়ে যাবে,
(১৩) ফরয, বিতর ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার নামাযে কা’দায়ে উলা বা প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর যদি কেউ অন্য মনস্ক হয়ে ভুলে اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّد অথবা اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا বলে ফেলে তবে তার জন্য সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজীব হয়ে যাবে। আর যদি ইচ্ছাকৃত বলে ফেলে তবে তার উপর নামায পুনরায় আদায় করা ওয়াজীব হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ২৬৯ পৃষ্ঠা)
(১৪) উভয়দিকে সালাম ফিরানোর সময় اَلسَّلَامُ শব্দটি উভয়বার বলা ওয়াজীব। عَلَيْكُمْ শব্দটি বলা ওয়াজীব নয় বরং সুন্নাত। (১৫) বিতিরের নামাযে কুনূতের তাকবীর বলা
(১৬) বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করা,
(১৭) দুই ঈদের নামাযে ছয়টি তাকবীর বলা,
(১৮) দুই ঈদের নামাযে দ্বিতীয় রাকাতের রুকূর তাকবীর এবং এই (ঈদের) তাকবীরের জন্য ‘اَللهُ اَكْبَرُ’বলা।
(১৯) জাহেরী (প্রকাশ্য) নামাযে ইমাম উচ্চস্বরে কিরাত পড়া। যেমন মাগরিব ও ইশার নামাযের প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে আর ফজর, জুমা, দুই ঈদ, তারাবীহ ও রমযান শরীফের বিতরের প্রত্যেক রাকাতে ইমাম সাহেব এত উঁচু আওয়াজ সহকারে কিরাত পড়বেন যেন কমপক্ষে তিনজন লোক শুনতে পায়)
(২০) নীরবে কিরাতের নামাযে (যেমন যোহর, আসরে) নীরবে কিরাত পাঠ করা।
(২১) প্রত্যেক ফরয ও ওয়াজীবকে নিজ নিজ স্থানে আদায় করা।
(২২) প্রত্যেক রাকাতে শুধু একবার রুকূ করা,
(২৩) প্রত্যেক রাকাতে দুইবার সিজদা করা,
(২৪) দ্বিতীয় রাকাতের পূর্বে কা’দা (বৈঠক) না করা,
(২৫) চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে তৃতীয় রাকাতে কা’দা বা বৈঠক না করা,
(২৬) সিজদার আয়াত পাঠ করলে তিলাওয়াতে সিজদা করা,
(২৭) সিজদায়ে সাহুও ওয়াজীব হলে শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু আদায় করা,
(২৮) নামাযের ভিতর দু’টি ফরয অথবা দু’টি ওয়াজীব কিংবা ফরয ও ওয়াজিবের মাঝখানে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় (অর্থাৎ তিনবার سُبْحٰنَ الله, বলার সমপরিমাণ) দেরী না করা,
(২৯) ইমাম যখন কিরাত পড়েন চাই উচ্চস্বরে হোক বা নিম্নস্বরে সর্বাবস্থায় মুকতাদীর চুপ থাকা,
(৩০) কিরাত ব্যতীত সকল ওয়াজীব কাজ সমূহে ইমামের অনুসরণ করা। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৭১ পৃষ্ঠা)