ফজিলতপূর্ণ শবে বরাত সম্পর্কে প্রিয়নবী (ﷺ)-এর হাদীস
اربع لياليهن كايامهن وايامهن كلياليهن يبر الله فيهن القسم ويعتق فيهن النسم ويعطي فيهن الجزيل: ليلة القدر وصباحها، و ليلة عرفة وصباحها، وليلة النصف من شعبان وصباحها و ليلة الجمعة وصباحها. (الديلمي – عن انس).
অর্থাৎ, হযরত আনাস (رضي الله عنه)-এর বর্ণিত একটি হাদীসে মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান যে ৪টি রাতে আল্লাহতা’লা তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন এবং নেয়ামত দেন। এগুলো হলো, শবে কদরের রাত ও এরপরে আগত সকাল; আ’রাফাতের রাত ও তৎপরবর্তী সকাল; শবে বরা’ত ও তৎপরবর্তী সকাল এবং প্রতি জুমু’আর রাত ও তৎপরবর্তী সকাল। [দায়লামী শরীফ]
يسح الله عز وجل من الخير في اربع ليال سحا: ليلة الاضحى والفطر وليلة النصف من شعبان، ينسخ فيها الاجال والارزاق ويكتب فيها الحج، وفي ليلة عرفة الى الاذان.
অর্থাৎ, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)-কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ৪টি রাতে আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ ও দয়া বান্দাদের জন্যে অবারিত হয়:
১/ ঈদুল আযহার (আগের দিনগত) রাত;
২/ ঈদুল ফিতরের রাত;
৩/ মধ্য-শা’বানের রাত (শবে বরাত), যা’তে আল্লাহ বান্দার হায়াত নির্ধারণ করেন এবং রিযিকও বন্টন করেন; আর কারা কারা হজ্জ্ব করবেন, তাও নির্ধারিত হয়;
৪/ আ’রাফাত রজনী - আযান হওয়া অবধি।
واخرج ابن جرير وابن المنذر وابن ابي حاتم من طريق محمد بن سوقة، عن عكرمة }فيها يفرق كل امر حكيم{ قال: في ليلة النصف من شعبان يبرم امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج، فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد.
অর্থাৎ, আল-কুরআনে বর্ণিত “ওই রাতে বণ্টন করে দেয়া হয় প্রতিটি হেকমতময় কাজ” (৪৪:৪) - আয়াতটি প্রসঙ্গে হযরত একরিমাহ (رضي الله عنه) বলেন, “এটি মধ্য-শা’বানের রাত, যখন আল্লাহ পাক (আগামী) সারা বছরের বিষয়গুলো (নিয়মবদ্ধভাবে) সাজান। তিনি জীবিতদের কাউকে কাউকে মৃতদের তালিকাভুক্ত করেন, আর যারা আল্লাহর ঘরে হজ্জ্ব করতে যাবেন, তাদের নামও লিপিবদ্ধ করেন; এতে তিনি বেশি মানুষের নাম যেমন অন্তর্ভুক্ত করেন না, তেমনি তিনি কাউকে বাদও দেন না।”
واخرج ابن زنجويه والديلمي، عن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ”تقطع الاجال من شعبان الى شعبان، حتى ان الرجل لينكح ويولد له، وقد خرج اسمه في الموتى”.
অর্থাৎ, হযরত আবূ হোরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন হযরত রাসূলে করীম (ﷺ)-এর বাণী, যিনি এরশাদ ফরমান:
“মানুষের হায়াত এক শা’বান থেকে আরেক শা’বান মাসে কর্তন করা হয়, যার দরুন কেউ হয়তো বিয়ে-শাদী করে সন্তানের জনকও হতে পারে, অথচ তার নাম জীবিতদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ভাগ্যে মৃত্যু লেখা হয়ে গিয়েছে।”
واخرج ابن ابي شيبة، عن عطاء بن يسار قال: لم يكن رسول الله صلى الله عليه وسلم في شهر اكثر صياما منه في شعبان، وذلك انه ينسخ فيه اجال من ينسخ في السنة.
অর্থাৎ, হযরত আতা ইবনে এয়াসার (رضي الله عنه) বলেন, “মহানবী (ﷺ) শা’বান মাসে যেভাবে (নফল) রোযা রাখতেন, অন্য কোনো মাসে সেভাবে রাখতেন না। আর এটি এ কারণে যে, ওই বছর যারা মৃত্যুবরণ করবেন, তা তাতে লিপিবদ্ধ হতো।”
واخرج ابن مردويه وابن عساكر، عن عائشة قالت: لم يكن رسول الله صلى الله عليه وسلم في شهر اكثر صياما منه في شعبان لانه ينسخ فيه ارواح الاحياء في الاموات، حتى ان الرجل يتزوج وقد رفع اسمه فيمن يموت، وان الرجل ليحج وقد رفع اسمه فيمن يموت.
অর্থাৎ, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অন্য কোনো মাসে এতো অধিক (নফল) রোযা রাখতেন না যেমনটি রাখতেন শা’বান মাসে; কারণ এতে জীবিত যারা মারা যাবেন তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়, যে পর্যন্ত না কেউ বিয়ে করেন অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে; আর কেউ হজ্জ্ব করেন, কিন্তু তার নাম মৃতদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।”
أخرجه بن ماجه والبيهقي في شعب الإيمان عن علي- كرم الله وجهه- قال: قال رسول الله- صلى الله عليه وسلم: “إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها، وصوموا نهارها، فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا، فيقول: ألاَ من مستغفر لي، فأغفر له! ألا مسترزق فأرزقه! ألا مبتلىً فأعافيه! ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر”.
অর্থাৎ, সাইয়্যেদুনা হযরত আলী (ক:) থেকে বর্ণিত যে মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “মধ্য-শা’বানের রাত তোমরা এবাদত-বন্দেগী করে অতিবাহিত করো এবং ওই দিন রোযা রেখো। কেননা, নিশ্চয় সূর্যাস্ত থেকে আরম্ভ করে এই রাতে আল্লাহতা’লা সর্বনিম্ন (নিকটতম) আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কেউ কি আছো ক্ষমা চাইবার, যাকে আমি ক্ষমা করে দিতে পারি? কেউ কি আছো রিযক চাইবার, যাকে রিযক মঞ্জুর করতে পারি? কেউ কি আছো মসিবত/পরীক্ষায়, যাকে তা থেকে মুক্ত করে দিতে পারি?’ ইত্যাদি, ইত্যাদি, যতোক্ষণ না ফজরের সময় (সূর্যোদয়) হয়।” [হযরত আবদুর রাযযাক (رضي الله عنه) ও ইবনে মাজাহ বর্ণিত]
أخرجه الترمذي وابن أبي شيبة والبيهقي وابن ماجه عن عائشة قالت: فقدت رسول الله- صلى الله عليه وسلم- ذات ليلة فخرجت أطلبه، فإذا هو بالبقيع رافعًا رأسه إلى السماء، فقال: “يا عائشة، أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله؟”، فقلت: ما بي من ذلك، ولكني ظننت أنك أتيت بعض نسائك، فقال: “إن الله- عز وجل- ينزل في ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا، فيغفر لأكثر من عدد شعر غنم بني كلب”.
অর্থাৎ, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, “এক রাতে আমি হুযূর পাক (ﷺ)-কে (ঘরে) না পেয়ে ’বাকী’ কবরস্থানে যাই (এবং সেখানে তাঁর দেখা পাই)। এই সময় তাঁর পবিত্র মস্তক মোবারক আসমানের দিকে ওঠানো ছিল। তিনি বলেন,
‘ওহে আয়েশা! তুমি কি আশংকা করো যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) তোমার প্রতি অন্যায্য আচরণ করবেন?’ আমি বল্লাম, এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি মনে করেছিলাম আপনি হয়তো আপনার কোনো বিবি সাহেবার কাছে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মধ্য-শা’বানের রাতে মহান আল্লাহতা’লা সর্বনিম্ন (নিকটতম) আসমানে অবতরণ করেন এবং বনূ কালব্ গোত্রের মালিকানাধীন সমস্ত ভেড়ার গায়ে যতো লোম আছে, ওই সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দেন’।” [ইমাম আহমদ, ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী বর্ণিত হাদীস; শেষোক্ত হাদীসবিদ বলেন যে তিনি শুনেছেন ইমাম বোখারী (رحمة الله) একে ’দুর্বল’ শ্রেণীভুক্ত করেছেন, কেননা এর কতিপয় বর্ণনাকারী হাদীসটি একে অপরের কাছ থেকে সরাসরি বর্ণনা করেন নি।]
حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ اُسَامَةَ، قَالَ اَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَبَّانَ، عَنِ الْاَعْرَجِ، عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ فَقَدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ مِنْ الْفِرَاشِ فَالْتَمَسْتُهُ فَوَقَعَتْ يَدِي عَلَى بَطْنِ قَدَمَيْهِ وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ وَهُمَا مَنْصُوبَتَانِ وَهُوَ يَقُولُ اللَّهُمَّ اِنِّي اَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَاَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لَا اُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ اَنْتَ كَمَا اَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ.(مسند أحمد و مسلم و نحوه في سنن النسائي و موطأ مالك و سنن أبي داود و صحيح ابن خزيمة و سنن الترمذي و سنن ابن ماجه)
অর্থাৎ, উম্মুল মো’মেনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন: “এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বিছানায় পাই নি; (খুঁজে পেয়ে) আমার হাত তাঁর কদম মোবারকের মধ্যভাগ স্পর্শ করে, আর ওই সময় তিনি মসজিদে ছিলেন। তাঁর পবিত্র দুই পায়ের পাতা খাড়া ছিল (অর্থাৎ, সেজদায় ছিলেন)। এমতাবস্থায় তিনি বলেন, ‘আমি আপনার (আল্লাহর) শাস্তি হতে আপনারই ক্ষমার মাঝে আশ্রয় নিচ্ছি; আপনার না-রাজি হতে আপনারই রেযামন্দির আশ্রয় নিচ্ছি; আর আপনার (রুদ্ররোষ) হতে আপনারই মাঝে আশ্রয় নিচ্ছি। আপনার যেভাবে প্রশংসা প্রাপ্য, সেভাবে আমি আপনার প্রশংসা করতে অপারগ। আপনি তা-ই, যেভাবে আপনি আপনার পরিচয় দিয়েছেন’।” [এই হাদীস বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ, ইবনে মাজাহ, আবূ দাউদ, নাসাঈ ও তিরমিযী।]
وفي رواية { جاءني جبريل ليلة النصف من شعبان فقال يا محمد ارفع راسك الى السماء فقلت ماهذه الليلة ، قال هذه ليلة يفتح الله فيها ثلاثمائة من ابواب الرحمة يغفر الله لجميع من لا يشرك به شيئاً }
অর্থাৎ, অপর এক রওয়ায়াতে মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “মধ্য-শা’বানের রাতে জিবরীল আমীন (আ:) আবির্ভূত হয়ে আমাকে বলেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার সে’র (মস্তক) মোবারক আসমানের দিকে উত্থিত করুন।’ আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি, এটি কোন্ রাত? তিনি জবাব দেন, ‘এটি সেই রাত যখন মহান আল্লাহতা’লা তাঁর রহমতের তিন‘শটি দ্বার উম্মুক্ত করেন এবং সে সব ব্যক্তিকে মাফ করে দেন যারা তাঁর সাথে (কোনো উপাস্যকে) শরীক করে নি’।”
يقول رسول الله صلى الله عليه وسلم : { إذا كانت ليلة النصف من شعبان فتحت أبواب السماء السبع ووقف على كل باب ملائكة يستغفرون للمسلمين ، فيغفر لكل مسلم إلا من كان مصراً على كبيرة }
অর্থাৎ, হুযূর করীম (ﷺ) অন্যত্র এরশাদ ফরমান: “মধ্য-শা’বানের রাতে (শবে বরা’তে) সপ্তম আসমানের দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয়; আর প্রতিটি দ্বারে ফেরেশতারা দাঁড়িয়ে মুসলমানদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন যতোক্ষণ না প্রত্যেক মুসলমানকে মাফ করা হয়; এর ব্যতিক্রম শুধু কবীরা গুনাহ সংঘটনকারীরা।”
عائشة رضي الله عنها تقول { كانت ليلتي من رسول الله صلى الله عليه وسلم فدخل الفراش حتى نمت ثم استيقظت فلم اجده فقمت فوجدته يصلي فخفف القيام ثم ركع وسجد مطولاً سجوده الى نصف الليل ثم قام الى الثانية كذلك ثم ركع وسجد حتى كاد الفجر أن يطلع فظننت انه قد قبض فوضعت يدي على قدميه فتحرك فحمدت الله تعالى فسمعته يقول : سجد لك سوادي وآمن بك فؤادي فاغفرلي الذنب العظيم فإنه لا يغفر الذنب العظيم الا الرب العظيم اعوذ برضاك من سخطك وبمعافاتك من عقوبتك وبك منك لا احصي ثناء عليك انت كما اثنيت على نفسك ، فلما فرغ من صلاته قال اتدرين أي ليلة هذه ياعائشة قلت لا قال : هذه ليلة النصف من شعبان إن الله يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر اهل الحقد كما هم }
অর্থাৎ, উম্মুল মো’মেনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন: “রাসূলে পাক (ﷺ) এক রাতে আমার ঘরে ছিলেন; তিনি বিছানায় শুয়েছিলেন যতোক্ষণ না আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অতঃপর তিনি শয্যা ত্যাগ করেন এবং আমি (জেগে উঠে) তাঁকে (বিছানায়) পাই নি। তাঁকে দেখতে পেলাম নামাযে; সংক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে ও রুকু করে তিনি অত্যন্ত দীর্ঘ এক সেজদায় যান, যার ফলে অর্ধেক রাত তাতেই অতিবাহিত হয়। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় রাকআতে উঠে দাঁড়ান এবং আবারও রুকু করে দীর্ঘ সেজদায় সময় অতিবাহিত করেন, যার দরুন প্রায় ফজরের ওয়াক্ত উপস্থিত হয়।
আমার এমন আশঙ্কা হয় যে তিনি বুঝি বেসাল (খোদার সাথে পরলোকে মিলিত) হয়েছেন। তাই আমি তাঁর মোবারক কদমে হাত রাখি, আর তিনি নড়ে ওঠেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন। আমি তাঁকে বলতে শুনি, ‘এয়া আল্লাহ! আমি আপনাকে সেজদা করেছি (সারা) রাতের অন্ধকারে, আর (তাই) আমার অন্তর আপনার প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল। অতএব, মহাপাপ (কবীরা গুনাহ) ক্ষমা করে দিন, কেননা তা মহাপ্রভু ছাড়া কেউই মাফ করতে পারে না। আমি আপনার বিরাগ ভাজন হওয়া থেকে আপনারই রেযামন্দির (সন্তুষ্টির) মাঝে আশ্রয় নিচ্ছি; আশ্রয় নিচ্ছি আপনার শাস্তি থেকে আপনারই ক্ষমার মাঝে; আর আপনার (রাগ) থেকে আপনারই মাঝে আশ্রয় নিচ্ছি। আপনি যেভাবে আপনার প্রশংসা করেছেন, আমি তা পুরোপুরিভাবে করতে অক্ষম।’ অতঃপর নামাযশেষে তিনি আমায় বলেন, ‘ওহে আয়েশা! তুমি কি জানো এটি কোন্ রাত?’ আমি বল্লাম, ‘না।’ তিনি বল্লেন, ‘মধ্য-শা’বানের রাত (শবে বরাত)। এই রাতে আল্লাহতা’লা তাঁর বান্দাদের দিকে নজর করেন এবং যারা এতে ক্ষমাপ্রার্থী হয় তাদেরকে মাফ করেন; আর যারা তাঁর করুণা প্রার্থনা করে, তাদের প্রতি তিনি নিজ করুণা বর্ষণ করেন। কিন্তু যাদের অন্তরে বিদ্বেষ আছে, তাদেরকে তিনি আগের সে অবস্থাতেই রেখে দেন’।”
وأخبرني أبو نصر قال أنبأني والدي حدثنا محمد بن أحمد الحافظ أنبأنا عبد الله بن محمد أنبأنا أبو العباس الهروي وابراهيم ابن محمد بن الحسن قالا أخبرنا أبو عامر الدمشقي أنبأنا الوليد بن مسلم أخبرني هشام بن ألغاو سلمان بن مسلم وغيره عن مكحول عن عائشة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لها يا عائشة أية ليلة هي قالت الله ورسوله أعلم فقال ليلة النصف من شعبان فيها ترفع أعمال الدنيا وأعمال العباد ولله فيها عتقاء من النار بعدد شعر غنم بني كلب فهل أنت أذنت لي الليل قالت قلت نعم فصلى فخفف القيام وقرأ الحمد وسورة خفيفة ثم سجد إلى شطر الليل ثم قام في الركعة الثانية فقرأ فيها نحوا من قراءة الأولى فكان سجوده إلى الفجر قالت عائشة رضي الله عنها وكنت أنظره حتى ظننت أن الله تعالى قد قبض رسوله صلى الله عليه وسلم فلما طال على دنوت منه حتى مسست أخص قدميه فتحرك فسمعته يقول في سجوده ( أعوذ بعفوك من عقابك وأعوذ برضاك من سخطك وأعوذ بك منك جل ثناؤك لا أحصى ثناءاً عليك أنت كما أثنيت على نفسك) قلت يا رسول الله قد سمعتك تذكر في سجودك الليلة شيئا ما سمعتك تذكره قط قال صلى الله عليه وسلم وعلمت ذلك قلت نعم قال صلى الله عليه وسلم تعليمهن وعلميهن فان جبريل عليه السلام أمرني أن أذكرهن في السجود وأخبرني أبو نصر عن والده قال أنبأنا عبد الله بن محمد أنبأنا اسحق بن احمد الفارسي أنبأنا أحمد بن الصباح بن أبى شريح أنبأنا يزيد بن هرون حدثنا الحجاج بن أرطأة عن يحيى بن أبى كثير عن عروة عن عائشة رضي الله عنها قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع رأسه إلى السماء فقال لي أكنت تخافين أن يحيف الله ورسوله عليك فقلت له يا رسول الله ظننت أنك أتيت بعض نسائك فقال صلى الله عليه وسلم إن الله تعالى ينزل ليلة النص من شعبان إلى السماء الدنيا فيغفر لا كثر من عدد شعر غنم بني كلب وعن عكرمة مولى ابن عباس رحمه الله ورضي عنهما في قول الله تعالى (( فيها يفرق كل أمر حكيم )) قال هي ليلة النصف من شعبان يدبر الله تعالى أمر السنة وينسخ الأحياء إلى الأموات ويكتب حاج بيت الله فلا يزيد فيهم أحد ولا ينقص منهم أحد
অর্থাৎ, হযরত আবূ নাসর (رضي الله عنه) থেকে সাইয়্যেদুনা গাউসুল আ’যম হযরত আবদুল কাদের জ্বিলানী (رحمة الله) তাঁর ‘গুনইয়াতুত্ তালেবীন’ পুস্তকে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)-এর কথা উদ্ধৃত করেন; তিনি বলেন: “মধ্য-শা’বানের রাতে একবার মহানবী (ﷺ) আমার একখানি বস্ত্র অপসারণ করেন। আল্লাহর কসম! আমার ওই বস্ত্র রেশমও ছিল না, মিহি রেশমও ছিল না; সেটি সুতোরও ছিল না, আবার সুতো ও তুলোর (মিশ্রণ)-ও ছিল না; (এমন কি) তুলোরও ছিল না।” বর্ণনাকারী (আবূ নাসর) বলেন, “আল্লাহরই প্রশংসা! তাহলে সেটি কিসের তৈরি ছিল?” হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) উত্তর দেন, “এর বনুন হয়েছিল চুল ও রেশমের সংমিশ্রণে। আমি ধারণা করেছিলাম যে তিনি হয়তো তাঁর অপর কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন; তাই আমি উঠে (অন্ধকার) কক্ষে তাঁর খোঁজ করি।
আমার হাত তাঁর কদম মোবারক স্পর্শ করে। ওই সময় তিনি নামাযে সেজদারত ছিলেন। আমার মনে পড়ে, তিনি দোয়া করছিলেন এই বলে: ‘(এয়া আল্লাহ), আপনার সামনে সেজদারত আমার দেহ (মোবারক) ও রূহ (মোবারক), আর আমার অন্তর রয়েছে আপনারই হেফাযতে। আমি আপনার রহমত-বরকতের শোকর-গুজার করি এবং আপনার কাছেই আমার কৃতকর্ম স্বীকার করি। আমি এস্তেগফার করি; অতএব, আমায় মাফ করে দিন! আমি আপনার শাস্তি হতে আপনারই ক্ষমার মাঝে আশ্রয় নিচ্ছি; আপনার রাগ হতে আপনারই করুণার মাঝে আশ্রয় নিচ্ছি। আপনার না-রাজি থেকে আপনারই রেযামন্দির মাঝে আশ্রয় নিচ্ছি। আমি আপনার (রাগ) হতে আপনারই মাঝে আশ্রয় নিচ্ছি। আমি আপনার প্রশংসা করতে পারি না, কেননা আপনি তা-ই, যেভাবে আপনি আপনার নিজের প্রশংসা করেছেন’।”
অতঃপর মা আয়েশা (رضي الله عنه) আরও বলেন, “মহানবী (ﷺ) নামায পড়া ক্ষান্ত দেন নি, কখনো দাঁড়িয়ে, আবার কখনো বসে, যতোক্ষণ না ভোর হয়। অতঃপর তিনি তাঁর কদম মোবারক ওপরে তোলেন এবং আমি তা টিপে দেই। আমি তাঁকে বলি, আমার বাবা ও মা আপনার জন্যে কোরবান হোন। আল্লাহতা’লা কি নিশ্চয় আপনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কৃতকর্ম মাফ করে দেন নি? তিনি কি আপনার ব্যাপারে দয়াশীল হন নি? তা নয় কি? তা নয় কি? এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উত্তর দেন, ‘ওহে আয়েশা! আমি কি তাহলে কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? তুমি কি জানো এই রাতে কী হয়?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়ে থাকে? তিনি বল্লেন, ‘এ রাতে সকল (শিশুর) জন্মের (দিন-ক্ষণ) লিখে রাখা হয়; আর সকল মৃত্যুরও।
এই সন্ধিক্ষণে মনুষ্যজাতির রিযক-ও বরাদ্দ করা হয়, আর তাদের কৃতকর্মের হিসেব নেয়া হয়।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর করুণা (রহমত) ছাড়া কি কেউই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেন না? তিনি আমায় বল্লেন, ‘কেউই আল্লাহর রহমত ছাড়া জান্নাতে যেতে পারবে না।’ অামি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এমন কি আপনিও পারবেন না? বিশ্বনবী (ﷺ) উত্তর দিলেন, ‘না, এমন কি আমিও না, যতোক্ষণ না আল্লাহতা’লার রহমত আমাকে পরিবেষ্টন করছে।’ এরপর তিনি নিজ মস্তক ও চেহারা মোবারকে তাঁর হাত মোবারক বুলান।” [গ্রন্থ সূত্র: সাইয়্যেদুনা গাউসুল আ’যম হযরত আবদুল কাদের জ্বিলানী (رحمة الله) রচিত ‘গুনইয়াতুত্ তালেবীন’]
[অনুবাদকের নোট: মহানবী (ﷺ)-এর উদ্ধৃত ‘কৃতকর্ম’ শব্দটি দ্বারা তিনি আমাদেরকে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে শিক্ষা দিয়েছেন। কেননা, ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস হলো, আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দ বে-গুনাহ। বিশ্বনবী (ﷺ)-এর ‘এস্তেগফার’ করার মানে উম্মতের জন্যে সুপারিশ ছাড়া কিছু নয় (সূরা নিসা, ৬৪)।]
ان الله تعالى يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين، ويرحم المسترحمين، ويؤخر اهل الحقد كما هم عليه. (الطبراني في الكبير عن عائشة)
অর্থাৎ, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) অন্যত্র বর্ণনা নবী করীম (ﷺ)-এর হাদীস, যিনি বলেন: “মধ্য-শা’বানের রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি নজর করেন এবং ক্ষমাপ্রার্থীদেরকে ক্ষমা করেন; আর যারা অন্তরে বিদ্বেষভাব পোষণ করে, তাদেরকে সেই অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।” [আত্ তাবারানী কৃত ‘কবীর’ পুস্তক]
হাদীস ব্যাখ্যাকারীগণ বলেন যে বনূ কালব্ ওই সময় সবচেয়ে বড় গোত্র ছিল এবং এর সদস্যদের বড় বড় ভেড়ার পাল ছিল। অতএব, এই হাদীসে শেষ বাক্যটি ইশারা করে যে মহান আল্লাহ পাক ওই রাতে অসংখ্য মানুষকে মাফ করে থাকেন।
عن عبدالله بن عمرو بن العاص أن رسول الله- صلى الله عليه وسلم- قال: “يطلع الله- عز وجل- إلى خلقه ليلة النصف من شعبان، فيغفر لعباده إلا اثنين: مشاحن، وقاتل نفس”. أخرجه أحمد بن حنبل في المسند و لترمذي
অর্থাৎ, রাসূলে খোদা (ﷺ) এরশাদ ফরমান, “মধ্য-শা’বানের রাতে আল্লাহতা’লা তাঁর বান্দাদের দিকে তাকান এবং এবাদত-বন্দেগীতে রত বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন; তবে দুই ধরনের লোককে তিনি ক্ষমা করেন না:
১/ অন্তরে বিদ্বেষভাব পোষণকারী; এবং
২/ খুনী।” [ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রণীত ‘মুসনাদ’ ও আত্ তিরমিযী]
শবে বরাতে আল্লাহতা’লা তাঁর বান্দাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি করেন ও মো’মেন তথা বিশ্বাসীদেরকে ক্ষমা করেন; আর অবিশ্বাসীদেরকে শাস্তি প্রদানে নিবৃত্তি দেন, এবং যারা বিদ্বেষভাব পোষণ করে তাদেরকে নিজ নিজ বিদ্বেষের আবর্তে ছেড়ে দেন, যতোক্ষণ না তারা তাঁর কাছে ক্ষমা চায়।
اذا كان ليلة النصف من شعبان اطلع الله الى خلقه، فيغفر للمؤمنين، ويملي للكافرين، ويدع اهل الحقد بحقدهم حتى يدعوه.
অর্থাৎ, হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, “মধ্য-শা’বানের রাতে আল্লাহ পাক পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং প্রত্যেক মো’মেন (বিশ্বাসী) মুসলমানকে ক্ষমা করেন; এর ব্যতিক্রম শুধু পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (আল-’আক্ক) ও যার অন্তরে বিদ্বেষভাব আছে।” [বায়হাকী তাঁর কৃত ‘শুআব’, ইবনে খুযায়মা (رضي الله عنه) ও ইবনে হিব্বান (رضي الله عنه)]
عن القاسم بن محمد بن ابي بكر الصديق عن ابيه عن عمه عن جده. ينزل الله الى السماء الدنيا ليلة النصف من شعبان، فيغفر لكل بشر الا رجلا مشركا، او رجلا في قلبه شحناء. ابن زنجويه والبزار وحسنه ( للدارقطني في السنن, لابن عدي في الكامل و للبيهقي في شعب الإيمان
অর্থাৎ, আল-কাসিম ইবনে মোহাম্মদ ইবনে আবি বকর সিদ্দিক (رحمة الله) তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন যে তাঁর পিতামহ বলেন: “আল্লাহতা’লা মধ্য-শা’বানের রাতে তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি কৃপাদৃষ্টি করেন এবং সবাইকে ক্ষমা করে দেন; ব্যতিক্রম শুধু যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে এবং যাদের অন্তরে বিদ্বেষভাব আছে।” [ইবনে যানজুউইয়ীয়্যা, আদ্ দারু কুতনী কৃত ’সুনান’, ইবনে আদী প্রণীত ‘কামিল’ এবং আল-বায়হাকী রচিত ‘শুয়াবুল ঈমান’ গ্রন্থে উদ্ধৃত]
ينزل ربنا الى السماء الدنيا في النصف من شعبان، فيغفر لاهل الارض الا مشركا او مشاحنا. (ابن زنجويه عن ابي موسى.)
অর্থাৎ, রাসূলে খোদা (ﷺ) এরশাদ ফরমান, “শবে বরাতের রাতে আমাদের প্রভু খোদাতা’লা পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং দুনিয়াবাসীকে মাফ করেন; ব্যতিক্রম কেবল মূর্তি পূজারী ব্যক্তিবর্গ ও অন্তরে বিদ্বেষভাব লালনকারী লোকেরা।” [ইবনে মূসা হতে ইবনে যানজুউইয়ীয়্যা বর্ণিত]
يطلع الله تعالى الى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه، الا لمشرك او مشاحن. (حب طب) وابن شاهين في الترغيب (و للبيهقي في شعب الإيمان وابن عساكر عن معاذ.)
অর্থাৎ, হযরত মুয়ায (رضي الله عنه) মহানবী (ﷺ)-এর কথা বর্ণনা করেন; তিনি বলেন: “আল্লাহ পাক শবে বরাতে তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের নযর বিস্তৃত করেন এবং সবাইকে মাফ করেন; মাফ করেন না শুধু মুশরিক (মূর্তি পূজারী) ও অন্তরে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তিবর্গকে।” [ইবনে হিব্বান (১২:৪৮১ #৫৬৬৫), আল-আরনাওত এই এসনাদকে সহীহ বলেছেন; আত্ তাবারানী, আল-হায়তামী যার সনদকে সহীহ বলেছেন; আল-বায়হাকী কৃত ‘শুয়াবুল ঈমান’ এবং ইবনে আসাকিরও এই হাদীস বর্ণনা করেন]
ان الله تعالى ليطلع في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن (مشاحن: المشاحن: المعادي، والشحناء العداوة. النهاية. 2/449. ب). (ه – عن ابي موسى) (اخرجه ابن ماجه كتاب اقامة الصلاة باب ما جاء في الليلة النصف من شعبان رقم (1390) وقال في الزوائد: اسناده ضعيف. سعيد ابن منصور في سننه).
অর্থাৎ, রাসূলে পাক (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “নিশ্চয় আমাদের প্রভু শবে বরাতে উদিত হন এবং সৃষ্টিকুলকে ক্ষমা করেন; ব্যতিক্রম শুধু মূর্তি পূজারী ও অন্তরে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তিবর্গ।” [ইবনে মাজাহ ও ইবনে মনসূর নিজ ‘সুনান’ পুস্তকে]
في ليلة النصف من شعبان يغفر الله لاهل الارض الا لمشرك او مشاحن. ( للبيهقي في شعب الإيمان عن كثير بن مرة الحضرمي مرسلا).
অর্থাৎ, মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “মহান আল্লাহ পাক শবে বরাতে তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি নজর করেন এবং সকল সৃষ্টিকে মাফ করেন; মাফ করেন না শুধু মূর্তি পূজারী ও অন্তরে বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তিদের।” [আল-বায়হাকী কৃত ‘শুয়াবুল ঈমান’]
في ليلة النصف من شعبان يوحي الله الى ملك الموت بقبض كل نفس يريد قبضها في تلك السنة. (الدينوري في المجالسة – عن راشد بن سعد مرسلا).
অর্থাৎ, শবে বরাতে আল্লাহতা’লা যমদূত আজরাঈলের কাছে ওই বছর যাদের জীবনাবসান চান, তাদের তালিকা প্রকাশ করেন। [রশীদ ইবনে সা’আদ হতে আদ্ দায়নূরী নিজ ‘আল-মাজালিসা’ গ্রন্থে (মুরসালান)]
اذا كان ليلة النصف من شعبان نادى مناد: هل من مستغفر فاغفر له؟ هل من سائل فاعطيه؟ فلا يسال احد شيئا الا اعطاه الا زانية بفرجها او مشرك. ( للبيهقي في شعب الإيمان عن عثمان بن ابي العاص).
অর্থাৎ, হযরত উসমান ইবনে আবি আল-’আস হতে ইমাম বায়হাকী তাঁর ‘শুয়াবুল ঈমান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে শবে বরা’তে আল্লাহ পাক ডেকে বলেন: “ক্ষমাপ্রার্থী কেউ আছো কি, যাকে আমি মাফ করতে পারি? আমার কাছে কোনো কিছূ প্রার্থী কেউ আছো কি, যাকে আমি তা মঞ্জুর করতে পারি?” ফলে যার যা প্রার্থনা, তা তিনি মঞ্জুর করেন; কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলো দুরাচারে লিপ্ত ব্যভিচারিনী এবং মূর্তি পূজারী।
ان الله تبارك وتعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى سماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب. (أحمد في مسنده،الترمذي (اخرجه ابن ماجه كتاب اقامة الصلاة باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان رقم (1389). سعيد ابن منصور في سننه عن عائشة).
অর্থাৎ, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন মহানবী (ﷺ)-এর হাদীস; তিনি এরশাদ ফরমান: “মহান আল্লাহতা’লা মধ্য-শা’বানের রাতে পৃথিবীর আকাশে অবতীর্ণ হন এবং বনূ কালব্ গোত্রের মালিকানাধীন ভেড়ার পালের সমস্ত ভেড়ার লোমের চেয়েও বেশি সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করেন।” [সাঈদ ইবনে মনসূর প্রণীত ‘সুনান’ দ্রষ্টব্য]
اذا كان ليلة النصف من شعبان يغفر الله من الذنوب اكثر من عدد شعر غنم كلب.( للبيهقي في شعب الإيمان – عن عائشة).
অর্থাৎ, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন রাসূলে খোদা (ﷺ)-এর বাণী: “শবে বরাতে আল্লাহতা’লা বণূ কালব্ গোত্রের সমস্ত ভেড়ার লোমের সমপরিমাণ গুনাহ মাফ করেন।” [বায়হাকী কৃত ‘শুয়াবুল ঈমান’]
يا عائشة! اكنت تخافين ان يحيف (يحيف: الحيف: الجور والظلم. النهاية. 1/469. ب) الله عليك ورسوله؟ بل اتاني جبريل فقال: هذه الليلة ليلة النصف من شعبان، ولله فيها عتقاء من النار بعدد شعور غنم كلب، لا ينظر الله فيها الى مشرك ولا الى مشاحن ولا الى قاطع رحم ولا الى مسبل (مسبل: المسبل: هو الذي يطول ثوبه ويرسله الى الارض اذا مشى. وانما يفعل ذلك كبرا واختيالا. النهاية. 2/339. ب) ولا الى عاق لوالديه ولا الى مدمن خمر. ( للبيهقي في شعب الإيمان وضعفه – عن عائشة).
অর্থাৎ, মা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) হুযূর পূর নূর (ﷺ)-কে উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন: “ওহে আয়েশা! তুমি কি ভেবেছো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) তোমার প্রতি অন্যায্য আচরণ করবেন? বরঞ্চ জিবরীল আমীন আমার কাছে এসে বল্লেন, ‘এটি-ই মধ্য-শা’বানের রাত। আল্লাহতা’লা এ রাতে বনূ কালব্ গোত্রের সমস্ত ভেড়ার লোমের সমসংখ্যক মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে দেন। কিন্তু তিনি মাফ করেন না মূর্তি পূজারীদের কিংবা অন্যদের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষভাব পোষণকারীদের; অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদেরও; অথবা পায়ের গোড়ালির নিচে বস্ত্র পরিধানকারীদেরও (যারা অর্থ-বিত্তের দম্ভের প্রতীকস্বরূপ তা পরে); কিংবা পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানদেরও; অথবা মদ্যপায়ীদেরও।” [বায়হাকী রচিত ‘শুয়াবুল ঈমান’]
এ যাবৎ যতো হাদীস ও রওয়ায়াত উদ্ধৃত হয়েছে, সেগুলো একত্র করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে শবে বরা’তের ফযীলত তথা ইহ ও পারলৌকিক উপকারিতার ভিত্তি সুদৃঢ়; আর এই পবিত্র রাত এবাদত-বন্দেগীতে কাটানোর সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও বিদ্যমান। বস্তুতঃ এ সব হাদীদের কিছু কিছুকে বেশ কিছু হাদীসবিদ সহীহ (বিশুদ্ধ) হিসেবে বিবেচনা করেছেন, আর বাকিগুলোতে ছোটখাটো পরিভাষাগত ত্রুটি রয়েছে বলে তাঁরা মনে করেছেন; এই পরিভাষাগত ত্রুটি হাদীসশাস্ত্র অনুযায়ী বিভিন্ন বর্ণনার সমন্বয়ে সারানো যায়। এ কারণেই এই উম্মাহ’র বুযূর্গানে দ্বীনবৃন্দ শবে বরা’তকে রহমত-বরকতময় রজনী হিসেবে এবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে পালন করেছেন যুগে যুগে।