ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রী সহবাসের কতিপয় নিয়ম
আল্লাহ তাআলা বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের যৌন সম্ভোগ তথা বংশ বৃদ্ধিকে কল্যাণের কাজে পরিণত করেছেন। বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রীর যাবতীয় বৈধ কার্যক্রম হয়ে ওঠে কল্যাণ ও ছাওয়াবের কাজ। বংশবৃদ্ধির একমাত্র মাধ্যমে হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস। এর রয়েছে কিছু নিয়ম-নীতি ও দোয়া। জাগো নিউজের পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
দোয়টি এই- بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে, তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখ।
ফজিলত : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আপন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন উক্ত দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয়। এ মিলনে যদি তাদের কিসমতে কোনো সন্তান আসে, সে সন্তানকে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)।
স্ত্রীর সাথে সহবাসের একান্ত জরুরি ১৫টি শরয়ি কথা!
স্বামী-স্ত্রী মিলনের আগে দোয়া পড়বেন কেন?
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ যদি স্ত্রী সহবাসের মনোবাসনায় বলে— بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا; তাহলে তাদের ভাগ্যে যে সন্তান নির্ধারণ করা হয়, শয়তান কখনো তার ক্ষতি করবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৮৮; মুসলিম, হাদিস : ১৪৩৪)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘শয়তান তার ক্ষতি করবে না, এবং তার ওপর প্রভাব বিস্তার করতেও দেওয়া হবে না।’(বুখারি, হাদিস : ৩২৮৩)
এসব বর্ণনা প্রমাণ করে যে, সহবাসের সময় এ দোয়াটি পড়া সুন্নত। তাই যারা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস মিলিত হবেন, তারা ওই সময়ে দোয়াটা পড়ে নেওয়া উত্তম। এতে আল্লাহ তাআলা অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবেন।
হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি সহবাসের ইচ্ছা করে, তার নিয়্যাত যেন এমন হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবো। আমার মন এদিক ওদিক ছুটে বেড়াবে না আর জন্ম নেবে নেককার ও সৎ সন্তান। এই নিয়্যাতে সহবাস করলে তাতে সওয়াব তো হবেই সঙ্গে সঙ্গে নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হয়। স্ত্রী সহবাসের রয়েছে কতিপয় নিয়ম-
০১. স্বামী-স্ত্রী উভয়ই পাক পবিত্র থাকবে।
০২. বিসমিল্লাহ বলে সহবাস শুরু করা মুস্তাহাব। ভুলে গেলে যদি বীর্যপাতের পূর্বে স্মরণ হয় তাহলে মনে মনে পড়ে নিতে হবে।
০৩. সহবাসের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা। যা আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত।
০৪. সব ধরনের দুর্গন্ধ জাতীয় জিনিস পরিহার করা। উল্লেখ্য যে, ধূমপান কিংবা অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। আর এতে কামভাব কমে যায়। আগ্রহের স্থান দখল করে নেয় বিতৃষ্ণা।
০৫. কেবলামুখি হয়ে সহবাস না করা।
০৬. একেবারে উলঙ্গ না হওয়া।
০৭. স্ত্রীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দান করার পূর্বে বিচ্ছিন্ন না হওয়া।
০৮. বীর্যপাতের সময় মনে মনে নির্ধারিত দোয়া পড়া। কেন না যদি সে সহবাসে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে সন্তান শয়তানের প্রভাব মুক্ত থাকবে।
০৯. স্ত্রীর হায়েজ-নেফাসের (ঋতুকালীন) সময় সহবাস না করা।
১০. চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে মিলিত না হওয়া।
১১. স্ত্রীর জরায়ুর দিকে চেয়ে সহবাস না করা।
১২. বিদেশে বা সফরে যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রী সহবাস না করা।
১৩. সহবাসের সময় স্ত্রীর সহিত বেশি কথা না বলা।
১৪. জোহরের নামাজের পরে স্ত্রী সহবাস না করা।
১৫. ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস না করা।
১৬. উল্টাভাবে স্ত্রী সহবাস না করা।
১৭. স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস না করা।
১৮. রাত্রি দ্বি-প্রহরের আগে সহবাস করবে না।