কিডনি নষ্ট হওয়ার কারণ কী?
কিডনির অকার্যকারিতা দুই ধরনের। একটা হলো, স্বল্প সময়ে কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়া। কোনো কারণে কিডনিতে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ কমে গেলে, যেমন: মারাত্মক ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতায় এমন ঘটতে পারে। এর মূলে রয়েছে সুপেয় ও নিরাপদ পানির অভাব। পানিবাহিত রোগবালাই (যেমন: ডায়রিয়া, কলেরা ইত্যাদি) হলো এ ধরনের কিডনি অকার্যকারিতার প্রধানতম কারণ। টাইফয়েড বা ডেঙ্গুজ্বর, অকারণ অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশকজাতীয় ওষুধ সেবনের কারণেও হঠাৎ কিডনির সমস্যা হতে পারে।
গ্রামাঞ্চলে অনিরাপদ উপায়ে প্রসবের কারণে অতি রক্তক্ষরণ হয় বা বিলম্বিত প্রসবের কারণেও কিডনির সমস্যা হতে পারে। তাই দেখা যাচ্ছে এ সমস্যার কারণগুলো প্রায় সবই প্রতিরোধযোগ্য। এ জন্য প্রয়োজন একটু সচেতনতা আর সতর্কতা।আরেক ধরনের কিডনি অকার্যকারিতা হয় ধীরে ধীরে। একে বলে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ এবং কিডনির নিজস্ব কিছু রোগ এমন সমস্যার জন্য প্রধানত দায়ী। এই সমস্যার হার আমাদের দেশে বাড়ছে।
কিডনি রোগ কাদের হওয়ার ঝুঁকি আছে?
অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির প্রদাহ (যার কারণে প্রস্রাবের সঙ্গে আমিষ নিঃসৃত হয়) কিংবা মূত্রপ্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী কোনো সমস্যা থাকলে কিডনির রোগ হতে পারে। জন্মগত কিছু সমস্যার কারণেও এ রোগ দেখা দেয়।
একজন সুস্থ ব্যক্তির হঠাৎ প্রচণ্ড বমি বা পাতলা পায়খানা হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদি তিনি বমি বা পায়খানার সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া পানি ও লবণের প্রতিস্থাপন না করেন। প্রায়ই যারা ব্যথার ওষুধ সেবন করেন, তাদেরও কিডনির সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণের কারণেও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শরীর থেকে অনেক বেশি প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়ার কারণে কিডনিতে প্রোটিন চলে যায়। আর প্রোটিন শরীরে পেশি তৈরি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ফলে রোগীর পায়ে পানি জমে ও প্রেশার বেড়ে যেতে পারে।
কারণ শরীরে অ্যালবুমিন কমতে থাকে ও প্রেশারও বাড়তে থাকে। এতে রোগী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. হাসিনাতুল জান্নাত বলেন, ‘অ্যালবুমিন একটি অপরিহার্য প্রোটিন উপাদান। যা টিস্যু বা কলাগুলোর স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে।’
‘রক্তক্ষরণকে প্রতিরোধ করে ও এটি শরীরের মধ্যে তরল, রক্ত ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টিস্যুর স্বাস্থ্যকে বজায় রাখার জন্য সঞ্চালিত হয়। অনেকেই শুধু শরীর ফোলাকে কিডনি রোগ বা কিডনি নষ্ট হওয়া বোঝেন। তবে আরও কিছু লক্ষণ আছে কিডনি নষ্ট হওয়ার।’
কিডনির রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। সাধারণত দেখা যায়, চিকিৎসায় ৩০-৫০ ভাগ রোগী ভালো থাকেন। অনেকেই চিকিৎসা না নিলে কিডনিই নষ্ট হয়ে যায়।
কিডনি নষ্ট হয়েছে কি না বোঝার উপায়
> কিডনি নষ্ট হয়েছে কি না বোঝার জন্য নিয়মিত ফলোআপ করাতে হবে। প্রেসার মাপতে হবে।
> পা ফুলে যাচ্ছে কি না তা লক্ষ্য করুন।
> এক্ষেত্রে প্রসাবে সমস্যা বা জ্বালাপোড়া কিংবা প্রসাব কমে যাচ্ছে কি না তা খেয়াল করুন।
> এ ছাড়াও খাবারে অরুচি, বমি ভাব, বার বার বমি হতে পারে।
> ওজন কমে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
> ডায়াবেটিক রোগীদের ইনসুলিন চাহিদা কমে যাওয়াও কিডনি রোগের পরবর্তী ধাপের লক্ষণ।
বায়োসপি না করেও প্রাথমিকভাবে ইউরিন আরএমই টেস্ট করে জানা যায় কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে। এ ছাড়াও আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পারেন। এই টেস্টগুলো যদি স্বাভাবিক থাকে ও প্রেশার স্বাভাবিক থাকে তাহলে বুঝতে হবে কিডনি ভালো আছে।
সূত্র: ডক্টরটিভি