পদ্মা সেতু উদ্বোধন: সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার

 পদ্মা সেতু উদ্বোধন: সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার

স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। অপেক্ষার প্রহর প্রায় শেষ। আর মাত্র ১০ দিন পরই খুলছে স্বপ্নের দুয়ার। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। বহুরূপী পদ্মার ওপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটবে গাড়ি। এমন স্বপ্নে বিভোর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতুটি।





উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একটি মহল নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কিছু ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরাতে পারে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ কারণে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারাদেশের প্রতিটি থানায় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়াতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক সাইবার মনিটারিং করা হচ্ছে। 

উদ্বোধনের দিন পদ্মার দুই পাড়েই শুধু পাঁচ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ইউনিফর্মে মোতায়েন থাকবেন। সাদা পোশাকে তৎপর থাকবেন বিপুলসংখ্যক গোয়েন্দা সদস্য।


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো এবং সম্প্রতি দুটি ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে নাশকতার যোগসূত্র আছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএম ডিপোর বিষয়ে আমি আগেও বলেছিলাম, সেখানে নাশকতা ছিল কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। ধীরে ধীরে এটি স্পষ্ট হচ্ছে। সিলেটের ট্রেনে আগুন লেগেছে একটা টয়লেট থেকে। খুলনাগামী একটি ট্রেন দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল, সেটিতেও আগুন লেগেছে। মনেই হচ্ছে এর সঙ্গে নাশকতার যোগ আছে।


রোববার (১২ জুন) সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড, সিলেটে ট্রেনে আগুনসহ কয়েকটি ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এসব ঘটনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কোনো ষড়যন্ত্র কি না?

এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এগুলো অন্তর্ঘাত হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। গোয়েন্দাদের কাছে কিছু খবর আছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা আমাদের আগেও ছিল, এখনো আছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি রেঞ্জের অফিসারদের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সতর্ক করা হয়েছে। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে, একটি গোষ্ঠী এই স্বপ্নের সেতুর অনুষ্ঠানকে বানচাল করতে পারে। বিশেষ করে ডিএমপির প্রতিটি থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, থানা এলাকায় অবস্থিত মেস ও আবাসিক হোটেলগুলোতে নজরদারি বাড়াতে। পাশাপাশি অভিযান চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপির একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


তারা বলছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদরদপ্তর থেকে নির্দেশ পেয়েছি। গত রোববার রাত থেকেই অভিযান চলছে। বিশেষ করে নজর রাখা হচ্ছে মেস ও আবাসিক হোটেলগুলোতে। ঢাকার বাইরে থেকে বহিরাগত কেউ অবস্থান নিয়েছে কি না, অবস্থান নিলেও তার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর কারো ওপর সন্দেহ হলে তার ওপর বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে।

সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বড় সাফল্য। সেতুটি নির্মাণের শুরু থেকেই সরকারবিরোধীরা ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারা দেশে-বিদেশে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরেও নাশকতার অপচেষ্টা চলছে বলে গোয়েন্দা তথ্য আছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর প্রতিটি মেসে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেসে অবস্থান করেন। তাদের মধ্যে বহিরাগতরা অবস্থান নিয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে।


সূত্র জানিয়েছে, পদ্মার দুই পাড়ে সংশ্লিষ্ট দুই জেলার বাইরে থেকেও ফোর্স নিয়ে আসা হবে উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে। নদীতে নৌপুলিশ নিরাপত্তা দেবে। সঙ্গে কোস্টগার্ডও থাকবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তাদের নিরাপত্তায় নেওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি র‍্যাব সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। যাতে করে কেউ অনলাইনে কোনো ধরনের উসকানিমূলক তথ্য না প্রচার করতে পারে।


উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে কোনো হুমকি বা নাশকতার পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, এ ধরনের কোনো হুমকি নেই তবে র‍্যাব সতর্ক রয়েছে।


পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস ও অতিরিক্ত দায়িত্বে মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যানিং) মো. হায়দার আলী খান জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে দেশের বাইরে থেকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। দেশের ভেতরেও কেউ এ ধরনের কাজ করতে পারে। তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে। তাদের ওপর সাইবার নজরদারি চলছে। সেই অনুযায়ী ফোর্সও মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।


তিনি বলেন, দেশের যেসব জায়গায় বড় পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হবে, সেসব জায়গায় নজদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আশপাশের এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা অনুষ্ঠানস্থলে আসবেন তাদের চলাফেরাও নির্বিঘ্ন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানকে ঘিরে কোনো হুমকি আছে কি না জানতে চাইলে ডিআইজি হায়দার আলী বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো নাশকতার হুমকি নেই। তবে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করলেও সেটা সফল হবে না। সন্দেহভাজনদের এরই মধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দারাও মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি সাইবার মনিটারিং বাড়ানো হয়েছে। আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব ছড়াতে দেখেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়াতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক মনিটারিং করা হচ্ছে।

Source: Jagonews24

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Be alert before spamming comments.

নবীনতর পূর্বতন

Sponsored

Responsive Ad