মুসলিমদের হাত থেকে যেভাবে হাতছাড়া হলো স্পেনের ইশবিলিয়া (Sevilla)
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ, প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা অনেক ভাল আছেন। আজকে যে পোস্টটি হতে যাচ্ছে সেটা আমরা মুসলিম হিসেবে আমাদের জানা আবশ্যক। আপনি যদি এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত না পড়েন তাহলে আপনার এটা পড়ায় মূল্যহীন তাই আমি বলব যদি আপনার সময় না থাকে তাহলে এই পোস্টটা আপনি সেভ করে রাখুন এবং সম্পূর্ণ পড়ুন তাহলে আপনার ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা হবে।
আশা করি বিষয়টি গুরুত্বের সহিত নিবেন।
আজকে সেভিল্লা শহর নামে পরিচিত শহরটির পূর্ব নাম ছিল ইশবিলিয়া। এটি ইসলামের একটি প্রাচীন নগরী ছিল। এই শহরটি ৫০০ বছর ধরে ইসলামের শহর ছিল। এই শহরে দীর্ঘ ৫০০ শত বছর আজানের ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে, যে ধ্বনি দীর্ঘ ৫০০ বছর ধরে আন্দোলিত করেছিল সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে। আপনারা সকলেই জানেন যে, বিখ্যাত সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ ৯১ হিজরি (৭১১ সালে) সর্বপ্রথম স্পেনের ভূমিতে পা রাখেন।
তারিক বিন জিয়াদ স্পেনে যাওয়ার এক বছর পরে অর্থাৎ ৯২ হিজরিতে মুসা ইবনে নুসাইর ইশবিলিয়া (Sevilla) নামক শহরে আসেন এবং এই শহরকে বিজয় করেন। কিছু দিনের জন্য এই শহরটি হাত ছাড়া হয়ে গেলে মুসা বিন নুসাইর তার ছেলে আব্দুর রহমানকে সেখানে পাঠান এবং পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রন কায়েম করেন। সেই দিন থেকে ৫০০ বছর এই শহরটি ইসলামের শহরে রূপান্তরিত হয়।
ইশবিলিয়া (Sevilla) কে বিজয় করার পর মুসলমানগণ এই শহরে তাদের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ হল ইশবিলিয়া (Sevilla) উলু মসজিদ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজকে এই মসজিদটিকে তারা গির্জায় রূপান্তরিত করেছে। মসজিদের মূল ফটক ভেঙ্গে ফেলেছে কিন্তু তারা মিনারকে ভেঙ্গে ফেলতে পারেনি। তবে মিনারের উপরে তারা তাদের ক্রুশকে ঝুলিয়ে দিয়েছে।
ইতিহাসে এই শহরটি জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে জ্ঞান ও শিক্ষা সংস্কৃতির কোন কার্যক্রম না থাকলেও সিভেল্লা এখনো স্পেনের গুরত্ত্বপূর্ণ একটি বাণিজ্যকেন্দ্র। কিন্তু ইতিহাসের দিকে যদি আমরা তাকিয়ে দেখি তাহলে দেখতে পাই যে, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিতে এই শহরটি নিজেকে নিয়ে গিয়েছিল এক অনন্য উচ্চতায়।
প্রখ্যাত আলেম আবুল খাইর এই শহরের, বোটানীর (উদ্ভিদবিদ্যার) ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উম্মোচনকারী ইবনে আওয়ামও এই শহরের। প্রখ্যাত আলেম আবু বকর ইবনে আরাবীও ছিলেন এই শহরের। এই সকল বিশ্ববিখ্যাত আলেম ছাড়াও আমরা যদি জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, এই শহরে কত বড় বড় আলেম জন্মগ্রহণ করেছেন।
তবে আরেকটি বিষয় এখানে প্রনিধানযোগ্য, ১১ শতাব্দীতে এই শহরে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ কার্যক্রম শুরু হয়। তখনও মুসলমানদের মধ্যে খুব বেশী সমস্যা তৈরি হয়নি। কিন্তু এই অনুবাদের ক্ষেত্রে তথ্যসুত্রে বিভ্রান্তি ঘটায়। মুসলমানদের লেখা গ্রন্থগুলোকে তাদের নিজেদের নামে চালিয়ে দেওয়া শুরু করে। এটা নিয়ে অনেক বেশী গবেষণা হওয়া দরকার।
এই অঞ্চলে মুসলমানগণ জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্পকলা, মিউজিক, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে এত উচ্চতায় পৌঁছেছিল যে, মুসলমানগণ যদি ইতিহাস থেকে ছিটকে না পড়ত তাহলে সমগ্র পৃথিবী হয়তবা আজ অন্য একটি অবস্থানে থাকত। আমরা সকলেই জানি যে, যখন কোন আদর্শ সফলতার চূড়ায় আরোহিত হয় তখন মানুষ সে আদর্শ বা সভ্যতাকে অনুকরণ করে থাকে।
আজকে যেমন মুসলমানরা পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণ করে। তাদের ভাষায় কথা বলে, তাদের মত করে পোশাক পরে, তাদের শহরের আলোকে নিজেদের শহরকে গড়ে তুলে। তেমনি ভাবে ঐসময়ে এই সেভিল্লা ও আন্দালুসিয়াও এমন এক অবস্থানে ছিল যে, পাশ্চাত্যে বসবাসকারী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা মুসলমানদেরকে অনুসরণ ও অনুকরণ করত। তারা মুসলমানদের ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করত, তাদের পোশাক পরিধান করত, তাদের শহরের অনুকরণে নিজেদের শহর ও ঘরবাড়ি বানাত।
এটা দেখে তৎকালীন পোপরা এক মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তাই তারা তাদের যুবসমাজকে মুসলমানদের আদর্শ থেকে রক্ষা করার জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা বলেন, আমাদের যুবকরা মুসলমানদের অনুসরণ ও অনুকরণ করছে, তাদের ধর্মকে গ্রহণ করছে তাই আমাদেরকে এদেরকে রক্ষা করার জন্য কাজ করতে হবে।
মুসলমানগণও তাদের উচ্চতাকে ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে এবং জ্ঞানকে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি বা শেয়ার করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি।
চারটি প্রতিষ্ঠানকে মুসলমানগণ বিশ্ববাসীর সামনে উম্মোক্ত করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে মুসলমানগণ বিন্দুমাত্রও কার্পণ্য করেননি।
এগুলো হল,
১/ হাসপাতাল, আমরাই মানুষকে হাসপাতাল শিক্ষা দিয়েছি।
২/ বিশ্ববিদ্যালয়, আমরাই সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করে এর সাথে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি।
৩/ পর্যবেক্ষণকেন্দ্র (Observatory) এর সাথে মানুষকে আমরাই সর্বপ্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছি।
৪/ উন্নত খাদ্য।
শুধু এগুলোই নয়, ইউরোপের খাবারের ক্ষেত্রেও আমাদের ভূমিকা অনেক বেশী। আমরা ইউরোপকে তাদের খাবার-দাবারকে উন্নত করার জন্য অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছি। যেমন চিনি। সর্বপ্রথম চিনি আবিষ্কার করে মুসলমানগণ। চিনির আবিষ্কার খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে এক নব যুগের সূচনা করে। আজকের ইউরোপের অনেক খাবার দাবারের পেছনে ঐসময়ের পরিবর্তন অনেক বড় একটি জায়গা দখল করে আছে।
কৃষি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিপ্লব করেছিল মুসলমানগণ। মাল্টা, কমলা, লেবু, গ্রেফ্রুট আন্দালুসিয়ার আলেমদের আবিষ্কার। আন্দালুসিয়ার যে সকল আলেম-উলামা কৃষি নিয়ে গবেষণা করতেন তারাই এই সকল কিছুর সাথে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেন।
যেমন, মাল্টা, তুরস্কে আসে ১৭৫০ সালের দিকে। প্যারিসে নিযুক্ত উসমানী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ২৮ তম চেলেবি মেহমেদ মাল্টা, টমেটোর বীজ নিয়ে আসেন। তখন তিনি এমন ভাবে নিয়ে আসেন যে, যেন এগুলা ফ্রান্সে আবিষ্কার!
এই সকল মাল্টা ও টমেটো দেখে যারা সেই সময়ে পাশ্চাত্যের মোহে অন্ধ ছিল তাদের মোহ আরও বেড়ে যায়। অথচ ফ্রান্স এগুলা শিখেছিল আন্দালুসিয়ার মুসলমানদের কাছ থেকে।
এই জন্য আমাদের উচিত হল আমাদের অতীতকে নিয়ে গবেষণা করা এবং আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বৃদ্ধি করা। এগুলা জেনে বসে থাকলে চলবে না। কুরানের আহবানের আলোকে আমাদেরকে পুনরায় জ্ঞান-গবেষণায় মনোনিবেশ করতে হবে।
কার্টেসীঃ ইসলামের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস