অভিমান: ৩ দিনের বেশি না
বন্ধু, আত্মীয়স্বজনদের সাথে মাঝেমধ্যে আমাদের ঝগড়া হয়, কথা কাটাকাটি হয়।
রাগের মাথায় আমরা হয়তো তাদেরকে অশোভন কোনো কথা বলি, তারাও প্রতিউত্তরে এমন কোনো কথা বলেন যেটা আমাদের পছন্দ না।
ফলে কী হয়? তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যাদের সাথে এমন দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিলো, তাদের সাথে সাপে-নেউলে সম্পর্ক হয়ে যায়।
কারো সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে সর্বপ্রথম যেটা হয়, সেটা হলো- কথা বলা বন্ধ করে দেয়া। আমরা মনে করি, যে আমাকে এমন কথা বললো, তার সাথে আবার আমার কিসের সম্পর্ক? তার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলবো? অসম্ভব। কথা বলার যদি এতোই ইচ্ছা থাকে, তাহলে সে বলুক।
রাস্তাঘাটে যদি তাদের সাথে দেখা হয়, আমরা পাশ কেটে চলে যাই। সামনাসামনি চোখাচুখি হলে চোখ ফিরিয়ে নিই। এমনকি তাদের ছায়াও দেখতে ইচ্ছা করে না। আর ব্যক্তিগত ইগোর (আত্ম-অহংকার) কারণে তাদের সাথে সম্পর্কের বরফ গলানো পছন্দ করি না। যেমন আছে, তেমন থাক।
তার মানে, কারো সাথে সম্পর্ক খারাপ হলে আমরা মোটামুটি তিনটি কাজ করি।
১- তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই।
২- তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা বন্ধ করে দেই।
৩- নিজ থেকে এগিয়ে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলি না।
মানুষের সাথে ঝগড়া হওয়া, কথা কাটাকাটি হওয়া, এমন মানবীয় দোষগুলোকে ইসলাম একেবারে অস্বীকার করেনি। ইসলাম এমনটা বলেনি যে, কারো সাথে কথা কাটাকাটি হবে না, ঝগড়া হবে না, সবসময় হাসিমুখে থাকতেই হবে। ইসলাম জানে, এগুলো হবেই। কিন্তু, ইসলাম এক্ষেত্রে রাগ পুষে রাখতে মানা করেছে, আত্ম-অহংকার দেখাতে মানা করেছে।
কারো সাথে ঝগড়া করার পর আপনার মাথায় কতোক্ষণ রাগ থাকে? ১ ঘন্টা? ৫ ঘন্টা? ২৪ ঘন্টা? ৭২ ঘন্টা?
সাধারণত কারো সাথে দিনে ঝগড়া হলে, রাতে যদি ভালোমতো ঘুম হয়, তাহলে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যায় রাগ ততোটা আর নেই। কিন্তু তারপরও আমরা সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনে আগ্রহী হই না। ঐ যে, ব্যক্তিগত ইগোর কারণে।
অথচ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্কচ্ছেদ করা বৈধ (জায়েজ) নয়। (বৈধ নয়) দেখাসাক্ষাৎ হলেও তারা একজন আরেকজনের চেহারা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। তাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে প্রথমে সালাম দেয়।” [সহীহ বুখারী: ৬২৩৭]
ইসলাম আপনাকে তিনদিন পর্যন্ত রাগ পুষে রাখার ‘সুযোগ’ দিয়েছে, তিনদিনের বেশি না কিন্তু। তিনদিন পর সে যদি আপনার সাথে কথা বলতে আসে, আপনি মুখ ফিরিয়ে নেবেন, এটাও বৈধ না। সে তার আত্ম-অহংকার বিসর্জন করে আপনার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসবে, আপনি তাকে ফিরিয়ে দেবেন, এটা তো হয় না। এটা তো সামাজিকতা না।
এমন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সামাজিকতার প্রতি ইসলাম নজর দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে ইসলাম একটি সর্বোত্তম সমাধান নিয়ে এসেছে। আপনি আত্ম-অহংকারবশত আগে গিয়ে কথা বলছেন না, সালাম দিচ্ছেন না। কারণ কী? আপনি মনে করছেন, আগ বাড়িয়ে কথা বললে আপনি ছোটো হয়ে যাবেন, আপনার সম্মান কমে যাবে। কিন্তু না। ইসলাম বলছে ঠিক উল্টোটা।
ইসলাম বলছে- ‘তাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে প্রথমে সালাম দেয়’।
আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই এমন কোনো বন্ধু আছে, এমন কোনো আত্মীয়স্বজন আছেন, যাদের সাথে আমাদের কোনো কারণে সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছে। তাদের সাথে এখন আর আমরা কথা বলি না, তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাই না, তারাও আসে না।
আসুন না, আজকে তেমন একজন বন্ধু/আত্মীয়কে নিজ থেকে ফোন দেই, ম্যাসেজ দেই, তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাই। কারণ, আমি-আমরা সবাই তো ‘উত্তম’ হতে চাই তাই না ?? ইসলাম আমাকে সেই উত্তম হবার জন্য উৎসাহিত করেছে।
হ্যাঁ আমি জানি ১০০% বিশ্বাসও আপনি নিজ থেকে সম্পর্ক জুরতে চাইলেন ,নিজেকে ছোট করে তুচ্ছ করে ,নিজের দোষ না থেকেও সব কিছু ভুলে শুধু মাএ একমাএ আল্লাহকে রাজি খুশি করতে আল্লাহ ঊত্তম বান্দাবান্দি হতে সম্পর্ক জোড়া লাগালেন।কিন্তু — আপনাদের দুনো জনের পরিচিত কেউ একজন এসে সামনেই বলে দিবে কিরে তোমাদের দুজনের তো দা কুমড়ার সম্পর্ক ছিলো এখন কি ভাবে এত দুস্তি ??
কাম হয়ে গেছে ,আপনার সাথীরও মুখ খুলে গেলো আমার ঠেকা পরছে ওর সাথে কথা বলতে সম্পর্ক করতে । ও তো আমার কাছে হাত জোর করলো,পায়ে ধরলো, দাঁড়িতে ধরলো আরো কত কি যে বলবে শেষ নাই।
তারপরেও আমরা যে আল্লাহর কাছে উত্তম বান্দা হতে চাই তাই চোখ কান বন্দ করে হাজারো কথা সহ করবো।
অন্তর থেকে বিশ্বাস করুন, আল্লাহতালা যাকে উত্তম বলেছেন, তার সম্মান ও মর্যাদা গোটা দুনিয়া মিলেও কমাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ ।
-সা'দিয়া
মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজ