(কন্সটান্টিনোপল) কুসতুনতুনিয়া বিষয়ক হাদীসের অপব্যাখ্যার জবাব
কুসতুনতুনিয়া-বিষয়ক হাদীসের অপব্যাখ্যার অপনোদন
‘‘তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘নৌযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আমার সাহাবীদের প্রথম দলটি বেহেশতী হবে।’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর বলেন,
أوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَر مَغْفُورٌ لَهُمْ.
- ‘আমার সাহাবীদের মধ্যে প্রথম বাহিনী যারা (রোমক) সিজারের শহর (কুসতুনতুনিয়া তথা কনস্টানটিনোপোল/ইস্তাম্বুল) জয় করবে, তাদের গুনাহ মাফ করা হবে’।”[১৭.]
প্রথমতঃ সিজারের শহর জয়ী প্রথম বাহিনীর মধ্যে এয়াযীদ ছিল না, যেমনটি আবু দাউদের সুনানে বর্ণিত সহীহ হাদীসে বিবৃত হয়েছে:
عَنْ أَسْلَمَ أَبِي عِمْرَانَ قَالَ: غَزَوْنَا مِنَ الْمَدِينَةِ نُرِيدُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَعَلَى الْجَمَاعَةِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ.
- হযরত আসলাম আবি ইমরান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমরা কনস্টানটিনোপোল জয়ের উদ্দেশ্যে মদীনা হতে বের হই। আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন এই বাহিনীর প্রধান।” [১৮.]
ইমাম তাবারী নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে বলেন -
فمما كان فيها من ذلك دخول المسلمين مع عبد الرحمن بن خالد بن الوليد بلاد الروم ومشتاهم بها وغزو.
- আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালিদের সেনাপতিত্বে ৪৪ হিজরী সালে মুসলমান বাহিনী রোমে (কনস্টানটিনোপোল) প্রবেশ করেন এবং সেখানে গযওয়া (ধর্মযুদ্ধ) সংঘটিত হয়।[১৯. দলিলচিত্র-http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=82]
অথচ এয়াযীদ আরও বহু পরে ওখানে যায়। উপরন্তু, তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল শাস্তিস্বরূপ; আর সে ওই প্রথমে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধাদের প্রতি বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছিল।
ইমাম ইবনে আসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন:
في هذه السنة وقيل : سنة خمسين سير معاوية جيشًا كثيفًا إلى بلاد الروم للغزاة ، وجعل عليهم سفيان بن عوف ، وأَمَرَ ابنه يزيد بالغزاة معهم فتثاقل واعتلّ فأمسك عنه أبوه ، فأصاب الناس في غزاتهم جوعٌ ومرض شديد ، فأنشأ يزيد يقول :ما إن أبالي بما لاقت جموعهم بالفرقدونة من حمى ومن موم
إذا اتكأت على الأنماط مرتفقًا بدير مروان عندي أم كلثومِ
فبلغ معاوية شعره، فأقسم عليه ليلحقنّ بسفيان في أرض الروم، ليصيبه ما أصاب الناس، فسار ومعه جمع كثير أضافهم إليه أبوه.
- এই বছর, অর্থাৎ, ৪৯ বা ৫০ হিজরী সালে হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমের (কনস্টানটিনোপোল) উদ্দেশ্যে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি এর দায়িত্বভার অর্পণ করেন সুফিয়ান বিন আউফের প্রতি এবং তাঁর ছেলে এয়াযীদকে ওই বাহিনীর সাথে যেতে বলেন। কিন্তু এয়াযীদ ‘অসুস্থ হওয়ার ভান করে এবং যেতে অস্বীকৃতি জানায়’। যোদ্ধারা যখন ক্ষুধা ও রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত হন, তখন সে ব্যঙ্গ করে কবিতায় বলে, ‘ফারকুদওয়ানা-এ মহা গযবে তারা পতিত হয়েছে; তাদের জ্বর বা অন্য যা-ই কিছু হোক, তাতে আমার যায় আসে না। কেননা, আমি বসে আছি উচ্চ ফরাশে (ম্যাট্রেস); আর আমার বাহুবন্ধনে আছে উম্মে কুলসুম (এয়াযীদের স্ত্রীদের একজন)।’
‘‘হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন এই কবিতার শ্লোক সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তিনি এয়াযীদকে শপথ গ্রহণ করতে ও কনস্টানটিনোপোলে সুফিয়ান ইবনে আউফের সাথে যোগ দিতে বাধ্য করেন, যাতে করে ’সেও ইসলামের মোজাহিদদের মোকাবেলাকৃত কঠিন পরীক্ষার অংশীদার হতে পারে’ (এটি এয়াযীদের প্রতি শাস্তি ছিল)।এমতাবস্থায় এয়াযীদ অসহায় হয়ে পড়ে এবং তাকে যুদ্ধে যেতে হয়; আর হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে আরেকটি বাহিনী প্রেরণ করেন।” [২০.]
ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
قلت: الْأَظْهر أَن هَؤُلَاءِ السادات من الصَّحَابَة كَانُوا مَعَ سُفْيَان هَذَا وَلم يَكُونُوا مَعَ يزِيد بن مُعَاوِيَة، لِأَنَّهُ لم يكن أَهلا أَن يكون هَؤُلَاءِ السادات فِي خدمته.
- আমি বলি, অসংখ্য সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুএর অধীনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং ‘এয়াযীদ ইবনে মোয়াবিয়ার নেতৃত্বে যান নি, কেননা সে তাঁদেরকে নেতৃত্বদানে অযোগ্য ছিল’।” [২১.]
কনস্টানটিনোপোলে সেনা অভিযানের সার-সংক্ষেপ নিম্নরূপ:
* প্রথম আক্রমণ পরিচালিত হয় ৪২ হিজরী সালে। দ্বিতীয় দফায় আক্রমণ হয় ৪৩ হিজরীতে এবং এর সেনাপতি ছিলেন হযরত বসর বিন আবি আরকা।
* তৃতীয় অভিযান পরিচালনা করা হয় ৪৪ হিজরী সালে এবং এটি নেতৃত্ব দেন আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ। পরবর্তী অভিযান ছিল ৪৬ হিজরীতে যার সেনাপতি ছিলেন মালিক বিন আবদির্ রহমান ও আবদুর রহমান বিন খালেদ বিন ওয়ালীদ।
* ৪৭ হিজরীতে পরবর্তী অভিযান পরিচালনা করেন মালিক বিন হোবায়রা ও আবদুর রহমান বিন কায়েমী। ৪৯ হিজরী সালে কনস্টানটিনোপোল তিনবার আক্রমণ করা হয়। আর সর্বশেষ ৫০ হিজরীতে যে অভিযান পরিচালিত হয় তাতে এয়াযীদ যোগ দেয় ।
হযরত আমীরে মোয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এয়াযীদকে আটক করে সিজারের ওখানে পাঠান, কারণ সে মোজাহিদীনবৃন্দের প্রতি বিদ্রূপ করতো। তাই শাস্তিস্বরূপ তাকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল, জ্বেহাদের জন্যে নয়।
অতএব, এয়াযীদ সপ্তম সেনা অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিল, প্রথম অভিযানে নয় । আর বোখারী শরীফে উল্লেখিত হয়েছে,
أوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَر مَغْفُورٌ لَهُمْ.
- আমার উম্মতের মধ্যে সিজারের নগরী আক্রমণকারী প্রথম সেনা দলের পাপ-পঙ্কিলতা মাফ করা হবে।”
রেফারেন্স
আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া
ইবনে খালদুনের ইতিহাস
ইমাম ইবনে আসীরের ইতিহাস