সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য - Sontaner Proti Pita Matar Kortobbo
পিতার উপর ছেলের কিরূপ হক রয়েছে, যদি থাকে আর তিনি আদায় না করলে তবে তাঁর জন্য শরয়ী বিধান কি?
সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য --
🔺(১) 🖋মাসআলা:
সুরুন, জিলা ই’টা মহল্লা, দেশ যাদগান, প্রশ্ন প্রেরণকারী: মির্জা হামেদ হাসান সাহেব, ৭ জুমাদিউল উলা, ১৩৪০ হিঃ। ওলামায়ে দ্বীনরা কি বলেন এই মাসআলা সম্পর্কে যে, পিতার উপর ছেলের কিরূপ হক রয়েছে, যদি থাকে আর তিনি আদায় না করলে তবে তাঁর জন্য শরয়ী বিধান কি? বিস্তারিত বর্ণনা করুন, সাওয়াব লাভ করুন
উত্তর: আল্লাহ পাক যদিও পিতার হক ছেলের
🔺(২) উপর অনেক মহান বলেছেন, এমনকি নিজের হকের সাথে উল্লেখ করেছেন,
اَنِ ا شْكُرْ لِىْ وَ لِوَ ا لِدَ يْكَ
(পারা ২১,সূরা লোকমান ,আয়াত ১৪)
◾কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো আমার এবং আপন মাতা পিতার।
টিকা —————————————
🔺১. অনেক বুযুর্গ এই রিসালার নাম "مَشْعَلَةُ ا لْاِ رْ شَا دِ فِىْ حُقُوْ قِ ا لْاَ وْ لَا دَ"ও উল্লেখ করেছেন।
🔺২. যেমনটি প্রশ্ন দ্বারা বুজা যায় যে, প্রশ্নকারী পিতার উপর ছেলের হক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, যার উত্তরে হক বর্ণনা করার সময় আলা হযরত"رَ حْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ "“ছেলে”"শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যাতে ছেলে ও মেয়ে উভয়ই অন্তভুর্ক্ত (লিসানুল আরবী, ২য় খন্ড, ৪৩৫৩ পৃষ্ঠা)
—————————————————
এই জন্যই, ছেলে এবং মেয়ের হক প্রায় একই, শুধুমাত্র কিছু ব্যতীত, যার বিস্তারিত বর্ণনা আলা হযরত رَ حْمَةُ الله عَلَيْهِবর্ণনা করে দিয়েছে। কিন্তু ছেলের হকও পিতার উপর মহান রাখা হয়েছে যেন ছেলে সাধারনত ইসলাম, অতঃপর বিশেষ পরিচিত, অতঃপর নৈকট্য, অতঃপর বিশেষ পরিজন, এইসব হকের সমষ্টি হয়ে সবচেয়ে বেশি বিশেষত্বের মর্যাদা রাখে
🔺(১) এবং যেভাবে বিশেষত্ব বৃদ্ধি পাবে হকও সেইভাবে অধিকতর দৃঢ় ও মজবুত হতে থাকে। ওলামায়ে কিরামগণ আপন শানদার কিতাব যেমন; “ইহইয়াউল উলুম” ও “আইনুল উলুম” ও “মদখল” ও “কিমিয়ায়ে সাআদাত” ও “যাখিরাতুল মুলুক” ইত্যাদিতে ছেলের হক সম্পর্কে খুবই কম আলোচনা করেছেন, কিন্তু আমি শুধু হুযুর পুরনুর (ﷺ)
🔺(২) এর মরফু হাদীসের দিকেই দৃষ্টি প্রদান করছি। আল্লাহ পাকের দয়ায় আশা করছি যে, ফকিরের
(আলা হযরত) رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ এই কয়েকটি শব্দ লিখন এমন পরিপূর্ণ ও উপকারী সাব্যস্ত হবে যে, এর তুলনা বড় বড় কিতাবে পাওয়া যাবে না, এই ব্যাপারে যেরূপ হাদীস আল্লাহ পাকের অনুগ্রহে এখন আমার স্মরণে ও দৃষ্টিতে রয়েছে তা যদি বিস্তারিতভাবে উদ্ধৃতি সহকারে লিখা হয় তবে একটি পুস্তিকা হয়ে যাবে আর উদ্দেশ্য যেহেতু শুধু শরয়ী আহকাম অবগত হওয়া, সেহেতু এখন শুধু ঐ হকের ব্যাপারে সংক্ষিপ্তভাবে হাদীসের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করছি। وباللهالتوفيق
টিকা —————————————
🔺১. ছেলে ও মেয়ে সাধারনত মুসলমান হওয়া, অতঃপর বিশেষ প্রতিবেশি হওয়া, অতঃপর নিকটাত্মিয় হওয়া এবং বিশেষ করে তারই পরিবারে হওয়ার কারণে পিতার সবচেয়ে বেশি বিশেষ মনযোগের অধিকারী হয়। 🔺২.হাদীসে মরফু:هو ما ينتهي إ لى ا لنبى صلى الله عليه و على ا له و صحبه و سلم غا ية ا لإ سناد অর্থাৎ
“ঐ হাদীস যার সনদ নবী করিমصَلَّى ا للهُ عَلَيْه وَ اٰ لِهِ وَ سَلَّم পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাকে মরফু হাদীস বলে।”
(নুযহাতুন নযর, ১০৪ পৃষ্ঠা)
————————————————
(১) সর্বপ্রথম হক হলো, সন্তানের জন্মেরও পূর্ব থেকে যে, বান্দা যেনো নিজের বিবাহ কোন নিচু বংশ থেকে না করে, কেননা খারাপ বংশ অবশ্যই (খারাপ) প্রভাব বিস্তার করে।
(২) দ্বীনদার বংশ থেকে বিবাহ করা, কেননা সন্তানের উপর নানা ও মামাদের অভ্যাস ও কাযার্বলীও প্রভাব বিস্তার করে।
(৩) সহবাসের পূর্বে بِسْمِ الله বলা, অন্যথায় সন্তানের মাঝে শয়তান অংশগ্রহণ করে নেয় (১)।
টিকা —————————————
১. হযরত ইবনে আব্বাসرَ ضِىَ اللهُ عَنْهُمَا থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; নবী করীম রউফুর রহীমصَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ اٰ لِهِ وَ سَلَّم,َইরশাদ করেন: “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ নিজের স্ত্রীর সাথে সহবাসের ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন এই দোয়া পাঠ করবে
:بِسْمِ اللهِ اللّٰـهُمَّ جَنِّبْنَا اشَّيْطَا نَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَنَ مَا رَ زَ قْتَنَا
অর্থাৎ “আল্লাহ পাকের নামে, হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তান থেকে নিরাপদ রাখো এবং যে (সন্তান) তুমি আমাদের দিবে তাকেও শয়তান থেকে নিরাপদ রাখো।” তবে যদি এই সহবাসে তাদের ভাগ্যে সন্তান হয় তবে তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (সহীহ বুখারী, কিতাবুদ দাওয়াত, ৪র্থ খন্ড, ২১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৬৩৮৮) -
এই হাদীসে মুবারাকার ব্যাখ্যায় হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী رَ حْمَةُ اللهِ عَلَيْه বলেন: “এই দোয়া সতর খোলার পূর্বে পড়ুন।” অতঃপর বলেন: “এই সহবাসে না শয়তান অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং না সন্তানকে শয়তান প্রতারিত করতে পারবে,بِسْمِ الله
অর্থ হলো সম্পূর্ণ بِسْمِ اللهِ الرَّ حْمٰنِ الرَّ حِيْم
মনে রাখবেন, যেমনিভাবে শয়তান খাওয়া দাওয়া ইত্যাদিতে আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করে তেমনি সহবাসেও, আর যেমনিভাবে পানাহারের বরকত শয়তানের অংশগ্রহনে চলে যায় তেমনি সহবাসে শয়তানের অংশগ্রহনে সন্তান অনুপযুক্ত এবং জ্বীনে ধরা রোগে আক্রান্ত থাকে এবং যেমনিভাবে بِسْمِ الله পাঠ করাতে শয়তান পানাহারে আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করতে পারে না তেমনিভাবে بِسْمِ الله এর বরকতে সহবাসে শয়তান অংশগ্রহণ করতে পারে না, যার ফলে সন্তান নেককার হয় এবং জ্বীনে ধরা রোগ থেকেও আল্লাহ পাকের দয়ায় নিরাপদ থাকে, উত্তম হলো, স্বামী স্ত্রী উভয়ে পাঠ করে নেয়া।”
(মিরাতুল মানাজিহ, ৪র্থ খন্ড, ৩০-৩১ পৃষ্ঠা)
—————————————————
৫) সেই সময় মহিলার বিশেষ অঙ্গের দিকে দৃষ্টি না দেয়া, কেননা সন্তান অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(৬) বেশি কথা না বলা, কেননা বোবা বা তোৎলা হওয়ার আশংকা রয়েছে।
(৭) নারী পুরুষ কাপড় ঝড়িয়ে নিন, পশুদের ন্যায় উলঙ্গ থাকবেন না, কেননা সন্তানের নির্লজ্জ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(৮) যখন সন্তানের জন্ম হয়, দ্রুত ডান কানে আযান, বাম কানে তাকবীর বলুন 🔺(১) যেনো শয়তানের কুমন্ত্রণা ও “উম্মুস সিবয়ান”🔺(২) থেকে বেঁচে থাকে।
(৯) শুকনো খেজুর প্রভৃতি কোন মিষ্ট বস্তু চিবিয়ে তার মুখে দিন, কেননা তা মিষ্ট (ভাষী), চরিত্র উত্তম হওয়ার জন্য সৎ ফাল (সহায়ক হবে)।
(১০) সপ্তমদিন আর সম্ভব না হলে তবে চৌদ্দতম অন্যথায় একুশতম দিন আকীকা করুন, মেয়ের জন্য একটি, ছেলের জন্য দু’টি, কেননা এটি সন্তানকে বন্ধক থেকে মুক্ত করা🔺(৩)।
টিকা —————————————
১. উত্তম হলো, ডান কানে চারবার আযান এবং বাম কানে তিনবার ইকামত বলা। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ১৫৩ পৃষ্ঠা)২. উম্মুস সিবয়ান: “এক প্রকার মৃগী রোগ, যা অধিকাংশ শিশুর কফের আধিক্য এবং পাকস্থলীর সমস্যার কারণে হয়ে থাকে, যার কারণে শিশুর হাত পা বাঁকা হয়ে যায় এবং মুখ থেকে ফেনা বের হতে থাকে।” (ফারহাঙ্গে আসফিয়া, ১ম খন্ড, ২২১ পৃষ্ঠা)৩. সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা মুফতী আমজাদ আলী আযমী"رَ حْمَةُ اللهِ عَلَيْهِবাহারে শরীয়াত” এ বলেন: “বন্ধক হওয়ার উদ্দেশ্য হলো যে, এর (সন্তান) থেকে পরিপূর্ণ লাভ অর্জিত হবে যতক্ষণ পর্যন্ত আকীকা করা হবে না এবং অনেকে বলেন: শিশুর নিরাপত্তা এবং এর শারীরিক বৃদ্ধি ও তার মাঝে ভাল গুণাবলী হওয়া আকীকার সাথে সম্পৃক্ত।” তিনি আরো বলেন: “ছেলের আকীকায় দু’টি ছাগল এবং মেয়ের আকীকায় একটি ছাগল জবাই করুন অর্থাৎ ছেলের বেলায় নর পশু এবং মেয়ের বেলায় মাদী পশুই মানানসই এবং ছেলের আকীকার মাদী ছাগল এবং মেয়ের আকীকায় নর ছাগল জবাই করলেও সমস্যা নাই আর আকীকায় গরু জবাই করা হলে তবে ছেলের জন্য দুই অংশ এবং মেয়ের জন্য এক অংশই যথেষ্ট, অর্থাৎ সাত অংশের মধ্যে দুই অংশ বা এক অংশ।” তাছাড়া এতে আরো রয়েছে: “ছেলের আকীকায় দু’টি ছাগলের স্থালে কেউ একটি ছাগল জবাই করলো তবুও জায়িয।”
(বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ১৫তম অংশ, ১৫৪-১৫৫ পৃষ্ঠা)
বিঃদ্রঃ- আরো বিস্তারিত জানার জন্য আমীরে আহলে সুন্নাত এর পুস্তিকা “আকীকা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর” অধ্যয়ন করুন।
—————————————————
(১১) একটি (ছাগলের) পা ধাত্রিকে দিন, কেননা তা সন্তানের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ।
(১২) মাথার চুল মুন্ডন করান।
(১৩) চুলের সমপরিমাণ রূপা ওজন করে দান করে দিন। (১৪) মাথায় জাফরান লাগান।
(১৫) নাম রাখুন, এমনকি অপরিপক্ক শিশুরও, যা অল্প সময়ে পড়ে যায়, অন্যথায় আল্লাহ পাকের নিকট অভিযোগ করবে।
(১৬) মন্দ নাম রাখবেন না, কেননা মন্দ ফাল মন্দই হয়।
(১৭) আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান, আহমদ, হামিদ ইত্যাদি ইবাদত ও হামদের নাম🔺(১) বা আম্বিয়া, আউলিয়া অথবা নিজের বয়োবৃদ্ধদের যারা নেককার ছিলো তাদের নামে নাম রাখুন, কেননা তা বরকতের মাধ্যম, বিশেষকরে নামে পাক “মুহাম্মদ”এই নাম মুবারকের অফুরন্ত বরকত শিশুর দুনিয়া ও আখিরাতে কাজে আসবে🔺(২)।
টিকা —————————————
১. অর্থাৎ যেসকল নামে বান্দার সম্পর্ক আল্লাহ পাক বা তাঁর গুণবাচক নামের দিকে হয় বা যে নামে হামদের অর্থ থাকে।
২. মুহাম্মদ নামের বরকত:
(১) হযরত আবু উমামা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুর (ﷺ) বলেন,
، من و لد له مولود ذكر فسماه مُحَمّد ا حبالي وتبركاً باسمي كان هو و مولوده في الجنة .
“যার ছেলে সন্তান জন্ম হয় এবং সে আমার ভালবাসায় ও আমার নামে পাকের বরকত লাভের জন্য তার নাম মুহাম্মদ রাখে, তবে সে এবং তার রসন্তান উভয়েই জান্নাতে যাবে।”
(কানযুল উম্মাল, কিতাবুন নিকাহ, ৮ম খন্ড, ১৬তম অংশ, ১৭৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৪৫২১৫)
(২) হযরত আনাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিত,রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: কিয়ামতের দিন দুইজন ব্যক্তিকে আল্লাহ পাকের সামনে দাঁড় করানো হবে, আদেশ হবে; এদের জান্নাতে নিয়ে যাও, আরয করবে: ইলাহী! আমরা কোন আমলের বিনিময়ে জান্নাতের উপযুক্ত হলাম, আমরা তো জান্নাতে যাওয়ার মতো এমন কোন কাজ করিনি? আল্লাহ পাক ইরশাদ করবেন: জান্নাতে যাও, আমি শপথ করেছি যে, যার নাম আহমদ বা মুহাম্মদ হবে সে দোযখে যাবে না। (মুসনাদে ফিরদাউস লিদ দায়লামী, ২য় খন্ড, ৫০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৮৫১৫)
(৩) হযরত আলী رضي الله عنه থেকে বর্ণিত,প্রিয় নবী (ﷺ) ََইরশাদ করেন: ـ ما من مائده وضعت فحضر عليها اسمه أحمد أو محمد إ لّا قدّ س ذ لك ا لمنز ل كلّ يو م مر تين অর্থাৎ “যেই দস্তরখানায় কেউ আহমদ বা মুহাম্মদ নামে থাকলে, তবে সেই স্থানে প্রতিদিন দুইবার বরকত অবতীর্ণ করা হবে।” (মুসনাদিল ফিরদাউস লিদ দায়লামী, ২য় খন্ড, ৩২৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৫২৫) বিঃদ্রঃ- মুহাম্মদ নাম রাখার আরো ফযীলত ও বরকত “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া” ২৪তম কণ্ড, ৬৮৬ পৃষ্ঠা এবং “বাহারে শরীয়াত” ৩য় খন্ড, ১৬তম অংশ, ২১০-২১১ পৃষ্ঠায় দেখুন।
—————————————————
(১৮) যখন মুহাম্মদ নাম রাখবে তবে এর সম্মান ও আদব করবেন।
(১৯) মজলিশে তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিবেন।
(২০) মারা ও মন্দ বলাতে সতর্ক থাকবেন।
(২১) যা চাইবে ভালভাবে দিবেন।
(২২) আদর করে ছোট উপাধী ও গুরুত্বহীন কোন নাম রাখবেন না, কেননা রেখে দেয়া নাম সহজে ভোলা যায় না।
(২৩) মা হোক বা নেককার ধাত্রী, নামাযী, ভদ্র, ভাল বংশ থেকে দুই বছর পর্যন্ত দুধ পান করান।
(২৪) মন্দ কর্ম সম্পাদনকারীনি মহিলার দুধ পান করানো থেকে বাঁচান, কেননা দুধ স্বভাবকে পরিবর্তন করে দেয়।
(২৫) শিশুর খাবার, পানীয়, কাপড় ইত্যাদির ব্যয় এবং তার চাহিদার সকল সরঞ্জাম প্রদান করা স্বয়ং ওয়াজিব, যাতে নিরাপত্তাও অন্তভুর্ক্ত।
(২৬) শরয়ী ওয়াজিব সমূহ আদায়ের🔺(১) পর যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে তা থেকে নিকটাত্মীয়, অভাবী, গরীবদের মধ্যে সর্বপ্রথম হক হলো পরিবার পরিজনদের, যা এরপরও অবশিষ্ট থাকবে তা অন্যান্যদের।
(২৭) সন্তানদের হালাল উপার্জন থেকে হালাল খাবার দিন, কেননা হারাম সম্পদ হারাম স্বভাবই নিয়ে আসবে। (২৮) সন্তানদের রেখে একা খাবেন না বরং নিজের চাহিদাকে তাদের চাহিদার অধীন রাখুন, যে ভাল খাবার তাদের মন চায় তা তাদের দিয়ে তাদের সদকায় আপনিও খান, বেশি না হলে শুধু তাদেরকেই খাওয়ান।
(২৯) আল্লাহ পাকের এই আমানত সমূহের সাথে স্নেহ ও ভালবাসা পূর্ণ আচরণ করুন, তাদের আদর করুন, বুকের সাথে জড়িয়ে ধরুন, কাঁধে চড়ান।
(৩০) তাদের সাথে হাসির, খেলার কথাবার্তা বলুন, তাদের মন খুশি, সান্তনা, সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা সর্বদা এমনকি নামায ও খুতবায়ও লক্ষ্য রাখুন।
(৩১) নতুন ফল-ফলাদি প্রথমে তাদেরকেই দিন, কেননা তারাও কিন্তু নতুন ফল, নতুনকে নতুনই মানায়। ১. নিজের প্রয়োজনীয় এবং পবিত্র শরীয়াতের নির্ধারিত ওয়াজিব সমূহ আদায়। যেমন; যাকাত, ফিতরা এবং কুরবানী ইত্যাদি।
(৩২) কখনো কখনো সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের শিরনি ইত্যাদি খাওয়ান, পরিধান করার এবং খেলার ভাল জিনিস (যা) শরয়ীভাবে জায়িয, তা দিতে থাকুন।
(৩৩) চিত্ত বিনোদনের জন্য মিথ্যা ওয়াদা করবেন না, বরং শিশুদের সাথেও সেই ওয়াদা জায়িয, যা পূরণ করার ইচ্ছা থাকে।
(৩৪) নিজের কয়েকজন সন্তান হলে তবে যা কিছুই দিবেন সবাইকে সমানভাবে দিন, একজনকে আরেকজনের চেয়ে বেশি দ্বীনি মযার্দা ছাড়া প্রাধান্য দিবেন না।🔺(১)
(৩৫) সফর থেকে আসার সময় তাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে আসুন।
(৩৬) অসুস্থ হলে চিকিৎসা করান।
(৩৭) যথাসম্ভব মারাত্মক ও কষ্টদায়ক চিকিৎসা থেকে বাঁচান।
(৩৮) কথা শিখতেই""الله الله " অতঃপর পুরো বাক্য "لا إله الا الله " অতঃপর সম্পূর্ণ কলেমা শিখান।
টিকা —————————————
১. “ফতোওয়ায়ে কাযী খাঁন” এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইমাম আবু হানিফা "رَ حْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ “সন্তানদের মধ্যে কোন একজনকে বেশি দেয়াতে কোন সমস্যা নাই, যদি তাকে অন্য সন্তানদের চেয়ে প্রাধান্য ও ফযীলত দেয়াটা দ্বীনি কারণে হয়, কিন্তু যদি সবাই সমান হয় তবে প্রাধান্য দেয়া মাকরূহ।” (আল খানিয়া, কিতাবুল হেবা, ২য় খন্ড, ২৯০ পৃষ্ঠা)
"ফতোয়ায়ে আলমগীরি"তে রয়েছে:"لو كا ن الولد مشتغلا با لعلم لا با لكسب فلا بأ س بأ ن অর্থাৎ যদি ছেলে দুনিয়াবী উপার্জনে লিপ্ত না হয়ে জ্ঞানার্জনে লিপ্ত হয়, তবে এরূপ ছেলেকে অন্য সন্তানদের মাঝে প্রাধান্য দেয়াতে কোন সমস্যা নাই।”
(ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া, কিতাবুস সাদিস, ৪র্থ খন্ড, ৩৯১ পৃষ্ঠা)
—————————————————
(৩৯) যখন বুঝতে শিখবে তখন আদব শিখান, খাওয়ার, পান করার, পরিধান করার, হাসার, বলার, উঠার, বসার, চলার, লজ্জার, বুযুর্গদের সম্মানের শিক্ষা, পিতামাতার, শিক্ষকের এবং মেয়েকে স্বামীর আনুগত্যেরও পদ্ধতি শিখান।
(৪০) কোরআন মজীদ পাঠ করান।
(৪১) (ছেলেদের) নেককার, পরহেযগার, মুত্তাকী, বিশুদ্ধ আক্বীদা সম্পন্ন, বয়োবৃদ্ধ ওস্তাদের নিকট সমর্পণ করে দিন এবং মেয়েদের নেককার, পরহেযগার মহিলার নিকট পড়ান।
(৪২) কোরআন খতম করার পর সর্বদা তিলাওয়াতের গুরুত্ব প্রদান করতে থাকুন।
(৪৩) ইসলামী আক্বীদা ও সুন্নাত শিখান, কেননা শিশুদের সাধারণত দ্বীনে ইসলাম ও সত্য বিষয় গ্রহণ করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে, এই সময়ের শিখানো পাথরের রেখা হিসাবে কাজ করবে।
(৪৪) প্রিয় নবী, রাসূলে পাক (ﷺ) এর ভালবাসা ও সম্মান তাদের মনে ঢুকিয়ে দিন, কেননা নবী প্রেমই তো মূল ঈমান।
(৪৫) প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা(ﷺ) এর পরিবার ও সাহাবা এবং আউলিয়া ও ওলামাদের ভালবাসা ও মহত্ব শিক্ষা দিন, কেননা তা হলো মূল সুন্নাত ও ঈমানের সৌন্দর্য্য বরং ঈমানের নিরাপত্তা ও টিকে থাকার মাধ্যম।
(৪৬) সাত বছর বয়স হতেই নামাযের জন্য মৌখিকভাবে গুরুত্ব দেয়া শুরু করুন।
(৪৭) ইলমে দ্বীন বিশেষ করে অযু, গোসল, নামায, রোযার মাসআলা,
- তাওয়াক্কুল➡(১),
- অল্পে তুষ্টি➡(২),
- পরহেযগারীতা➡(৩) ,
- একনিষ্টতা➡(৪),
- নম্রতা➡(৫),
- আমানতদারীতা➡(৬),
- সত্যবাদীতা➡(৭)
- ন্যায় পরায়নতা ➡(৮),
- লজ্জা➡(৯),
- মুখ ও অন্তরের নিরাপত্তা ইত্যাদি গুণাবলীর ফযীলত পড়ান তাছাড়া লোভ ও লালসা➡(১০),
- দুনিয়ার ভালবাসা, খ্যাতির বাসনা➡(১১),
- রিয়া➡(১২),
- দম্ভ➡(১৩)
- অহঙ্কার➡(১৪),
- খেয়ানত➡(১৫),
- মিথ্যা➡(১৬),
- অত্যাচার➡(১৭),
- অশ্লিল কথা➡(১৮) ,
- গীবত➡(১৯),
- হিংসা➡(২০) ,
- বিদ্ধেষ➡(২১)
ইত্যাদি মন্দকাজের গুনাহ সমূহ পড়ান।
টিকা —————————————
১.তাওয়াক্কুলের সংজ্ঞা :
প্রয়োজনীয় মাধ্যম অবলম্বন করাতে নবী করীম (صلى الله عليه واله وسلم) এর অনুসরন করে আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখা এবং এই বিষয়ে বিশ্বাস রাখা যে, যা কিছু নিয়তিতে রয়েছে তা হবেই।” (আল কামোসুন ফিকহিয়্যা, ১৪তম খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা)
২. অল্পেতুষ্টির সংজ্ঞা:
هي السكون عن عدم المألوفات” অর্থাৎ “দৈনন্দিন ব্যবহার্য বস্তু না হওয়াতেও সন্তুষ্ট থাকাই অল্পেতুষ্টি।” (আত তারিফাত লিল জুরজানি, ১২৬ পৃষ্ঠা)
৩.পরহেজগারিতার সংজ্ঞা:
“কোন জিনিসকে ছেড়ে দিয়ে এমন কোন পরকালিন জিনিসের প্রতি ধাবিত হওয়া, যা এর চেয়েও উত্তম।” (ইহইয়াউল উলুম, কিতাবুল ফিকির ওয়ায যুহুদ, ৪র্থ খন্ড, ২৬৭ পৃষ্ঠা)
৪. ”الإخلاص أن يقصد بالعمل وجهه ورضاه فقط دون غرض آخر“র্থ: অ) একনিষ্টতার অর্থাৎ “একনিষ্ট হলো, বান্দা নেক আমল শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি এবং খুশির জন্যই করা।” (মিরকাতুল মাফাতিহ, কিতাবুল ইলম, ১ম খন্ড, ৪৮৬ পৃষ্ঠা)
৫. নম্রতার সংজ্ঞা:
" الضعة خاطر في وضع النفس واحتقارها والتواضع اتباعه “ “অর্থাৎ “নিজেকে নগন্য এবং নিকৃষ্ট মনে করাকে নম্রতা বলা হয়।” (মিনহাজুল আবেদীন, আল ফসলুর রাবেয়ে, ৮১ পৃষ্ঠা)
৬. গচ্ছিত রাখা ও আমানতের সংজ্ঞা এবং এর পার্থক্য:
জিনিস স্ব-ইচ্ছায় অন্য কোন ব্যক্তির নিরাপত্তায় দেয়ার নাম হলো “গচ্ছিত রাখা” আর কোন জিনিস এমন, যা কারো নিরাপত্তায় এসে গেলো, যদিও তা ইচ্ছাকৃত নাও হয়, তবে একে “আমানত” বলা হয়।”(আত তারিফাত, ১৭৫ পৃষ্ঠা)
বিঃদ্রঃ- আমানত ও গচ্ছিত রাখাতে বিশেষ ও সাধারণের একান্ত সম্পর্ক রয়েছে যে, প্রত্যেক গচ্ছিত বস্তু হলো আমানত কিন্তু প্রত্যেক আমানত গচ্ছিত নয়। (আদ দার, ৮ম খন্ড, ৫২৬ পৃষ্ঠা)
৭. সত্যবাদীতার সংজ্ঞা:
" الصدق في اللغة مطابقة الحكم للواقع " “” অর্থাৎ “আভিধানিক ভাবে বক্তার কথা বাস্তবতা অনুযায়ী হওয়াকেই সত্যবাদীতা বলা হয়।” (আত তারিফাত লিল জুরজানি, ৯৫ পৃষ্ঠা)
—————————————————
(৮) ন্যায়পরায়ণতার সংজ্ঞা:
“অতিরঞ্জনতা পরিহার করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করাকে ন্যায় পরায়নতা বলা হয়, এবং এটাও বলা হয়েছে যে, আদল হলো মূল শব্দ, যার অর্থ হলো আদালত, সুতরাং আদল আসলে “মধ্যপন্থা ও অধ্যবসায়” অর্থাৎ সত্যের দিকে ধাবিত হওয়াকে আদল তথা ন্যায়পরায়ণতা বলা হয়।” (আত তারিফাত লিল জারজুনি, ১০৬ পৃষ্ঠা)
(৯) লজ্জার সংজ্ঞা:
(ক) الحياء تغير النسار يعتري الانسان من خوف ما يعاب به أويدم অর্থাৎ “কোন কাজ করার সময় ধিক্কার ও নিন্দার ভয়ে মানুষের অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে যাওয়াকে লজ্জা বলা হয়।” (ওমদাতুল ক্বারী, কিতাবুল ঈমান, বাবু ওমুরুল ঈমান, ১ম খন্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা)
(খ) " الحياء خلق يبعث ترك القبيح و يمنع من التقصير في حق ذي الحق " সেই গুণ, যা মন্দ কাজ বর্জন করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়, এবং হকদারের হক আদায়ে উদাসিনতা করতে নিষেধ করে।” (শরহে সহীহ মুসলিম লিল ইমাম নববী, ১ম খন্ড, ৪৭ পৃষ্ঠা)
১০.লোভের সংজ্ঞা:
অর্থাৎ “চাহিদার অতিরিক্ত চাওয়ার নাম লোভ এবং “কামোসুল মুহিত” এ রয়েছে: মন্দ লোভ হলো যে, নিজের অংশ অর্জন করার পরও অন্যের অংশের লালসা রাখা।” (মিরকাতুল মাফাতিহ, কিতাবুর রিকাক, আবুল আমল ওয়াল হিরস, ৯ম খন্ড, ১১৯ পৃষ্ঠা)
১১. খ্যাতির বাসনার সংজ্ঞা:
" أصل الجا ه هو انتشار الصيت والاشتهار “ অর্থাৎ মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি এবং সুনাম চাওয়াই হলো খ্যাতির বাসনা।” (ইহইউল উলুম, কিতাবু যাম্মিল জাহ ওয়ার রিয়া, ৩য় খন্ড, ৩৩৯ পৃষ্ঠা)
১২. রিয়ার সংজ্ঞা:
الرياء ترك الإخلاص في العمل بملاحظة غير الله فيه " অর্থাৎ "একনিষ্ঠতা ছেড়ে দেয়ার নাম হলো “রিয়া”, সুতরাং আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কারো জন্য কোন আমল করা হচ্ছে রিয়া।”(আত তারিফাত লিল জুরজানি, ৮২ পৃষ্ঠা)
১৩.দম্ভ এর সংজ্ঞা:
“আল্লাহ পাকের প্রদত্ত নেয়ামত ও দানকে ভুলে কোন দ্বীনি বা দুনিয়াবী নেয়ামতকে নিজের কৃতিত্ব মনে করা এবং এর পতন সম্পর্কে নির্ভয় হয়ে যাওয়াই হলো দম্ভ।” (ইহইয়াউল উলুম, কিতাবু যাম্মিল কবীর ওয়াল উজব, ৩য় খন্ড, ৪৫৪ পৃষ্ঠা)
—————————————————
১৪. অহঙ্কারের সংজ্ঞা:
i) “الكبر أن يرى الإنسان نفسه اكبر من بره অর্থাৎ “অহঙ্কারের অর্থ হলো, মানুষ নিজেকে অপরের চেয়ে বেশি বড় মনে করা।” (মুফরিদাত ইমাম রাগিব, ৬৯৭ পৃষ্ঠা)
ii) হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْه থেকে বর্ণিত; নবী করীম صلى الله عليه وسلم َইরশাদ করেন: إن الله جميل يحب الجمال “ “যে ব্যক্তির অন্তরে অনু পরিমাণও অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে যেতে পারবে না।” এক ব্যক্তি আরয করলো: এক ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, তার পোষাক উত্তম হোক এবং তার জুতা ভাল হোক।
iii) হুযুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم َইরশাদ করেন: “ ُبر ْالك ِ ” অর্থাৎ “আল্লাহ পাক সুন্দর আর তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন, অহঙ্কার হলো সত্যকে অস্বীকার এবং মানুষকে নিকৃষ্ট মনে করা।” (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, বাবু তাহীমুল কবীর ও বয়ানুহু, ৬০-৬১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৪৭) ّ
১৫. খেয়ানতের সজ্ঞা:
অর্থাৎ “শরীয়তের অনুমতি ব্যতীত কারো আমানত নষ্ট করাই হলো খেয়ানত।” (ওমদাতুল ক্বারী, কিতাবুল ঈমান, বাবু আলামাতিল মুনাফিক, ১ম খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা)
১৬. মিথ্যার সংজ্ঞা:
“للواقع الخبر مطابقة عدم: الكذب” অর্থাৎ “বক্তার কথা প্রকাশ্যের বিপরীত হওয়াই মিথ্যা।” (আত তারিফাত লিল জুরজানি, ১২৯ পৃষ্ঠা) وضع الشـيء فـي غير موضعة، وفـي الشر يعة: عبارة عن التعدي عن الح ّق“
১৭.অত্যাচারের সংজ্ঞা :
الجور وهو، الباطل إلى”
অর্থাৎ “কোন বস্তুকে তার স্থানে না রাখা অত্যাচার এবং শরীয়াতে অত্যাচার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, কারো অধিকার ক্ষুন্য করা বা তার সাথে অতিরঞ্জিত করা।” (আত তারিফাত লিল জুরজানি, ১০২-১০৩ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ, ”هو ما ينفر عنه الطبع السليم و يسতنقصه العقل المستقيم
১৮.“অশ্লিল কথা:
সেই অহেতুক কথা এবং মন্দ কাজ, যা স্বাভাবিক প্রকৃতি ঘৃণা করে এবং বিশুদ্ধ জ্ঞান সম্পন্নরা ত্রুটি ঘোষনা করে।” (আত তারিফাত লিল জুরজানি, ১১৭ পৃষ্ঠা)
১৯. গীবতের সংজ্ঞা:
“গীবতের অর্থ হলো যে, কোন ব্যক্তি গোপন ত্রুটিকে (যা সে অন্যের নিকট প্রকাশ হওয়া পছন্দ করে না) তার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে উল্লেখ করা।” (বাহারে শরীয়াত, ৩য় খন্ড, ১৬তম অংশ, ১৪৯ পষ্ঠা)
২০. হিংসার সংজ্ঞা:
“الحسد إلـى المحسود نعمة زوال تمني” অর্থাৎ “কোন ব্যক্তির নেয়ামত দেখে এই আশা করা যে, এই নেয়ামত তার কাছ থেকে চলে গিয়ে আমার কাছে এসে যাক।” (আত তারিফাত লিল জুরজানি, ৬২ পৃষ্ঠা)
২১.বিদ্ধেষের সংজ্ঞা
(I) :لسان ا لعر ب:إ مسا ك العد ا و ة في القلب والتربُّص لفُر صتها
অর্থাৎ “অন্তরে শত্রুতা পোষণ করা এবং সুযোগ পেতেই তা প্রকাশ করাই হলো বিদ্ধেষ।” (লিসানুল আরব, ১ম খন্ড, ৮৮৮ পৃষ্ঠা)
(II) الحقد:أن يزم قلبه استثقا اله,والبغضةله,والنفا ر عنه,وأن يد وم ذلك و يبقى
অর্থাৎ, “বিদ্ধেষ হলো: মানুষ তার অন্তরে কাউকে বোঝা মনে করা, শত্রুতা ও বিদ্ধেষ পোষণ করা, ঘৃণা করা এবং এই বিষয়টি সর্বদা পোষণ করা।” (ইহইয়াউল উলুম, কিতাবুল যাম্মিল গযবী ওয়াল হকদ ওয়াল হাসদ, ৩য় খন্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা)
—————————————————
(৪৮) পড়ানো ও শিখানোতে বন্ধুত্ব ও নম্রতার প্রতি খেয়াল রাখা।
(৪৯) সময়মত বুঝান এবং উপদেশ দিন কিন্তু বদদোয়া করবেন না, কেননা এই বদদোয়া তার জন্য সংশোধনের মাধ্যম হবে না বরং আরো বেশি বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(৫০) যদি মারতে হয় তবে মুখে মারবেন না।
(৫১) অধিকাংশ সময় ভয় ভীতি প্রদর্শন ও ধমকানো দ্বারা কাজ সম্পাদন করে নিন। বেত তার সামনে রাখুন, যেনো মনে ভয় থাকে।
(৫২) ছাত্র অবস্থায় কিছু সময় খেলার জন্যও দিন, যাতে স্বভাবে উদ্যেম অব্যাহত থাকে।
(৫৩) কখনোই খারাপ সংস্পর্শে বসতে দিবেন না, কেননা খারাপ সংস্পর্শ বিষাক্ত সাপের চেয়েও নিকৃষ্ট।
(৫৪) আর কখনোই রূপক প্রেমের বই এবং অশ্লিল ও গুনাহে ভরা গান গাইতে দিবেন না, কেননা নরম ডাল যেদিকে ঝুঁকাবেন ঝুঁকে যাবে। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, মেয়েদেরকে “সূরা ইউসুফ শরীফ” এর অনুবাদ পড়াবেন না, কেননা এতে মেয়েদের গোপন চাল-চলনের উল্লেখ রয়েছে, অতঃপরঃ শিশুদেরকে কল্পনা সূচক অহেতুক কথাবাতার বিষয়ে ফেলার কোন প্রয়োজন নেই।
(৫৫) যখন দশ বছর বয়সের হবে, তখন মেরে মেরে নামায পড়ান।
(৫৬) এই বয়সে নিজের সাথে এমনকি অন্য কারো সাথেই শুতে দিবেন না, আলাদা বিছানা, আলাদা খাটে নিজের পাশে রাখুন।
(৫৭) যখন যুবক হয়ে যাবে, বিবাহ করিয়ে দিন, বিবাহে বংশ নিবার্চন, দ্বীন, চরিত্র, সৌন্দর্য্যের প্রতি লক্ষ্য রাখুন।🔺(যা হক নম্বর ১ থেকে ৩ এ বর্ণিত হয়েছে)
(৫৮) এখন যদি এমন কাজের কথা বলে, যাতে অবাধ্যতার সম্ভাবনা রয়েছে, তা আদেশের শব্দ দ্বারা বলবেন না বরং বন্ধুসূলভ ও নম্রভাবে পরামর্শ স্বরূপ বলুন, যেনো সে অবাধ্যতার বিপদে না পড়ে।
(৫৯) তাকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবেন না, যেমনটি অনেকে নিজের কোন ওয়ারিশকে পরিত্যাক্ত সম্পত্তি না দেয়ার জন্য সম্পূর্ণ সম্পত্তি অন্য কোন ওয়ারিশকে বা অন্য কারো নামে লিখে দেয়।
(৬০) নিজের ইন্তিকালের পরও তাদের চিন্তা মাথায় রাখুন অর্থাৎ জীবিতাবস্থায় কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তি রেখে যান, এক তৃতীয়াংশ সম্পদের বেশি দান করবেন না। এই ষাটটি তো ছেলে মেয়ে সবার জন্য বরং শেষের
দু’টি হকে (৫৯ ও ৬০ নং) সব ওয়ারিশ অন্তভুর্ক্ত এবং বিশেষ করে ছেলেদের হকের মধ্যে হলো:
(৬১) তাকে লেখা,
(৬২) সাঁতার এবং
(৬৩) আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ দিন।
(৬৪) সূরা মায়েদা শিক্ষা দিন।
(৬৫) ঘোষনা দিয়ে তার খতনা করান।
বিশেষকরে মেয়েদের হকের মধ্যে হলো:
(৬৬) তার জন্মে অসন্তোষ প্রকাশ না করা বরং আল্লাহর নেয়ামত মনে করুন।
(৬৭) তাকে সেলাই ও খাবার রান্না করার কাজ শিখান।
(৬৮) “সূরা নূর” এর শিক্ষা দিন।
(৬৯) লিখা কখনোই শিখাবেন না, কেননা এতে ফ্যাসাদের সম্ভাবনা রয়েছে।🔺(১)
(৭০) ছেলেদের চেয়ে বেশি মনতুষ্টি ও যত্ন করুন, কেননা তাদের মন অনেক ছোট হয়ে থাকে।
(৭১) দেয়ার বেলায় তাদের ও ছেলেদেরকে সমান সমান দিন। (অর্থাৎ, উভয়কে দেয়ার সময় পরিপূর্ণ ন্যায় বিচার করুন)।
(৭২) যা কিছু দেয়ার প্রথমে তাদের দিয়ে তারপর ছেলেদেরকে দিন।
(৭৩) নয় বছর বয়স থেকে (মেয়েদের) না নিজের সাথে রাখবেন, না ভাইদের সাথে ঘুমাতে দিবেন।
—————————————————
১. এই মাসআলার ব্যাখ্যা মুফতী আলে মুস্তফা মিসবাহী সাহেব رَ حْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ “ফতোওয়ায়ে আমজাদীয়া” এর হাশিয়ায় (পাদটীকায়) বলেন: যেখানে বিস্তারিত আলোচনার পর শেষের দিকে বলা হয় যে, “যদি সামাজিক বা বংশীয় বা ব্যক্তিগত অবস্থার পরিপ্রক্ষিতে মেয়েদেরকে লিখা শেখানোতে সাধারনত ফিতনার সম্ভাবনা না হয় তবে তা জায়িয হবে এবং যদি সম্ভাবনা হয় তবে সম্ভাবনা অনুযায়ী মাকরুহের বিধান হবে।” (ফতোওয়ায়ে আমজাদীয়া, ৪র্থ খন্ড, ৬৫৯ পৃষ্ঠা)
(৭৪,৭৫,৭৬) এই বয়স থেকেই বিশেষ নজরদারি শুরু করুন, বিয়ে শাদিতে যেখানে নাচ-গান হয় সেখানে কখনোই যেতে দিবেন না, যদিও নিজের ভাইয়ের সেখানেও হয়, কেননা গান গাওয়া খুবই প্রভাবময় জাদু এবং এই ভঙ্গুর কাঁচকে ভাঙ্গার অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বরং অনুষ্ঠানে যাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিন, ঘরকে তাদের জন্য বন্দিশালার ন্যায় বানিয়ে দিন, ছাদে যেতে দিবেন না।
(৭৭) ঘরে পোশাক ও অলঙ্কার পড়িয়ে রাখুন, যাতে বিবাহের বার্তা, আগ্রহের সহিত আসে।
(৭৮) যদি কুফু মিলে যায়, তবে বিবাহে দেরী করবেন না।🔺(১)
—————————————————
১. কুফু’র মাসআলার বিস্তারিত বর্ণনা করতে গিয়ে সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা মাওলানা মুফতী আমজাদ আলী আযমী رَ حْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ “বাহারে শরীয়াত” এ বলেন: কুফু’র অর্থ হলো, পুরুষ নারী থেকে বংশ ইত্যাদিতে এত কম না হওয়া যে, এর দ্বারা বিবাহ, নারীর অভিভাবকদের জন্য লজ্জা ও অপমানের কারণ হওয়া, সামঞ্জস্যতা শুধু পুরুষের বেলায়ই গ্রহণযোগ্য, মহিলা যদিও কম মর্যাদা সম্পন্ন বা নিচু বংশীয়ও হয়, তা ধর্তব্য নয়।” আরো বলেন: “সামঞ্জস্যতায় ছয়টি বিষয় ধর্তব্য:
(১) বংশ (২) ইসলাম (৩) পেশা (৪) স্বাধীন হওয়া (৫) সততা (৬) সম্পদ।”
(বাহারে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ৭ম অংশ, কুফু’র বর্ণনা, ৪৬ পৃষ্ঠা)
—————————————————
(৭৯) যথাসম্ভব ১২ বছর বয়সে বিবাহ দিন।
(৮০) কখনোই ফাসিক ও গুনাহগার বিশেষ করে বদ মাযহাবীর সাথে বিবাহ দিবে না। এই আশিটি (৮০) হক, যা এই মুহুর্তে দেখছেন মারফু হাদীস থেকে খেয়াল আসলো, এতে অধিকাংশ তো মুস্তাহাব, যা বর্জন করাতে মূলত সমস্যা নাই এবং কিছু বর্জন করাতে আখিরাতে জবাবদিহীতা রয়েছে, কিন্তু দুনিয়ায় ছেলেদের জন্য পিতাকে পাকড়াও করা হবে না,ছেলের জন্য জায়িয নাই যে,পিতার সাথে ঝগড়া করার, শুধুমাত্র কয়েকটি হকের ব্যাপারে শাসকের এই অধিকার রয়েছে যে, ছেলেকে হক প্রদানে পিতাকে বাধ্য করার এবং অনুরূপভাবে ছেলের পিতার বিরুদ্ধে দাবী করার আর অভিযোগ করার হক অর্জিত, যা নিম্নে দেয়া হলো:
প্রথমত: ভরণপোষণ, পিতার উপর ওয়াজিব হওয়া এবং সে না দিলে তবে শাসক দিতে বাধ্য করবে, না মানলে বন্দি করা যাবে, অথচ সন্তানের অন্য কোন হকের বিষয়ে পিতামাতা অবরুদ্ধ হয় না।
في"ردّ المحتار"عن"الذ خير ة":(لا يحبس و الد و إن علا في د ين و لد ه وإن سفل إلّا في لأ نّ فيه أ تلاف الصغير) ➡(১)
(অনুবাদ: “ফতোয়ায়ে শামী” তে “যখিরা” এর উদ্ধৃতিতে উদ্ধৃত করা হয়েছে: পিতাকে তার ছেলের ঋণ এর ব্যাপারে সম্পৃক্ত করা যাবে না, যদি বংশের ধারাবাহিকতা
পিতা থেকে উপরেও চলে যায় এবং পুত্র থেকে নিচেও চলে যায়, তবে ভরণপোষন না দেয়া অবস্থায় পিতাকে বন্দি করা যাবে; কেননা এতে ছোটদের হক ক্ষুন্ন হয়।
🔺১. [রদ্দুল মুহতার, কিতাবুত তালাক, বাবুন নফকাতি, ৫ম খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা]
দ্বিতীয়ত: দুধের সম্পর্ক, মায়ের দুধ না হলে তবে ধাত্রী রাখা, বেতন ছাড়া পাওয়া না গেলে তবে বেতন দেয়া ওয়াজিব, না দিলে তবে জোর করে নেয়া হবে যদি শিশুর নিজের সম্পদ না থাকে, অনুরূপভাবে মা তালাক ও ইদ্দত অতিবাহিত করার পর বেতন ছাড়া দুধ পান না করালে তবে তাকেও বেতন দিতে হবে। (যেমনটি “ফতহুল কাদীর” ও “রদ্দুল মুহতার” ইত্যাদিতে রয়েছে)।➡(২)
🔺২. [রদ্দুল মুহতার, কিতাবুত তালাক, বাবুল হাদানাতি, ৫ম খন্ড, ২৬৭ পৃষ্ঠা]
তৃতীয়ত: প্রতিপালন, ছেলের সাত বছর বয়স, মেয়ের নয় বছর বয়স পর্যন্ত যে সকল মহিলা, যেমন; মা, নানি, দাদি, খালা, ফুফুর নিকট রাখা যাবে, যদি তাদের মধ্যে কেউ বেতন ছাড়া না মানে এবং শিশু ফকির এবং পিতা ধনী হয় তবে জোড় করে বেতন দেয়ানো যাবে। (যেমনটি “রদ্দুল মুহতার” এ এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে)।➡(১)
🔺১. রদ্দুল মুহতার, কিতাবুত তালাক, বাবুন হাদানাতি, ৫ম খন্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা।
চতুর্থত: ছেলেকে সাত এবং মেয়েকে নয় বছর পর নিজের নিরাপত্তায় এবং তত্ত্বাবধানে রাখা পিতার উপর ওয়াজিব। যদি না নেয়, তবে শাসক জোর করতে পারবে। (যেমনটি “শরহিল মুজমাআ” থেকে “রদ্দুল মুহতার” এ উদ্ধৃত করা হয়েছে)।➡(২)
🔺২. রদ্দুল মুহতার, কিতাবুত তালাক, বাবুন নাফকাতি, ৫ম খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা।
পঞ্চমত: তাদের জন্য পৈত্রিক সম্পদ রাখা, কেননা পিতা মৃত্যুশয্যায় এই ব্যাপারে অপারগ হয়ে যায়, এমনকি এক তৃতীয়াংশের থেকে বেশিতে তার ওসীয়ত ওয়ারিশের বিনা অনুমতিতে প্রয়োগ হবে না।➡(৩)
🔺৩. মৃত্যু শয্যায় ওয়ারিশের হক মুরিশ (পিতার) তরকার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়, এবং এই কারণেই পিতা নিজের ধন ও সম্পদ ওয়ারিশদের জন্য রেখে যেতে শরয়ীভাবে অপারগ হয়ে যায়, এমনকি যদি মুরিশ (পিতা) এক তৃতীয়াংশ সম্পদের বেশি ওসীয়ত করে তবে ওয়ারিশের অনুমতি ছাড়া এক তৃতীয়াংশ সম্পদের বেশিতে সেই মুর্শিদ (পিতার) ওসীয়ত গ্রহণযোগ্য হবে না।
ষষ্ঠত: নিজের প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান, ছেলে বা মেয়েকে কুফু ছাড়া বিবাহ দেয়া, বা মিসলে মোহর➡(৪)
অনেক কম বা বেশিতে বিবাহ দেয়া, যেমন; মেয়ের মিসলে মোহর এক হাজার টাকা, পাঁচশত টাকা মোহরে বিবাহ দেয়া, বা বউয়ের মিসলে মোহর পাঁচশত টাকা, এক হাজার টাকা করে নিলো বা ছেলের বিবাহ কোন বাঁদীর সাথে বা মেয়ের বিবাহ এমন কোন ব্যক্তির সাথে যে ধর্ম বা বংশ বা পেশা বা কাজকর্মে বা সম্পদে ত্রুটিপূর্ণ, যার কারণে তার সাথে বিবাহ লজ্জা জনক হয়, একবার তো এরূপ বিবাহ পিতার করানোতে প্রয়োগ হয়ে যাবে যদি নেশায় না থাকে, কিন্তু দ্বিতীয়বার নিজের কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের এরূপ বিবাহ করালে তা মূলত বিশুদ্ধ হবে না। (যেমনটি বিবাহের আলোচনায় আমরা এর পূর্বে বর্ণনা করেছি)।
[ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, কিতাবুত তালাক, বাবুল অলী, ১১তম খন্ড, ৬৭৯ পৃষ্ঠা]
মহিলার বংশে তার মতো মহিলাদের যে মোহর হয় তা তার জন্য “মিসলে মোহর”, যেমন; তার বোন, ফুফু, চাচার মেয়ে ইত্যাদির মোহর। তার মায়ের মোহর তার জন্য মিসলে মোহর নয়, যদি সে অন্য বংশীয় হয়, আর যদি সে এই বংশীয় হয়, যেমন; তার বাবার চাচাতো বোন তবে তার মোহরও তার জন্য মিসলে মোহর এবং সেই মহিলা, যার মোহর তার জন্য মিসলে মোহর, সে কোন কোন কাজে তার মতো হবে এর বিস্তারিত হলো:
(১) বয়স (২) সুন্দর (৩) সম্পদে মিল থাকা (৪) উভয়ে একই শহরে থাকা (৫) একই যুগ হওয়া (৬) বুদ্ধি (৭) বিচার বিবেচনা (৮) সততা (৯) ধর্মনিষ্টতা (১০) জ্ঞান (১১) আদবে একইরূপ হওয়া (১২) উভয়েই কুমারী হওয়া বা উভয়ই বিবাহিত (১৩) সন্তান হওয়া ও না হওয়াতে একই হওয়া, কেননা এই সকল বিষয়ের ভিন্নতায় মোহরও ভিন্ন হয়ে থাকে।
স্বামীর অবস্থাও একই হওয়া যেমনঃ
"যুবক ও বৃদ্ধের মোহর ভিন্ন হয়ে থাকে। আকদের সময় এই বিষয় সমূহে সমতা থাকা গ্রহণযোগ্য। পরে কোন ধরনের কম বেশি হলে তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়, যেমন; একজনের যখন বিবাহ হয়েছিলো তখন যে অবস্থার ছিলো, অপরজনও তার বিবাহের সময় একই অবস্থার কিন্তু প্রথম জনের পরবর্তীতে পতন হয়ে গেলো এবং অপরজনের উন্নতি বা এর উল্টো হলো তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়।"
(দুররে মুখতার, কিতাবুন নিকাহ, বাবুল মোহর, ৪র্থ খন্ড, ২৭৩-২৭৬ পৃষ্ঠা)
"যদি এই বংশে কোন এমন মহিলা না থাকে, যার মোহর তার জন্য মিসলে মোহর হতে পারে তবে অন্য কোন বংশের যা এই বংশের মতো হয়, এতে কোন মহিলা তার মতো হয়, তার মোহর এর জন্য মিসলে মোহর হবে।"
[ফতোওয়ায়ে হিন্দিয়া, কিতাবুন নিকাহ, বাবুস সাবেয়ে, ১ম খন্ড, ৩০৬ পৃষ্ঠা, বাহারে শরীয়াত, ২য় খন্ড, ৭ম অংশ, মোহরের বর্ণনা, ৬২-৬৩ পৃষ্ঠা]
সপ্তমত: খতনা করাতেও একটি অবস্থা জোর করার রয়েছে যে, যদি কোন শহরের লোক ছেড়ে দেয়, তবে ইসলামী সুলতান তাদের বল প্রয়োগ করবে, না মানলে তবে তাদের সাথে লড়াই করবে।
[রদ্দুল মুহতার, কিতাবুল খুনসা, মাসায়িলে শতি, ১০ম খন্ড, ৫১৫ পৃষ্ঠা]