যে সহে, সে রহে
জীবনে চলার পথ নিছক সরল-সোজা নয়। নানারকম বাধা-বিপত্তি, দুঃখ-শোক, হতাশা, গ্লানি, ভয়, দারিদ্র্য প্রভৃতি বিরুদ্ধ শক্তি এসে বারবার মানুষের পথ আগলে দাঁড়ায়। এসব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে মানুষকে এ পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়। আর পদে পদে এসব প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়তে মানুষের মধ্যে সবার আগে যে মহৎ গুণটির থাকা প্রয়োজন সেটি হলো সহনশীলতা। পৃথিবীর ইতিহাসে যারা চির স্মরণীয় হয়ে আছে তাদের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তাদের জীবনের অন্যতম মূলমন্ত্র ছিল সহিষ্ণুতা তথা সহনশীলতা।
যুগে যুগে মহামানবেরা তাদের অসীম ধৈর্য শক্তির গুণে সাধারণ মানুষদের কল্যাণের পথে টেনে এনেছেন। এ পথে চলতে গিয়ে তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্নরকম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তারা অসহিষ্ণুতার পরিচয় দেননি। মুহাম্মদ (স.) কিংবা যিশু খ্রীষ্টের জীবন সহনশীলতার অসামান্য নিদর্শন। কেবল মহামানবদের জীবন নয় বরং সাধারণ মানুষের জীবনেও পদে পদে আছে নৈরাশ্যের বেদনা, পরাজয়ের গ্লানি, ব্যর্থতার ক্লান্তি, বিপদের আশঙ্কা। এসবের বিরুদ্ধে প্রতি মুহুর্তে সংগ্রাম করে মানুষকে এ বিশ্ব সংসারে তার অবস্থান তৈরি করে নিতে হয়।
আর এই সংগ্রামের মূল পাথেয় বা শক্তি হচ্ছে ধৈর্য তথা সহনশীলতা। সহনশীল ব্যক্তি পরাজয়, ব্যর্থতা, হতাশা, ক্লান্তি, ভয় প্রভৃতির কাছে কখনোই মাথা নত করে না। উপরন্তু এসবের বিরুদ্ধে ধৈর্য সহকারে সংগ্রাম করে সফলতার পথে এগিয়ে যায়। কেননা সে জানে অধৈর্য হলে এই প্রতিকূল শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে না। একমাত্র সহনশীলতার গুণেই মানুষ কঠিন বাস্তবতার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে সক্ষম হয়। সহনশীলতা বা ধৈর্যের গুণেই স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস বারবার যুদ্ধে পরাজিত হয়েও মাকড়সার জাল বোনা দেখে যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন দেখেন এমনকি যুদ্ধে জয়লাভও করেন। তাই ব্যর্থতাকে ভয় পেলে চলবে না বরং সহিষ্ণুতাকে ধারণ করে আত্মপ্রত্যয় নিয়ে সম্মুখে এগিয়ে যেতে হবে।
শিক্ষা: জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই সহনশীলতা একান্ত প্রয়োজনীয়। জীবনের যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ধৈর্য সহকারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে বড় ধরণের বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। অন্যদিকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সাফল্য অনিবার্য।