সন্তান হওয়ার জন্য দুটি জিনিসের দরকার হয়। পুরুষের স্পার্ম বা শুক্রানু এবং নারীর ডিম্বানু বা ওভাম।
সমস্যাগুলি
আপনি সন্তান না হওয়ার কারণ হিসেবে মেয়েদের সমস্যার কথা জানতে চেয়েছেন। সে বিষয়েই আলোচনা করি। খুব বড় করে যদি দেখা যায় তাহলে দুটি সমস্যার কারণে মেয়েদের সন্তান হয় না।
- মেয়েদের ডিম্বানু নিঃসরণ না হওয়া- ডিম্বানু নিঃসরণের জন্য মহিলাদের শরীরে ওভ্যুলেশন বলে একটি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়।
- মেয়েদের ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লক থাকা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া- শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলনস্থল হল ফ্যালোপিয়ান টিউব। এখন সেই টিউবে যদি কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকে তাহলে কাঙ্খিত মিলন ঘটে না। গর্ভধারণও হয় না।
ডিম্বানু নিঃসরণ না হওয়ার কারণ
ডিম্বানুর ঠিক মতো নিঃসরণ না হওয়া বা একেবারেই না হওয়া (ওভ্যুলেশন ডিসঅর্ডার)-র বেশ কয়েকটি কারণ আছে। প্রতি ৪টি বন্ধ্যা দম্পতির মধ্যে ১টি ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কারণ এই ওভ্যুলেশন ডিসঅর্ডার।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পি সি ও এস)- এই রোগে মহিলাদের শরীরে হরমোন ভারসাম্য থাকে না যা কালক্রমে ডিম্বানু নিঃসরণে বিঘ্ন ঘটায়। পি সি ও এস-এর সঙ্গে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও স্থুলতা, মুখে বা শরীরে অস্বাভাবিক চুলের বৃদ্ধি ও ব্রণ হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। মহিলা বন্ধ্যাত্বে এই রোগ মুখ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে।
- হাইপোথ্যালামিক ডিসফাংশন- প্রতি মাসে ওভ্যুলেশন ঘটানোর পেছনে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত দুটি হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরা হল ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (এফ এস এইচ) এবং ল্যুটিনাইজিং হরমোন (এল এইচ)। অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক স্ট্রেস, শরীরের ওজন খুব বেশি বা খুব কম হওয়া অথবা সাম্প্রতিক অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস এই হরমোনের উত্পাদনে বিঘ্ন ঘটিয়ে ওভ্যুলেশন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এর সবচেয়ে বড় সঙ্কেত হল অনিয়মিত পিরিয়ড বা পিরিয়ড না হওয়া।
- প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর- একে প্রাইমারি ওভারিয়ান ইনসাফিয়েন্সিও বলে। অটোইমিউন রেসপন্সের কারণে সাধারণত এই সমস্যা হয়ে থাকে। তবে বংশগত সমস্যা বা কেমোথেরাপির কারণে যদি ওভারি বা ডিম্বাশয় থেকে পরিপক্কতা প্রাপ্তির আগেই ডিম্বানু নষ্ট হয় তাহলেও এই রোগ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় ডিম্বানু উত্পাদন বন্ধ করে দেয় এবং ৪০ বছরের কম বয়সী মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন উত্পাদন কমিয়ে দেয়।
- অতিরিক্ত প্রোল্যাক্টিন- পিটুইটারি গ্ল্যান্ড অত্যধিক প্রোল্যাক্টিন (হাইপারপ্রোল্যাক্টোমিয়া) তৈরি করলে ইস্ট্রোজেন উত্পাদন কমে যায় এবং যা কালক্রমে বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে। সাধারণত পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা হলেও কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এই সমস্যা হয়।
ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লক থাকা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ
আগেই বলেছি, ফ্যালোপিয়ান টিউবে ব্লক থাকলে বা টিউবটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলন ঘটে না। নিম্নলিখিত কারণে ফ্যালোপিয়ান টিউবে সমস্যা হতে পারে।
- পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ- ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া বা অন্য কোনও সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড সংক্রমণে ইউটেরাস বা জরায়ু আক্রান্ত হলে এই সমস্যা হয়।
- অস্ত্রোপচার- তলপেটে পূর্ববর্তী কোনও অস্ত্রোপচারের ফ্যালোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি। এই ক্ষেত্রে নিষিক্ত ডিম্বানু ইউটেরাসের পরিবর্তে ফ্যালোপিয়ান টিউবে প্রোথিত হয়।
- পেলভিক টিউবারকুলোসিস- সারা বিশ্বে টিউবাল বন্ধ্যাত্বের বড় কারণ
- এন্ডোমেট্রিওসিস- ইউটেরাসের পরিবর্তে অন্য কোথাও টিস্যুর বৃদ্ধি। এই বাড়তি টিস্যুর বৃদ্ধি ও সার্জারির সাহায্যে তার অপসারণ বহু ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউবে ক্ষত সৃষ্টি করে, যা কালক্রমে প্রতিবন্ধক হয়ে শুক্রানু ও ডিম্বানুর মিলনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আরও কিছু কারণ এবং কিছু ব্যাখ্যাহীন কারণেও সমস্যা হয়।
কৃতজ্ঞতা- ১) Female infertility - Symptoms and causes ২ ছবির জন্য গুগল