অভাবে স্বভাব নষ্ট
পৃথিবীতে চাহিদার তুলনায় সম্পদের পরিমাণ কম বলেই অভাবের তীব্রতা এত প্রকট। সীমিত সম্পদের কারণে অসীম অভাবের অপূর্ণতা মানুষের মনুষ্যত্ব ও স্বভাবের উপর প্রভাব বিস্তার করে। অভাব বলতে শুধু অর্থাভাব নয়, বরং জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণ এর অভাবকেও বোঝায়। যার মধ্যে মূলত অর্থাভাবই প্রধান। মানুষ অর্থাভাবে পড়লে স্বাভাবিক বোধশক্তি কমে যায়, তখন তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ে। প্রায় ক্ষেত্রেই অভাবের তাড়নায় খারাপ সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়। ঋণমুক্তির জন্য অনেক সময় অতিরিক্ত ঋণ করার প্রবণতাও দেখা যায়, যাতে দুর্দশা আরও বাড়ে।
দরিদ্র অবস্থায় অর্থ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যায়। এ সময় বুদ্ধিবৃত্তিও কমে যায়। গরিব বলে কম মেধা রয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। বরং আর্থিক দুশ্চিন্তার সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কিত। পরিমিত অভাব মানুষকে সুখের স্বাদ পেতে সাহায্য করে। অভাব মিটানোর প্রয়োজনে মানুষ অনেক কিছু আবিষ্কার করতেও সক্ষম হয়েছে। অভাবের সুযোগ নিয়ে প্রতারকেরা প্রতারণার ফাঁদ পেতে রাখে সর্বত্র। মানুষ যেমনি অভাবের তাড়নায় ঘৃণিত পথে পা বাড়ায়। তেমনি সমাজে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থার কারণে কিছু বিলাসী মানুষের অপ্রয়োজনীয় বিত্তপ্রদর্শন অভাবী মানুষের মাঝে লোভ-লালসা ও হতাশার সৃষ্টি করে। যা থেকে সমাজে চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, মারামারি এমনকি খুন-খারাবি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অভাবের সময় ধৈর্যধারণ করে ক্রমাগত চেষ্টা করার মধ্যেই সফলতা রয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের অন্য কোনো পথ নেই। তাইতো মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।’
শিক্ষা: যখন মনুষ্যত্ব জেগে ওঠে তখন অভাব আর স্বভাবের সম্পর্ক একরৈখিক থাকে না। অভাবের সময় ধৈর্যধারণ করার চেয়ে মহৎ কাজ আর কিছু নেই, ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে ধ্বংস অনিবার্য।