হযরত ফাতিমা (رضي الله عنها) ও খিযির আলাইহিস সালামের শোক প্রকাশ
নবী করীম [ﷺ]-এঁর ইন্তিকালের পর হযরত ফাতিমা (رضي الله عنها) এভাবে শোক প্রকাশ করেছিলেন- “হায় আব্বাজান! আপনি আল্লাহর ডাকে প্রস্থান করেছেন। হায় আব্বা-জান্নাতুল ফেরদাউস আপনার আবাসস্থল। হায় আব্বা! ইন্তিকালের সময়ে জিবরাইলের সাথে তো আপনি গোপনে কথা বলেছিলেন।” যখন নবী করিম [ﷺ]-কে দাফন করা হয়, তখন বিবি ফাতিমা (رضي الله عنها) আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه)-কে লক্ষ্য করে কেঁদে কেঁদে বলেন - হে আনাস! রাসুলে খোদার উপর মাটি স্থাপন করে কি তোমাদের হৃদয় এবার শান্ত হয়েছে”? [বোখারী-সূত্রে আনাস (رضي الله عنه)]
ফেরেশতার সান্ত্বনা বাণীঃ
ইমাম বায়হাকীর একটি দীর্ঘ হাদিস ইবনে কাছির তাঁর আল-বেদায়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে, “নবী করিম [ﷺ] অসুস্থ হওয়ার পর ফেরেশতাগণ দলে দলে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। ইন্তিকালের দিন হযরত জিব্রাইল (عليه السلام)-এঁর সাথে একজন ফেরেশতা আসলেন। তাঁর নাম ইসমাঈল (عليه السلام)। তাঁর সাথে ছিল একলক্ষ ফেরেশতা - আবার প্রত্যেকের সঙ্গে ছিলেন একলক্ষ ফেরেশতা। এভাবে এক হাজার কেটি ফেরেশতা অনুমতি নিয়ে হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) সহ হুযুরের হুজরা মোবারকে প্রবেশ করেন।
অতৎপর জিব্রাইল (عليه السلام) বলেন - “ইয়া রাসুলুল্লাহ! মালাকুল মউত আপনার জান কবয করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করছেন। আপনার পূর্বে তিনি কারো অনুমতি প্রার্থনা করেননি এবং আপনার পরেও কারো অনুমতি প্রার্থনা করবেননা।“ নবী করিম [ﷺ] বললেন - “আসতে বলো।“ আযরাইল (عليه السلام) প্রবেশ করে নবী করিম [ﷺ]-কে সালাম দিয়ে আরয করলেন - “হে প্রিয় মোহাম্মদ [ﷺ]! আল্লাহ তায়ালা আমাকে আপনার খেদমতে এই নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছেন যে, যদি আপনি জান কবয করার অনুমতি দেন, তাহলেই যেন আমি রূহ মোবারক কবয করি। আর যদি নিষেধ করেন- তাহলে যেন ফিরে যাই।” নবী করিম [ﷺ] জিজ্ঞাসা করলেন - “হে মালাকুল মউত! তুমি কি রুহ কবয করার ইচ্ছা করো?” আযরাইল বললেন - “জ্বী হ্যাঁ, আমি একাজ করতে আদিষ্ট হয়েছি। তবে আমাকে এ নির্দেশও দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন আপনার নির্দেশের আনুগত্য করি।“
নবী করিম [ﷺ] জিবরাইলের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি দিলেন। হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) বললেন - “হে প্রিয় মোহাম্মদ [ﷺ]! আল্লাহ তায়ালা আপনার দীদারের প্রতীক্ষায় উদগ্রীব হয়ে আছেন। একথা শুনে নবী করিম [ﷺ] আযরাইলকে বললেন - “নির্দেশ মোতাবেক তোমার কাজ সমাধা করোঃ।“ ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!
হযরত খিযিরের শান্ত্বনা বাণীঃ
যখন নবী করিম [ﷺ] ইনতিকাল করলেন, তখন চতুর্দিকে থেকে কান্নার রোল ভেসে আসলো এবং শোকের ছায়া নেমে আসলো ঐ সময় সকলে হুযুরের ঘরের এক কোণ থেকে একটি আওয়ায শুনতে পেলেন - “আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহ্লাল বাইত; ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। প্রত্যেক মসিবেতে শান্ত্বনা একমাত্র আল্লাহর হাতে।”
হযরত আলী (رضي الله عنه) অন্যদেরকে বললেন - “ইনি কে, আপনারা কি জানেন? ইনি হচ্ছেন খিযির عليه السلام।” এটা ছিল হযরত আলীর কারামত।
হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন - ”নবী করিম [ﷺ]-এঁর ইন্তিকালে সাহাবায়ে কেরাম তাঁর চারপাশে বসে কান্নাকটি করছিলেন। এমন সময় উজ্জ্বল চেহারা ও সাদা দাঁড়ি বিশিষ্ট একজন লোক ঘরে প্রবেশ করে কেঁদে ফেললেন এবং উপস্থিত সাহাবীদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন - “প্রত্যেক মুসিবতে আল্লাহর হাতেই শান্ত্বনা।” একথা বলেই তিনি চলে গেলেন। লোকেরা একজন অপরজনকে জিজ্ঞাসা করলেন - তাঁকে চিনেন কিনা? হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন - “হাঁ! চিনি-ইনি রাসুল পাক [ﷺ]-এঁর সজাতি ভাই, হযরত খিজির (عليه السلام)।
(আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৫ম খণ্ড ২৭৭ পৃষ্ঠা)।
হে আল্লাহ! তুমি সকলকে হোববে রাসুল ও দীদারের রাসুল নসীব করো। ওয়া ছাল্লাল্লাহু আলা খাইরি খালক্বিহী ওয়া নূরে যাতিহী ওয়া জীনাতি ফারশিহী সাইয়েদিনা ওয়া মাওলানা মোহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন। আমিন!