ইসমে আযম কি? ইসমে আ’যমের কি ফযীলত?
.
ইসম অর্থ হচ্ছে নাম, আ’যম অর্থ হচ্ছে সবচাইতে মহান বা শ্রেষ্ঠ। সুতরাং ইসমে আ’যমের অর্থ হচ্ছে “আল্লাহর সবচাইতে মহান বা শ্রেষ্ঠ নাম”। The Greatest Name of Allah.
.
আল্লাহ তাআ’লার সুন্দর সুন্দর অনেক নাম রয়েছে, যেমন খালিক্ব, আর-রহ’মান, আর-রহী’ম ইত্যাদি। একটি সহীহ হাদীসে আল্লাহর নাম ৯৯টি বলা হলেও, অন্য হাদীসে রয়েছে, এই ৯৯টি নামের বাইরে আল্লাহর আরো অনেক নাম রয়েছে, যা কোন মানুষকে জানানো হয়নি, অথবা আসলে কেউই জানেনা, এক আল্লাহ ছাড়া। এই সবগুলো নামের মাঝে যেই নাম দিয়ে আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লার বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সবচাইতে বেশী প্রকাশিত হয়, সেই নামকে ‘ইসমে আযম’ বলা হয়।
.
আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “ইসমে আ’যম হচ্ছে আল-হা’ইয়্যু (চিরঞ্জীব) এবং আল-ক্বাইয়্যুম (চিরস্থায়ী)। আল্লাহ তাআ’লাকে এই বলে দুয়া করা বা আহবান করা, “ইয়া হা’ইয়্যু, ইয়া ক্বাইয়্যুম, ইয়া যাল যালালি ওয়াল ইকরাম” (হে মর্যাদাবান ও কল্যাণময়)। এই দুইটি নাম, আল-হা’ইয়্যু এবং আল-ক্বাইয়্যুম, ক্বুরআনের তিনটি জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। ইসমে আ’যম রয়েছে আয়াতুল কুরসীর মাঝখানে, “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়্যুল ক্বাইয়্যুম”। অর্থঃ আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। ইসমে আ’যম রয়েছে সুরা আলে ইমরানের দ্বিতীয় আয়াতে, “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়্যুল ক্বাইয়্যুম”। এবং সুরা ত্বোয়া-হাঃ ১১১, “সমস্ত মুখমন্ডল সেই চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী সত্ত্বার সামনে অবনমিত হবে, আর যে ব্যক্তি জুলুমের বোঝা বহন করবে সে হতাশ হয়ে যাবে।”
.
যেই হাদীসের উপর ভিত্তি করে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছেঃ
.
আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ক্বুরআনের তিনটি সুরার মাঝে ইসমে আ’যম (আল্লাহর সবচাইতে মহান নাম) রয়েছেঃ আয়াতুল কুরসী, সুরা আলে-ইমরান এবং সুরা ত্বোয়া-হা এর মাঝে।” ইবনে মাজাহঃ ৩৮৫৬, আল-হাকিমঃ ১/৬৮৬, শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ বলেনঃ “হাদীসটি হাসান।” সিলসিলাহ আস-সহীহাহঃ ৭৪৬।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশের প্রচলিত অযীফার বইগুলোতে অনেক বানোয়াট নাম আল্লাহর উপর আরোপ করা হয়েছে, যেইগুলো আসলে ইসমে আযম নয়। এই সমস্ত ভুল ও বিদআ’তপূর্ণ বই-পত্র থেকে সাবধান থাকবেন, কারণ দলীল ছাড়া কোন ইবাদত আল্লাহ তাআ’লা কবুল করেন না।
.
ইসমে আ’যমের ফযীলত
.
ইসমে আ’যমের গুরত্ব হচ্ছে, এই নামে বা এই নামের ‘ওসীলা’ দিয়ে আল্লাহকে ডাকলে বা তাঁর কাছে দুয়া করলে আল্লাহ সবচাইতে বেশি খুশি হন, এবং বান্দার দুয়া কবুল করে নেন। ইসমে আ’যমের উসীলা দিয়ে কোন দুয়া করলে আল্লাহ সেই দুয়া কবুল করে নেন। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে সালাতে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর পূর্বে (দুয়া মাসুরা পড়ার সময়) নিচের এই দুয়াটি পড়তে শুনলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তখন সাহাবাদেরকে বললেন, “তোমরা কি জানো সে কিসের উসীলা দিয়ে দুয়া করেছে?” সাহাবারা বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন।” তিনি বললেন, “সেই মহান সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাঁর “ইসমে আ’যম” বা সুমহান নামের উসীলা দিয়ে দুয়া করেছে। ইসমে আ’যমের উসীলায় দুয়া করলে আল্লাহ সেই দুয়া কবুল করে নেন, আর কোনো কিছু চাইলে আল্লাহ তাকে তা দান করেন।” আবু দাউদ, নাসায়ী, আহমাদ, বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ, ত্বাবারানী ও ইবনে মান্দাহ “আত-তাওহীদ” গ্রন্থে (৪৪/২, ৬৭/১, ৭০/১-২), একাধিক সহীহ হাদীসে এসেছে। দুয়াটি হচ্ছেঃ
ইসমে আ’যমের ফযীলত : পূর্ণ আস্থা সহকারে সরল বিশ্বাস ও সরল অন্তরে ইসমে আ’যম পাঠ করলেঅশেষ সাওয়াব পাওয়া যায়। এটা সর্বদা পাঠ করতে থাকলে একদিন না একদিন এটার মাহাত্ম্য বুঝতে পারবে এবং তখন যে কোন মকছুদ পূর্ণ হবে।
আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি পরম দয়ালু, করুণাময়
বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহী-ম
আল্লা-হুম্মা ইন্নী- আসআলুকা বিআন্নাকা আনতাল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতাল আহাদুস সামাদু ল্লাযী- লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ূ-লাদ ওয়া লাম ইয়াকুল্লা-হূ- কুফুওয়ান আহাদ। আল্লা-হুম্মা ইন্নী- আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতাল হান্না-নুল মান্না-নু বাদি-‘উস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি ইয়া- যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-মি ইয়া- হাইয়্যু ইয়া- ক্বাইয়্যু-মু আসআলুকা। ওয়া ইলা-হুকুম ইলা-হুঁ ওয়া-হিদ। লা- ইলা-হা ইল্লা- হুয়ার রাহমা-নুর রাহী-ম। আলিফ লা-ম মী-ম। আল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূ-ম। লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী- কুনতু মিনায যোয়া-লিমী-ন।
হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে প্রার্থনা করছি। নিশ্চয় তুমিই আল্লাহ্। তুমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তুমি একক তুমি ওই অমুখাপেক্ষী, যিনি না কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেছেন, না কাউকে জন্ম দিয়েছেন, যাঁর সমতুল্য কেউ নেই। হে আল্লাহ্, তোমার দরবারে প্রার্থনা করছি। নিশ্চয় সকল প্রশংসা তোমারই। তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তুমি স্নেহশীল, ইহসানকারী, তুমি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা হে মহত্ব ও গৌরবের অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী, তোমার দরবারে প্রার্থনা করছি। তোমাদের মা’বূদ ওই এক অদ্বিতীয়, তিনি ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, পরম করুণাময়, দয়ালু। তিনি ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। তোমারই পবিত্রতা! নিশ্চয় আমি সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
ইসমে আযমের উসীলা দিয়ে দুয়া করার নিয়মঃ
.
মুনাজাতের মাঝে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করবেন, অতঃপর দুরুদ পড়বেন, অতঃপর উপরে বর্ণিত ইসমে আযমের দুয়াটা পড়ে এরপরে আপনার প্রয়োজনীয় যেকোন দুয়া করতে হবে। বাংলা বা আরবীতে যেকোন ভাষাতেই দুয়া করা যাবে। উল্লেখ্য, কেউ যদি এই দুয়াটা সম্পূর্ণ মুখস্থ করতে না পারে তাহলে সংক্ষেপে শুধুমাত্র “ইয়া হা’ইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম, ইয়া যাল যালালি ওয়াল ইকরাম” এই নামে আল্লাহকে ডেকে দুয়া করতে পারবেন।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
. শেয়ার করুন, বন্ধুদের সাথে ইন শা আল্লাহ !